চিরদ্রোহী অগ্নিশিখা রমা চৌধুরী
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৩০
||আলাউদ্দিন খোকন||
উত্তর ফাল্গুনী নক্ষত্রে জন্ম হলে মহাভারতের অর্জুনের মতো দ্রোহী, নেতা, সন্ন্যাসী ও সাহসী হয়। আর কন্যা রাশির জাতিকা চিরকালীন অদম্য, অনন্য এবং অনমনীয়। আবার, উত্তর ফাল্গুনী’তে আছে দুঃখ, কন্যায় যাতনা। এই দুই নক্ষত্র আর রাশির সংমিশ্রণে জীবন-যাপনকারী রমা চৌধুরী (দিদি)।
দিদির সাথে পরিচয়ের সূত্র ‘লুসাই ভবন’। সে ভবনেই পরে আঠারোটি বছর পার করা। ১৯৯৫ সাল। চেরাগী পাহাড়ের লুসাই ভবনে ‘প্রাইম’ নামে একটা অ্যাড ফার্ম চালাতাম যৌথভাবে আমি আর আমার সৎ মামা ফরিদ। সেই প্রাইমে একদিন উসকোখুসকো চুল, অতি সাধারণ বেশভূষা একজন বৃদ্ধার আগমন। দাঁত আছে মাত্র দুই/তিনটি। রুগ্ন, জীর্ণ শরীর। কানে শোনেন না, কথা বলেন খুব জোরে। তবে যা-ই বলেন খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন। তিনিই রমা চৌধুরী। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘রবীন্দ্র সাহিত্যে ভৃত্য’ প্রকাশ কাজে ‘নব রিপোর্ট’ কর্তৃপক্ষ কিছু ভুল করে ফেলায়, আমাদের প্রাইম কে সেটা ঠিক করার দায়িত্ব দেয়া হয়। বইটা কম্পোজ হয়েছে, পেস্টিং-ও হয়েছে, এখন সেই পেস্টিং থেকে কেটে কেটে ভুলগুলো ঠিক করতে হবে। এ কারণে দিদি কে প্রতিদিন পোপাদিয়া থেকে চেরাগী পাহাড় আসতে হ’তো। আর প্রাইম-এ বসে একটু একটু করে প্রুফগুলো ঠিক করা হ’তো। সে-ই পরিচয় দিদির সাথে। আমার মামা তাঁকে মাসি ডাকা শুরু করায় আমাকে বললেন- আপনি ‘দিদি’ বলে ডাকবেন। এভাবেই শুরু। প্রতিদিন তিনি আসেন, গল্প করেন। একাত্তরের কারণে মারা যাওয়া দুই সন্তানের কথা, যুদ্ধের ভয়াবহতার কথা, তাঁর ওপর পাশবিকতার কথা এবং জীবিত দুই সন্তান জহর আর টুনু’র কথাও। তবে টূনুর কথা-ই বেশি বলতেন। কীভাবে টুনু দিদির যত্ন নেয়, ঘরকন্নার কাজ করে এসব। নির্জন গ্রামে স্ব-শিক্ষায় শিক্ষিত, নির্যাতনে-নিপীড়নে বড় হওয়া দিদির অন্ধের নড়ি সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান- দীপঙ্কর চৌধুরী টুনু। পরবর্তীতে যার সাথে আমার এক অসামান্য বন্ধুত্ব হয়। টুনুর গল্প একদিন অন্য কোথাও বলা যাবে তাই আর উল্লেখ করলাম না।
আমি পাঁচ বছর বয়সে মা’কে হারিয়েছি। বাবা তখনও জীবিত। দিদি নিজের গল্প করতে করতে ধীরে ধীরে আমার গল্পও জেনে নিলেন। নিজের সন্তান হারানোর বেদনা আর আমার মা হারানোর বেদনা সব মিলেমিশে একাকার। দিদির বাড়িতে সব কাজের সহায়ক টুনু। কিন্তু শহরে (তখন সাপ্তাহিক ‘নব রিপোর্ট’ পত্রিকা ফেরি করতেন) ম্যাগাজিন আর বই একা ফেরি করা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এর মধ্যেও প্রতিদিন দিদি বাড়ি থেকে আসতেন, কাজ না থাকলেও একবার প্রাইম-এ এসে আমাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্পসল্প করতেন। এভাবেই একদিন দিদি আমাকে বললেন- “আপনি বিবেকানন্দ হবেন?” আমি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম, কী বলেন উনি! যদিও অনেক আগেই রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ জীবন-দর্শন জানা, পড়া হয়ে গেছে। তাই ভাবছিলাম- এই মহামানবের নখেরও অযোগ্য মানুষ আমি কীভাবে বিবেকানন্দ হব!
এরপর দিদি শহরে বই বিক্রি এবং থাকার জন্য লুসাই ভবনের তৃতীয় তলায় চ্যানেল আই’য়ের পাশের রুমটি ভাড়া নেন। প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম প্রবন্ধ সংকলন ‘রবীন্দ্র সাহিত্যে ভৃত্য’। সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, অফিসে বই বিক্রি করে ক্লান্ত হয়ে তিনতলার সেই রুমটাতে বিশ্রাম নিতেন। আমি নিচতলার প্রাইম অফিসে কাজ করে প্রায় রাত্রে ওখানেই বাক্স বা যা কিছু বিছিয়ে ঘুমাতাম। রাতে দিদি একা একা ওপর থেকে নেমে এসে আমার সাথে গল্প করতেন। আমার সাহিত্য পিপাষু মনের নাগাল পেয়েছিলেন দিদি। মাঝে মাঝে আমাকে নিচ তলার বারান্দায় ঘুমাতে দেখে মমতাময়ী মায়ের মতো ডেকে বলতেন তাঁর রুমে থাকতে। আমাদের এই-করে জড়িয়ে পড়া স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা আর বন্ধুত্বের অনন্ত পথ চলার বাঁধনে, আমাদেরও অজান্তে। একদিন দিদি আমাকে নিয়ে গেলেন তাঁর গুরুবাড়ি কৈবল্যধামে। দিদি তাঁর গুরু রাম ঠাকুর সম্পর্কে আগে থেকে আমাকে বলতেন। রাম ঠাকুরের ধর্ম – ‘মানবতা’। অনেক মুসলিম শিষ্য আছেন রাম ঠাকুরের, এইসব। এক পূর্ণিমা রাতে ঠাকুরের আশ্রমে দিদি আমাকে নিয়ে গেলেন। দিদির দীক্ষাগুরু মোহন্ত মহারাজ শ্যামাচরণ চট্টোপাধ্যায় এর সমাধি মন্দিরের নিচে পুকুর পাড়ে নিয়ে গিয়ে দিদি বললেন- “আজ তোমাকে আমার গুরুর সমাধীর সামনে দীক্ষা দেব”। এরপর আমাকে মোহন্ত মহারাজ এর সামনে শপথ করালেন, তাঁর সারাজীবনের সকল কাজে সঙ্গী হিসেবে আমি যেন থাকি। আর আরাধ্য স্বপ্ন বাস্তবায়নে যেন যুক্ত থাকি আজন্মকাল।
ছবি: কমল দাশ।
সে কথা কতটুকু রাখতে পেরেছি জানি না, তবে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর পাশে থাকতে পেরেছি এবং সেবা করতে পেরেছি এটা আমার পরম পাওয়া।
আমার জন্ম ১৯৭৪ সালে বরিশালের ঝালকাঠিতে। তবে বাবা যুদ্ধাকালীন সময়ে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তা বর্ণনা করতেন। তখন থেকেই আমার আফসোস কেন যুদ্ধের আগে জন্মাইনি। দীর্ঘ বছর পর যখন চট্টগ্রামে এসে দিদির দেখা পেলাম, দেখা পেলাম একজন সন্তান, সম্ভ্রমহারা মায়ের। আমা কাছে দিদি ছিলেন একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। তখন তাঁর পাশে থেকে সেবা করার একটা আকাঙ্খা তৈরি হয়। দিদিকে সেবার মধ্য দিয়েই যেন দেশসেবা করতে পারব।
ওই সময়ই দিদি দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘নজরুল প্রতিভার সন্ধানে’ প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তিনি নিজের প্রথম গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিচিত শুভানুধ্যায়ী, পাঠক এবং স্কু-কলেজের শিক্ষকসহ বিভিন্নজনের সহায়তায়। তাদের নাম ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে বইয়ের সাথে একটি অংশ জুড়ে দিতেন। প্রথম বই বিক্রির টাকায় দ্বিতীয় বই, দ্বিতীয় বই বিক্রির টাকায় তৃতীয় বই, এভাবে সারাজীবন বই প্রকাশ করেছেন। নিজে বিক্রি করেছেন। দ্বিতীয় বই প্রকাশের সম্পূর্ণ ভার ছিল আমার ওপর। সে থেকেই তাঁর বইয়ের প্রকাশক আমি। শুরু অন্যরকম পথচলা।
আমার পালিয়ে বেড়ানোর স্বভাব ছোটবেলা থেকেই। চিরকাল ঘর পালিয়ে বাইরে ছুটেছি। কোথাও অশান্তি বা নিজের অবনত হতে দেখলে পালিয়ে যাই। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই একরকম মাতৃহীনতার কষ্ট বয়ে বেড়াতাম। সৎ মা, সৎ মামা এদের সাথে থাকতে গিয়ে প্রকট হয়ে ওঠে জীবনে ঝড়। এ সময় মানসিক টানাপোড়েন থেকে দিদির বাড়ানো মমতার হাত আমাকে মুক্তি দিয়েছিল। বললেন- “তুমি পাশে থাকলে আমার দুই সন্তানের স্মৃতিতে গড়া ‘দয়ার কুটির অনাথ আশ্রম’ (বর্তমানে দীপঙ্কর স্মৃতি অনাথালয়) সম্পূর্ণ হবে। তুমি আসো, একসাথে আমরা পথ চলি!” পালালাম প্রাইম অফিস, ব্যবসা, কাজকর্ম সবকিছু থেকে। পালিয়ে দিদির সাথে তাঁর বাড়ি পোপাদিয়ায় চলে গেলাম। বাবার একমাত্র পুত্র হওয়ার সুবাদে ছোটবেলা থেকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, কিন্তু মানসিক শান্তি ছিল না। দিদির বাড়িতে গিয়ে দেখলাম- স্বাচ্ছন্দ্য না থাকলেও শান্তি আছে। দিদির ভাঙাঘর, দরজা-জানালা নাই।মুক্তিযুদ্ধের পোড়া ভিটে। একানব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত, হেলেপড়া বারান্দা। খড়ের বিছানা, মাথার নিচে বালিশ নাই। বিড়ালের অবাধ আনাগোনা। এর মাঝেই অনেকটা সন্ন্যাসীর মানসিকতায় গৃহত্যাগী একজন শ্রমণ হওয়ার চেষ্টায় জীবন-যাপন করতে লাগলাম। প্রথম প্রথম কষ্ট হ’তো। কিন্তু মেনে নিতে নিতে গাঁয়ের আদুল ছেলে হয়ে গেলাম। আমাকে সে সংসারবিহীন সংসার থেকে ফেরাতে আমার বাবা, বোনেরা অনেক চেষ্টা করেছেন। বারবার সে-ই বরিশাল থেকে এসে পোপাদিয়া গেছেন আমাকে ফিরিয়ে আনতে, আমি ফিরিনি। বাবা সে শোকে হার্ট এ্যাটাক করলেন। চট্টগ্রামের হেলথ কেয়ার হাসপাতালে নয়দিন পথ চেয়ে থেকে মারা গেলেন। আমি দিদিকে ছাড়লাম না। আমি আর দিদি শহরে- গ্রামে, স্কুলে-কলেজে, ব্যাংকে, অফিসে, কোর্টে সবখানে বই ফেরি করে বেড়িয়েছি। আর সন্ধ্যায় পোপাদিয়া ফিরেছি। টুনু মাঝেমাঝে আমাদের জন্য রান্না করে রাখত। মাঝেমাঝে সাথে করে বাজার বয়ে নিয়ে নিজেরা রান্না করে খেয়েছি।
১৯৯৮ সালের, ১৬ ডিসেম্বর। দিদির জীবনে আরেক বিপর্যয়। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সেই হেলথ কেয়ার হাসপাতালেই মারা যায় টুনু, যেখানে আমার বাবা আমার পথ চেয়ে মারা গিয়েছিলেন। আমার জীবনের এক কাকতালীয় ঘটনা। দিদিকে নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় দৌড়াতে দৌড়াতে শহরের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে যে জুতোগুলো দিদি পা থেকে খুলে ফেলে দিয়েছিলেন, আর কখনো জুতো পরেননি দিদি মৃত্যু অবধি। টুনুর শোকে সারারাত টুনুর সমাধির পাশে বসে থাকতেন। আমিও ছয়মাস সমাধি পাহারায় ছিলাম দিদিকে পাহারা দিতে দিতে। এরপর ১৯৯৯ সালে আমরা চলে আসলাম শহরে। প্রথমে পাঁচলাইশ, মেডিকেলের সামনে কবির মঞ্জিলের চিলেকোঠায়, তারপর ২০০০ সাল থেকে লুসাই ভবনে। জীবনের শেষ অবধি দিদি লুসাই ভবনেই ছিলেন। কত চড়াই-উৎরাই, মানুষের অবহেলা, বক্র-চাহনি উপেক্ষা করে দিদির সাথে কাটিয়েছি তার ইয়েত্তা নেই। বই বিক্রি করতে গিয়ে কত তিরস্কার, কত চাতুরি দেখেছি! পেয়েছি মানুষের ভালোবাসাও। ২০০২ সালের দিকে বর্ষার রাতে একা বাড়ি ফেরার সময় দিদির পায়ের পাতা ভেঙে ফেলেছিলেন। ছয় মাস বিছানা থেকে নড়ার অবস্থা ছিল না। আবার সুস্থ করে পথে পথে বই ফেরি করে বেড়িয়েছি দিদির সাথে। ২০০৫ সালের এক মর্মান্তিক ঘটনা, বাড়িতে দিদি আশ্রমের জন্য নতুন ঘর করার কাজে ছিলেন। আমি শহরে বই বিক্রি করে একটু একটু করে টাকার যোগান দিচ্ছিলাম। ১৭ মার্চ রাতে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দিদির মাথা ফেটে গেল। আমি জানতে পারি পরেরদিন সকাল ১১টায়। লুসাই ভবনে এসে গ্রামের এক লোক খবর দেন। দ্রুত ছুটে যাই বোয়ালখালি হাসপাতালে। প্রাণ আসে-যায় অবস্থা। আগের রাতে মাথা ফেটে যে অজ্ঞান হয়েছেন, সে অবস্থায় পড়ে আছে হাসপাতালের মাটিতে বেওয়ারিশ অবস্থায়। বমি, পায়খানা-প্রশ্রাবে মাখামাখি। ডাক্তার বললেন- যে কোন সময় চলে যাবেন। তবুও সাহস করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নিয়ে ছুটলাম চট্টগ্রাম মেডিকেলে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর কোন সাড়া নেই। সমস্ত শরীর শক্ত পাথর, অক্সিজেন কাজ করছে না। বন্ধু ডাক্তার কৌশিক দাশ, মাহমুদ আলম সৈকত, বায়েজিদ নাঈম, বলরাম কর্মকার এদের সহযোগিতায় এবং প্রথম আলো বন্ধু সভার বন্ধুদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় সে যাত্রায় প্রথমে কোমা এবং পরে চার মাস স্মৃতিহারা অবস্থা থেকে ফিরে এলেও দিদির একটা চোখ নষ্ট হয়ে, একহাত, এক-পা অচল হয়ে দেড় বছর কাটানোর পর আবারও দুজনের বই ফেরি করা, একে একে আঠারোটি বই প্রকাশ।
দিদি আমাকে নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতেন। ভাবতেন- যদি কখনো তাঁকে ছেড়ে চলে যাই! তাহলে অসহায় হয়ে পড়বেন। তাই চাইতেন না আমি সংসারী হই। তবুও ২০০৬ সালে সংসার জীবন শুরু করি দিদিকে না জানিয়ে। আমার বিয়ের খবরে দিদি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু দেখেছেন- সংসারী হলেও কখনো তাঁর প্রতি অবহেলা করিনি, অযত্ন রাখিনি। প্রথম দিকে অসুবিধা হবে মনে করত যদি আমি পুরোপুরি সংসারী হই, তাঁকে কে দেখবে এ-কথা ভেবে। সংসারী হয়েও একযুগ দিদির সাথে, দিদির ছায়ায় ছিলাম। যেদিন যেমন করে খেতে চাইতেন, বাসা থেকে নিজে রান্না করে এনে খাওয়াতাম। আমার মেয়ে তিতলির জন্মদিনে কিছু কিনে দিতে চাইতেন। আমি বলতাম- না, আমি নিজেই কিনে দেব। কিন্তু কখনো তিতলিকে দেখতে চাইতেন না। বলতেন- দেখলে মায়া লেগে যাবে। তখন রেখে দিতে চাইলে, তুমি কি দিয়ে দেবে? যদিও দিদি সাধারণত মেয়ে পছন্দ করতেন না। কারন দিদি মনে করতেন- মেয়েদের জীবন কষ্টের, কারো মেয়ে না হওয়াই ভালো।
গত ২০১৭ সালের জুন থেকেই দিদি অসুস্থ, যা সবারই কমবেশি জানা আছে। একে একে প্রায় দশবার হাসপাতাল পাল্টে গত আটমাস চট্টগ্রাম মেডিকেলে দিদিকে ফিরিয়ে আনার লড়াই করেছি। জীবনকে বড় ভালোবাসতেন দিদি। ১৬০ বছর বাঁচতে চেয়েছিলেন। বাঁচার সে কী আকুতি দিদির! বলতেন- তুমি বারবার আমাকে বাঁচিয়েছ, এবারও বাঁচাও! পারিনি। আমার সাথে দিদিকে ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে সামিল হয়েছে দিদির ভক্তরাও। শেষ পর্যন্ত হেরে গেলাম। দিদি আমার কাছে একটা শিশু, সে শিশুকে পেলেপুষে রাখতাম, সে শিশুটা পালিয়ে গেল। এ-এক দুঃসহ কষ্টের দিন আমার জীবনে।
আমিও রক্তেমাংসে গড়া একজন সাধারন মানুষ। অতি মানবীয় কোন শক্তি আমার মধ্যে নেই। যদি থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই দিদিকে আটকে রাখা যেতো। আপনারা যারা আমাকে মহামানবের কাতারে নিয়ে দাঁড় করাচ্ছেন, আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ এই ভালোবাসার জন্য। কিন্তু সত্য এটাই যে বাহবা পাওয়ার জন্য আমি কিছু করিনি। বরং এতে আমার বড্ড অস্বস্তি লাগছে।
আলাউদ্দিন খোকন, রমা চৌধুরীর সহচর