মাস্ক যেন অপরাধীদের অস্ত্র না হয়
৯ এপ্রিল ২০২০ ১৬:১৩
স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ অপরাধীদের হাতে পড়লে তা অস্ত্রেও পরিণত হতে পারে। কেড়ে নিতে পারে প্রাণ। তেমনই একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ ফেস-মাস্ক। এখন ছোট্ট এই উপকরণটি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবহার করছেন অনেকেই। বিস্ময়কর হলেও সত্যি—এমন ক্রান্তিকালেও এরই সুযোগ নিতে পারে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। সুযোগ নিতে পারে অজ্ঞান-পার্টি, মলম-পার্টি কিংবা ও ধর্ষকও।
করোনায় ‘সামাজিক দূরত্ব’ নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার তিন ধাপে ২৬ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে।এই ছুটি ঘোষণার পর সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। ঢাকায় ভাড়া বাসায় দিয়ে গেছেন তালা। ফলে এখন রাজধানীর অধিকাংশ বাসা প্রায়ই খালি।
এদিকে, সারাদেশে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় রাজধানীতে আসা লোকের পরিমাণও প্রায় শূন্যের কাছাকাছি। চিকিৎসার মতো জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ আপাতত ঢাকামুখী হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে অকারণে কেউ বের হতে পারছে না রাস্তায়।
গণপরিবহন বা বিনোদন কেন্দ্রগুলোয় ভিড় নেই, তাই ভিড়ের ভেতর ঢুকে পকেট কাটারও সুযোগ নেই। রেল স্টেশন, সদরঘাট, বাস টার্মিনালগুলোতে রাজধানীমুখী মানুষের ঢল নেই, তাই সুযোগ নেই ছিনতাইয়েরও। সুযোগ মিলছে না অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টিরও। তাই তারা উপার্জনের বিকল্প পথ খুঁজতে পারে। এই বিকল্প খুঁজতে গিয়ে কেউ মাস্কবিক্রেতা সাজতে পারে। কেউবা মাস্ক পরে বনে যেতে পারে জরুরিপণ্যের ক্রেতাও।
এই তো সেদিনই (৫ এপ্রিল) মাস্ক-পরা ক্রেতা সেজে অস্ত্রের মুখে ফার্মেসি লুট করলো দুর্বৃত্তরা। সেদিন রাজধানীর খিলগাঁওয়ে লাজ ফার্মায় মাস্ক পরে ঢুকে পড়ে একদল দুর্বৃত্ত। এরপরই অস্ত্রের মুখে ফার্মেসির বিক্রয়-কর্মীদের জিম্মি করে নগদ টাকাসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সেই ঘটনায় খিলগাঁও থানায় মামলা হওয়ার পর খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। আর গণমাধ্যমের কল্যাণে জনগণেরও সামনে চলে আসে। খিলগাঁওয়ের ঘটনার মতো আরও যে ঘটনা ঘটছে না, তার কী নিশ্চয়তা আছে?
আরও ঘটতে পারে। ঘটতে পারে ভিন্ন ধরনের ঘটনাও। বিক্রেতা সেজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে পারে অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টি। নিরিবিলি কাউকে পেলে তার কাছে বিক্রি করতে পারে অজ্ঞান করার মলম লাগানো মাস্ক। ক্রেতা মাস্কটি পরার কিছুক্ষণের মধ্যে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলতে পারেন। আর তখনই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সর্বস্ব কেড়ে নিতে পারে। কিংবা মাস্ক-বিক্রেতা সেজে যেতে পারে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে। বাসিন্দাদের কাছে মাস্ক বিক্রি করে তাদের অচেতন করে পুরো বাসায় চালাতে পারে লুটপাট। এমনকি সময়-সুযোগ বুঝে ধর্ষকরাও এই মাস্কের অপব্যবহার করতে পারে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো মাথায় রেখে প্রশাসনকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। মাস্ক বিক্রির নীতিমালা তৈরি করতে হবে। কারা কোথায় মাস্ক বিক্রি করতে পারবে, থাকতে হবে তারও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। জোর দিতে হবে-যেখানে-সেখানে মাস্ক বিক্রি না করার ওপর। পাশাপাশি অযৌক্তি পরিমাণ মাস্ক না কেনার ওপরও।
এছাড়া বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে- নিত্যপণ্যের বাজার ও চব্বিশঘণ্টা খোলা থাকা দোকানে। এসব দোকানে মাস্ক মুখে দিয়ে কিংবা অন্য কোনো পোশাকে একাধিক লোক যেন এক সঙ্গে না আসতে পারে। কোনো দোকানে দলবেঁধে লোক ঢুকলে তাদের গতিবিধির ওপর নজরদারি রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আবার আলাদাভাবে ঢোকা লোকজনও কোথাও বসে যেন সংঘব্ধ হতে না পারে, তাও খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া তারা যেন নির্দিষ্ট কোনো দোকানে যৌক্তিক সময়ের বেশিক্ষণ না থাকতে পারে, গুরুত্ব দিতে হবে তার ওপরও।
ইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মনে রাখতে হবে—সময়-পরিবেশ পরিস্থিতির শিকার হয়ে সাধারণ পেশাজীবী যেমন বারবার নিজেদের পেশা পরিবর্তন করে, তেমনি অপরাধীরাও। তাদেরও অপরাধের কৌশল বদলে যেতে পারে। তবে, এসবই আশঙ্কার কথা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দুর্ঘটনার প্রতিকারের চেয়ে তা প্রতিরোধ করাই শ্রেয়।
তাই সম্ভাবনা-আশঙ্কার সব দিক বিবেচনা করে যথাযথ পদেক্ষপ নেওয়া উচিত। আর সেইসব পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই।
তবে, সরকারের ওপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নাগরিকদের বসে থাকলে চলবে না। তাদেরও সচেতন হতে হবে। সরকারঘোষিত সময় পর্যন্ত বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে বের হলেও কাজ শেষে যত দ্রুত সম্ভব ঘরে ফিরতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কমমূল্যে পাওয়া যাবে বলে যেখানে-সেখানে যার-তার কাছ থেকে মাস্ক কেনা যাবে না। তাহলে একদিকে সম্ভব হবে করোনা-সংক্রমণ প্রতিরোধ, অন্যদিকে থাকা যাবে বিপদমুক্তও।
লেখক: কবি-প্রাবন্ধিক; বার্তা সম্পাদক, রাইজিংবিডি
করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস ফেস-মাস্ক মাস্ক মোহাম্মদ নূরুল হক সামাজিক দূরত্ব