চুকুর গাছ, একটি মহার্ঘ্য বিকেল ও ক্র্যাক প্লাটুনের গল্প
২৯ আগস্ট ২০১৯ ১৪:১২
সারাবাংলা ডটনেট’এর পাঠকরা নিশ্চয়ই নগর চাষী শাওন মাহমুদের ছাদ বাগানের কথা জানেন। তার ইস্কাটনের বাসার ছাদ বাগানটা অসাধারণ। বিন্দুতে যেন সিন্ধু ধরেছেন। সেই বাগানে কী নেই? নীলমনি লতা থেকে শাপলা সব ফুল সেখানে পোষ মানে। থানকুনি পাতা থেকে মেহেদী, পেয়ারা থেকে আতা- ফুলে ফলে সাজানো বাগান। ইদানীং শুনলাম কলাগাছও লাগিয়েছেন। সেই নগর চাষী সম্প্রতি ফেসবুকে প্রতারিত হবার গল্প লিখেছিলেন। ৪০০ টাকা দিয়ে তিনি নার্সারি থেকে চুকুর গাছ কিনেছিলেন। চুকুর গাছ চেনেন আপনারা? কোনো কোনো এলাকায় মেষ্টাও বলে। সুন্দর ফুল হয়। ফলটাও ফুলের মতই সুন্দর। টক রেধে খাওয়া যায়। জেলি কিংবা আচারও বানানো যায়। চুকুর গাছের পাতা দিয়ে ভর্তাও করে কেউ কেউ। এখন আর শহরে চুকুর পাওয়া যায় না, গাছ বা পাতা তো অনেক দূরের কথা।
তো শাওন মাহমুদের যত্ন-আত্তি পেয়ে নার্সারি থেকে আনা চারাটি গাছ হলো। ফুল ফুটতে দেখা গেল, এ তো কাকের বাসায় কোকিলের ছা। ফুলটা চোখ জুড়ানো সুন্দর। কিন্তু সেটি চুকুর বা মেষ্টা নয়, জবা ফুল। একে নাকি মেষ্টা জবা বলে। শাওন মাহমুদ অবশ্য পুরোপুরি প্রতারিত হননি। চুকুর না হোক, নতুন একটা গাছ তো হয়েছে। আর ফুলের রঙটাও মিষ্টি। মেষ্টা আর মেষ্টা জবা- নামে বেশ কাছাকাছি।
যুধিষ্ঠিরের মত নার্সারির মালিক হয়তো মেষ্টা জবা বলার সময়, ‘জবা’ শব্দটা আস্তে বলেছিলেন। অসত্যও বলা হলো না, আবার গাছটিও বিক্রি হলো।
সান্ত্বনা দিয়ে তাকে বলেছিলাম, যে কোনো শুক্রবার আমার সাথে চুকুর অভিযানে যেতে। নির্ধারিত দিনে সময়মত আমি আর মুক্তি ইস্কাটনের বাসা থেকে তাকে তুলতে গিয়ে দেখি সাথে তার মাও আছেন। হাসতে হাসতে বললেন, সাধারণত দুপুরে খাওয়ার পর এই সময়টায় তিনি বিশ্রাম নেন। কিন্তু আজ বলছেন, আমার সাথে যাবেন। দেখে আমি চমকিত, পুলকিত, উত্তেজিতও। শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা আরা মাহমুদ আমাদের সাথে বেড়াতে যাবেন, আমি কৃতজ্ঞ। দৌড়ে গিয়ে তাঁকে এগিয়ে আনি। পথে লীনা পারভিনও যুক্ত হলেন ছুটির দিনে আমাদের চুকুর অভিযানে।
কিছুদূর যেতেই শহীদজায়া একটু অসুস্থ বোধ করছিলেন। সেদিন অনেক গরম ছিল। আমি গাড়ি থামাই। একটু সুশ্রুষা শেষে তাঁকে সামনে চালকের পাশের আসনে এনে বসাই। বলছিলাম, তাহলে আমরা ফিরে যাই। কিন্তু উনি তাতে রাজি নন। তিনি বেড়াতেই যাবেন। আমি বুঝতে পারছিলাম, অস্বস্তিটা তার আছেই, কিন্তু তার জন্য সন্তানদের বেড়ানোটা মাটি হোক, তা চাননি। আমি বারবার তার খোঁজ নিচ্ছিলাম। তাতে তিনি কিছুটা বিরক্তই হন। তার চেষ্টা ছিল, তাকে যেন আমরা বোঝা মনে না করি।
ঘুরতে ঘুরতে ৩০০ ফুট প্রসস্ত এক্সপ্রেসওয়ে ধরে পূর্বাচল গিয়ে শাওন মাহমুদকে চুকুরের জঙ্গলে ছেড়ে দিলাম। রাস্তার পাশে অঢেল চুকুর গাছ।
ইচ্ছামত তুলে নিন, কেউ কিচ্ছু বলবে না, প্রতারিত হওয়ার কোনো চান্স নেই। চুকুর অভিযান শেষে গেলাম বালু নদীর পাড়ে। নৌকা দেখে সবার চিৎকার, চড়বো। কিন্তু শহীদজায়া বললেন, তিনি নৌকায় যাবেন না। তবে আমরা যেন যাই। তাঁকে ছেড়ে আমরা যাবো না, শুনেই এবার আমাকে রীতিমত ধমক দিলেন। তার জন্য আমাদের বেড়ানোতে যেন কমতি না হয়। তাঁকে বালু নদীর পাড়ে বসিয়ে রেখেই যেতে হলো। এক ঘণ্টার যাত্রা ১০ মিনিটে শেষ করে ফিরে এলাম। কেন আগে ফিরে এলাম তাতেও বিরক্ত হলেন তিনি। আসলে বকাঝকা, বিরক্তি; সবকিছুতেই ছিল মমতা মাখানো।
বালু নদীতে নৌকা ভ্রমণ শেষে কনে দেখা আলোর বিকেলটায় বুঝতে অসুবিধা হয়নি, শরীরের কষ্টটা তিনি বুকে চাপা দিয়ে হাসিমুখেই আমাদের
সঙ্গ দিচ্ছিলেন।
বুকে কষ্ট, মুখে হাসি- এটা অবশ্য তাঁর একদিনের নয়; ৪৮ বছর ধরেই এই প্র্যাকটিস করছেন তিনি। একাত্তরের ৩০ আগস্ট একুশের গানের সুরকার আলতাফ মাহমুদকে পাকিস্তানী হানাদাররা তুলে নেয়ার পর থেকেই সারা আরা মাহমুদের এই লড়াই চলছে। স্বামীকে আর ফিরে পাননি, এমনকি পাননি লাশের সন্ধানও। তারপর থেকে একমাত্র কন্যা শাওন মাহমুদকে নিয়ে বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতরানো। সারা আরা মাহমুদ একা নন। শহীদ জায়া ও শহীদ জননীদের এই লড়াই আমাদের মুক্তিসংগ্রামের সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায়ের একটি। তাঁদের অনেকের জীবনের সংগ্রাম-লড়াই আমি কাছ থেকে দেখেছি বা শুনেছি বা পড়েছি। হুমায়ুন আহমেদের মা, জাহিদ রেজা নূরের মা, মিশুক মুনীরের মা, নুজহাত চৌধুরীর মা, শমি কায়সারের মা- প্রত্যেকের জীবন সংগ্রামই গৌরবের একেকটা অধ্যায়। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম তো জাতির অনুপ্রেরণা। শহীদ আজাদের মাকে নিয়ে লেখা আনিসুল হকের উপন্যাস ‘মা’ বাংলা সাহিত্যের ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। আমি বারবার তাদের গল্প শুনি, আর অনুপ্রাণিত হই। সিরাজউদ্দিন হোসেন, ডাঃ আলিম চৌধুরী, শহীদুল্লাহ কায়সার, ফয়জুর রহমান, মুনীর চৌধুরীরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। নুরজাহান সিরাজী, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, পান্না কায়সার, আয়েশা ফয়েজ, লিলি চৌধুরীরাও দেশের জন্য নিজেদের জীবনের সুখ-সাচ্ছন্দ উৎসর্গ করেছেন। তারা সবাই অল্প বয়সে স্বামী হারিয়েছেন। সুযোগ ছিল নতুন করে জীবন সাজানোর। সাজাননি। দেশকেই জীবন ভেবেছেন। সন্তানকেই দেশ ভেবেছেন। ভেবেছেন বলেই আজ আমরা দেখছি শহীদদের সন্তানদের সবাই দেশ ও জাতির গর্ব। তারা নিজ নিজ যোগ্যতায় মাথা উচু করে পিতার আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, উর্ধ্বে তুলে ধরছেন দেশের
মর্যাদা। তবে সন্তানদের পড়ালেখা করানো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে বড় করে তোলাটা খুব সহজ ছিল না। বিরুদ্ধ সময়ে আমাদের এই মায়েরা সেই কঠিন সংগ্রামটা করেছেন দাঁতে দাঁত চেপে।
বিশেষ করে ৭৫এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়। স্বাধীনতা বিরোধীরা মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে যান। আর এই উল্টোপথে হাঁটার সময়টায় নানামাত্রিক ঝুকির মুখে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরাও। লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান আর পদে পদে বঞ্চনা সয়ে এগুতে হয়েছে তাদের। শত প্রতিকূলতার মাঝেও এই মায়েরা শক্ত হাতে ধরে রেখেছেন সংসারের হাল, অটল থেকেছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়-বিশ্বাসে।
আমি সবসময় বলি, মানুষ হিসেবে নারীরাই শ্রেষ্ঠ, শক্তিশালী। এর উদাহরণ দিতে গিয়ে আমি এই শহীদজায়াদের কথা বলি। মুক্তি সংগ্রামের কথা, মুক্তিযুদ্ধের কথা এলে পুরুষদের বীরত্বের কথা অনেক শুনি। কিন্তু সে অর্থে অনালোচিতই থেকে যায় নারীদের ত্যাগ। মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছেন, এমন কোনো নারীর জন্য কোনো পুরুষ বাকি জীবন একা থেকেছেন বা একা একা সন্তানদের মানুষ করেছেন, এমন কোনো উদাহরণ শুনিনি। বরং একাত্তরে নির্যাতিত নারীদের অনেকেরই আর ঘরে জায়গা হয়নি। বীরাঙ্গনার সন্তানরাও পায়নি সামাজিক স্বীকৃতি। অথচ আমাদের এই মায়েরা একা তাদের সন্তানদের আগলে রেখেছেন পাখির মায়ের মত। মা মানেই কিন্তু এক বিশাল শক্তি।
গ্রামে কখনো বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানো মুরগি দেখেছেন। একবার কাছে গিয়ে সেই বাচ্চাদের ধরার চেষ্টা করলে দেখবেন সাধারন এক মুরগি, তার সন্তানদের বাঁচাতে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। প্রয়োজনে নাকি মায়েরা বাঘিনীর মত হতে পারে। আমাদের এই মায়েরা প্রত্যেকেই একেকজন বাঘিনী।
কঠিন জীবনযুদ্ধে জয়ী বীর। অথচ একাত্তরের আগে এরা সবাই ছিলেন অতি সাধারণ গৃহিনী। অতি সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠা আমাদের এই মায়েদের জন্য আমার সবসময়ের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের অনেক কাহিনী আছে। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে যায় ক্র্যাক প্লাটুন। শহরে শিক্ষিত স্মার্ট ছেলেরা, রাজনীতির সাথে যাদের
সামান্যই সম্পর্ক, তারা স্রেফ দেশকে ভালোবেসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কোনো নিয়ম কানুন না মেনে পাগলের মত যুদ্ধ করতেন তারা। খালেদ মোশাররফের পরিকল্পনায় মেজর হায়দারের প্রশিক্ষণে এই ক্র্যাক প্লাটুন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীতে রীতিমত ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। ক্র্যাক প্লাটুনের প্রথম অপারেশনটি ছিল ৯ জুন। তখন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিদেশি সাংবাদিক ও অতিথিরা থাকতেন। পাকিস্তানীরা তাদের বোঝাতো পূর্ব পাকিস্তানের সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু সেটা যে স্বাভাবিক নয়, তা প্রমাণ করতে খালেদ মোশাররফ গেরিলাদের ঢাকায় পাঠালেন। নির্দেশনা ছিল ঢাকার আশপাশে কিছু গ্রেনেড ও গুলি ছুড়তে হবে, যাতে বিদেশিদের বোঝানো যায়, কিছুই স্বাভাবিক নয়। এই দুঃসাহসী তরুণ গেরিলারা ঢাকায় এলেন এবং সরাসরি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গ্রেনেড হামলা করে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করলেন। তখনকার সময়ে যা ছিল অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ ও অবিশ্বাস্য কাজ। সন্ধ্যায় বিবিসির খবর থেকে খালেদ মোশাররফ এই অপারেশনের কথা জানতে পেরে বলেন, ‘দিজ অল আর ক্র্যাক পিপল! বললাম,
ঢাকার বাইরে বিস্ফোরণ ঘটাতে আর ওরা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালেই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এসেছে।’ তিনিই প্রথম এই দলটিকে ‘ক্র্যাক’ আখ্যা দেন; যা থেকে পরবর্তীতে এই প্লাটুনটি ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ নামে পরিচিত হয়।
এই ক্র্যাক পিপলরা যুদ্ধের কোনো নিয়ম-কানুন জানতেন না, মানতেন না। তারা শুধু জানতেন, দেশ স্বাধীন করতে হবে। ক্র্যাক প্লাটুনের সেই পাগলেরা রাজধানী ঢাকায় একের পর এক অভিযান চালিয়ে আক্ষরিক অর্থেই পাগল বানিয়ে দেয় পাকিস্তানী হানাদারদের। তাদের সব দাবি ভুল প্রমাণিত হয়। বিশ্ববাসী বুঝে যায় কিছুই ঠিক নেই। ৯ জুন শুরুর পর বিভিন্ন সময়ে ক্র্যাক প্লাটুন ঢাকায় ৮২টি অভিযান চালায়। প্রত্যেকটি অভিযানই ছিল সাহসিকতার একেকটি উজ্জ্বল অধ্যায়।
