আজকাল অনেকেই নিজেদের প্রোফাইল লক রেখে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছেন। যারা পাঠান তারা আশা করেন রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট হবে। কিছু সময় অপেক্ষা করেন। এরপর রেসপন্স না পেলে কি ভাবেন তা জানার উপায় থাকেনা। তবে অনুমান করা যায় সহজেই। তিনি ভেবে নিতে পারেন যিনি রিকোয়েস্ট পেয়েও এক্সেপ্ট না করে ফেলে রেখেছেন তিনি তাকে অবজ্ঞা করছেন। উন্নাসিক গোছের লোকজনদেরকে মানুষ পছন্দ করে না। তাই মনে মনে হয়ত গালি দেন অথচ যিনি রিকোয়েস্ট পাঠান তিনি একটিবারের জন্যও ভেবে দেখেন না কেন তার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট হচ্ছে না।
সঙ্গত কারণেই নারী ও পুরুষের প্রোফাইল আইডি ভিন্নভাবে বিবেচ্য হওয়া উচিত। সে অনুযায়ী লকড, আনলকড প্রোফাইলও ভিন্নভাবে বিবেচ্য। নারীদের প্রসঙ্গে পরে আসি। প্রথমেই আসি, কেন আমরা ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই আর কেনই বা তা গ্রহণ করি বা এড়িয়ে চলি। ফেসবুক পরিচিত অপরিচিত লোকের জংশন। প্রতিদিন এখানে লক্ষ লক্ষ চেনা-অচেনা লোকের সমাগম হয়ে থাকে। নানা কনটেন্ট, নানা প্রসঙ্গ, নানা প্রশ্ন ও উত্তরের ঝাঁপি এই ফেসবুক। ফেসবুক জ্ঞানের ভাণ্ডার। অশ্লীলতার আঁধার। যার যেমন রুচি চাহিবা মাত্র গুগল বাবাজির কল্যাণে ফেসবুকের প্লাটফর্মে তা মেলে এক টোকায়। অজানাকে জানার আগ্রহ মানুষের চিরকালীন। কোথায় বেড়াতে যেতে মন চাচ্ছে সার্চ করে সেখানকার আবহাওয়া, রীতিনীতি, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, যাতায়াত রুট ও সাশ্রয়ী ব্যবস্থার খবর ঘরে বসেই পাওয়া যায়। এতে করে সম্ভাব্য বাজেট সম্মন্ধে একটা ধারণা পাওয়া যায়, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা যায়। এগুলো অনলাইনের, ফেসবুকের সুবিধার জায়গা। কিছু অসুবিধা বা অস্বস্তির জায়গাও আছে। সেগুলো ব্যবহারকারীর চাহিদা মোতাবেক এসে হাজির হয়ে থাকে। সে প্রসঙ্গে আর না যাই।
ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট প্রসঙ্গেই ফিরে আসি। পুরুষ যখন তার প্রোফাইলের ঝাঁপি লক করে রিকোয়েস্ট পাঠায় তখন চটকরে কয়েকটা বিষয় মাথায় খেলে যায়। প্রথমেই দেখা যাক, পুরুষ কেন তার প্রোফাইল লক করে রাখে? এর সঠিক ধরাবাধা কারণ কোথাও রেকর্ডেড নেই। সাদা চোখে যা বুঝা যায় প্রোফাইল নিয়ে তার কোন সমস্যা বা রিজার্ভেশন আছে বা কোন না কোন সময়ে তার ভোগান্তি হয়েছে। অথবা যিনি লক করে রাখেন তিনি তার এক্টিভিটিজ বাইরের অপরিচিত কারো সাথে শেয়ার করতে চান না। অথবা এমন কিছু করেন যা তার অতি পরিচিত বা আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদেরকে দেখাতে চান না। আরেকটা কারণ হতে পারে, হয়ত তিনি সেলিব্রেটি, বড় মাপের পলিটিক্যাল এক্টিভিস্ট বা বর্ণচোরা টাইপের কেউ। ইদানীং অবশ্য কিছু নেতা-কর্মী, সিণ্ডিকেট দুষ্কৃতিকারী, এলাকায় চিহ্নিত পলাতক রাজনীতিক, সন্ত্রাসী এরূপ করলেও করতে পারেন। এ যেন বৈরি সময়ে অবগুণ্ঠিত হয়ে ডিজিটালি ভাসমান থাকতে চাওয়া।
একে তো লক তার উপর ছবি নেই এরূপ পুরুষের প্রোফাইল এক্সেপ্ট করাতে ঝক্কিও আছে। যিনি এরূপ অবগুণ্ঠিত থাকতে অভিলাষী তারও চিন্তা করা উচিত যার কাছে রিকোয়েস্ট পাঠানো হচ্ছে তিনি কোন ন্যুনতম কারণে ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করবেন? ধর্মীয় কারণে প্রোফাইলে ছবি সেঁটে দিতে আপত্তি থাকলে সেটা বিবেচনায় নেওয়া যায়। কিন্তু সেখানেও প্রশ্ন থাকে তাহলে তার ফেসবুকেই বা থাকার দরকার কি? প্রোফাইল উন্মুক্ত রেখে ছবি না দিলেও কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। যেসব পুরুষ প্রোফাইল লক রেখে রিকোয়েস্ট পাঠান তারা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবেন আশা করি। করা উচিত। অনেকেই এক্সেপ্ট করতে বিলম্ব হলে ম্যাসেঞ্জারে নক দিয়ে তা স্মরণ করিয়ে দেন। আবার অনেকে কটু বাক্যও ব্যয় করেন।
এবার আসি মেয়েদের লকড প্রোফাইল প্রসঙ্গে। এটা সহজেই বোধগম্য যে, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের প্রোফাইলে লোক সমাগম বেশি হয়ে থাকে। উটকো অনেক ঝামেলাও হয় তাতে। তাই মেয়েদের প্রোফাইলে ছবি অনেকে সাঁটাতে চান না। অনেকে আবার সেলিব্রেটিদের ছবি জুড়ে লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকেন। এটা হীনমন্যতা জনিত হতে পারে অথবা আত্মরক্ষা বা ম্যানিপুলেশন রোধ করার কৌশল হিসেবেও হতে পারে। আবার লাইক, ভিউ বৃদ্ধির সহজ টেকনিকও হতে পারে। অনেক মেয়ে ধর্মীয় লেখা বা স্থাপনার ছবি ব্যবহার করে থাকেন তার প্রোফাইলে। এর কারণ অত্যন্ত স্পষ্ট। কিন্তু তারাই বা কেন ছবিযুক্ত পুরুষ প্রোফাইলে রিকোয়েস্ট পাঠাবেন? যৌক্তিক এ প্রশ্নেও কোন উপসংহারে আসা যায় না।
অনেক পুরুষ মেয়েদের প্রোফাইলে অনৈতিক কথা, কুরুচিপূর্ণ ও বিশেষ ইঙ্গিতমূলক কন্টেন্ট পোস্ট করে থাকেন। এমনকি অশ্লীল ছবিও পোস্ট করে থাকেন। তাই, মেয়েদের প্রোফাইল লক করার ক্ষেত্রে কিছুটা যুক্তি রয়েছে। তবে এমনও অভিযোগ আছে যে, নিজেদের সার্বিক এক্টিভিটিজ আড়াল করার জন্যই বেশির ভাগ মেয়ে প্রোফাইল লক করে রাখে। আজকাল সুগার ড্যাডি ও সুগার মাম্মিদেরও ফেসবুকে সরব দেখা যায়। সব মিলিয়ে কে কি উদ্দেশ্যে প্রোফাইল লক করে রাখে তা বোঝার উপায় নেই। অনেকে হাজার হাজার ফেবু ফ্রেণ্ড যোগাড়ের খায়েশে বাছবিচার ছাড়াই রিকোয়েস্ট পাঠায়। এর ফায়দা কি জানি না। এতে করে কি প্রোফাইল আইডির কৌলিন্য বাড়ে? হয়ত। যদি তাই হয় তাহলে এরূপ দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই মানসিক বিষয়।
ফ্রেণ্ড রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করা না করা যেমন কারো অধিকার তেমনি প্রোফাইল লক রেখে রিকোয়েস্ট পাঠানোও তার অধিকার। কিন্তু সেটা বেয়ারা অধিকার। অন্যের যাচাই বাছাইয়ের অধিকারকে খর্ব করে ফ্রেণ্ড হতে চাওয়ার অধিকার কোন ক্রমেই ‘অধিকার’ হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না। সিংহভাগ ফেবু ফ্রেণ্ডই থাকে সাইলেন্ট। কবে কোনদিন কি কারণে রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলো, এক্সেপ্ট হওয়ার পর আর সেদিকে উঁকি মারারও খায়েশ হয়নি এরূপ ফ্রেণ্ডেরই বা আবশ্যকতা কি? এদেরকে ফ্রেণ্ড লিস্টে অযথা বহন করার ন্যুনতম কারণও দেখি না। আবার অনেক সময় ডিলিট করলে ব্যাক্তি মনে আঘাত পেতে পারেন বা নিজেকে হীন মনে করে কষ্ট পেতে পারেন ভেবে ডিলিটও করা যায় না। আশা করি বিষয়গুলো সবাই বিবেচনা করে দেখবেন।
সবাই যে সরল উদ্দেশ্য নিয়ে রিকোয়েস্ট পাঠায় তাও না। অনেকেই দুরভিসন্ধি নিয়ে বা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে রিকোয়েস্ট পাঠায়। অনেকেই ক্ষীর জমে যাওয়ার পর আসল চেহারায় উদ্ভাসিত হয়। এ নিয়ে নানা জটিলতা, মামলা-মোকদ্দমা, পক্ষে-বিপক্ষে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি এতই বিভৎস পর্যায়ে গিয়ে উপনীত হয় যে তা সভ্যতা-ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে যায়। তাই, আনফ্রেণ্ড না করে উপায়ও থাকে না।
এত কিছুর পরেও ফেসবুক এ যুগের মেলবন্ধনের বিশাল হাব বলা যায়। তাই পক্ষে-বিপক্ষে অনেক কথাই থাকবে। যার যার রুচি, পছন্দ ও অভ্যেসের উপর নির্ভর করে ফেসবুক বন্ধুতা বন্ধুর পথে অগ্রসর হতে থাকবে।
বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ এ বিতর্কের যেমন শেষ নেই তেমনি ফেসবুক উপাদেয় নাকি অস্বাস্থ্যকর তারও কোন মীমাংসা হওয়ার নয়। যিনি এর ব্যবহারকারী তিনিই এর নীতিনির্ধারক, কার্যনির্বাহক, পরিকল্পনাকারী ও শুশ্রূষাকারী। তবে পচা শামুকে পা কাটে এমন প্রবাদের প্রামানিক ভিত্তিকেও কিন্তু উপেক্ষা করা যায় না। অতএব সাধু সাবধান। সবার সুবোধ জাগ্রত হোক।
লেখক: কলামিস্ট