Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষা দিবস: তাৎপর্য, গুরুত্ব ও জনগণের প্রত্যাশা

সৈয়দ আমিরুজ্জামান
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৯

১৭ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক মহান শিক্ষা দিবস। এবার ৬২তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ১৯৬২ সালের এই দিনে জাতিগত নিপীড়ন, পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না-জানা অনেকেই। তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের গণবিরোধী শিক্ষা সংকোচনমূলক শিক্ষানীতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রবর্তনের দাবিতে ছাত্র-জনতার ব্যাপক আন্দোলনের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত দিন এটি। শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনের এ দিনটিকে বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রীসহ এদেশের ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, এ দিবসটি কী? এ দিবসের তাৎপর্যইবা কী? তা বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে খুব পরিস্কার কিনা? আমাদের জানা নেই। বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা যদি ওই ইতিহাসটা না জানে, তাহলে তাদেরইবা দোষ কী। যারা সেই প্রজন্মের, যারা ওই শিক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তারাই-বা এ সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে কতটুকু জানাতে পেরেছেন? যে শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ওই শিক্ষা আন্দোলন হয়েছিল, সে সম্পর্কেই এখনও বিভ্রান্তি রয়েছে। শুদ্ধ করে দেওয়ার পরও সংবাদপত্রে তো বটেই, বহু বিদগ্ধজনের লেখায়ও ওই আন্দোলনকে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলন বলা হয়।

বিজ্ঞাপন

ওই আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতৃত্ব, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এক নিবন্ধে লিখেছেন, “প্রকৃত তথ্য হচ্ছে বাষট্টির ওই শিক্ষা আন্দোলন ছিল শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে। আইয়ুব খান সরকার শরীফ শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের বাস্তবায়ন স্থগিত করে এবং কী কারণে ছাত্ররা ওই শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরোধিতা করেছে তা পর্যালোচনা করে নতুন করে সুপারিশ দিতে বিচারপতি হামুদুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বলে কোনো শিক্ষা কমিশন হয়নি। সুতরাং ওই নামে কোনো শিক্ষা কমিশন ছিল না। তবে হামুদুর রহমান শরীফ কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের কার্যকারণ পর্যালোচনা করে যে রিপোর্ট দেন ও সুপারিশ করেন তা ছিল আরও প্রতিক্রিয়াশীল এবং ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও শিক্ষার অধিকারের বিরুদ্ধে। সে সময়ের সব ছাত্র সংগঠনই ওই পর্যালোচনা রিপোর্ট ও এর সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করে। তবে এ নিয়ে কিছু সভা-সমাবেশ আর বিবৃতি প্রদান ছাড়া বিশেষ কিছু হয়নি। এর কারণ শরীফ কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন স্থগিত হলে তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব বিধান শিক্ষা ক্ষেত্রে চালু হয়েছিল তাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল। ছাত্ররা এটা তাদের বিজয় হিসেবে দেখেছিলেন। তাই হামুদুর রহমান তার পর্যালোচনায় কী বলেছিলেন তা নিয়ে তারা বিশেষ মাথা ঘামাননি। আইয়ুববিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ততদিনে নতুন পর্যায়ে উপনীত ও বেগবান হয়েছে। ফলে হামুদুর রহমান রিপোর্ট তাদের বিশেষ মনোযোগ কাড়েনি। অন্যদিকে আইয়ুব সরকারও যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল তা নিয়ে আর বিশেষ এগোয়নি। তবে আইয়ুব শাসনামলে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে শরীফ কমিশন বা হামুদুর রহমান যেসব সুপারিশ দিয়েছিলেন, খণ্ডিতভাবে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ বাংলা ও উর্দু বর্ণমালার উন্নয়নের নামে রোমান হরফে তা পরিবর্তন করা, প্রাথমিক পর্যায় থেকেই আরবি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ ইত্যাদি। ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে আইয়ুবের অনুরূপ এয়ার মার্শাল নুর খানকে দিয়ে আরেকটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। সেই শিক্ষা কমিশনের সুপারিশও একইভাবে বৈষম্যমূলক ও প্রতিক্রিয়াশীল ছিল। তবে তা বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ ইয়াহিয়া খান পাননি।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তান আমলের এসব শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করে এবং কমিশন যতদূর মনে আছে, চুয়াত্তরে তার রিপোর্ট প্রদান করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে প্রণীত এই শিক্ষানীতি কেবল প্রগতিশীলই ছিল না, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন রাষ্ট্রের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিল। তবে সেই সময়কার ক্ষমতাসীন দলের দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষানীতি কতখানি বাস্তবায়িত হতো জানা নেই। ইতোমধ্যে পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টটি অন্ধকারের অতলান্ত গহ্বরে চলে যায়।”

জাতিগত নিপীড়ন ও বৈষম্য বিরোধী ২৩ বছরের জনগণের লড়াই-সংগ্রামের পর ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও অর্জিত চেতনা নস্যাং করার জন্য ‘৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিল, যা মানব ইতিহাসের কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা ও পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে তার শিক্ষামন্ত্রী কাজী জাফর একটি শিক্ষানীতি দেন। কাজী জাফরের মন্ত্রিত্ব থেকে বিদায় আর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ শাসনামলে ওই শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরবর্তী সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ এসে একই কায়দায় শিক্ষা সংস্কারের উদ্যোগ নেন এবং মজিদ খানের শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এই কমিশন প্রণীত শিক্ষানীতিও এদেশের ছাত্ররা রক্ত দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। তিরাশির চৌদ্দ ফেব্রুয়ারি জাফর-জয়নালের রক্তে স্নাত হয় মজিদ খানের শিক্ষানীতি। এরশাদও জিয়ার মতোই আর শিক্ষা সংস্কার নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে প্রথমে ‘নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ’ ও পরে ‘জাতীয় ছাত্রসমাজ’ নামে শিক্ষাঙ্গনে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী গড়ে তুলতে বেশি উৎসাহী ছিলেন। ‘৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর গণআন্দোলনের বিকাশমান ধারায় নব্বইয়ের ছাত্ররা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতৃত্বে সেই ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হটিয়ে দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিলেন। যা সারাদেশে ও প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রসারিত ও বিস্তৃত হয়েছিল। তবে এদেশের শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের এবং আমাদের দুর্ভাগ্য এমনই যে, নব্বইয়ের মহান গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বিএনপির খালেদা জিয়ার সরকার সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের রক্তস্নাত দশ দফার সামান্যতমও পূরণ করেনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নে শিক্ষা কমিশন গঠন করে এবং ২০১০ সালে তাদের দেওয়া শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদ সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করে।

শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষানীতি এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটেই বাষট্টির শরীফ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনের তাৎপর্যটি বিচার করা প্রয়োজন।

প্রথমত, এটা ছিল প্রথম ও একমাত্র ছাত্র আন্দোলন, যা জাতীয়ভাবে সমগ্র ছাত্রসমাজকে আলোড়িত করেছিল এবং দেশের সুদূর প্রাসঙ্গিক পর্যন্ত সর্বস্তরের ছাত্রছাত্রীরা ওই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

দ্বিতীয়ত, এটা ছিল শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ছাত্রদের নিজেদের আন্দোলন। এর সঙ্গে ও পরে শিক্ষার দাবি নিয়ে ছাত্ররা খণ্ড খণ্ডভাবে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ছিল সামগ্রিক।

তৃতীয়ত, এর লক্ষ্য বৈষম্যমূলক ও সাম্প্রদায়িক শিক্ষাব্যবস্থার বিপরীতে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন, যার মূল বিষয় ছিল শিক্ষাব্যবস্থায় যে বিভক্তি রয়েছে তা দূর করে একমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন, শিক্ষাকে ব্যবসায়িক বিনিয়োগের বদলে সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা, দেশের সম্পদের একটা বড় অংশ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ পরিহার করা এবং শিক্ষাকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, দুর্নীতি বন্ধ, বৈষম্য দূর করা প্রভৃতি।

২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে এদেশের ছাত্রসহ শিক্ষাবিদদের বাষট্টি থেকে লালিত ভাবনার প্রতিফলন ঘটেছিল। আর এ কারণেই একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার স্লোগানে সদ্য বিদায়ী সরকার এর বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

ওই শিক্ষানীতির পুনর্মূল্যায়ন ও এর সংস্কারের কথা এসেছে। কিন্তু যে শিক্ষানীতির মূল বিষয়গুলোই বাস্তবায়িত হয়নি তার মূল্যায়ন বা পুনর্মূলায়ন কীভাবে হবে। বরং ইতোমধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষা আরও পিছিয়েছে। একমুখী শিক্ষার জায়গায় শিক্ষাব্যবস্থা আরও বিভক্ত হয়েছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ চূড়ান্ত। বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ এগিয়ে দেখানো হলেও জিডিপির অংশ হিসেবে পৃথিবীতে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তান বাদে অন্যদের পেছনে। করোনার কারণে ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে শিক্ষাক্রম অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রেও সৃষ্টি হয়েছে চরম বৈষম্য। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি।

মোদ্দা বিষয় হলো বাষট্টি থেকে দু’হাজার দশ পর্যন্ত সংগ্রাম ও অপেক্ষা করে যে শিক্ষানীতি পাওয়া গিয়েছিল তাও যখন লোপাট হয়, তখন বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ও সতেরো সেপ্টেম্বরের শিক্ষা দিবসের তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। এবারও দেশের নতুন এক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সতেরো সেপ্টেম্বর তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

জাতীয় অর্থনীতি বিকাশের প্রয়োজনে এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাই, যা দেশ থেকে নিরক্ষরতা ও পশ্চাৎপদতা দূর করবে। বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশ, তথ্য প্রযুক্তি সহ কৃষি এবং শিল্পের বিকাশ সাধনে সহায়ক হবে।

করোনাকালে শিক্ষায় যে নেতিবাচক প্রভাবগুলো পড়েছে, তা প্রধানত চার রকমের বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রথমত, শ্রেণিকক্ষের পঠন-পাঠনের যে ক্ষতি হয়েছে, আমরা কোন বিকল্প দিয়ে কীভাবে পুষিয়ে নেব, সেটা বড় উদ্বেগ। দ্বিতীয়ত, শ্রেণিকক্ষভিত্তিক মূল্যায়ন এবং পরীক্ষাভিত্তিক মূল্যায়ন, সবই থমকে গিয়েছিল। তৃতীয়ত, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা এলোমেলো হয়ে গেছে। শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী নিয়মমাফিক অনুসরণ করাও থমকে গেছে। চতুর্থত, দীর্ঘদিন ধরে ছেলেমেয়েরা শ্রেণিকক্ষের লেখাপড়ার বাইরে থাকায় তাদের মনো সামাজিক বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনীতির ওপর সৃষ্ট ক্ষতির প্রভাব টাকার অংকে পরিমাপ করা যায়। যথাযথ পরিকল্পনা ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু শিক্ষার উল্লিখিত ৪টি ক্ষেত্রে যে ক্ষতি ক্রমাগত বেড়েছে, তা কীভাবে পূরণ সম্ভব হবে সেটি বিশাল উদ্বেগের কারণ।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী সহ এদেশের ছাত্র সংগঠনগুলো প্রতি অর্থবছরে শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ২৫% এবং জিডিপির ৮% বরাদ্দের দাবি করে আসছে। বিদায়ী সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পক্ষে বক্তব্য শুনে আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু বিগত সরকারের অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য শুনে তা উবে যেতে বেশি সময় লাগেনি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বাড়লেও, শতকরা হারে তা কিছুটা কমেছে।

শিক্ষাব্যবস্থার দেখভালকারী শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন কার্যক্রমের জন্য যে বরাদ্দ করা হয়েছে, তা জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১২ শতাংশের মতো। অবশ্য শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি খাতের বরাদ্দ যোগ করলে এই হার দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে অতীতের মতো এবারও দাবিটি পূরণ হয়নি, বরং বরাদ্দের হার কমে ২০ শতাংশ থেকে বেশ দূরেই আছে।

৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এই বাজেটে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা; অর্থাৎ নতুন বাজেটে টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বেড়েছে ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।

এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য করা হয়েছে ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দের, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা চলতি বছরে ছিল ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা।

সাবেক শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘যে খাত বেশি উৎপাদনমুখী, সেই খাতে বরাদ্দের টাকা ব্যয় করতে হবে। বরাদ্দের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। কোনো প্রকল্পের কাজ প্রলম্বিত করা যাবে না। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে হবে।’

প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উপবৃত্তি, পাঠ্যপুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষক নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, ডিজিটালাইজেশন, স্কুল ফিডিং ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।

শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে গণতান্ত্রিক। এজন্য, বৈষম্যমূলক শিক্ষার বিপরীতে সকলের জন্যে একই নীতিমালার ভিত্তিতে শিক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন করতে হলে এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে প্রণীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতেে হলে শিক্ষায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগের পাশাপাশি লাগসই পরিকল্পনা ও যথাযথ মনিটরিং অত্যন্ত জরুরী।

লেখক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

মুক্তমত শিক্ষা দিবস ও জনগণের প্রত্যাশা সৈয়দ আমিরুজ্জামান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর