Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়বে যেভাবে


১৯ অক্টোবর ২০২০ ২১:৪৯

পেঁয়াজ বাংলাদেশের মসলাজাতীয় ফসলের মধ্যে অন্যতম প্রধান ফসল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্তৃক সংগৃহীত মাঠ তথ্য মোতাবেক ২০১৯-২০ সালে দেশে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ ২৫ লাখ, ৬৬ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে  ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ২০ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। ৬২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে কন্দ পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন এবং ৩৪০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের উৎপাদন হয় ২৮৬৯.৬০ মেট্রিক টন। এরপরও ২০১৯-২০ সালে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১০ লাখ মেট্রিক টন। সে হিসেবে ধারণা করা হয় দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩৪ থেকে ৩৫ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ঘাটতি প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ পচনশীল কৃষি পণ্য । কাজেই প্রতিবছর সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে শতকরা ২০-২৫ ভাগ পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যায়। দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের ঘাটতি মোকাবিলা বা পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে নিম্নের কৌশলসমূহ গুরুত্ব সহকারে অবলম্বন করা যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য চারটি কৌশল গুরুত্ব সহকারে অবলম্বন করা হবে

  • পেঁয়াজের আবাদ এলাকা বৃদ্ধি করে
  • পেঁয়াজের কর্তনোত্তর ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে
  • হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধি করে
  • গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করে

পেঁয়াজ আবাদ এলাকা বৃদ্ধি করে
২০১৯-২০  সালে অর্জিত আবাদ ছিল ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯২৮ হেক্টর জমি। ১৪ অঞ্চলে পেঁয়াজ আবাদ বৃদ্ধি করা হবে ১২ হাজার ১২ হেক্টর জমি। আবাদ বৃদ্ধির ফলে মোট আবাদ হবে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমি। বর্ধিত ১২ হাজার ১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হবে  ১ লাখ ৪১ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন।

 অঞ্চলওয়ারী আবাদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা

২০১৯-২০ সালে হেক্টর প্রতি পেঁয়াজের গড় ফলন ছিল ৭৯ মেট্রিক টনহেক্টর প্রতি উৎপাদন বৃদ্ধি করে

  • হেক্টর প্রতি ফলন বৃদ্ধির পরিকল্পনা ১ মেট্রিক টন
  • এতে হেক্টর প্রতি উৎপাদন হবে ৭৯ মেট্রিক টন
  • এতে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯২৮হাজার মেট্রিক টন

পেঁয়াজের কর্তনোত্তর ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে

  • কর্তনোত্তর পেঁয়াজের ক্ষতি/অপচয় ধরা হয় শতকরা ২৫ ভাগ
  • এতে মোট উৎপাদনের উপর ক্ষতি ৭,৩৬,৬৯৮ মেট্রিক টন
  • পঁচনজনিত ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যমাত্রা মোট ক্ষতির উপর শতকরা ২৫ ভাগ হিসেবে ১ লাখ ৮৪ হাজার১৭৫ মেট্রিক  টন

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করে
২০১৯-২০ সালে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ ছিল ৩৪০ হেক্টর। সারা দেশে সম্ভাবনাময় স্থান নির্ধারণ করে আরও মোট ৫০০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবদা বৃদ্ধি করা হবে। এতে ফলন বৃদ্ধি পাবে ৪ হাজার ২২০ মেট্রিক টন।

পেঁয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে

  • পেঁয়াজের আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন
  • প্রতি হেক্টরে উৎপাদন বৃদ্ধি করে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন
  • পেঁয়াজের কর্তনোত্তর ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ১৭৫ মেট্রিক টন
  • গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি করে ৪ হাজার ২২০ মেট্রিক টন
  • মোট পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি হবে  ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৯৪৪ মেট্রিক টন

পেঁয়াজের কর্তনোত্তর  ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে
পেঁয়াজের কর্তনোত্তর অপচয় কমানোর জন্য কৃষক সচেতনতা দরকার। এজন্য প্রগতিশীল পেঁয়াজ উৎপাদনকারী কৃষকদের প্রশিক্ষিত করে এবং জনসচেতনতা সৃষ্টি করে, পেঁয়াজ অপচয়ের কারণগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদান করে পেঁয়াজের কর্তনোত্তর ক্ষতি কমানো সম্ভব। প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা নিম্নরূপ—

বিজ্ঞাপন

প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা

  • সর্বাধিক পেঁয়াজ উৎপাদনকারী ৫টি জেলায় (পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া) কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা
  • এসব জেলায় প্রগতিশীল কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে মোট ২০০ ব্যাচ কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। প্রতিটি প্রশিক্ষণ ব্যাচে ৩০ জন করে কৃষক থাকবে। এতে মোট ৬ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাবে
  • এই ২০০ ব্যাচ প্রশিক্ষণ বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচীর মাধ্যমে নিম্নরূপভাবে আয়োজন করা হবে
  • জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্পের আওতায় ৫০ ব্যাচ
  • ডাল, তেল, মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় ৫০ ব্যাচ
  • রাজস্ব অর্থায়নে প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্থাপন কার্য়ক্রমের আওতায় ১০০ ব্যাচ

অন্যান্য করণীয়

পেঁয়াজ উৎপাদনকারী চাষীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান
নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ঠ সংকট মোকাবিলায় শস্য ও ফসলখাতে ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদ হারে কৃষি ঋণ প্রদান স্কিমের আওতায় পেঁয়াজ আবাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এ স্কিমের আওতায় দানাদার শস্য, ডালজাতীয় শস্য, তৈলজাতীয় ফসল, অর্থকরী ফসল, মসলাজাতীয় ফসল, শাকসবজীর চাষের জন্য ঋণ প্রদানে ব্যবস্থা রয়েছে। কৃষকগণ যাতে সহজ শর্তে এসব ঋণ পেতে পারে সেজন্য সদর দফতর ও জেলা-উপজেলা পর্য়ায় থেকে সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যে এতদসংক্রান্ত নির্দেশনা মাঠ পর্য়ায়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকায় বিশেষায়িত কুল স্টোরেজ তৈরি
পেঁয়াজ উৎপাদনকারী কৃষকগণ যাতে সহজে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন সেজন্য পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকায় বিশেষায়িত কুল স্টোরেজ স্থাপন করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হবে। এছাড়া কুল স্টোরেজ স্থাপনের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্য়ায়ের উদ্যোক্তাগণের সাথে আলোচনা সভা করে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।

পেঁয়াজ বীজ এর প্রয়োজন, বর্তমান মজুদ অতিরিক্ত পরিমান সরবরাহ নিশ্চিত করা

বাস্তবায়ন রোডম্যাপ

পেঁয়াজ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর