Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাকালের জীবন, মানসিক স্বাস্থ্য ও জীবনধারা


২৯ জুন ২০২০ ১৬:৩৬

বর্তমানে সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত। এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে যাদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়সই ষাটোর্ধ্ব। আর সারা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছে এক কোটির বেশি মানুষ। ভাইরাস আক্রমণের শিকার পৃথিবীতে বিগত শতাব্দীর গুলোতেও বহুবার হয়েছে সময়ের পরিক্রমায় মানুষ এর থেকে নিস্তার পেয়েছে। তবে একথা ঠিক একটি দেশ যখন বিভিন্ন ধরনের বিপদের সম্মুখীন হয় তখন হয়তো সাময়িক অনেক অসুবিধার তৈরি হয়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না এই সমস্যাগুলো থেকেই হয়তোবা ভবিষ্যতের নতুন পরিকল্পনা এবং সম্ভাবনার উদ্ভব হয়। বর্তমানের এই মহামারী ঠিক তেমনি আমাদেরকে নতুনভাবে শেখাচ্ছে ও দিকনির্দেশনা দিচ্ছে এ কথা বললেও ভুল হবে না বর্তমানে প্রচলিত স্থাপত্য চিন্তা এবং ভাবনার।

বিজ্ঞাপন

যেমন ধরা যাক আমরা যেখানে বাস করি কিংবা আমাদের বাসস্থানের চারপাশে অনেক ধরনের মাইক্রো ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। কিংবা সবসময় বিদ্যমান থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এটি ক্ষতিকর কিনা? আর ক্ষতিকর হলেও কিভাবে বসবাসের জায়গায় এধরনের মাইক্রো ব্যাকটেরিয়া মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তার করে। কারণ, বর্তমান পৃথিবীতে বিভিন্ন রোগজীবাণু মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষকে ফেলে দিচ্ছে চরম বিপর্যয়ে। যেখানে হয়তোবা আমাদের বসবাসের জায়গা কিংবা আমরা যেখানে বসে কাজ করছি তার অভ্যন্তরিণ সজ্জা আমাদেরকে একটু হলেও বিভিন্ন ধরনের রোগ বিস্তার থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই নিজেদের বসবাসের স্থান সম্পর্কে ভালোমতো জানা সবার প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বর্তমানের করোনাভাইরাসের কথা। যার জন্য আজ বিশ্ব আতঙ্কিত। যে ভাইরাসের জন্য জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয় জীবনযাপনের মান-সম্পর্ক সবকিছুতেই নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। তাই আমাদের অবস্থানগত পরিবেশে জীবাণুর বিস্তার প্রতিরোধে নিজেদেরই কোন কিছু করার আছে কিনা এসব বিষয় নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এবং এই ধরনের ভাবনাগুলো শুধুমাত্র আজকের জন্য নয়, আগামি দিনের জন্যও ভাবতে হবে। কারণ আমাদের নিজেদের বসবাসের স্থানে ছোট ছোট উদ্ভাবনী শক্তি ভবিষ্যতের কোনো সমস্যা থেকে আমাদেরকে কতটুকু মোকাবেলা করতে পারবে কিংবা সুরক্ষা করতে পারবে তা নিয়ে আমাদের আরও বেশি চিন্তার প্রয়োজন।

এই জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের ঘরবাড়ি অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে সব সময়। অন্যদিকে আমরা এও জানি যে প্রোবায়োটিক জীবাণুর উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সুবিধাও রয়েছে। এগুলো আমাদের পরিবেশে সবসময়ই উপস্থিত থাকে। হয়তোবা অনেকগুলি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি ও প্রয়োজনীয় হিসেবেও পরিচিত। তবে কিছু কিছু রোগ জীবাণু আছে যেগুলো বসতবাড়িতে আমাদেরকে খুব সহজেই অসুস্থ করে তুলতে পারে বিভিন্নভাবে। এমনকি এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই কী কী জীবাণু আমাদের বাসস্থানের চারপাশে থাকতে পারে সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নয়, যা অন্যের স্বাস্থ্যসুরক্ষাও করবে।

আমাদের বাসার শোবার ঘর থেকে শুরু করে ড্রইং রুম, ডাইনিং রুম, কিচেন, টুথব্রাশ হোল্ডার সব ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু যেকোনো সময় জন্মাতে পারে। কিন্তু জীবাণুর প্রভাব নির্ভর করে আমাদের বয়স আর ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর। কারণ, একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের ইমিউন সিস্টেমের পার্থক্য রয়েছে। সব ধরনের জীবাণু সবাইকে আক্রমণ করে না। আমাদের বাসস্থানের সাথে, আমাদের জীবনযাপনের সাথে এই জীবাণুগুলোর সংক্রমিত হওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। তাই স্থাপত্য নকশা বলি কিংবা যেকোনো ধরনের নকশা বলি অথবা জীবনযাপনের ধারা বলি না কেন সেখানে আমাদের সুস্পষ্টভাবে খেয়াল রাখতে হবে এই বিষয়গুলোর দিকে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বাড়ির শিশুদের এবং বয়স্কদের জন্য এর গুরুত্ব অপরিসীম।

তাছাড়া আমাদের নিজেদের কেউ আমাদের বসবাসের জায়গায় একটু সচেতন থাকতে হবে। আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে আমরা যে স্থানে বসবাস করছি সেই স্থানের কোন জায়গাতে সূর্যের আলো প্রবেশ করছে কিংবা বাতাস চলাচল করছে? হয়তোবা দিনের কোন একটি সময় আমাদেরকে সেখানে একটু বেশি সময় কাটাতে হবে।

কিংবা আমাদের ঘরের সাথে লাগোয়া যে বারান্দাটি আছে সেই বারান্দা কিন্তু লকডাউন এর সময় হতে পারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষেরা তাদের বারান্দাকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছে। সবুজ গাছ লাগিয়ে, বসার জায়গা তৈরি করে সেগুলো অত্যন্ত প্রাণবন্ত এবং সামাজিক মাধ্যম হিসেবে মানুষজন ব্যবহার করছে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থাপত্য গবেষণায় দেখা গেছে ঘরের মধ্যে যদি সবুজ গাছপালার সন্নিবেশ থাকে তাহলে মানসিক সুস্থতার জন্য সেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে গৃহ অভ্যন্তরে কিংবা বারান্দায় অথবা ছাদে সবুজ গাছের সন্নিবেশ মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনে। তাই আমরা এই সময়টাকে কাজে লাগাতে পারি। নিজেরাই নিজেদের সাধ্যের মধ্যে নিজেদের বসবাসের জায়গা নিয়ে ভাবতে পারি তার উন্নয়নকল্পে এবং নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি।

লেখক- শিক্ষক ও স্থপতি, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে পিএইচডি গবেষণারত

[email protected]

করোনাকাল করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর