Wednesday 15 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খবর যখন সবার


১৪ মার্চ ২০১৮ ১৭:৫৩ | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৮ ১৮:১৫

সোমবার (১২ মার্চ) বেলা পৌনে তিনটা। হঠাৎ নিউজরুমের দক্ষিণ পশ্চিম কোনার দিক থেকে মুনমুন (শারমিন শামস, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর) অনেকটা ছুটতে ছুটতে এসে বললেন, কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।

মূহুর্তেই এক ঝটকা ঝড় বয়ে গেলো বার্তাকক্ষে।

আমাদের বার্তাকক্ষটি একটা লম্বাটে ওপেন ফ্লোর। অফিসের মূল প্রবেশপথের (পূর্বদিকটা) ঘেঁসে আমরা যারা নিউজরুমে সরাসরি জড়িত, তারা বসি। ওদিকটাতে ডেপুটি এডিটর পলাশ মাহবুব, মুনমুনরা তাদের টিম মেম্বারদের নিয়ে বসেন। ওনারা ভিউজের পার্টগুলো দেখেন। তাদের পরপরই স্পোর্টস সেকশন। আর মাঝের টেবিলগুলোতে রিপোর্টিং টিমের যে যখন অফিসে থাকেন বসেন। তবে সবমিলিয়ে একটা ফ্লোর, একটা টিম। একসাথেই কাজ করি।

মুনমুন যখন খবরটি বলতে বলতে ছুটছেন বার্তাকক্ষের দিকে, তার পিছু পিছু আসছিলেন পলাশ মাহবুব। এদিকে নির্বাহী সম্পাদক মাহমুদ মেনন ছুটে বের হয়ে এলেন তার কক্ষ থেকে।

বার্তা বিভাগে বার্তা সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌসির তত্ত্বাবধানে সিনিয়র নিউজরুম এডিটর মুনির মমতাজ ততক্ষণে প্যানেলে নিউজ লিখতে বসেছেন। মুনমুনও তার পেছনে দাঁড়িয়ে বলছেন তার কাছে থাকা তথ্য।

‘কাঠমান্ডুতে ইউ-এস বাংলার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত’

এক লাইন খবর, এটাই শিরোনাম। দ্রুত রিলিজ করার সিদ্ধান্ত হলো।

মুনমুনের কাছে তখনই এলো একটি ছবি। ত্রিভুবন বিমানবন্দর থেকে তোলা। একজন বিমানবন্দরে অপেক্ষমান ছিলেন যে ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হয়েছে তারই ফিরতি ফ্লাইটে ঢাকা আসবেন বলে। তিনিই পাঠালেন সে ছবি। প্রাথমিক খবরও তার তরফ থেকেই এসেছে।

এক্সক্লুসিভ ছবি দিয়ে একটি খবর খুব দ্রুত প্রকাশিত হলো।

বিজ্ঞাপন

‘ব্যাড নিউজ ইজ গুড নিউজ’-এর বুনো উচ্ছ্বাসে যেনো মেতে উঠলো বার্তাকক্ষ।

এরপর যে যার অবস্থান থেকে খবরে পালক যোগ করতে শুরু করলো। অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর সন্দীপণ বসু, স্পোর্টস সেকশনের নিউজরুম এডিটর সুমিত্র নাথ সবাই যে যার জায়গা থেকে তথ্য-ছবি আনতে শুরু করলো। আর এভাবেই খবর হয়ে উঠলো সবার।

পরে লোকমুখে শোনা গেছে এই দুর্ঘটনার খবর পরিবেশনে সারাবাংলা.নেট ভালো করেছে। এবং সেটা সম্ভব হয়েছে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

ওই দিন ভোর থেকেই ছিলো বার্তাকক্ষ সরগরম। ভোর হতে না হতেই খবর ছড়ায় মিরপুরে বস্তিতে আগুন। প্রকাণ্ড আগুন গ্রাস করে হাজার পাঁচেক বস্তি ঘর। ফলে বার্তাকক্ষের ঘুমভাগে ভোর রাতেই। প্রাথমিক নিউজ লেখা হয় মোবাইল স্ক্রিনেই। এরপর বার্তাকক্ষ তপ্ত হতে থাকে আগুন বাড়ার সাথে সাথে। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে। কিন্তু আগুন নিভলেই তো শেষ কথা নয়। থাকে আরো নানা ধরনের খবর। ২০ হাজার মানুষ ঘরহাতা তাদের কত কথা, কত খবর। সব মিলিয়ে বার্তা কক্ষে ও মাঠে অনেকের কর্মীর কাজ এক যোগে চলতে থাকে।

আগুনের পরপরই ছাত্রদলের একজন নেতার রিমান্ডের পর কারাগারে মৃত্যুর খবর আসে। সে নিয়ে চলে এক দফা হুড়োহুড়ি।

এরপর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন আদেশের খবর। সেটা নিয়েও নিউজরুম জাগ্রত হয়ে ওঠে এক দফা। আর যখন নেপালে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর এলো তখনতো পুরো হাউজ একযোগে উঠে পড়ে লাগলো।

নির্বাহী সম্পাদক বার্তাকক্ষে নিজে বসে গেলেন। বার্তা সম্পাদক একে ফোন করেন ওকে ফোন করেন। তথ্য পেলে নিজেই লিখতে বসে যান। একবার টিভির সামনে ছোটেন, আবার অন্য সূত্রে খোঁজ নিতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

যে আমি হিন্দি ভাষা বুঝি ছোট বাচ্চাদের আধো বুলির মত। সেই আমি পুরা নেপালি ভাষায় পরিচালিত টিভি অনলাইনে খুলে নিউজ আপডেট নেওয়া শুরু করলাম। সঙ্গে সিনিয়র নিউজরুম এডিটর আবু তালহা। সেখান থেকেই আমরা দিয়ে যাচ্ছিলাম একের পর এক আপডেট। ওদিকে মুনমুনের সেই পরিচিত জনের সূত্রে ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট থেকে আসতে থাকে নতুন নতুন ছবি। খবরের আপডেট।

ওদিক থেকে সুমিত্র জানালো তার এক পরিচিত পাইলটের মাধ্যমে নিশ্চিত জেনেছে উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেন জীবিত রয়েছেন। সে খবরও আমরাই ব্রেক করলাম। বিনোদন সেকশনে তুহিন সাইফুল তার এক নেপালি বন্ধুর সোর্সে পাচ্ছিলো আরও টাটকা ছবি, টাটকা তথ্য। সব মিলিয়ে সংবাদে সরব এক বার্তাকক্ষ।

স্পোর্টস সেকশনের সিনিয়র নিউজরুম এডিটর মুশফিক পিয়াল ফেসবুক ঘেঁটে ঘেঁটে বের করে আনলো, দূর্ঘটনাকবলিত এয়ারলাইন্সের কিছু আরোহীর ছবি, যারা বেড়াতে যাওয়ার জন্য ঢাকা ছাড়ার আগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

এতো গেল নিউজরুমের চিত্র। মাঠে জাকিয়া আহমেদ ততক্ষণে ছুটে গেছেন ইউএস-বাংলার কার্যালয়ে। সেখানে ও সিভিল এভিয়েশন থেকে যা যা পাচ্ছেন খবর দিয়েই যাচ্ছেন। সঙ্গে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট রিজভী আহমেদ।  ছবি পাঠাচ্ছিলেন স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট হাবিবুর রহমান।

সময় গড়াচ্ছে, তথ্যও বাড়ছে। আরোহীদের পরিচয় কিছু কিছু করে পাওয়া যাচ্ছে। একটু একটু বের হলো আমাদেরই পরিচিত অনেকেই।

ম্যানেজিং এডিটর রফিকুল্লাহ সানার অত্যন্ত প্রিয়জন রিমু ও তার স্ত্রী বিপাশা তাদের ছোট্ট ছেলে অনিরুদ্ধ সে ফ্লাইটে। তখনও অনিশ্চিত কেউ বেঁচে আছে কি না। ধীরে ধীরে আসতে থাকে মৃত্যু খবর। আরও পরে জানা যায়, ফ্লাইটে ছিলেন বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ ছিলেন ওই ফ্লাইটে। খবর যত বাড়তে থাকে তার সাথে সাথে বাড়তে থাকে মৃত্যুর মিছিল। সরকারের আমলা, প্রকৌশলী, উন্নয়ন কর্মী, ব্যবসায়ী, ছাত্র, শিক্ষক কেউ বাদ যায়নি সে তালিকা থেকে।

সেগুলো নিয়ে খবর হতে থাকলো। এরই মধ্যে সাইড স্টোরি হিসেবে প্রস্তুত হলো একের পর এক। বিশ্বের নিকৃষ্ট বিমানবন্দর ত্রিভূবন, বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগের বিভ্রান্তি এগুলো নিয়েও তৈরি হলো একের পর এক খবর।

সবাই যখন খবর নিয়ে ব্যস্ত, তখন অ্যাকাউন্টস অ্যাডমিনে যারা কাজ করেন তারও ছুটে আসেন নিউজরুমে। ফাইন্যান্স হেড আতাউর রহমান, জেনারেল ম্যানেজার মিয়া ফয়সাল হাসান, তারাও চেষ্টা করছেন কোথাও থেকে নতুন কোন তথ্য জানলে শেয়ার করছেন।

সাধারণত নিউজরুমে আলাদা আলাদা ডেস্ক থাকে। সবাই যার যার মতো সংবাদ তৈরি করেন। অথচ এমন একটি দূর্ঘটনার খবরে নিউজ, স্পোর্টস, কালচারাল, বিনোদন ইন্টারন্যাশনাল কখন সবাই এক হয়ে গেলো কেউ জানে না।
অনলাইন সংবাদমাধ্যমের নিউজরুম এমনই। প্রয়োজনে সবাই এক হয়ে যান।

সারাবাংলা/এমএম

বিজ্ঞাপন

শুটিং খরচ কমালো এফডিসি
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:০২

১০০ পর্বে ‘সিটি লাইফ’
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩৮

আরো

সম্পর্কিত খবর