Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুদ্ধ হতে বাধ্য আমরা…


৫ আগস্ট ২০১৮ ১৪:৪৭

মাহবুব আলম লাবলু ।।

স্কুল জীবন থেকেই আমার মোটর সাইকেল চালনায় হাতেখড়ি। আর ভরসার বাহন হিসেবে মোটর সাইকেল চালানো শুরু বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে। প্রায় ২০ বছর আগে তখনই পরীক্ষা দিয়ে বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করি। এই লাইসেন্সর ওপর ভরসা করেই টয়োটা এক্সিও মডেলের একটি প্রাইভেটকারও চালাই। কিন্তু বছর দুয়েক আগে মোটর সাইকেল, মানিব্যাগের সাথে লাইসেন্সটিও ছিনতাই হয়ে যায়। নতুন করে লাইসেন্সটি নেই নেই করে নেয়া হচ্ছে না। চলছি সেই লাইসেন্সের দোহাই দিয়ে। ফটোকপির জোরে।

বিজ্ঞাপন

ব্যক্তি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আসি নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে। আমাদের সড়ক পরিবহন কিভাবে চলছে তা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা আছে বলে আমার অন্তত মনে হয়না। এই খাতের উপর ভর করে একটি গোষ্ঠি টাকার পাহাড় গড়ছেন। তাদের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটলেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে তা হাসিল করছেন। এ খাত দেখভালের জন্য আছেন সরকারের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী। কিন্তু নাটাই নাকি অন্য মন্ত্রীর হাতে। খবরদারি তারই বেশি। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে তাদের দ্বন্দ্বও নাকি প্রকট। যাইহোক, এবার আসি কিভাবে চলছে আমাদের গণপরিবহন সেই প্রসঙ্গে।

১. গণ পরিবহনের সব কাগজপত্র ঠিক থাকলেও পুলিশ ও দলীয় মাসলম্যানদের চাঁদা না দিলে চাকা ঘুরবে না। হপ্তা (প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত চাঁদার টাকা) না পেলে পুলিশ খামোখাই মামলা দিবে, রেকার লাগাবে। মাসলম্যানরা হুটহাট গাড়ি আটকাবে, ভাংচুর করবে। কাগজপত্র ঠিক থাকলেও এসব ঝামেলা সইতে হবে। না থাকলেও সইতে হবে। সুতরাং কাগজপত্র আপটুডেট না করেই চলছে গাড়ি। কিন্তু কচি প্রাণতো ঘুষ খায়না, এবার সামলাও ঠ্যালা। আর বেশির ভাগ গণপরিবহনের কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স নেই বলেই এখন রাস্তায় গাড়ি নেই।

বিজ্ঞাপন

২. বছর শেষে গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস সনদ নবায়ন করতে যাবেন? ঘুষ ছাড়া সম্ভব না। প্রতি বাসের জন্য ১০/১৫ হাজার টাকা ঘুষ দিলেই গাড়ি না দেখেই সব কাগজপত্র নবায়ন করে দেবেন বিআরটিএ এর অসৎ কর্মকর্তারা। আবার আপনি নিয়ম মানবেন! ঝকঝকে তকতকে বাস নিয়ে বিআরটিএতে যাবেন ফিটনেস সনদের জন্য, পাবেন না! নানা খুত খুঁজে বের করা হবে। এরপর আপনাকে আটকে দেয়া হবে। সুতরাং ট্রাফিক পুলিশকে হপ্তা দিয়েই চলছে ফিটনেসবিহীন বাস। কিন্তু কচি প্রাণতো হপ্তা খায়না। তাই তারা যতক্ষন রাস্তায় আছে ততক্ষণ ভাংচুরের দোহাই দিয়ে মালিকরা গাড়ি নামাবে না। তাই নগরবাসীর ভোগান্তি অনিবার্য।

৩. এবার আসি চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের বিষয়ে। বেশিরভাগ নগর পরিবহনের রুট পারমিট দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। যার নামে রুট পারমিট তার হয়তো কোন বাসই নেই। তার রুটে জিপি দিয়ে (প্রতিদিন বাস প্রতি ৭০০-১০০০ টাকা চাঁদা ) বাস চালায় মালিকরা। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মালিকদের কাছ থেকে বাস (দিনে ২০০০-৩০০০ টাকায়) ইজারা নিয়ে চালায় চালক-হেলপাররা। দৃশ্যত একই কোম্পানির বাস মনে হলেও আসলে তা নয়। বাসগুলোর মালিক আলাদা। আয় রোজগারের ভাগিদারও ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি। ফলে একই রুটের একই কোম্পানির বাস হওয়া সত্ত্বেও চলে গতিেআর যাত্রী তোলার অশুভ প্রতিযোগিতা। রেষারেষি। আর তারই বলি হচ্ছে সাধারন যাত্রীরা। কিন্তু কচি প্রাণতো এত প্যাঁচ বোঝে না। বোঝার দরকারও নেই। তাই শুদ্ধি অভিযানের শুরু হোক তাদের হাত ধরেই।

৪. দিন দিন নগরীতে মানুষ বাড়ছে। বাড়ছে গণপরিবহন। কিন্তু বাড়ছে না দক্ষ চালক। রাতারাতি হেলপার বসে যাচ্ছে চালকের আসনে। আর লাইসেন্সতো কোন ব্যাপারই না। গরু, ছাগল আর মানুষের পার্থক্য বুঝলেই লাইসেন্স মিলবে এটাতো স্বীকৃত। আর যারা এতটুকুও না মানেন তাদেরতো হপ্তা আছেই। সো হপ্তার পরিমাণ একটু বাড়ালে লাইসেন্সও লাগে না। কিন্তু কচি প্রাণ যেহেতু হপ্তা খায় না তাই তারা যতক্ষণ রাস্তায় আছে ততক্ষণ মালিকরা চাইলেও চালকের অভাবে বাস রাস্তায় নামবে না। প্রকৃত মালিকেরাও যে চালক, হেলপারের কাছে জিম্মি।তাই যাত্রী দুর্ভোগ অনিবার্য।

৫. এসব নৈরাজ্যের প্রতিবাদ যতবার হয়েছে, ততবারই জিম্মি হয়েছেন সাধারন যাত্রীরা। আদালত চালকের শাস্তি দিয়েছেন। সাথে সাথে সরকারি বাসায় বসে হরতালের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন নাটাইয়ের মালিক নৌ পরিবহন মন্ত্রী। পরিবহন শ্রমিকদের সব ধরনের অপকর্মের বৈধতা দিতে তিনি যেন বদ্ধ পরিকর। একারনেই হয়তো সাধারনদের সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুতেও তিনি নিষ্ঠুরভাবে হাসতে পারেন। কিন্তু এবার যেহেতু কচি প্রাণ রাস্তায় নেমেছে, তাই থেমেছে তার হাসি। সুতরাং কচি প্রাণের দাবির সাথে একমত না হলে অনেক কিছুই থেমে যেতে পারে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিবহন খাতের এই বাস্তবতা ও সমস্যাগুলো খান সাহেবরা কোন দিন আপনার সামনে তুলে ধরেছে কিনা জানিনা। তুলে না ধরারই কথা। আপনি এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করলে দলে কিংবা সরকারে খান সাহেবদের যে গুরুত্ব কমে যাবে। তাই বলছি নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে যারা কথায় কথায় পারিবারিক ব্যবসার কথা বলে দেশ ও মানুষকে জিম্মি করে, দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলে তাদের ছেঁটে ফেলুন। নইলে কচি প্রাণের শক্তি আরো ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।

মাহবুব আলম লাবলু : বিশেষ প্রতিনিধি, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন।

[মত-দ্বিমতের সব মতামত লেখকের নিজস্ব]

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর