Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গ্রহণযোগ্যতা ‘সারাবাংলা’র কৃতিত্ব


১০ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৩৮

“যায় যাবে প্রাণ তাহে, প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে”— কবি কাজী কাদের নেওয়াজের এই ‘মান’ ‘মর্যাদা’ আর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ রীতিমতো আজ হুমকির মুখে। কারণটাও সুস্পষ্ট, যারা মান নির্ধারণ করবে, মর্যাদা নিশ্চিত করবে এবং সভ্যতা সৃষ্টি করবে— তারাও আজ বেশিরভাগ প্রশ্নবিদ্ধ। নানান মতের সঙ্গে নানান দল ও দলীয় আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মী-নেতা হওয়া সম্ভব হলেও সংবাদকর্মী-সাংবাদিক হতে গেলে অবশ্যই তথ্য নির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। পেশাদারিত্বের জায়গাটি পবিত্র ও কলঙ্কমুক্ত রাখতে হবে। খবর-সংবাদ বানানো সংবাদকর্মী-সাংবাদিক বা গণমাধ্যমের কাজ নয়, বরং সৃষ্ট সংবাদ তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সাজিয়ে দেশ ও জাতির সামনে তুলে ধরাই একজন দায়িত্ববান সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য।

বিজ্ঞাপন

আর গণমাধ্যমের ওই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ‘সারাবাংলা’ কতটুকু পালন করতে পেরেছে কিংবা আদৌ ‘সারাবাংলা’র মান-মর্যাদা আর গ্রহণযোগ্যতার জায়গাটি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে কিনা—তা পাঠক ভালো বলতে পারবেন, তবে হাটি-হাটি পা-পা করে ‘সারাবাংলা’ আজ তৃতীয় বার্ষিকীতে। প্রাপ্ত বয়সের চিন্তায় সময় খুব বেশি না হলেও প্রতিযোগিতার বাস্তবতায় যথেষ্ট বয়স— যার প্রতিটি সেকেন্ড-মিনিট-ঘণ্টা অত্যন্ত মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকতা আমার প্রিয় একটি পেশা। জেলা পর্যায় পাঁচ বছর সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করে পরে ঢাকায় এসে বিশেষ প্রতিনিধি হয়ে আরও পাঁচ/ছয় বছরের নানামুখী ভালো-মন্দের বিষয়গুলো অনুধাবন করেছি, শিখেছি, জানার চেষ্টায় অযোগ্য আর অপেশাদার সিনিয়র সহকর্মীর স্বেচ্ছাচারিতা আর বৈষম্যগুলো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। চাকরি ছেড়ে স্বতন্ত্র-স্বাধীন পেশা বেছে নিয়েছি।

আমি রাজনৈতিক কর্মী। মাঠে-ঘাটে মানুষ আর মানবতার পক্ষে কখনো স্লোগান দিয়ে, কখনো মানববন্ধনে বক্তব্য তুলে ধরে আবার কখনো সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে কিংবা অতিথি হয়ে সংবাদকর্মী-সাংবাদিকের সাথে সম্পর্কটা আরও গাঢ় হয়েছে। ভালোবাসার জায়গাটি আরও মসৃণ হয়েছে। ভাই-বন্ধুত্ব সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আর মতামত কিংবা কলাম লেখার মাধ্যমে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকের সাথে নতুন করে সম্পর্কটা আরও গভীরভাবে আত্মার জায়গাটি দৃঢ়তায় অবতীর্ণ হয়েছে।

রাজনৈতিক কর্মসূচীর কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে আমার অংশগ্রহণের খবর-সংবাদ যখন বাংলাদেশ সীমান্তরেখায় বাংলাবান্ধার কোনো অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বা ফেসবুক ইউজার তার টাইমলাইনে আমাকে ট্যাগ করে আপলোড করে, কিংবা সারাবাংলা’র মত-দ্বিমত বিভাগে প্রকাশিত আমার লেখার কন্টেন্ট যখন সমুদ্রপার কক্সবাজারের কোনো পাঠক তার টাইমলাইনে শেয়ার করে; তখন সারাবাংলা’র তৃতীয় বার্ষিকীর এই সময়ে দাঁড়িয়ে এটাই অনুধাবন হয়, ‘সারাবাংলা’র গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে, পাঠকের বিবেচনায় ‘সারাবাংলা’ তাদের মান-মর্যাদার জায়গাটি অর্জন করতে সম্ভব হয়েছে। এই মান-মর্যাদা আর গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখা একটি চ্যালেঞ্জ।

