Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রকৃতির এক নীরব প্রতিশোধের নাম ‘করোনাভাইরাস’


১০ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৩০

প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের থাবায় বিশ্বজুড়ে মানুষ যখন আতঙ্কে, তখনই ঠিক বিপরীত চিত্র প্রকৃতিতে। পাল্টে গেছে দাবার চাল। এখন ঘরে বন্দী মানুষ, আর প্রকৃতিতে অবাধে বিচরণ করছে পশু ও প্রাণীরা। কিছুদিন আগেও এমনটা কল্পনার বাইরে ছিল।

কিছুদিন আগেও যান্ত্রিক জীবনে ব্যস্ত মানুষের দু’দণ্ড অবসর ছিল না। ব্যস্ত জীবনের চাকা ঘুরে চলেছে অবিরত। কিন্তু করোনার কারনে প্রিয়জন, সমাজ-সংসার, সবকিছু পিছনে ফেলে অবিরাম ছুটে চলা মানুষগুলো এক নিমিষেই থমকে গেছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ক্ষমতা-অক্ষমতা, ধনী-গরীব সব মানুষের আতঙ্ক এখন একই কেন্দ্রবিন্দুতে স্থির হয়ে গেছে। রুদ্ধশ্বাসে থাকা সমগ্র বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা এখন একটাই, করোনা থেকে মুক্তি।

কিন্তু কঠিন সত্য হচ্ছে, করোনার প্রতিষেধক এখনো আবিস্কৃত হয়নি। বিশ্বের সব বাঘা বাঘা চিকিৎসক, গবেষক ও সংশ্লিষ্টদের নতুন এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯। তার জিন তথা বংশগতি বদলেছে অসংখ্য বার। চীনের উহানে জন্ম নিয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে নিজের ক্ষমতার জানান দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই কোভিড- ১৯। ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ষোল লাখের বেশি মানুষকে আক্রান্ত করে কেড়ে নিয়েছে প্রায় ছিয়ানব্বই হাজার প্রাণ।

প্রকৃতি নিজস্ব ক্ষমতার জানান দিয়ে আবারো প্রমাণ করে দিল– প্রকৃতির কাছে আমরা মানবজাতি কতটা অসহায়।

প্রযুক্তিনির্ভর মানুষের ভেতর জেঁকে বসেছিল ভিন্ন এক অহংকার। যা মানবজাতিকে অন্ধ করে রেখেছিল। প্রকৃতির কাছে মানুষের চাহিদার কমতি ছিলনা। নিজস্ব ভুবনকে নিজের মতো করে পাবার জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত অত্যাচার করে চলছে প্রকৃতির উপর। একের পর এক চাপ সহ্য করে, প্রকৃতি যখন খুব বেশি পরিমাণে ক্লান্ত, তখন তার অসহনীয় এক আচরণের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে সে জানান দিল তার নিজস্ব সত্ত্বা।

পরিবেশবাদীদের বিক্ষোভ, বিশ্বনেতাদের গালভরা বুলি, জলবায়ু কনফারেন্সসহ বহু মোটা বাজেটকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, মানুষকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে, প্রকৃতি সেজে উঠেছে তার আপন চিরচেনা রূপে।

করোনা আতঙ্কে কারখানায় পড়েছে তালা, উবে গেছে কালো ধোঁয়া আর বন্ধ হয়েছে দূষণ। প্রকৃতির দূষণ কমেছে ৫ শতাংশ পর্যন্ত। যা গেল ৭৫ বছরেও ছিল অসম্ভব।

পৃথিবী আবারো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের প্রকৃতিতে ফিরে গেছে। ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসা সবুজ, ধ্বংস হয়ে যাওয়া আধমরা বন, গলে যাওয়া বরফ, সাগর ভরা প্লাস্টিকের রাশি, হারিয়ে যাওয়া বনের পশু, বিলুপ্তপ্রায় পাখিরা- ক্রমেই যেন কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। মানুষের আরও চাই, আরও চাই। এই সীমাহীন চাহিদার কারণে কিছুতেই থামানো যাচ্ছিলনা পৃথিবীর দূষণ। তাই বোধহয় আচমকা এমন প্রতিশোধ, মানুষের বিরুদ্ধে এ যেন প্রকৃতির যুদ্ধ ঘোষণা।

আপাতত মানুষ আছে ঘরবন্দী আর প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে নিজের আপন চিরচেনা রূপে। সারিয়ে নিচ্ছে দগদগে ক্ষতগুলো। নিজেকে সাজিয়ে নেয়ার চেষ্টায় রত সে।

ঢাকার ব্যস্ত সড়ক মানিকমিয়া এভিনিউতে এখন শালিক উড়ে বেড়ায়। আপন মনে তারা খুঁটে খুঁটে খাবার খায়। হাতির ঝিলে বাড়ছে সবুজ, উড়ে আসছে কিছু বিরল প্রজাতির পাখি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শোনা যায় পাখিদের কিচির-মিচির, রাজধানীর অট্টালিকায় থাকা মানুষের ঘুম ভাঙ্গে এখন পাখির ডাকে। সমুদ্রের নীল পানিতে এখন আড্ডা দিচ্ছে ডলফিন। মানুষ যখন ঘরবন্দী, পশুপাখিরা তখন মুক্ত-স্বাধীন।

জাপানের ফাঁকা সড়কে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক পাল হরিণ। পশ্চিম অকল্যান্ডের একটি স্কুলমাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে টার্কির দল। থাইল্যান্ডের শপিংমল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হনুমান।

সড়কে নেই গাড়ি, জিবাশ্ব জ্বালানী পোড়ানো বন্ধ হওয়ার ফলে প্রকৃতি হচ্ছে দূষণমুক্ত। পৃথিবীজুড়ে মানুষের এই বন্দী জীবন কমিয়ে আনছে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দূষণ। গোটা পৃথিবীতে এখন কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর পরিমাণ তলানীতে এসে ঠেকেছে। অতীতে অতিমাত্রায় দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে পৃথিবী। তাই এখন সুযোগ পেয়ে হাঁফ ছাড়ছে প্রকৃতি। ঘরবন্দী মানুষ বাইরের দুনিয়াটাকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে প্রকৃতির কাছেই। মানুষ বনাম প্রকৃতির এই লড়াইটা যখন শেষ হবে, তখন প্রকৃতি যতটা সেজেছে তার উপকার ভোগী হবে মানুষই।

পৃথিবীতে এই অসুখ সারতে কত সময় লাগবে তার ধারণা দিতে পারছেনা কেউ। তবে আশা করা হচ্ছে লড়াইয়ে জয় হবে মানুষের। আর শিক্ষা নিতে হবে এই সংকট থেকে।

মানুষ আবার বুক ভরে শ্বাস নেবে আগের মতোন,

প্রকৃতিকে ভালোবেসেই ফিরে পাবে কর্মদৃপ্ত জীবন।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

করোনাভাইরাস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর