বারেক সাহেব ও মাইনাস টু’র বটিকা
৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:২১
||অধ্যাপক ডা: মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)||
জাতীয় নাট্যমঞ্চেতো নাটকই হবে, অন্য কিছু হবে না। হবেই বা কেন? একাজের জন্যইতো বানানো হয়েছে এটি। তাই বলে এখানে একদিন এমন নাটক মঞ্চস্থ হবে তা বোধহয় ভাবেননি এর স্থপতি, নির্মাতা কেউই। বারেক সাহেবও কল্পনা করেননি যে এখানে এসে তাকে এমন নাটক দেখতে হবে। নাটক যে তেমন জমছে তাও অবশ্য না। নাটকের মুল অভিনেতারা কেউ চেচাচ্ছেন তো কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউ ঝিমাচ্ছেন। এসব দেখছেন আর পিত্তিটা জ্বলে যাচ্ছে বারেক সাহেবের। এসব নাটক দেখার জন্য লোক ভাড়া করতে যেয়ে পকেটটাতো তাদেরই খালি হয়। তার উপর পয়সা দিয়ে লোক পাওয়া গেলেও চলতো। লোক ধরে আনার ঝক্কি এখন অনেক। সামনে গুড় দিলে পিপড়ার অভাব হয় না, কিন্তু সামনে ক্ষমতার লাড্ডু যখন বহুদূর, তখন পয়সা দিয়েও লোক ধরে আনতে যে কি পরিমাণ পায়ের ঘাম মাথায় তুলতে হয় তা যদি রাজনীতি এই ‘এন্টিক অভিনেতারা’ জানতো! ‘আচ্ছা এদের মধ্যে দল পেলোটা কি?’ খেপের কালচার এদেশে নতুন কিছু না। নতুন না পৃথিবীর কোথাওই। এই যে মেসি-নেইমার আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ছেড়ে ইউরোপে খেলে বেড়ায় সেতো খেপই। নিজেও এককালে ভালই ফুটবল খেলতেন বারেক সাহেব। প্রায়ই খেপ খেলতেন আশেপাশের এলাকায়, খেলেছেন এমনকি সদরেও। খেলতেন, খেলতে পারতেন বলেই। নচেৎ তাকে খেপে খেলানোর প্রশ্নটা আসতো কোত্থেকে?
মঞ্চের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে ভাবেন বারেক সাহেব। একজনতো ‘বড় বাড়ী’ ছাড়তে না ছাড়তেই মহাখালী রেল ক্রসিং-এ নাকাল হলেন। তাও ভালো অন্তত প্রাগৈতিহাসিক কালে হলেও ভোটে জিততেন। তার দু’একজন চেলা-চামুন্ডাও আছে যাদের ঠেলে-গুঁতিয়ে হয়তো নির্বাচনের বৈতরণীটা পার করানো গেলেও যেতে পারে। কিন্তু অন্যজন? সেই কবে কোন কালে উপনির্বাচনে বিনা ভোটে এম.পি. হয়েছিলেন। সেই উনিই এখন আবার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত এম.পি.-দের নিয়ে লম্বা-লম্বা ডায়লগ দেন। রাগে মাথাটা দপদপ করতে থাকে বারেক সাহেবের।
নেতারা যে কি বুঝে কি করে কে জানে। ‘আরে হাল চাষ কি আর সব চতুষ্পদকে দিয়ে হয়?’ সব চতুষ্পদ যে দুধ দেয় তাওতো নয়। প্রত্যেকেরই দায়-দায়িত্ব ভাগ করা আছে। এই যে এখানে যারা গরম-গরম বক্তৃতায় সরকারকে এই ফেলছেন, এই রাখছেন এরাতো সব রাজনীতিতে উচ্ছিষ্ট্য। অথচ কি চটকদারই না একেক জনের বক্তৃতা। মনে হচ্ছে সরকার এই পড়লো বলে। প্রৌঢ় থেকে প্রৌঢ়তর এই লোকগুলোর জন্য মায়াই লাগে বারেক সাহেবের। এক পা কবরে দিয়ে আরেক পায়ে জাতীয় সংসদে পারা দেয়ার কি প্রাণান্ত চেষ্টাই না বেচারাদের! সরকারের কানে এসব বক্তৃতা যে ঢুকবেনা তা ভালই জানেন বারেক সাহেব। ঢুকবে না সাধারণ মানুষের কানেও। অথচ এদের নিয়েই দলে কত মাতামাতি-ছুটাছুটি। ‘একদিন যাকে জুতা দিলাম এখন তার কাছেই নাকে ক্ষত দিয়ে নেতা মানতে হবে’? দলের ভোটাররাই কি ভাববেন, ভাবেন বারেক সাহেব। দলে কি নেতার এতই আকাল পড়ল যে, খেপের নেতা দিয়ে এখন জোট চালাতে হবে? ভাড়াটে রাজা দিয়ে কি আর রাজত্ব চলে? ‘ভবনের’ এতসব ‘ভবনবাজির’ পরও যে দু’একজন দলকানা ভোটার তাদের ভোট দিতেন তারাওতো এবার মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
গলদঘর্ম হয়ে নাট্যমঞ্চ থেকে বেড়িয়ে প্রাডোতে চড়েই ড্রাইভারকে এসিটা সুপার কুলে দিতে বলেন বারেক সাহেব। ঢাকার জ্যাম ঠেলে গাড়ি যখন সচিবালয়ের সামনে, ঠা-া এসিতে মাথাটা যখন ঠা-া হঠাৎই মাথাটা খুলে যায় বারেক সাহেবের। এই বুড়ারা বুড়া হলে কি হবে, এরাতো বুড়া ঘাগু! কি সুন্দর করেই না তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের দিয়েই ‘মাইনাস টু’ -এর বটিকা গিলিয়ে নিচ্ছে। বারেক সাহেব শিরদাড়ায় কেমন যেন একটা ঠা-া অনুভুতি অনুভব করেন।
সারাবাংলা/এমএম