আগস্ট আমাদের জাতির জীবনে শোকের মাস। ৭৫এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনটি গোটা জাতিকে শোকগ্রস্ত করে ফেলে। তবে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় জঙ্গিদের একযোগে বোমা হামলা আগস্টের শোককে আরো বাড়িয়েছে। তবে আগস্টের শোক আসলে শুরু হয়েছে একাত্তরে। ক্র্যাক প্লাটুনের একের পর এক অভিযানে পাগলপ্রায় পাকিস্তানী হানাদাররা তাদের খোঁজে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। ধরা পড়া এক গেরিলা অসহ্য নির্যাতনে মুখ খোলায় পাকিস্তানী হানাদারেরা একাত্তরের ২৯ ও ৩০ আগস্ট একযোগে অভিযান চালায় ক্র্যাক প্লাটুনের নানা আস্তানায়। ধরা পড়েন অন্তত ১৫ জন গেরিলা। তাদের মধ্যে ৭ জন আর ফিরে আসেননি। তাদের লাশও আর পাওয়া যায়নি। ক্র্যাক প্লাটুনের যারা আর কখনোই ফিরে আসেননি।
ক্র্যাক প্লাটুন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। যুদ্ধ না জানা তরুণদের ‘হিট অ্যান্ড রান’ কৌশল গেরিলা যুদ্ধের ইতিহাসেই নতুন
মাত্রা যুক্ত করেছে। যুদ্ধ শেষে ক্র্যাক প্লাটুনের অন্তত দুই জন সদস্য রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাবেক মন্ত্রী, আর
বর্তমান মন্ত্রিসভায় আছেন আরেক ক্র্যাক প্লাটুন বীর গোলাম দস্তগীর গাজী। বাকি বীরেরাও সমাজের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
গানের মানুষ, সুরের মানুষ আলতাফ মাহমুদও ছিলেন ক্র্যাক প্লাটুনের একজন। অপারেশনে তো গেছেনই; স্ত্রী, শিশু সন্তানের জীবনের কথা না ভেবে আউটার সার্কুলার রোডের বাসার পেছনে কাঠাল গাছের পাশে মাটি খুঁড়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন অস্ত্র। একাত্তরের ৩০ আগস্ট সারা আরা মাহমুদের সামনে থেকেই ধরে নিয়ে যাওয়া হয় আলতাফ মাহমুদকে। মাটি খুঁড়ে বের করা হয় অস্ত্র। তারপর চলে ভয়াবহ নির্যাতন। কেমন নির্যাতন, সেটা আমি তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছে শুনেছি।
পাছে সারা মাহমুদ বা শাওন মাহমুদ শুনে ফেলেন, সেই ভয়ে নির্যাতনের সেই স্মৃতি তাঁরা মনেও করতে চান না, খুব বেশি বলেনও না। তবু আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো সেই স্মৃতি ভোলা যায় না। ৩ সেপ্টেম্বরের পরে আলতাফ মাহমুদকে আর দেখা যায়নি। তার লাশ মেলেনি, কবর মেলেনি, কোনো চিহ্ন মেলেনি। পুরো দেশটাই তাদের চিহ্ন।
৪৮ বছর ধরে সেই শোক বুকে চেপে আছেন সারা আরা মাহমুদ, তবে সেই শোক তাকে একটুও কাবু করতে পারেনি। শোককেই যেন শক্তিতে পরিণত করেছেন। মোহনীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর আত্মসম্মানবোধ, প্রবল ভালোবাসা- সব মিলে অসাধারণ এক সৌন্দর্য্যের আভা তৈরি করেন চারপাশে, যাকে উপেক্ষা করা যায় না।
প্রকৃতি আমাকে সবসময় টানে। বারবার প্রকৃতির কাছে ফিরে যাই, আর বলি, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। তবে শহীদ জায়া সারা আরা মাহমুদের মত এমন চৌম্বকীয় ব্যক্তিত্বকে পাশে বসিয়ে পূর্বাচলের উদার প্রকৃতি, অসাধারণ লেক আর বালু নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানোর বিকেলটা আমার জন্য মহার্ঘ্য এক স্মৃতি হয়েই থাকবে।
প্রভাষ আমিন
[email protected]
সারাবাংলা/এমএম
১৯৭১ আলতাফ মাহমুদ ক্র্যাক প্লাটুন চুকুর গাছ প্রভাষ আমিন মুক্তিযুদ্ধ শহীদ জায়া শাওন মাহমুদ সারা আরা মাহমুদ