Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, অগ্রযাত্রার অষ্টম বছর


২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৯:৩৩

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের নবীনতম উচ্চশিক্ষা বিদ্যাপীঠ। যদিও এটি হওয়ার কথা ছিল দেশের অন্যতম প্রাচীন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন না গত শতাব্দির ষাটের দশক থেকেই বরিশাল শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোরালো দাবি উঠতে থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলেই বরিশাল শহরকে কেন্দ্র করে যে সাংস্কৃতিক জাগরণ ও রাজনৈতিক সচেতনতার উন্মেষ ঘটেছিল তার ঢেউ অচিরেই সমগ্র বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিলো। মহাত্মা অশ্মীনি কুমার, জীবনানন্দ দাশ, কুসুম কুমারী দাশ, মনোরমা বসু মাসিমা, খান বাহাদুর হাশেম আলী,  বি ডি হাবিবুল্লাহ এবং আরজ আলী মাতুব্বরসহ অনেকের নেতৃত্বে একটি মধ্যবিত্ত শিক্ষিত প্রজন্মের বিকাশ ঘটে সেসময়ে যারা বরিশালের বৌদ্ধিক প্রাগ্রসরতাকে পুরোদমে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। স্বাধীনতাত্তোর ঢাকা কেন্দ্রিক সকল উন্নয়নের বিপরীতে বরিশালের বিদ্বৎসমাজ একটি স্বতন্ত্র এবং শক্তিশালী অবস্থান নিতে সক্ষম হন। এই এতিহ্যগত অবস্থান এবং সাংস্কৃতিক প্রাগ্রসরতা বরিশালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবির পিছনে জোরালো সমর্থন জোগায়। বর্তমান প্রেক্ষাপট  বিবেচনায় নিলেও, টাউন হল কেন্দ্রীক যত অনুষ্ঠান এবং সভা সেমিনার হয়ে থাকে সেগুলোর ইন্টেলেকচুয়াল ভ্যালু খুবই আশাব্যঞ্জক এবং অর্ন্তভুক্তিমূলক।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেটি যথার্থই উপলব্ধি করেন এবং ১৯৭৩ সালে তৎকালীণ বেলস পার্কের জনসভায় বরিশালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। এই সালটি এদেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ,  কেন না সে সময় পর্যন্ত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা সবমিলিয়ে ছয়টি। তাহলে বিষয়টি যদি একটু মিলিয়ে দেখি তাহলে এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশে তৎপরবর্তি সময়ে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে এমনকি স্থানীয় জনগণের জোরালো দাবি না থাকা সত্ত্বেও তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী অনেক জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে কিন্তু বঙ্গবন্ধু প্রতিশ্রুত দেশের প্রাচীনতম শহর বরিশাল থেকেছে বঞ্চিত।

বিজ্ঞাপন

১৫ জুলাই ২০১১ সালে শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতীয় সংসদে আইন পাশ করা হয় তথাপি সাহিত্য- সংস্কৃতির শহর বরিশালের মানুষের দাবি ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের। পরে জোট সরকারের সময়ে তড়িঘড়ি করে শতাব্দী প্রাচীন ব্রজমোহন (বিএম) কলেজকে একজন সামরিক শাসকের নামে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যার ফলে এ অঞ্চলে আরেকটি পৃথক প্রতিষ্ঠানের স্থলে বিদ্যমান উচ্চ শিক্ষার যে সুযোগ সেটি সংকুচিত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়। আবারও আন্দোলন সংগ্রামের ফলে তৎকালীন সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়। অবশেষে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি  শেখ হাসিনা তার বাবার প্রতিশ্রুত স্বপ্নের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন কীর্তনখোলার পাড়ে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে চারটি অনুষদের অধীনে ছয়টি বিভাগে ৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে সীমিত পরিসরে জেলা স্কুলের কলেজ ক্যাম্পাসে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, স্বল্প সময়ের আবর্তনে বর্তমান উপাচার্য মহোদয়ের দক্ষ নেতৃত্বে স্থায়ী ক্যাম্পাসে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই যাত্রা আজ এক বিশাল শিক্ষাযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেটির সবগুলো ভবনের স্থাপত্যশৈলী একই ধারার। লাল ইটের বিল্ডিং গুলো এক অফুরন্ত সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। বরিশালের মূলধারার মিডিয়া, বেতার, পত্রপত্রিকা এবং সভা সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের  ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ প্রধানতম অনুষঙ্গ। বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ইর্ষণীয়। এই তো কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা অ্যাগ্রো ড্রোন উঠিয়েছে ক্যাম্পাসে। বছর জুড়ে  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে ক্যাম্পাসকে করে রাখে প্রাণবন্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চকেন্দ্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমূহ এখন বরিশাল শহরের বিনোদন পিপাসু মানুষের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে। যে স্বপ্ন নিয়ে বরিশালের মানুষ সুদীর্ঘকাল আন্দোলন সংগ্রাম করে এসেছে, ধীরে ধীরে এর সুফল পেতে শুরু করেছে দক্ষিণ জনপদ।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যৎ সাফল্য এবং উৎকর্ষতা আসলে নির্ভর করে সেটির শিক্ষকদের একাডেমিক এবং রিসার্চ এক্সিলেন্সের ওপরে। জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিবেচনায় নিলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে সবার উপরে থাকবে। এখানে সর্বোচ্চ মেধাবীরা সুযোগ পায়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক শিক্ষক নর্থ-আমেরিকান এবং ইউরোপিয়ান দেশসমূহ, জাপান, কোরিয়া, চীনের উচ্চতর ডিগ্রীধারী এবং অনেকেই বিভিন্ন প্রোগ্রামে অধ্যায়নরত। বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার ব্যপারে শিক্ষকদের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। অনেক বড় বড় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যখন দেশেই কোনমতে একটি ডিগ্রি অর্জন করে ফেলার চেষ্টায় রত সেখানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যামি তরুণ শিক্ষকরা সমাজ, দেশ এবং সর্বোপরি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করবে এ কথা নির্দিধায় অনুমেয়।

এত সম্ভবনার পরেও নানাবিধ সমস্যায় বিশ্ববিদ্যালয় জর্জরিত। শিক্ষক সংকট, একাডেমিক ভবন সংকট, আবাসন সংকট তো আছেই সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ন যা এর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সরকারের প্রতি অনুরোধ দক্ষিণবঙ্গের এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং পৃষ্ঠপোষকতা পেলে উপকূলের বাতিঘর হয়ে উঠবে এবং পদ্মাপাড়ের জনপদ ও উপকূলীয় অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সরকার ঘোষিত ডেল্টা প্লান ও ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে সরকারের বড় অংশীদার হয়ে উঠবে।

লেখক: মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ মিলন, শিক্ষক, ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগ; বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। 

ই-মেইল- [email protected]

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

সিইসিসহ নতুন ৪ কমিশনারের শপথ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১০

আরো

সম্পর্কিত খবর