আমাদের মনে রাখতে হবে, উনিশ শতকে বিজ্ঞানের এ যুগে অনলাইন সংবাদমাধ্যম আধুনিকতায় শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছে। নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। মানুষের ভাবনা, চিন্তা, ধর্ম, রাজনীতি, আদর্শের বার্তাবাহক হিসেবে মূল্যায়ন হয়েছে গণমাধ্যমের, বিশেষ করে অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। সেকেন্ড-মিনিটের মধ্যেই পাঠকের হাতে-হাতে পৌঁছে যাচ্ছে ব্যক্তির মুক্তচিন্তা আর মত প্রকাশের বর্ণনাগুলো। এই জায়গায় অবশ্যই সচেতন থাকা জরুরি।

কারণ, আমাদের গণমাধ্যমের ইতিহাস গৌরবময়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তান শাসনামলে দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, পূর্বদেশ, জনপদ, অবজারভার যেভাবে বাঙালির জাতীয়তাবাদ চেতনার স্ফুরণ ঘটিয়েছিল; গণমাধ্যমের মহত্ত্ব, সক্ষমতা ও জনসম্পৃক্ততা যেভাবে একটি জাতিসত্তার বিকাশে ইতিহাস-নির্ধারণী ভূমিকা রেখেছিল— তা থেকেই আমাদের বর্তমান গণমাধ্যমকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, মান-মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জয় বাংলা, মুক্তবাংলা, সংগ্রামী বাংলা, বাংলার বাণী’র মতো অনেক পত্রিকা কখনও মুক্তাঞ্চলে, কখনও প্রবাসে অবস্থান করে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। উত্তাল মুক্তিকামী জনতাকে বাঙালি জাতীয়তাবাদে জন-উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত করেছিল। এটিও আজকের অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে মান-মর্যাদার জায়গায় বস্তুনিষ্ঠ রাখতে হবে।

আর লাল-সবুজের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিক শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার, খোন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দীন আহমদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), আ ন ম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, আবুল বাশার, শিব সাধন চক্রবর্তী, চিশতী শাহ হেলালুর রহমান, মুহম্মদ আখতার, সেলিনা পারভীন, এ কে এম শহীদুল্লাহ্’র (শহীদ সাবের) মতো মহৎপ্রাণ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের মহান আত্মত্যাগ— মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। যা এ যুগের সংবাদকর্মী বা সাংবাদিকদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুপ্রেরণা যোগাবে— মান-মর্যাদা আর গ্রহণযোগ্য অর্জনে সহায়তা করবে।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, যে সকল মহৎপ্রাণ সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যম বাঙালি জাতীয়তাবাদ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার গৌরবান্বিত ইতিহাস রচনা করেছেন, এটিকে ভুলে গিয়ে কিংবা পাশ কাটিয়ে আজ কতিপয় গণমাধ্যম কুখ্যাত রাজাকার-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ আদালতের দণ্ডাদেশে ফাঁসির রায় কার্যকর করা মৃত ব্যক্তিদের নামের আগে ‘শহীদ’ শব্দটি যুক্ত করে একদিকে যেমন তথ্য-নির্ভর আর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, অন্যদিকে মৌলবাদ-জঙ্গিগোষ্ঠীকে উস্কে দিচ্ছে। দেশের আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের পরে অলিখিতভাবে যে গণমাধ্যম যুক্ত রয়েছে, সেই গণমাধ্যম (কতিপয়) বিচারবিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে, করছে।

সাম্প্রতিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিতর্কে ইসলামের অপব্যাখ্যা সৃষ্টি করে ধর্ম ব্যবসায়ী ও জঙ্গি-মৌলবাদীগোষ্ঠী দ্বারা পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য যে নীল নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে, এখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে দায়িত্ব নিয়ে ‘সারাবাংলা’ যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে— ধন্যবাদ ও সাধুবাদ পাওয়ার অধিকার তারা রাখে।

পরিশেষে বলব, আধুনিক সমাজ-রাষ্ট্রে গণমাধ্যম বা সংবাদ মাধ্যম অতি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলোকিত সভ্যতার উপরি-অবকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে মানব জীবনেও আচার-আচরণ, মানবিক মূল্যবোধ, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানসহ একটি বৈষম্যমুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র বিনির্মাণে গণমাধ্যমের গুরুত্ব অন্য সবকিছুর আগে। প্রতিটি মানুষের সঠিক তথ্য, মৌলিক শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য, চিকিৎসার খবর আর বিনোদনসহ নানাধর্মী চাহিদা মেটাতে একটি গণমাধ্যম অত্যন্ত মূল্যবান ভূমিকা পালন করে থাকে, করতে পারে। গণমাধ্যম দ্বারাই একটি দেশের জনগণ প্রভাবিত হয়, বিভিন্ন বিষয়ে— যেমন-মহামারি কোভিড-১৯ থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে সচেতন করে তোলে, স্বপ্ন দেখাতে সহযোগিতা করে। আর এসব  গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ ‘সারাবাংলা’-এটাই পাঠকের প্রত্যাশা।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)

সারাবাংলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর