Friday 06 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বারেক সাহেবের স্বস্তির ভাবনা


১৩ মে ২০১৯ ১৩:৪৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কাজ বোধহয় অনেক বেড়ে গেছে। সামাজিক নিরাপত্তার জাল বিস্তার থেকে ডিজিটালাইজেশনের এমন অনেক কিছুই সম্ভবত ইদানিং তারা দেখাশুনা করেন। এমনকি দুঃস্থদের আশ্রায়ন আর বড়লোকের বিনিয়োগের ইপিজেডগুলোর দায়দায়িত্বও নাকি এখন পিএমওর-ই। দীর্ঘদিন তেজগাঁয়ের ওই অফিসটায় যাওয়া হয়ে ওঠেনি বারেক সাহেবের। আবার যাবেন কবে কে জানে? আনমনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন বাকের সাহেব। এ জীবনে বোধহয় আর ওখানে যাওয়াই হয়ে উঠবে না।

পিএমও-টাকে কি বানিয়েছে এরা, ভাবেন বারেক সাহেব। তাদের সময় পিএমও-র লোকজন বসে ঘোড়ার ঘাস কাটত বোধহয়। কথাটা মনে হতেই নিজের জিভ কাটেন বারেক সাহেব। ‘কিসের ঘোড়া? ওরাতো সব কাটত ছাগলের ঘাস!’ তাদের সময়তো পারলে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলকে জাতীয় পশু-ই বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। যতসব! কোথায় গেল ছাগলের সেইসব পৃষ্ঠপোষকেরা? ছাগলেই মুরে খেয়েছে তাদের!

বিজ্ঞাপন

পিএমও-র কথা মনে হল কারণ পত্রিকা খুলেই সকালে চোখে পড়েছে তাদের দলের অঙ্গসংগঠনের একজন বড় নেতার সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি। নেতা মানে যে সে সাইজের নেতা নয়। দলের একটি অঙ্গসংগঠনের সাবেক সভাপতি বলে কথা। তাছাড়া বাংলা সিনেমার একসময়কার ডাকসাইটে খলনায়কও বটে। প্রথমে ভেবেছিলেন বোধহয় সরকারি দলে যোগ দিয়েছেন ভদ্রলোক। ভুলটা ভাঙল অল্প সময়েই। ভদ্রলোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের একটা চেক নিচ্ছেন। সেই ছবিটাই ছেপেছে পত্রিকা। দলবদল হলে অবশ্য অবাক হতেন না বারেক সাহেব। যে বাসায় খানা বেশি সে বাসায় কবুতর যাবেই, এটাই কবুতরের ধর্ম। তবে তার চেয়েও বেশি অবাক হতেন যদি দেখতেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে দলে টেনে নিয়েছেন।

রাতে ক্লাবের আড্ডায়ও এ নিয়েই গুণগুণ। ক্লাবের আলোআঁধারিতে সরকার আর বিরোধীদলের কোনো ভেদাভেদ থাকে না। গ্লাসের টুংটাং শব্দের ফাঁকে ফাঁকেই আড্ডায় যোগ দিচ্ছেন সবাই। আছেন যেমন দুই ঘরানার ব্যবসায়ী তেমনি দুই ঘরানার রাজনৈতিক নেতারাও। আছেন দুই ঘরানার আরও অনেকে। একটা জিনিস অবাক করছে বারেক সাহেবকে। সবাই বিষয়টা নিয়ে সমালোচনায় ব্যস্ত। ব্যাপারটা এমন যেন মহাভারত অশুদ্ধ হতে বোধকরি আর কিছুই বাকি থাকল না।

বারেক সাহেবের কাছে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও তেমন না। একদমই অবাক হননি এতে বারেক সাহেব। বরং এ নিয়ে সবাই যখন স্কচের গ্লাসে ঝড় তুলছে তখন বারেক সাহেবের মনে হয়েছে এরা সাত খণ্ড রামায়ণ পড়ে রামের বউয়ের নাম খুঁজছে আরকি!

আরে বাবারা উনি তো এমনই। উনি যদি ভদ্রলোককে দলে টেনে নিতেন তবে সেটা হত আলোচনার খোরাক। এটা নয়। উনি আদর্শের সাথে আপোস করবেন না এটা যেমন জানা, তেমনি ওনার দিলটা যে কত দরাজ সেটাওতো লোকের মুখে মুখেই। এই যে উনি রোহিঙ্গাদের পালে-পালে ঢুকতে দিলেন আর এখন খাওয়াচ্ছেন-পড়াচ্ছেন সেটা দেখেও কি এদের জ্ঞান হয় না। ভাবেন বারেক সাহেব। তাদের দলের অঙ্গসংগঠনের সাবেক সভাপতির চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী টাকা দেয়া নিয়ে যাদের এত আপত্তি তারা কি ভুলে গেছে তিনি যেমন নিজের সাধারণ সম্পাদকের চিকিৎসার জন্য উজাড় করে দেন, তেমনি তাদের দলের সাধারণ সম্পাদকের চিকিৎসার দায়িত্বটাও নিজের ঘাড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে রেখেছেন।

হঠাৎ আরেকটা কথা মাথায় আসে বারেক সাহেবের। তবে আড্ডায় সাহস করে আর পারেন না বিষয়টা। কে জানে কে কিভাবে নেয়। পঁচা শামুকেওতো ঘ্যাচ করে কাটতে পারে পা। ‘অত দূরে যাই কেন?’ ভাবেন বারেক সাহেব। তাদের দলের নম্বর ওয়ানতো এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারের কেয়ারঅফেই চলছে। আর চিকিৎসা যে মন্দ চলছে না তাতো কাগজপত্র আর টিভির পর্দাতেই মাঝেসাঝেই দেখা যাচ্ছে। ‘দুর ছাই! কি যা-তা ভাবছি?’ চিকিৎসা লাগলে যাওয়ার একটা জায়গা আছে সেটাই বড় কথা। স্কচের গ্লাসে মন দেন বারেক সাহেব।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) : চিকিৎসক ও কলাম লেখক।

অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) বারেক সাহেব

বিজ্ঞাপন

আজ পবিত্র ঈদুল আজহা
৭ জুন ২০২৫ ০০:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর