কোভিড-১৯ ও নীতিনির্ধারণ; কিছু সহজ অর্থনৈতিক রূপরেখা
১০ জুন ২০২০ ২২:২৯
গত দুই মাসে অন্য অনেকের মত আমিও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতিমালা পাঠ, ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ এবং নীতি নির্ধারকদের একাধিক সংলাপ শোনা ইত্যাদি নানান ধরনের সামাজিক কাজে লিপ্ত ছিলাম। কিঞ্চিৎ লেখালেখির অবকাশও হয়েছে। সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল কিভাবে বাংলাদেশ সরকার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলোতে ৫০টিরও বেশি আর্টিকেল পড়ার পর এবং প্রায় ১৫ এর বেশি ওয়েবিনার অংশগ্রহণ করে আমি বিশেষজ্ঞদের যে ধারণাগুলি এবং দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে কিছুটা সাধারণ ধারণা পেয়েছি তাদের মধ্যে যে পরামর্শগুলি বার বার এসেছ সেগুলো হল: ‘সরকারের উচিত দরিদ্রদের অর্থ প্রদান করা’, ‘দরিদ্রদের সরকার খাদ্য ও প্রাথমিক চাহিদা সরবরাহ করা উচিত’, ‘সরকার তিন মাস প্রতি মাসে যদি ২০০০ টাকার বেশি বিতরণ তবে তা ২ কোটি পরিবারকে বাঁচাতে পারে যা দেশের মোট জিডিপি’র মাত্র ১ শতাংশ খরচ করেই’ ,’সরকারের উচিত কৃষকদের ন্যূনতম বা এমনকি সুদ ছাড়াই ঋণ দেওয়া’, ‘সরকারের উচিত ঋণ দিয়ে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসা বাঁচানো’, এবং ‘সরকার লকডাউন বাড়িয়ে এবং অর্থ যথাযথ বিতরণের মাধ্যমে জনগণের ওয়েলফেয়ার নিশ্চিত করার জন্য আরও বেশি চেষ্টা করতে পারে’।
এ সবই হল নীতিগত পরামর্শ তবে আসল সমাধান বা গাইডলাইন সরবরাহের জন্য সক্রিয়তার দিক থেকে জেনেরিক এবং বিমূর্ত। সরকারের প্রতি এই পরামর্শগুলো প্রয়োজন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, তবে এই ‘জেনেরিক’ পরামর্শগুলো কি সরকারের অজানা? একটি অর্থনৈতিক সঙ্কটে, এক্সপান্সিওনারি মুদ্রানীতি এবং এক্সপান্সিওনারি আর্থিক নীতি অর্থনীতিকে বাঁচাতে পারে; এটির জন্য সম্ভবত আন্ডারগ্রেড ম্যাক্রোইকোনমিক্স ১০১ কোর্সের জ্ঞানের থেকে বেশি কিছু প্রয়োজন নেই। আমি বিশ্বাস করি যে, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যথেষ্ট পরিমাণে এই জ্ঞান রাখেন। তাহলে সরকার নীতিনির্ধারক এবং গবেষকদের কাছ থেকে কী আকাঙ্ক্ষা করতে পারে? নীতি নির্ধারকরা সঙ্কটের মুহূর্তে সরকারকে সহায়তা করতে পারে এমন কী “প্রিমিয়াম মান” যুক্ত করতে পারেন তাদের নীতিমালা এবং প্রস্তাবনার মাধ্যমে?
আমার মতে সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের রূপরেখা বিবর্জিত নীতিমালা সরকারের কাছে খুব প্রয়োজনীয় বলে মনে হয় না। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং পর্যবেক্ষণ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন সংস্থা এবং গবেষণা থিংক ট্যাঙ্কগুলিতে কাজ করার ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা একটি তাত্ত্বিক কাঠামোর মধ্যে দুর্দান্ত চিত্র, সংখ্যা এবং পরিসংখ্যান দিয়ে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছেন যা প্রায়শই বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। আমি এই কোভিড-১৯ সঙ্কটের সময় কিছু পদক্ষেপের উপর জোর দিতে চাই, যেগুলো সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের কাজকে সহজ করতে পারে এবং একই সঙ্গে নাগরিকদের ওয়েলফেয়ার বৃদ্ধি করতে পারে (লকডাউনবিহীন বর্তমান শর্তগুলো অব্যাহত রেখে)। সরকার তিনটি চ্যানেলে পরিস্থিতি আরও ভালভাবে পরিচালনা করতে পারে।
প্রথমত, সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যসেবা নির্দেশিকা নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ প্রয়োগ করে রোগের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা লকডাউন ছাড়াই হ্রাস করা। দ্বিতীয়ত, যাদের সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন তাদের চিহ্নিত করা। মনে রাখা প্রয়োজন, যেকোনো সমস্যা সমাধানের আগে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বোঝা এবং তাদের খুঁজে বের করা সবচেয়ে জরুরি। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ যেমন রোগী শনাক্ত করা, তেমনি অর্থনীতি বাঁচানোর প্রথম পদক্ষেপ হবে যারা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন তাদের প্রথমেই খুঁজে বের করা । তৃতীয়ত, পাবলিক ফান্ড ডিস্ট্রিবিউশন এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ করার ক্ষেত্রে টারগেটিং সঠিক রাখা। এখন, প্রশ্ন হল এই তিনটি চ্যানেল সরকার কিভাবে পরিচালনা করতে পারে? আমার কিছু পরামর্শ:
ক) রোগের বিস্তার হিসেবে লাল, হলুদ এবং সবুজ অঞ্চল চিহ্নিতকরণ এবং জনগণের চলাচলে সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি এলাকাগুলোতে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবার ইমার্জেন্সি ব্যবস্থা প্রশস্থ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, মিরপুর যদি একটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বা লাল অঞ্চল হয় তবে শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণের চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা পর্যাপ্ত নয়। অগ্রাধিকারসহ মিরপুরের জন্য হাসপাতাল, পরীক্ষার সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় জীবিকা সামগ্রী নিরাপদে সংগ্রহের সুযোগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে অনলাইন ভিত্তিক রক্তের নমুনা সংগ্রহ, সাময়িক হাসপাতাল এবং আউটরিচ সেন্টার তৈরি করা, খাদ্যদ্রব্য অনলাইনে সরবরাহ করা ইত্যাদি সার্ভিসগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাভিত্তিতে অরগেনাইজ করতে হবে। মনিটরিং এবং কর্মকাণ্ড দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা যেতে পারে , যাদের হেলথ ইনসিওরেন্স সরকার প্রদান করতে পারে।
খ) অফিসগুলি কর্মচারীদের সপ্তাহে ৩ দিন অফিসে আসতে বলতে পারে এবং বাসা থেকে বাকি ২ দিনের জন্য কাজ করার জন্য বলতে পারে। কার্যদিবসের অঞ্চলভিত্তিক বিভাজনও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, গুলশান ১-এ অফিসগুলি সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার অফিস পরিচালনা করতে পারে এবং বারিধারা সহ গুলশান ২-এ অফিসগুলো সপ্তাহের বাকি তিন দিন অফিস থেকে কাজ পরিচালনা করতে পারে। বাকি ২ দিন বাসা থেকে কাজ করতে পারে সবাই। পূর্ব ধানমন্ডি, পশ্চিম ধানমন্ডি, মিরপুর ১, মিরপুর ১০, ইত্যাদির জন্যও একই রকম ডিফারিয়েন্সিয়াটেড অফিসের কার্যদিবস নির্ধারণ করা যেতে পারে। সরকারি অফিসগুলিও এটি অনুসরণ করতে পারে। প্রত্যেক এলাকায় যত কম সংখ্যক মানুষ প্রতিদিন বের হবে তত আমরা রোগ বিস্তারের ঝুঁকি কমাতে পারি। পদ্ধতিটি অনেকটা পরিসংখ্যানের ভাষায় কোন ঘটনা ঘটার ফ্রিকোয়েন্সি নরমালি ডিস্ট্রিবিউট করার মত।
গ) সঠিক ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল না থাকায় সাহায্য এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ সরকারের পক্ষে সবচেয়ে কঠিন কাজ। সরলভাবে বলতে গেলে, সরকার জানে যে দরিদ্রদের অর্থের প্রয়োজন জীবিকা নির্বাহের জন্য, কিন্তু এই দরিদ্র জনগোষ্ঠী কারা তা দ্রুত শনাক্ত করা এবং তাদের আর্থিক সহায়তা বিতরণ করার “মেকানিজম” তৈরি করা সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। চিহ্নিতকরণের একটি স্টারটিং পয়েন্ট হতে পারে আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় এনজিওদের প্রকল্পভিত্তিক ডাটাবেজ এবং এমআইএস (ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম) ।
এই সংস্থাগুলো প্রত্যেকেই বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলের দরিদ্র-প্রান্তিক দরিদ্রদের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বছরের পর বছর। একটি এনজিওর একটি প্রকল্পে সাধারণত সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং বাংলাদেশে এমন কয়েকশো কিংবা হাজারো উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে যেগুলিতে প্রত্যেক দরিদ্র সুবিধাভোগীর ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং অন্যান্য তথ্যসহ বিশদ ডাটাবেজ সংগ্রহ এবং আপডেট করা হয় । সরকার এই এনজিওগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনায় বসতে পারে। তাদের ডাটাবেজ ব্যাবহারের অনুমতি নিয়ে শর্ত ছাড়া অথবা মিনিমাম শর্তে এই দরিদ্রদের কাছে অর্থ পৌঁছে দেওয়া শুরু করতে পারে। এই মেকানিজমটি শুরুতে শতভাগ কার্যকর নাও হতে পারে, তবে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কার্যকর হলেও অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
আমার এরকম টারগেটিং প্রস্তাব করার পেছনে যুক্তিটি কী? বিআইজিডি, ব্র্যাক এর একটি জরিপ অনুযায়ী, স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত হওয়া এবং লকডাউনের কারণে বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার যে ২০ ভাগ এর উপর দরিদ্র জনগোষ্ঠী রয়েছে তার সঙ্গে আরও নতুন করে প্রায় ২৩ শতাংশ মানুষ সাময়িকভাবে দরিদ্র সীমার নিচে চলে গেছে। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ (অর্ধেকের বেশি সাময়িকভাবে) দরিদ্রতার ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে । এই ৪০ ভাগ মানুষ কারা? যেহেতু এনজিওগুলো তাদের উন্নয়ন প্রকল্পে যাদের জন্য কাজ করে তাদের প্রত্যেকেই মাল্টিলেটারাল দারিদ্র্যের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে, সেহেতু এই বেনেফিসিয়ারিদের আর্থিক সহায়তার জন্য টার্গেট করা অযৌক্তিক কিছু নয়। কারণ এদেরই একটি বড় অংশ সেই নতুন করে যোগ হয়ে ২৩ শতাংশ সাময়িক দরিদ্র অথবা ৪০ শতাংশ মোট দরিদ্র জনগণের অন্তর্ভুক্ত। গাণিতিকভাবে চিন্তা করলে, বাংলাদেশের সকল দরিদ্র জনগণ যদি একটি সিকুয়েন্স হয় তবে এনজিও ভিত্তিক উন্নয়ন এক একটি প্রকল্পগুলোর সুবিধাভোগীরা এক একটি সাব-সিকুয়েন্স। আর ৫০ টি সাব-সিকুয়েন্সকে দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেওয়া গেলে, মূল সিকুয়েন্সটিতে দ্রুত পৌঁছানো।
সুতরাং, এই প্রকল্পগুলির সুবিধাভোগী যাদের কাছে মোবাইল নম্বর রয়েছে তাদের সরকারের নির্দেশে দ্রুত ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে (সর্বনিম্ন শর্ত সহ, সরকার বিকাশ এবং অন্যান্য ডিজিটাল আর্থিক সেবা সরবরাহকারীদের মাধ্যমে এটি করতে পারে) ২-৩ মাসের জন্য আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে। এটি পারিবারিক পর্যায়ে সামগ্রিক চাহিদাকে স্থিতিশীল রাখবে এবং দরিদ্র মানুষকে অস্থায়ী দারিদ্র্যের জাল এড়াতে সহায়তা করবে। যেকোনো উপায়েই হোক, এই দান করা অর্থ দেশের অর্থনীতিতেই ফিরে আসবে কারণ দরিদ্র মানুষরা এমন নয় যারা লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দেবেন। বরং তারা প্রাপ্ত অর্থ বাজারেই ব্যয় করবেন।
ঘ) গার্মেন্টস শিল্পটিকে সরকারের আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ করার সময় চলে এসেছে। এই খাত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি। কিন্তু যখনই দেশ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় তখন এই শিল্পের ব্যবসায়িক দলগুলি সরকারকে চাপ দেওয়া শুরু করে এবং এই “রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক খেলার” চূড়ান্ত শিকার সর্বদা দরিদ্র শ্রমিক শ্রেণি। যেকোনো সঙ্কটেই এই শিল্পের প্রথম প্রতিক্রিয়া হল; শ্রমিকদের ছাটাই করো বা বেতন কাটো। সরকার যদি শ্রমনীতির একটি সংশোধনীর মাধ্যমে এমন আইন কার্যকর করে যে প্রতিটি কারখানার মালিককে অবশ্যই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শ্রমিকদের মজুরি প্রদান করতে হবে এবং বেতন অ্যাকাউন্টের পাশে একটি প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্টে বেতনের একটি অংশ সরবরাহ করতে হবে (সর্বনিম্ন মাসে ১০০০ টাকা ) তাহলে যখন কোনও শ্রমিক বেতন কর্তনের শিকার হয় বা চাকরি হারায় তখন এই ফান্ডটি তার জন্য আর্থিক সুরক্ষার কাজ করতে পারে। এত বড় আকারের আর্থিক প্রণোদনার পরেও কারখানাগুলো ইতিমধ্যে একটি বিশাল আকারের কর্মী ছাটাই করার ঘোষণা করেছে যেখানে দরিদ্র এবং স্বল্প দক্ষ শ্রমিকরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হবে। শ্রমিকদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পরিবর্তে কারখানাগুলো যদি সরকারের নির্দেশে আগামী এক বছর সবাইকে ৬০-৭০ শতাংশ বেতন দিয়ে চাকরিতে বহাল রাখে তাহলে কি ৩৫ বছরের একটি শক্তিশালী শিল্প খুব ভেঙ্গে পড়বে? সরকার এক্ষেত্রে বেতনের এই ৬০-৭০ শতাংশ জোগান দেওয়ার জন্য কারখানার মালিক এবং বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনা এবং চুক্তি করতে পারে। এই চুক্তির সঙ্গে সম্মত কারখানাগুলোকে সরকার আগামী দুই বছর ট্যাক্সের ক্ষেত্রে ভর্তুকি/রিটার্ন উপভোগ করার সুযোগ দিতে পারে।
করোনাভাইরাসের এই অস্থিতিশীল সময়ে সরকারের নীতিগুলো বাস্তবায়িত করতে সহায়তা করার জন্য এগুলো আমার পরামর্শ । “সরকার সব কিছু করতে পারে” এই সাধারণ ধারনা থেকেও যেমন আমাদের বের হয়ে আসা দরকার, তেমনি সরকার কিভাবে করতে পারে সেই রূপরেখা প্রণয়নের বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের জোর দিতে হবে। আমি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের, বিশেষত যারা অর্থনীতিবিদ তাদের সরাসরি দোষ দিচ্ছি না। কারণ অর্থনীতি একটি জটিল ক্ষেত্র, যা গাণিতিক এবং ইকনোমেট্রিক মডেলগুলোর সঙ্গে দিনে দিনে আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
অর্থনীতিবিদ কেনেথ বোল্ডিং একবার বলেছিলেন, ‘গণিত অর্থনীতিতে কঠোরতা এনেছে; দুর্ভাগ্যক্রমে এটি ক্ষেত্রটিতে সংকোচনও নিয়ে এসেছিল’। অর্থনীতিবিদ হা-জুন চ্যাং বলেছিলেন, ‘জার্গনস এবং ম্যাথমেটিক্স ব্যবহার করে অর্থনীতিকে অনেক কঠিন করা হলেও এর ৯৫ শতাংশ সাধারণ জ্ঞান।’ এই নিবন্ধে, আমি অর্থনীতির ‘সাধারণ জ্ঞান’ অংশটি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি।
লেখক: গবেষক, ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন ইকোনমিক্স অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স