করোনা মহামারিতে অন্যান্য রোগের চিকিৎসাও জরুরি
৬ এপ্রিল ২০২০ ১২:৫৫
প্রাণঘাতী মহামারি কোভিড-১৯ বা করোনার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও চলছে লকডাউন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় প্রত্যেকটি মানুষ করোনাভাইরাস সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া তারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
অন্যদিকে নিজেদের বসবাসের জায়গা থেকে শুরু করে গ্রাম-শহরের সব মানুষই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার চেষ্টা করছে। এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। তাছাড়া এই মহামারিতে দেশের প্রত্যেকটি প্রান্তে সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ দরিদ্র বৃদ্ধ মানুষদের সাহায্যে যেভাবে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছে সেটি অবশ্যই আশার সঞ্চার করে। যদিও বর্তমানে দেশে মৃত্যুহার কম এবং সেই সাঙ্গে করোনা রোগীর সংক্রমণের হার সরকারিভাবে কম তারপরেও আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে ভবিষ্যতের দিনগুলোর জন্য। কারণ আমরা কেউই বলতে পারছি না ভবিষ্যতে আমাদের দেশ কোন পথে এগোবে?
অদেখা শত্রুর সঙ্গে মোকাবেলা করতে করতে আমরা যেন একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা থেকে বিরত না থাকি সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে যে, কেউ অসুস্থ হলে সে যে কারণেই হোক না কেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছে না। এমনকি আশপাশের কোন মানুষই তাকে সাহায্য সহযোগিতা করতে আসছে না শুধুমাত্র এই করোনাভাইরাস আক্রমণের ভয়ে।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের এই মৌসুমে অনেকেই সর্দি কাশি কিংবা ইনফ্লুয়েঞ্জা জাতীয় যে কোন সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ব্যাধি একটি বহুল পরিচিত এবং অতীতেও লক্ষনীয় এর প্রকোপ। মেডিকেল রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে কয়েক লাখ মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত। তাছাড়া হৃদরোগ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন রোগব্যাধিতে দেশের অধিকাংশ মানুষ জর্জরিত। সেখানে ডায়াবেটিস একটি প্রধান সমস্যা এবং এই সমস্যায় আমাদের দেশের একদিকে যেমন বয়স্করা আক্রান্ত অন্যদিকে তেমন শিশু থেকে শুরু করে নারীদের মধ্যে এর প্রকোপ রয়েছে।
করোনা মহামারির এই সময়ে আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে, করোনাভাইরাস ছাড়াও যে কেউ যেকোনো সময় যেকোনো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর একজন নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাওয়া তার অধিকার এবং সে যদি সেই অধিকার থেকে কোন কারণে বঞ্চিত হয় সেটি হবে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা।
গণমাধ্যম সূত্রে দেখা যাচ্ছে, কেউ কোন ধরনের জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হলেই আমরা ধরেই নিচ্ছি তিনি করোনায় আক্রান্ত। এমনকি হাসপাতালগুলোতেও তাদেরকে সহজে ভর্তি করানো যাচ্ছে না। ফলে দেখা যাচ্ছে কেউ একজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে নিয়ে তার নিকটাত্মীয়রা একদিক থেকে আরেকদিক ছোটাছুটি করছে তার চিকিৎসার জন্য এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন না। অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন যা অত্যন্ত হতাশাজনক এবং পরবর্তীতে এটি একটি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
আমরা করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি ঠিকই কিন্তু সেই সঙ্গে আমাদের এটিও খেয়াল রাখতে হবে যে, আমাদের আচার আচরন মানুষকে অহেতুক ভীতির সঞ্চার না করে। এমনটা চলতে থাকলে আগামীতে একজন আরেকজনের সহযোগিতায় এগিয়ে নাও আসতে পারে এবং এই ধরনের মন মানসিকতা এবং ভীতির সঞ্চার হলে সামাজিকভাবে কেবল করোনাভাইরাস নয় অন্যান্য রোগব্যাধি মোকাবেলা করাও আমাদের দেশের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে যাবে। ফলে এর প্রভাব পড়বে সমাজ ব্যবস্থায়।
উন্নত বিশ্বের সমাজব্যবস্থা ভিন্ন। আমাদের মতো জনবহুল দেশে সব সময় সব ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ নয়। এখানে কোন উদ্যোগ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ও সমন্বয় করার জন্য কেবল চিন্তা করলেই হবে না এখান চিন্তা করতে হয় বহুমাত্রিক। বহুমাত্রিক জ্ঞানের ভিন্নতার মাধ্যমে আমাদেরকে সব সময় বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সমাধান করতে হয়।
আমরা কিভাবে মহামারি মোকাবেলা করব তার জন্য আমাদের হাতে বিভিন্ন ধরণের মডেল থাকতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেই সকল মডেলকে সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুপরিকল্পিতভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সেখানে স্বাস্থ্য, সামাজিক ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ের সমন্বয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কারণ, কোন সমস্যা সামনে আসলেই শুধুমাত্র তখনই সেটিকে নিয়ে চিন্তা করব এই ধরনের মন মানসিকতা আমাদের পরিহার করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারি। গবেষণাগুলোতে হতে হবে প্রায়োগিক এবং বর্তমান প্রচলিত সমাজব্যবস্থা সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তা না হলে যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে গিয়ে আমরা আরও বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়ব। যা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে।
অবশেষে বলতে চাই অহেতুক ভীত না হয়ে সচেতন হই, অন্যকেও সচেতন করি। বিনা চিকিৎসায় কেউ যেন মারা না যায় সেদিকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি।
লেখক- শিক্ষক, স্থপতি। বর্তমানে স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের পিএইচডি গবেষক, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়