নতুন বছরে অনেকটা বিপদ বাড়াচ্ছে পণ্যের বিভিন্ন ধরনের ভ্যাট। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএফএম) শর্ত পরিপালনে কিছু পণ্য ও সেবায় ভ্যাট বাড়ানো এবং যৌক্তিকীকরণ করার পরিকল্পনা নেয় সংস্থাটি। এর ধারাবাহিকতায় গত ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব পাস করা হয়। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত সাপেক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ না থাকায় অধ্যাদেশের মাধ্যমে শুল্ক-কর বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জারি করা অধ্যাদেশ দুটি হলো– মূসক ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ এবং দ্য এক্সাইজ অ্যান্ড সল্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫। সরকার এ দুটি অধ্যাদেশ প্রকাশের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট বিভাগ এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। এর ফলে এ অধ্যাদেশের পরিবর্তনগুলো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে। অর্থাৎ বাড়তি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কার্যকর হয়ে গেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর কারণে এসব পণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে। এতে ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়েছে এ দেশের সাধারন মানুষ।
যেসব পণ্যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে
দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই হোটেল-রেস্তোরাঁ, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ওষুধ, কোমল পানীয়, সিগারেটসহ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়াল সরকার। তার মধ্যে আরও রয়েছে পটেটো ফ্ল্যাকস, কর্ন, মেশিনে প্রস্তুত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট, আচার, চাটনি, টমেটো পেস্ট বা টমেটো কেচাপ বা সস, আম, আনারস, পেয়ারা ও কলার পাল্প, তেঁতুলের পেস্ট, ট্রান্সফরমারের তেল, লুব্রিকেন্ট তেল, এলপি গ্যাস, আমদানি করা বাল্ক পেট্রোলিয়াম বিটুমিন, বিআরটিএ থেকে নেওয়া লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স, কঠিন শিলা, ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো-সিলিকো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকন অ্যালয়, এইচআর কয়েল থেকে সিআর কয়েল, সিআর কয়েল থেকে জিপি শিট, জিআই তার, ৫ কেভিএ থেকে ২ হাজার কেভিএ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, চশমার প্লাস্টিক ফ্রেম, চশমার মেটাল ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, নারিকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি ম্যাট্রেসে। এসব পণ্যের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া রেস্তোরাঁর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ, ইনভেন্টিং সংস্থার ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।এ ছাড়া কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়াল, সানগ্লাস, নন-এসি হোটেল, মিষ্টান্ন ভান্ডার, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, নিজস্ব ব্র্যান্ড-সংবলিত তৈরি পোশাকের শোরুম বা বিপণিবিতান– এসব পণ্য ও সেবার ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ। বৈদ্যুতিক খুঁটি, মোটর গাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী (সিনেমা হল), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার, বোর্ড সভায় জোগানকারী, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবন রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, সামাজিক ও খেলাধুলা-বিষয়ক ক্লাব ইত্যাদি সেবার ক্ষেত্রে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ।
ব্যবসায়ী পর্যায়ে বাড়তি ভ্যাট
স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ, ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এলপি গ্যাসের স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ শতাংশ বাতিল করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ডিসিসিআই ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনগণের জন্য আত্মঘাতী বলে মন্তব্য করেছে। অর্থনৈতিক নানা সংকটের মধ্যে এমন পদক্ষেপ নেওয়া বিনিয়োগ এবং মূল্যস্ফীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। এই সংগঠনটি আরও বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির ফলে আমদানি খরচ, জ্বালানি খরচ, বৈদেশিক রিজার্ভ এবং ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে। এ ধরনের নীতিগত অস্থিরতা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সংগঠনটি সরকারের প্রতি দীর্ঘমেয়াদী এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে, যা বিনিয়োগ এবং ব্যবসা পরিবেশ উন্নত করবে।
কত হারে খরচ বাড়বে ক্রেতাদের
মোবাইল ফোনের সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফ্রিজার, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, কম্প্রেসর ও মোটরসাইকেলের করপোরেট কর ১০ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকান ও সব ধরনের রেস্তোরাঁর বিলের ওপর ভ্যাট এক লাফে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া মিষ্টির দোকান, এলপি গ্যাস, কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, হ্যান্ড টাওয়াল, সানগ্লাস, নন-এসি হোটেল, মিষ্টান্নভান্ডার, প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটা, নিজস্ব ব্র্যান্ডসম্বলিত তৈরি পোশাকের শোরুম বা বিপণিবিতানে পণ্য ও সেবা বিক্রিতে থাকা বিদ্যমান ভ্যাট বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। শুল্ক-কর বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে আমদানি করা বাদাম, আম, কমলালেবু, আঙুর, আপেল ও নাশপাতি, ফলের রস, যেকোনো ধরনের তাজা ফল, রং, ডিটারজেন্ট।এ ছাড়া স্থানীয় উৎস বা দেশের মধ্যে উৎপাদিত তামাকযুক্ত সিগারেট, রং, মদের বিল, পটেটো ফ্ল্যাকস, প্লাস্টিক ও মেটাল চশমার ফ্রেম, রিডিং গ্লাস, সানগ্লাস, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও তাতে ব্যবহৃত তেল, বৈদ্যুতিক খুঁটি, সিআর কয়েল, জিআই তারে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি, ভ্যাট ও কষ্টে সাধারন মানুষ
খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত সব পণ্যেই যখন মূল্যস্ফীতি চরম পর্যায়ে রয়েছে, তখন অর্থবছরের মাঝপথে এসে হঠাৎ শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। নানা কারণে গেল বছর নিত্যপণ্যের বাজার ছিল রীতিমতো অস্তির দামের চোটে বছরজুড়ে গড় মূল্যস্ফীতি থেকেছে দুই অঙ্কের ঘরে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গেল বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের বছর ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮। গত বছর উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে ছিল মানুষ। সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। উল্টো বেড়েছে বেকারের সংখ্যা। বিবিএসের ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৬০ হাজার, যা এক বছর আগে ওই সময়ে ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ এক বছরে বেকার বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার। খরচা ছুটলেও মানুষের রোজগার বাড়েনি তেমন। উল্টো চাকরি খুইয়ে ধুঁকছেন অনেকে। এর মধ্যেই দুঃসংবাদ হয়ে হাজির শতাধিক পণ্য ও সেবায় নতুন শুল্ক-কর। এতে গতি যেভাবে ছুটবে, তাতে জীবনযাত্রা খরচার সামাল দেওয়া অনেকটাই দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে নির্ধারিত আয়ের মানুষের। গেল আগস্টে দেশের রাজনৈতিকে মঞ্চ বদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, তাও ফিকে হয়ে আসছে। প্রায় তিন বছর ধরে চলতে থাকা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে স্বস্তিতে নেই ভোক্তারা।
রাজস্ব আয়ে ও আমদানী বানিজ্যে ঘাটতি
আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমালে ভোক্তা তার সুফল পান না, সেখানে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়লে পণ্যের দাম বাড়বে না– এটা গল্প ছাড়া কিছুই নয়। গেল বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, খেজুরসহ বেশ কয়েকটি পণ্যে উদারতা দেখিয়ে ঢালাওভাবে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। তবে সে তুলনায় বাজারে এসব পণ্যের দর কমেনি। উল্টো দর বেড়েছে চাল ও ভোজ্যতেলের। অর্থাৎ শুল্ক-কর ছাড়ের সুফল যাচ্ছে ব্যবসায়ীর ঘরে। নতুন করে শুল্ক-কর বাড়ানোর কারণে ফের জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেবেন ব্যবসায়ীরা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিল সাবেক সরকার। বাজেটে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আহরিত হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪২ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা কম। এক বছরে ব্যবধানে কমেছে ২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এনবিআর বলছে, অতিরিক্ত ১২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব বাড়াতেই শুল্ক-কর বাড়াতে হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে যথাসময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি আগের সরকার। তা ছাড়া ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজার ব্যবস্থাপনা ছিল নাজুক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মুদ্রানীতি সংকোচন করার পাশাপাশি সরকারি ব্যয়ে কাটছাঁট করে। এতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কর্মসংস্থান কমেছে। অন্তর্বর্তী সরকারও সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি কমিয়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করতে পারেনি।
অর্থনীতিবীদরা কি ভাবছেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকার কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কঠিন পথে না গিয়ে সহজ পথে হাঁটল। পরোক্ষ কর ধনী-গরিব সবার জন্যই সমান। পরোক্ষ কর বাড়লে ধনীদের সমস্যা হয় না, সমস্যা হয় গরিবের। এতে অসমতা আরও বাড়বে। একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের এমন অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অর্থনীতির কিছু সমস্যা স্পষ্ট হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্যাট-ট্যাক্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে, সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় করতে পারছে না। প্রতি মাসেই ঘাটতি পড়ছে। অন্যদিকে বিদেশি উৎস থেকেও প্রত্যাশিত আয় আসছে না। আইএমএফ থেকে অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। এতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি মেলানো সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তদুপরি সরকার আইএমএফ থেকে প্রতিশ্রুত ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়া হাতছাড়া করতে চাইছে না, যে কারণে আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে বলির পাঁঠা করা হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষকে। এ ব্যাপারে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। জিনিসপত্রের দামের স্তরও অনেক ওপরে উঠে গেছে। এতে সবাই হিমশিম খাচ্ছে। তাদের প্রকৃত আয় কমে যাচ্ছে। এখন নতুন শুল্ক-কর আরোপের ফলে এই শ্রেণির মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। অর্থবছরের মাঝপথে শুল্ক-করে এত বড় পরিবর্তন এর আগে হয়েছে কিনা, জানা নেই। এ ধরনের সিদ্ধান্ত যে মানুষ ভালোভাবে নেয়নি– এটি সরকার খুব ভালো জানে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের শর্তের বিষয়ও রয়েছে। তার পরও বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত। আগামী বাজেটে হয়তো এগুলোকে আবার পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
সবশেষে
সরকারের এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও আইএমএফের চাপে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রান্তিক, স্থায়ী উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। শ্রমজীবী মানুষের জন্য সর্বজনীন রেশন ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু না করে সরকার বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই বর্তমান মূল্যস্ফীতির মধ্যেই ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্তে গ্রামীণ স্বল্প উপার্জনকারী এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। অনেকেই বলছেন সংন্কার না নির্বাচন এই বিষয়টির নিস্পত্তি হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং সময়ই বলে দিবে দেশ কোন দিকে যাবে যার জন্য আমাদেরে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু সময় সেই প্রত্যাশা রইল।
লেখক: অধ্যাপক (অর্থনীতি), সাবেক পরিচালক, বার্ড (কুমিল্লা), সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা