Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাত্র হওয়া ছাত্র আন্দোলন ও কিছু উপলব্ধি


১২ আগস্ট ২০১৮ ১৮:০২

মানুষের মধ্যে একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করছে। ক্ষোভ কী নিয়ে হতে পারে আমাদের ধারণা নেই। সুযোগ পেলে মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছে। বিশেষ করে তরুণ ও কিশোররা।

কোটা আন্দোলন মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়েছিল। লাখো তরুণ স্বতস্ফূর্ত রাজপথে নেমে এসেছিল। একসময়ে এসে, জামায়াত-শিবির এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে অভিযোগ হয়। সেটি হয়তো সত্য কিন্তু লাখো সাধারণ তরুণের অংশগ্রহণ ছিল তা কেউ অস্বীকার করতে পারিনি। তরুণরা মাঠে নেমে এসেছিল। আন্দোলন নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিল।

বিজ্ঞাপন

এখন কিশোর ছাত্ররা মিছিলে নেমেছে হিংস্র বাসে নিহত দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে। যখন তারা রাস্তায় দাঁড়িয়েছে চোখে মুখে কোন শঙ্কা দেখিনি। নিষ্পাপ মুখাবয়বে নির্ভিক ছিল তারা। ৬৯’র শহীদ মতিউর, ৯০’র নুর হোসেনের মতো তারুণ্য ছিল স্লোগানে। এ কথায় অনেকে বাড়াবাড়ি খুঁজবেন। কিন্তু কেন বারবার নানা ছুতোয় মানুষ রাজপথে নেমে আসছে তার কারণ আগে খুঁজে বের করা দরকার।

এ ছাত্র আন্দোলন হয়তো বহুভাবে শান্ত করা হবে৷ হয়তো কিশোররা বিচার পেয়ে অথবা বিচার না পেয়ে ঘরে ফিরে যাবে৷ হয়তো পুলিশ ডাণ্ডা মেরে এই আন্দোলন নিস্তেজ করে দিতে সফল হবে৷ কিন্তু তাতেই কি সব শেষ হয়ে যাবে? সম্ভবত না।

সরকারকে সেই কারণটি খুঁজে বের করতে হবে। কেন মানুষ রাজপথে নেমে পড়ছে৷ রাজপথে নামা ক্রমশঃ স্বাভাবিক ও সাধারণ হয়ে উঠছে। নিত্য ঘটছে এ ঘটনা। মানুষের মনের ভেতর অবদমিত কোন আকাঙখা তাদের তাড়িত করছে কিনা খোঁজ নেয়া দরকার৷

শেখ হাসিনার সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এনেছে, সমৃদ্ধি এনেছে। এটা অবশ্যই মনে খুশি, মুখে হাসি এনে দেয়ার মতো সংবাদ। কিন্তু একজন মন্ত্রী যখন হাসেন তখন কেন পুরোজাতি ঘৃণায় ফেটে পড়বে? এর কারণ খুঁজুন। এই কিশোরগুলো যাদের ভোটাধিকার হয়নি, তাদের ক্ষোভের কারণ কী হতে পারে?

বিজ্ঞাপন

অনেকে বলবেন দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষ গণতন্ত্র চায়। কেউ বলবে মানুষ সুশাসন চায়। কেউ বলবে বাক স্বাধীনতা চায়। মোটাদাগে এভাবে বলা সমিচীন নয় বটে, কিন্তু কিছু ক্লেদ যে জমছে, তা এখন দৃশ্যমান।

আওয়ামীলীগ সরকারের উচিত ভুলগুলোর একটা তালিকা করা । যেমন- গরীব খুচরা ইয়াবা বিক্রেতা মারা হলো। কিন্ত বদির মতো লোকের বিচার না করে বিদেশ যেতে দেয়া ভুল ছিল না? বেসিক ব্যাংকের এমডির বিচারে টালবাহানা, হলমার্কে রাঘব বোয়াল নিয়ে আজো অস্পষ্টতা, রিজার্ভ চুরির আজো তদন্ত রিপোর্ট না প্রকাশ হওয়া, মুক্তিযোদ্ধা স্মারক ক্রেস্টের সোনা চুরি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সোনা মেটাল হয়ে যাওয়া, শেয়ারবাজারে কেলেংকারির বিহিত না করা, শিক্ষা ব্যবস্থা অসফল হলেও মন্ত্রীর পদত্যাগ না করা, বারবার প্রশ্নফাঁস সত্বেও অস্বীকার, ছাত্রলীগ কর্তৃক বারবার সাধারণ ছাত্রদের নিপীড়নের অভিযোগ, সর্বশেষ খনি থেকে কয়লা চুরি, কোয়ারিতে পাথর দেবে যাওয়া এভাবে সহস্র ভুল বা অনিয়মের তালিকা করা যায়। এগুলো যে ঘটেছে তাই নয় ক্ষেত্র বিশেষ নেতারা এসবকে সাফাই দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।

আবার এমনও হতে পারে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির ক্রমাগত প্রচারণা, জামায়াতের গোপণ কোন কার্যক্রম, সরকার উৎখাতে বিদেশি রাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ইত্যাদি কারণে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে বারবার ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে। বহুমুখী কারণ থাকতে পারে।

সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রয়োজন ছিল। আমরা দেখেছি কিন্তু এরপর খুব কম নির্বাচনই সুষ্ঠ হয়েছে৷ স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো অবাধ হলে কী এমন হত! একটি প্রজন্ম তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না মনে করে ক্ষোভ নিয়ে বড় হচ্ছে কী না এই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টিও অনুসন্ধান করা দরকার। যদি এমন হয় তাদের ধারণা পাল্টানোর জন্য মোটিভেট করতে হবে।

এই লেখার পর, একটি অংশ এই পত্রিকা বা আমাদেরকে স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করবে। এটা ট্রেন্ড হয়ে গিয়েছে। এই প্রবনতা দলের সভ্য একটি অংশের ক্ষোভের কারণ। আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশকারীরা এই অস্ত্র ব্যবহার করে আত্মসমালোচনার জায়গাটি বন্ধ করে দিতে চাইছে।

আওয়ামীলীগের ৬৯ বছরের ইতিহাস গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস। দলের অভ্যন্তরে ফোরামে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয় দলীয় ভুল সিদ্ধান্তকে। সমর্থক বোদ্ধাদের আদর্শিক প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয়ে ভুল শুধরে সিদ্ধ হতো আওয়ামীলীগ। খুব সম্প্রতি বলতে গেলে, ২০০৭ সালে ধর্মীয় দলগুলোর সাথে ক্ষমতায় যাওয়ার চুক্তি হলে কেউ নুন্যতম সমালোচনা করতে ছাড়েনি। আওয়ামীলীগ বাধ্য হয় চুক্তি ছেড়ে দিতে। এই চর্চা আওয়ামীলীগে ছিল। এখন নেই বা হচ্ছেনা। হলেই তাকে স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ লাগাচ্ছে। সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বা মন্ত্রী হওয়ার আগের সেই ওবায়দুল কাদেরকে কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না, যারা প্রতিদিন নিজ বাড়িতে আওয়ামীলীগ সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতেন ।

অভিযোগ ওঠার পর প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে ছুড়ে ফেলেছিলেন, সাংবাদিক পিটানোর দায়ে গোলাম মাওলা রনিকে জেলে ঢুকিয়ে ছিলেন, সমালোচনার ঝড় উঠার পর দোর্দণ্ড প্রতাপের আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে ছুড়ে ফেলেছিলেন।

তাহলে আজ কেন তিনি শিক্ষামন্ত্রী বা শাহজাহান খানের মতো অজনপ্রিয় গণবিরক্তি উদ্রেককারী মন্ত্রীদের সরিয়ে দিতে পারছেন না। শাহজাহান খান এর আগেও সরকারের জন্য সিদ্ধান্ত বিরোধী ভূমিকা পালন করেছেন। বিভিন্ন সময় পরিবহন ধর্মঘট তার প্রশ্রয়েই ছিল বলে অভিযোগ আছে। বাস ও মালিক সংগঠনগুলো তার ইন্ধনেই চলে বা বন্ধ হয় প্রচার আছে৷

সর্বশেষ আপডেট তথ্যে ছাত্ররা বাসায় ফিরে গিয়েছে। এখন ছাত্রদের ক্ষোভের জায়গাগুলো খুঁজে সমাধান করা অপেক্ষাকৃত শ্রেয়। কতটা জোরপ্রয়োগ করে রাজপথ থেকে তুলে দিলাম, কতটা মাথায় স্নেহের হাতবুলিয়ে সফল হলাম, তা ভেবে আত্মতৃপ্ত হওয়া স্থায়ী সমাধান নয়।

মনোয়ার রুবেল: ফ্রিল্যান্স রাইটার

সারাবাংলা/এমএম

কোটা আন্দোলন ক্ষোভ ছাত্র আন্দোলন পুলিশ শিক্ষার্থী সরকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর