Friday 18 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বই সংকটে ক্লাসে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা

সাকিব এ মামুন
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৮:৪৯

ভৌগোলিক অবস্থান ও নানান প্রতিবন্ধকতা-জটিলতার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় শিক্ষাখাতে পিছিয়ে আছে পাহাড়ের সাধারণ জনগোষ্ঠী। তন্মধ্যে নতুন বছরের প্রথম মাস শেষ হয়ে দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারির মাঝ পথে। এখনো বেশিরভাগ বই হাতে পায়নি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। ফলে পড়ালেখায় আগ্রহ হারাচ্ছে এ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা। শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য বলছে, এখনো ৫৪ শতাংশ বই বিতরণ করা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

পার্বত্যাঞ্চলের একাধিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির তিনটি, সপ্তম শ্রেণির তিনটি, অষ্টম ও নবম শ্রেণির দুটি এবং দশম শ্রেণির চার বিষয়ের বই বিতরণ করা হয়েছে। আর প্রাথমিকের কিছু পাঠ্যবই বিতরণ হলেও কোথাও কোথাও সংকটের খবরই বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণের এই চিত্র কেবল পাহাড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর মধ্যেই নয়, রাজধানীসহ বাইরেও বিভিন্ন শহরে কমবেশি সবখানে একই। তবে সীমান্তবর্তী দুর্গম গ্রামাঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বই পেয়েছে। কিন্তু চতুর্থ থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত অধিকাংশ বিষয়ের বই এখনো পায়নি শিক্ষার্থীরা। মূলত বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের বই পেয়েছে তারা। তবে সব শিক্ষার্থী পায়নি। গ্রামাঞ্চলের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে একটি বইও হাতে পায়নি প্রাথমিক স্তরের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এমন চিত্রও উঠে আসছে।

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বই না আসায় এখনো পুরোদমে ক্লাস শুরু করা হয়নি। অনেক বিদ্যালয়ে দুটি বা তিনটি করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সেখানেও উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। বই না থাকায় ক্লাসে মনোযোগী হচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। গ্রামীণ এলাকার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে পুরনো বই দিয়ে দু-একটি ক্লাস করানো হচ্ছে। তাও আবার এক বেঞ্চে একটি বই দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। তবে অনেকে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন কপি সংগ্রহ করে পড়শোনা শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। এতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বল্প আয়ের অভিভাবকরা।

বিজ্ঞাপন

রাঙামাটির লংগদু উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রাক-প্রাথমিক, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কোনো বই বিদ্যালয়ে পৌঁছায়নি। পুরনো বইও নেই। কয়েকটি বই থাকায় সেগুলো পাঠদানের সময় ক্লাসে নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়। ক্লাস শেষে আবার নিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে এক বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের একটি বই দিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে।

অভিভাবকরা বলেন, শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা বই না পেলে এক ধরনের হতাশা কাজ করে। পড়াশোনার আগ্রহ কমে যায়। যেহেতু গত বছর আন্দোলন ও নানা কারণে শিক্ষার্থীরা একটা মানসিক অস্থিরতার মধ্যে আছে, তাই তাদের দ্রুত বই দিয়ে ক্লাসে ফেরাতে হবে।

তথ্য বলছে, ২০১০ সাল থেকে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিচ্ছে। এনসিটিবির ২২ জানুয়ারির তথ্য মতে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ৪৬ শতাংশ পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়েছে। এখনো বাকি ৫৪ শতাংশ, এ কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বই পায়নি।

গণমাধ্যম ও সংবাদপত্রের বরাতে জানা গেছে, শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হাতে পাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

শিক্ষা ও গবেষণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার যেন শিক্ষাকে অবহেলা করছে। এখনো বই দিতে না পারার দায় কার? শিক্ষাকে মেগা প্রজেক্ট হিসেবে নেয়া এখন সময়ের দাবি।

লেখক: সংবাদকর্মী, রাঙামাটি

সারাবাংলা/এএসজি

বই সংকট মুক্তমত সাকিব এ মামুন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর