টিকায় টিপ্পনি: গেঞ্জি ড্যান্সে খতম
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৩৭
করোনার টিকা নেয়ার-পূর্বাপর এমন উৎসবপূর্ণ দৃশ্য বাংলাদেশে ক’দিন আগেও ভাবা গেছে? টিকা নিয়ে কতো টিপ্পনি, টিটকারি, মশকরাই না চলেছে। এগুলো গণমাধ্যমে নিয়মিত শিরোনাম হয়েছে। ট্রল হয়েছে। ভারি ভারি লোকজনও হালকা কথায় কম যাননি। ভারতের কাছ থেকে নেয়া টিকার জাতপদ নিয়ে মন্দ কথাও বাদ যায়নি। এর আগে করোনাকে ঘিরে চলেছে আতঙ্ক। ডেমকেয়ার ভাবও চলেছে। এর বিপরীতে আকাঙ্খা ছিল কখন আসবে টিকা?
করোনার টিকা আবিস্কার ও প্রাপ্তির সম্ভাবনার খবরে আরেক চিত্র। কার আগে কে পাবে- তা নিয়ে চলে কথার কচলানি। টিকা আমদানির পর আরেক সার্কাস। ভয়ের তাড়া। সচেতনতার অংশ হিসেবে মাস্ক পরি না, করোনাকে ভয় পাই না। কিন্তু, টিকা নিতে ভয়। সেটা ঢাকতে নিজে না নিয়ে অন্যকে দিয়ে টিকা শুরু করার আবদারের মহানুভবতা। এর আগে দেশের মানুষকে একে অন্যের জন্য পরোপকারের এমন ভাবনা ভাবতে দেখা যায়নি।
এর মাঝেই নরওয়েতে ২৩ জনের, পর্তুগালে একজন নার্সের ও ভারতের মধ্য প্রদেশে টিকা নিয়ে একজন মারা যাওয়া ও কিছু সংখ্যকের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার ঘটনা কয়েক দিন মিডিয়ার উল্লেখযোগ্য খবর হয়ে ওঠে। কদিন আগেও বদনাম চলছিল- বিভিন্ন দেশে সম্মুখ সারির লোকদের টিকার অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হলেও বাংলাদেশে আগে রাখা হয়েছে সরকারের নিজেদের লোকদের। এ ধরনের বক্তব্যে তুমুল ঝড় বইছিল। দিন কয়েকেই বদনামের পারদ উল্টে গেছে। প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীরা কেন আগে টিকা নেবেন না? এ প্রশ্ন ছোঁড়াদের অন্যতম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধূরীও আগেভাগে টিকা কেবল নেনইনি। টিকার প্রশংসার পাশাপাশি সবাইকে তা নেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। পরোপকারের এই ঠেলাঠেলির মধ্যেই এখন টিকা নেয়ার ধুম। ভালো রেজুলেশনের মোবাইল সেট, ডিএসএলআর দিয়ে টিকা পুশের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার প্রতিযোগিতা। বাইরে শার্ট, কোট, পাঞ্জাবি যাই থাক ভেতরের স্যান্ডো গেঞ্জিটা সবার ঝকঝকে। বিভিন্ন জায়গায় দাঁতাল হাসিতে টিকা নেয়ার ডামি কাণ্ডও ঘটছে। কতো রঙ্গ জানি আমরা!
করোনা মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হিমশিম খেয়েছে। পিপিই, ফেসমাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য সরঞ্জামের অপ্রতুলতা, উচ্চমূল্য ও প্রাথমিক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের গালিলতি কলঙ্কিত ঘটনা। এর অর্থ এই নয় যে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল। সরকার সাফল্যে ভাসছে এমনও নয়। তবে, সর্বসাকুল্যে টিকা রাজনীতিটা মার খেয়েছে। টিকায় মানুষের ভয় কেটে গেছে। এখন ব্যাপক আগ্রহ মানুষের। এটি লক্ষণ হিসেবে শুভ।
টিকা প্রদানযজ্ঞে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার আগাম বার্তাও প্রচার হয়েছিল। বাস্তবে উন্নত বহু দেশের চেয়েও এখন পর্যন্ত যথাসম্ভব শৃঙ্খলার মধ্যেই টিকা দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, প্রতিবেশি ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে টিকা নিতে জটিলতা কম। শুরুতে ন্যাশনাল আইডি হাতে নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে গেলে রেজিষ্ট্রেশনসহ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এখন রেজিস্ট্রেশন আগে করতে হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে টিকা চুরি-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। টিকাকরণ নিয়ে নবান্নে ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা অভিযোগ করেন, রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় কম ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে কেন্দ্র। নবান্নের দাবি, কেন্দ্র ৩ লাখ ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে। রাজ্যের পাঠানো তালিকায় ৩ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীর নাম রয়েছে। তাঁদের দু’টি করে ভ্যাকসিন দিতে হলে প্রয়োজনের তুলনায় কম টিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। এর জবাব দিতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়েছেন। জানতে চান, কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকার কি আদৌ পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাঠিয়েছে? আর সেই তালিকায় কি তৃণমূলের বিধায়কদের নাম আছে? নাম না থাকলেও তাঁরা যদি প্রতিষেধক নিয়ে ফেলেন, তা হলে তো কম পড়বেই। বাংলাদেশে টিকা রাজনীতির ‘আইটেম’ হলেও ভারতের পর্যায়ে যায়নি। বরং সমালোচনার সঙ্গে কিছু পরামর্শ এসেছে।
বিএনপি করোনার টিকার দাম, ভারত থেকে আনা, আনার কাজ বেক্মিমকোকে দেয়া- এ সব বিষয় নিয়ে আগে থেকেই সোচ্চার। এক পর্যায়ে করোনার টিকা দেয়ার ব্যাপারে সরকারের করণীয় নিয়ে পথ দেখানোর চেষ্টা করেছে!
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।
সারাবাংলা/এসবিডিই