মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাই কমাতে পারে আত্মহত্যা প্রবণতা
১০ অক্টোবর ২০২৪ ১২:১৯
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে প্রতিবছরই ১০ই অক্টোবরে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়ে থাকে।আজকাল মানুষজন শারীরিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছুটা সচেতনতা বাড়ালেও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত আছেন এমন মানুষের সংখ্যা ঢের বেশি পাওয়া যাবে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। শারীরিক সুস্থ মানুষ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে তাহলে অসমন্বয়ের কারণে তার কাজকর্ম, চলাফেরা, আচার-আচরণ সবকিছুতেই তার প্রভাব ফেলে চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO এর মতে স্বাস্থ্য হল ব্যক্তির শারীরিক , মানসিক এবং সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ২০১৯ সনের এপ্রিল থেকে জুন মাসে দেশব্যাপী পরিচালিত এক বৈজ্ঞানিক জরীপে দেখা যায় এদেশের প্রায় সোয়া দুই কোটি অধিবাসী কোনো না কোনো মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির জন্যই মানুষ নিজের জীবননাশ করতেও পিছপা হচ্ছে না।
জুলাই আগস্ট মাসের আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যরা নিজ চোখে মৃত্যু, বর্বরতা বন্ধু ও সহপাঠীদের হারিয়ে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আন্দোলনের নৃশংস পরিণতি দেশের জনগণকে গভীর মানসিক যন্ত্রণায় ফেলেছে। অনেকেই বিভিন্নরকম ট্রমার মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে নইলে ভবিষ্যতে এর খেসারত দিতে হবে। এরজন্য অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যথাযথ মত প্রকাশের সুযোগ, পড়াশোনার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন: বিতর্ক, লেখালেখি, খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনের ব্যাবস্হা করা এবং সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনা করা। সেই সাথে ‘পোস্ট ট্রমা-স্ট্রেস ডিসওর্ডারে’ আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের ব্যাবস্হা করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয় শুধুমাত্র ব্যাক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে এমনটা কখনোই নয়, কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা যেমন: উৎপাদনশীলতা হ্রাস, দায়িত্ব পালনে অনীহা, অনুপস্থিতি থাকার প্রবণতা ও বারবার কর্মক্ষেত্র পরিবর্তনসহ ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই এর গুরুত্ব অনুধাবন করেই এ বছর ২০২৪ সালে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এখনই সময়’। সুস্থ কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি, সুস্থ জীবনযাত্রার প্রচার, কাজের চাপ কমানো ও বৈষম্য পরিহার করে কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি রোধ করা সম্ভবপর। এর ফলে কোম্পানিরই সামগ্রিক সাফল্য বৃদ্ধি পাবে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ঐ রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় ৯৪, ৫% মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। ২০২২ সালে প্রকাশিত তথ্যমতে দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার কোনো ব্যাবস্হা নেই এবং পুরো দেশে প্রতি একলক্ষ মানুষের বিপরীতে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা মাত্র ১১৭ জন। এই পরিসংখ্যান অবশ্যই চিন্তাজনক, কারণ এই বিশাল জনসমষ্টিকে বাদ দিয়ে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। দেশের এই বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে মৌলিক অধিকার আদায় সরকারের দায়িত্ব। এছাড়াও সরকারকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে সেমিনার সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা এবং অনবগত মানুষজনকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত করা যাতে সবাই সচেষ্ট থাকে।
উপরের সকল আলোচনা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রীক এবার আসা যাক আত্মকেন্দ্রীক আলোচনায়, নিজ মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজেকে কাজ করতে হবে বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা,স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম,কৃতজ্ঞতার অভ্যাস তৈরি, বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা করা, সম্পর্ক তৈরি, পরিবারের সবার সাথে সময় কাটানো, দুঃখ-কষ্ট ভাগাভাগি করা, মাদকদ্রব্য পরিহার করা এবং দরকার হলে মনেরোগবিশেষজ্ঞ্যর পরামর্শ গ্রহণ কেননা মানসিক রোগ বিজ্ঞাসম্মত চিকিৎসায় সম্পুর্ন ভালো হয়ে যায়। পরিশেষে আমাদের নিজদেরই একে অপরের খোঁজ খবর বৃদ্ধি করা যাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত না হয়ে যাই।
লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই