কোনো দুর্বৃত্তের সাথে যদি ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী বা ততোধিক দুর্বৃত্তের সরাসরি খাতির থাকে বা স্বার্থের সংলিষ্টতা থাকে বা অন্ধ প্রেম জাতীয় আশীর্বাদ থাকে আর সেই দুর্বৃত্তের সাথে যদি আপনার কোন কিছু নিয়ে ঝামেলা হয়েই যায় বা আপনি তার স্বার্থের দুরভিসন্ধির মধ্যে পড়েই যান তাহলে আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠবে বিপদসংকুল ও অনিশ্চিত। ফিলিস্তিনিদের অবস্থাও হয়েছে তদ্রুপ। পচাত্তর বছরের কান্নার যেন শেষ নেই। টানেলের শেষ প্রান্তে আপাতত কোন আলোক ছটাও দেখা যাচ্ছে না। পৃথিবীতে এরূপ লাগাতার জুলুমের কাহিনীচিত্র এর আগে দেখা যায় নি, শোনাও যায় না।
শৈশব থেকে শুনে আসা ফিলিস্তিন সমস্যার মোকাবেলা বা সমাধান যেভাবে হতে পারত সেপথে আমরা মুসলমানরা হাঁটি নি কোনদিন। আমরা চলেছি অন্যপথে। আর আল্লাহর কাছে নিবেদন করে আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। উম্মাহ উম্মাহ করেছি অথচ সেই ‘উম্মাহ’ বলে একক কোন স্বত্তার অস্তিত্ব বিশ্বের কোথাও আজ দেখা যায় না। চাক্ষুষ করা তো দূরের কথা ছায়া পর্যন্ত দেখা যায় না। আরব বিশ্ব নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্যস্ত, সৌদি যুবরাজ হালাল পতিতালয়, পানশালা, সিনেমা, বিলাসি ভবন, হোটেল, মোটেল, পর্যটন হটস্পট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। মিডল ইস্টের শেখরা মৌজমাস্তি করার জন্য হলিউড-বলিউড সেক্সের টানে পশ্চিমা আর ইণ্ডিয়া প্রীতিতে মুগ্ধ। ভারতের মুসলমানদের সাম্প্রতিক হালত দেখে তারা একটা নাম সর্বস্ব বিবৃতিও দেয় না। অথচ সারা মিডল ইস্টে ভারতীয় লোকজন গিজগিজ করছে, সেখানে ‘উম্মাহ’ প্রীতির লেশমাত্র নেই। আফগানিস্তানের উত্থানে পশ্চিমা শক্তির চেয়েও তারা অনেক ভীত।
বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের এত এত দেশের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ নেই। ব্যাক্তি বা সংস্থার তরফ থেকে কিছু মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান খয়রাতের টাকা ভিক্ষার মত করে দেয়। আর কিছু কর্মহীন আরবী শিক্ষিত বানানোর জন্য স্কলারশীপ দেয় মাদ্রাসা পড়ুয়াদেরকে। তেত্রিশ বছর সরকারি চাকরি জীবনে পোল্যান্ড সরকারের স্কলারশীপ দেখেছি, রুমানিয়া, সুইজারল্যাণ্ড, রাশিয়া, চীন, জার্মানী, ফ্রান্স, ব্রিটিশ এরকম অসংখ্য দেশের বৃত্তি ও কর্মসূচি দেখেছি। সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ট্যুর ইত্যাদি আয়োজন করতে দেখেছি কিন্তু পুরো মিডল ইস্টের তরফ থেকে এরকম অফার শুনিনি।
একদা ‘উম্মাহ’র অস্তিত্ব ছিল, সেটা আমাদের জন্য গৌরবের ও শ্রদ্ধার। সেটা ইতিহাস। এখন নেই। উম্মাহর নামে এখন যা আছে তা সম্মিলিত দোয়ায়, তাও গরীব মুসলিম দেশের অসহায় মানুষের মাঝে। আমাদের সন্তানেরা ঝাঁকে ঝাঁকে বিদেশ চলে যাচ্ছে উন্নত জীবন যাপনের জন্য। তারা আর ফিরে আসবে না এটা নিশ্চিত। উম্মাহর ফিলিংস ওই পর্যন্তই থেকে যাবে। তাদের অনেকেই সেদেশে বিয়ে করবে, হয়ত ভিনদেশি, বিধর্মী বা নাস্তিক অথবা মডার্ন, মডারেট হিসেবে গর্বিত কাউকে। তাদের সন্তানরা হয়ত বেড়ে উঠবে ককটেল সংস্কৃতি নিয়ে, ধর্মীয় মূল্যবোধ হয়ত তাদের কাছে অনেকটা বাড়াবাড়ি বলেই মনে হবে। হয়ত ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানের তকমা নিয়ে সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে ভাতা খেয়ে বড় হবে। এমনিভাবে বিজাতীয় কালচারে মিশে যাবে।
আমাদের দেশ থেকে যারা মিডল ইস্টে যায় তারা সুইপার, সেলসম্যান, কামলা, শ্রমিক হিসেবেই যায়। তারা তাদের প্রাপ্যটুকুও পায় না। যা পায় তা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক কম। কারণ আমরা গরীব। এখানে উম্মাহ ফিলিংস থাকতে নেই। গরীবের সাথে আত্মীয়তা আবার কিসের? কিছু মাদ্রাসা পড়ুয়া আর ভার্সিটির আরবী পড়ুয়া ছাত্র স্কলারশিপ নিয়ে যায়, পড়াশোনা করে ফিরে আসে। মাদ্রাসা দেয়, এতিমখানা গড়ে তোলে। মুষ্টিমেয় দু’চারটি বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর মাদ্রাসা ছাড়া বাকীগুলো পরে কিভাবে চলে তা সবার জানা।
তাই, আমাদের ভাবতে হবে নতুন করে, নতুন উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে, জ্ঞানবিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে, গবেষণা আর উদ্ভাবনের মাধ্যমে। ‘উম্মাহ’ শুধু বিপদে পড়লে বা আক্রান্ত হলে আল্লাহকে স্মরণ করার জন্য না। চিন্তা করতে হবে সার্বিক ভাবে। আজকের ফিলিস্তিনের এরূপ দশা এক দুই বছরে সৃষ্টি হয়নি। ষাটের দশকে যুদ্ধের মাধ্যমে এই বিভীষিকার শুরু। চারিদিকে আরব বিশ্বের তাবত তাবত বড় বড় দেশ ও প্রভাবশালী নেতা থাকতেও আমরা ক্ষুদ্রতম জাতিগোষ্ঠী ইহুদীদের সাথে পারি না কেন? এই উপলব্ধি অন্বেষণ করা খুবই জরুরি। মহান আল্লাহ কৌশল করতে বলেছেন। কূটকৌশল না। আমরা প্রার্থনার মাঝেই আমাদের দায়িত্ব মহান আল্লাহর গায়েবী মদদের উপর ছেড়ে দিয়ে উম্মাহর জন্য যথেষ্ট করেছি ভেবে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি। মহান আল্লাহই তো বলেছেন, তিনি সে জাতিকে সাহায্য করেন না যে জাতি নিজেরা কোশেশ করে না।
ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়েছে। মহানবী রাসুলুল্লাহ (সা:) এর কাছে মহান আল্লাহর তরফ থেকে প্রথম প্রেরিত প্রত্যাদেশ ছিলো, ‘পড়’। আমরা সেই পড়াকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বাইরে শুধুমাত্র ধর্মীয় কিতাবে নিবদ্ধ করে রেখেছি। যারা আধুনিক শিক্ষায় দীক্ষা নেয় তাদেরকে ইহজাগতিক ভাবে সফল বলে প্রকারন্তরে তাচ্ছিল্য করি। আজকের ইহুদিদের উত্থানের ইতিহাস বুদ্ধির, অর্থ-বিত্তের, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় আর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায়। আর অবশ্যই সুপার পাওয়ারের ব্লেসিংয়ের কারণে। তারা প্রথমে পরিকল্পনার ছক কষেছে, তা বাস্তবায়নের জন্য শক্তির দ্বারস্থ হয়েছে, নিজস্ব অর্থের প্রভূত বিকাশ করেছে। বৃহৎ বলয়ের সান্নিধ্যে থেকে নিজেদের সামরিক সামর্থ ও শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করেছে। বিশ্বব্যাপী একটা গ্রহণযোগ্যতাও তৈরি করে নিয়েছে। এরপরের ইতিহাস সবার জানা। যেখানে তাদের নিজস্ব কোন ভূখ-ই ছিলো না, স্থায়ীভাবে বসবাসের মত কোন ব্যবস্থাও ছিলো না সেখানে তারা কূটকৌশলের মাধ্যমে নিজেদেরকে শুধু প্রতিষ্ঠিতই করেনি, বিশ্ব মুরুব্বীদের প্রাণ ভোমরা হয়ে আছে। পশ্চিমারা সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশু থেকে ইহুদিদেরকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে, অর্থ, অস্ত্র, প্রযুক্তি ও নেটওয়ার্ক দিয়ে আজকের হৃষ্টপুষ্ট করে গড়ে তুলেছে। তাই, ইসরাইল আজ নির্ভয়ে ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের নিজস্ব জায়গা থেকে জোরপূর্বক, নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর মাধ্যমে বিতারিত করতে পারছে। অবশিষ্ট যে ক্ষুদ্র অংশ এখনো টিকে রয়েছে তাও কব্জা করার জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে।
পশ্চিমা প্রচার মাধ্যম হামাস আর হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তুলে ধরছে। ইহুদিরা ফিলিস্তিনি নেতা ও নৃপতিদেরকে টার্গেট করে করে হত্যা করছে। বলা হচ্ছে হামাস হামলা চালিয়েছে বলেই তারা পাল্টা হামলার শিকার হয়েছে। আরব লীগ চুপ। ওআইসি তেলের দরপতন ঠেকাতে আর নিজেদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করতে মহাব্যস্ত। তাদের সবার পরম আস্থাভাজন গুরু আমেরিকা ও পশ্চিমাদের নিয়ে তাদের কোন কথা নেই, কোন উদ্যোগ নেই। পরিস্থিতির সমাধানে নেই কোন উদ্যোগ। জাতিসংঘ তাদের বিভিন্ন এজেণ্ডাকে প্রায়োরিটিতে রাখতে ব্যস্ত। মোটকথা ফিলিস্তিনিদের পাশে কেউ নেই, নেই কোন আরব দেশও। ইরান কিছুটা সমর্থন দিচ্ছে। তবে সেটা যতটা না পরিস্থিতি সমাধানের লক্ষে তার চেয়ে বেশি মার্কিন জোটের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সংহত ও সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে। বাকি বিশ্বের প্রায় সব জায়গা থেকেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানানো হচ্ছে, হচ্ছে বিশাল বিশাল সমাবেশ, মার্চ ফর (টু) গাজার সাথে একাত্মতা প্রকাশ। কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ‘বিরান’ গাজা’ই এর একমাত্র সমাধান। পশ্চিমারা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। বিপরীতে মুসলিমদের মধ্যে দারুণ অনৈক্য বিরাজমান। অন্য ধর্মাবলম্বীরা যতটা না বিষোদগার করে থাকে তার চেয়ে বেশি ও বেপোরোয়া বিষোদগার করে থাকে তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিত মুসলিমরা।
ইসলামী অনুশাসন এদের ভালো লাগে না, উল্টো তাদের মধ্যে রয়েছে নিজেদের যাচ্ছেতাই ভোগবিলাসী জীবনযাপন করতে না পারার ভীতি। এগুলো পশ্চিমা মিডিয়ার সৃষ্ট। তাই মুখে মুখেই টিকে আছে মুসলিম উম্মাহর ধ্বনি। মাঝে মধ্যেই ইহুদি পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হয়ে থাকে। এর বিপরীতে মুসলিম পণ্যের তালিকা নেই। কোনো পণ্যের একক বা একাধিক কোনী ব্র্যাণ্ড কি আছে মুসলিম বিশ্বের? একটা কোমল পানীয়রও কি বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে? গত দু-চার-পাঁচ-ছয় দশকে কোন কিছু কি আবিষ্কার হয়েছে মুসলিম রাষ্ট্রের ভেতর থেকে? পৃথিবীর তাবত ধনী দেশের বিলাসী পণ্যের পসরা দেখা যাবে মিডল ইস্ট জুড়ে। বিপরীতে তাদের পণ্য কোথায়? বিশ্বব্যাপী তরল জ্বালানী বেঁচে বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত আরব সুপার পাওয়ার মুসলিমরা গা ভাসিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে কোন দিকে যাচ্ছে তাও খেয়াল করে দেখছে না।
এভাবেই হয়ত একসময় আগেকার মত সব কিছু স্তিমিত হয়ে যাবে। প্রসঙ্গটি হয়ত চাপাও পড়ে যাবে। হামাস-হিজবুল্লাহর বিচ্ছিন্ন টোকেন হামলা বা ইসরায়েলের নৃশংসতায় হয়ত কখনো কখনো ফিলিস্তিন প্রসংগ আবারো আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোণাম হবে। আবার মোড়লদের মাতব্বরি শুরু হয়ে যাবে। মিডিয়া ব্যস্তসমস্ত হয়ে উঠবে। চারিদিকে পক্ষে-বিপক্ষে নিন্দা আর সহানুভূতি প্রকাশের হিড়িক পড়ে যাবে। লম্বা জুব্বা পরিহিত আরব ধনকুবের রাজর্ষিদের সফেদ অবয়বে কৃত্রিম দরদ ফুটে উঠবে ও লোক দেখানো নড়াচড়া শুরু হয়ে যাবে। পরিশেষে পর্বতের মুষিক প্রসবের মত যা হওয়ার তাই হবে। মাঝখান থেকে পক্ষে-বিপক্ষে হতাহতের সংখ্যা বাড়বে, সে অঞ্চলে পশ্চিমাদের আরো মাতব্বরি বাড়বে ও ক্রমাগত মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। ইসরায়েল আরো হৃষ্টপুষ্ট হবে। তার মিত্রের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে, পারস্পরিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। ফিলিস্তিনি মানচিত্র আরো সরু হতে থাকবে। এক পর্যায়ে তা অধিকৃতদের দখলেও হয়ত চলে যাবে। হয়ত একেবারে সীমিত আকারে একটি করিডোর নিয়ে ফিলিস্তিনিরা টিকে থাকবে ইসরায়েলের করদ রাজ্য হয়ে। অথবা প্রজাতি বিলুপ্তির মত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও তার মানচিত্র। অবস্থা দৃষ্টে এমনটিই মনে হওয়া স্বাভাবিক।
ষাটের দশকে ফিলিস্তিনের সমস্যা যে আকারে ও যে প্রকারে বিরাজমান ছিল এখন তা গুণে-মানে- পরিমানে ও গভীরতায় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন ইসরায়েল রাস্ট্র একান্তভাবে মার্কিন মদদপুষ্ট ও পশ্চিমা রসদযুক্ত ছিল। এখন তার ব্যাপকতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অপর দিকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি আরবরা তখন ছিল ঐক্যবদ্ধ ও সহানুভূতিশীল। কিন্তু এখন সেই ঐক্যের জায়গায় অনৈক্য বৃদ্ধি পেয়েছে ও নিজ নিজ স্বার্থ সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই, মুসলিম উম্মাহর অবস্থানকে সুসংহত করতে হবে সর্বাগ্রে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তি আর কারিগরীতে, কুটনীতি আর অর্থনীতিতে, সামরিক সক্ষমতায় ও নেটওয়ার্কিংয়ে আরো শক্তিশালী হতে হবে। ধনী আরব দেশ সমূহকে এসব খাতে বিপুল বিনিয়োগ করতে হবে। সারা বিশ্ব থেকে মেধাবী মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বাছাই করে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চ্চায় ও গবেষণায় নিয়োজিত করতে হবে। নিজেদের মধ্যে বৃহত্তর অর্থনৈতিক জোট গঠন করে বিভিন্ন প্রণোদনা-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে মুসলিমদের মাঝে সাম্যতা আনতে হবে ও বিভেদ প্রশমন করে নবতর বলয় সৃষ্টি করতে হবে। ভোগবিলাসী কৃত্রিম জীবনোপকরণে বিনিয়োগের পরিবর্তে মুসলিম উম্মাহর আত্মনির্ভরতার জন্য কাজ করতে হবে। আরব ঐক্যই হতে পারে মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণকর। আর মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হলে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান পথ বের হয়ে আসতে সময় নেবে না বেশি দিন। কিন্তু মাঝেমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অপরিকল্পিত, উদ্দেশ্যবিহীন ও বিচ্ছিন্ন হামলা করা হলে ইটের পরিবর্তে পাটকেলে ব্যাপক প্রাণঘাতী হজম করতে হবে। এতে করে শক্তিক্ষয় আর লোকক্ষয় ছাড়া বিশেষ কিছু হাসিল হবে বলে মনে হয় না।
সাম্প্রতিক উত্তেজনার বিষবাষ্প মধ্যপ্রাচ্যের সামগ্রিক অবস্থা কোথায় নিয়ে যাবে তা অনুমান করা বেশ কঠিন। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ফিলিস্তিনিদেরকে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন ইসরায়েলের আজকের এই সুদৃঢ় অবস্থানের পেছনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। পক্ষান্তরে, না মধ্যপ্রাচ্যে, না ফিলিস্তিনে এককভাবে গ্রহণযোগ্য কোন নেতৃত্ব এখন রয়েছে। একসময় মিসরের আনোয়ার সাদাত, সিরিয়ার হাফেজ আল আসাদ, প্যালেস্টানের ইয়াসির আরাফাত, জর্ডানের বাদশা জহীর, লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি প্রমুখ নেতৃবৃন্দের দৃঢ়তা ও গ্রহণযোগ্যতা মধ্যপ্রাচ্যের গন্ডী পেরিয়ে সমগ্র বিশ্ব তথা পশ্চিমাদের কাছে সমীহ জাগানিয়া ছিলো। এখন নেই। নেতৃত্বের এই শূন্যতা ও মুসলিম উম্মাহর অনৈক্যের কারণে ফিলিস্তিনিরা উপুর্যুপরি আক্রান্ত হচ্ছে আর নৃশংসতার শিকার হচ্ছে। তাদের প্রাত্যহিক সাধারণ জীবন বলে কিছু নেই। ভবিষ্যৎ বলে যতটুকু দৃশ্যমান হয় তার সবটুকুই ঘোর কুয়াশাচ্ছন্ন, তমসাচ্ছন্ন। তারা যেন ভুতুড়ে জনপদে কাঁটা তারে ঘেরা নিজ দেশে উদ্বাস্তু একদল মানব দাস। কান্নাই যাদের অজন্ম পাওনা।
লেখক: কলামিস্ট