Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়

এম আর লিটন
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:০০

সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের তৎপরতা চলছে। এর মধ্যে অনেক ক্যাম্পাসেই রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা মানে অপরাজনীতির প্রশ্রয় দেওয়া। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক চর্চার অধিকার। যেমন একজন মানুষের রাজনীতি না করার অধিকার রয়েছে, তেমনি অন্যের রাজনীতি করারও অধিকার আছে। তবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা মানে সরাসরি একজন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করা, যা একটি সুস্থ ও প্রগতিশীল সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মনোভাব আসলে স্বৈরতান্ত্রিক চিন্তার প্রতিফলন। ইতিহাস সাক্ষী, বহু স্বৈরাচারী শাসক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে তাদের ক্ষমতা সংহত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা তৈরি না হলে একটি জাতি আদর্শহীন হয়ে পড়ে। কারণ, তরুণরা জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য শুধু একাডেমিক শিক্ষাই যথেষ্ট নয়; বরং সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে তাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দেওয়া জরুরি।

বিজ্ঞাপন

রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হলো জনসেবার মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন করা। ছাত্র রাজনীতি যদি ওই উদ্দীপনার মধ্যে পরিচালিত হয়, তাহলে তা তরুণদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হয়। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ করলে শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয় এবং তাদের মধ্যে এক ধরনের নিরাসক্তি ও উদাসীনতা তৈরি হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীল ও সমাজসচেতন মনোভাবের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।

তাছাড়া, ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলো দূর করার জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়। যেমন মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান হতে পারে না; বরং সঠিক চিকিৎসার প্রয়োজন। ঠিক তেমনই, ছাত্র রাজনীতির অপব্যবহার ও দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য এর ইতিবাচক দিকগুলোকে প্রসারিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ ধারার রাজনৈতিক চিন্তার বিকাশ ঘটাতে হবে। এর ফলে তারা নিজেদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে এবং সমাজের জন্য কল্যাণকর কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে।

আসলে, ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও সমাজে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা তৈরি করে। যারা শিক্ষাজীবনে ওই রাজনৈতিক চর্চায় জড়িত থাকে, তারা ভবিষ্যতে সমাজের নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা অর্জন করে। যদি এই চর্চা বন্ধ করা হয়, তাহলে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের অধিকার ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাবে, যা সমাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে।

বাংলাদেশের জন্মের আগে থেকেই এই ভূখণ্ডে ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। বাঙালির বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্ররা সব সময় সামনের কাতারে ছিল। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা, ৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০০৭’র ছাত্র বিদ্রোহ, ২০১৩’র গণজাগরণ, ২০১৫’র ভ্যাটবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ২০১৬’র যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন, সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন, ২০১৮’র নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং সম্প্রতি ২০২৪’র গণঅভ্যুত্থানসহ শিক্ষার অধিকারের সংগ্রামে ছাত্র রাজনীতির ভূমিকা অপরিসীম।

অতএব, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়। বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনীতি চর্চার সুযোগ তৈরি করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব হলো ছাত্রদের মধ্যে সঠিক রাজনৈতিক চেতনা গড়ে তোলা এবং তাদের সমাজ ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা শেখানো। তবেই তরুণরা প্রকৃত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে এবং একটি সুস্থ ও প্রগতিশীল সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

এম আর লিটন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর