ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: অসময়ে অপ্রাসঙ্গিক আলাপ
১১ জুলাই ২০১৮ ২০:৫৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অহঙ্কার তার শিক্ষা-গবেষণার জন্য নয় বরং নিম্নবর্গের মানুষের অধিকার আদায়ের জায়মান এক ভূমি হিসেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সমালোচনা আমরা করি, তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগই সত্য। বিশ্ববিদ্যালয় তার মূল কাজের জন্য স্মরণযোগ্য না হয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য গর্ব করবে- সাদাচোখে এটি অস্বাভাবিকও বটে। কিন্তু এই “অস্বাভাবিকতাই” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সত্য চর্চা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভুলে গেলে চলবে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিই উঠেছিল রাজনৈতিক বৈষম্য নিরসন চেষ্টার একটি প্রতীক হিসেবে। পৃথিবীতে এটিই একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে ভাষাভিত্তিক একটি রাষ্ট্রের বীজ রোপিত হয়েছিল। সেটি ফলবান বৃক্ষ হয়েছে এবং আজও সে মাটিতেই বৃক্ষটি লালিত হয়ে চলেছে।
জ্ঞানের কাজ যদি হয় মানুষকে মুক্তির স্বাদ দেওয়া- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সে কাজে সফল হয়েছে বারবার। এই জাতি ও রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা আকার লাভ করেছে, করে চলেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিতেই। পুরো বাংলাদেশ আর তার মন এই ভূমিতেই সংহত ও রূপায়িত হয়েছে এবং হয়ে চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের বাঙালি জাতির এক ক্ষুদে সংস্করণ।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিসাধারণ ঘরের সন্তানরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিতে লালিত হয়েই হয়ে উঠেছেন অসাধারণ। বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতি সাহিত্য দর্শন অর্থনীতিতে আজতক যেটুকু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার সিংহভাগ কৃতীত্ব এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। একইভাবে, বাংলাদেশ যা হতে পারতো কিন্তু হয়নি, তার সিংহভাগ দায়ও এই বিশ্ববিদ্যালয়টিরই নেওয়ার কথা। যদিও আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যর্থতা যতটা না বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বসাধারণের তার চেয়েও বেশি দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতেই বেড়া ওঠা কিছু দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীর। এই ষড়যন্ত্রকারীদের সিংহভাগ সরল সোজাপথে না হেঁটে নানান দুই নাম্বার উপায়কে অবলম্বন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তা বনে যান। আর তাতেই ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে পুরো জাতির।
এই দেশের সাধারণ মানুষের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করে দিতে, সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের নিরন্তর সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দিতে ধনিক ও শাসক শ্রেণীর ষড়যন্ত্রসমূহ সবচে বেশি মুকাবিলা করতে হয়েছে এবং হচ্ছে এই ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়কেই। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পায়ের নীচে রাখতে নিম্ন রুচি, নিম্ন মান, নিম্ন সংস্কৃতির, দেশের সাধারণ মানুষের বিপক্ষে কাজ করা লোকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দণ্ডমুণ্ডের হর্তাকর্তা করার চেষ্টা চলেছে বারংবার, এবং ক্রমশ সেই চেষ্টা বেগবান হয়েছে।
যখনই দুই নাম্বার উপায়ে কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদটিকে দলিত করার সুযোগ পেয়েছে তখনই আমরা দেখেছি মানুষের অধিকার আদায়ের এই ভূমিটিকে সে সারা দেশের মানুষের জন্য আরও উন্মুক্ত অবাধ ও নিরাপদ না করে তাকে মুষ্টিমেয়র কুক্ষিগত করতে তৎপর হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রকারীরাই সাধারণ মানুষের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে সৈন্যসামন্ত আর চৌকি বসিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমগ্র দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে ফন্দি এঁটেছে।
ইতিহাস বলে, যতবারই এমন চেষ্টা হয়েছে ততো বারই প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কারণ তারা জানে, স্বৈরাচারের পায়ের নিচে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থাকা মানেই পুরো দেশ স্বৈরাচারের অন্ধকার থাবার নিচে থাকা। আর দেশবাসী জানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরাজয় মানেই বাংলাদেশের পরাজয়।
সারাবাংলা/এমএম