রাষ্ট্রের সুনীতি ও আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি
২০ মে ২০২১ ২৩:৫৮
সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে ইতিহাসের দিকে তাকাতে হয়। কিছুই লিখতে চাই না, কিন্তু অবস্থা বেগতিক হলে লিখতে হয়। কারণ, রোগ যদি ক্যানসার হয়, তাহলে তার স্বল্পমেয়াদী কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। দরকার দীর্ঘদিনের চিকিৎসা। আর ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় একটাই। সেটিকে সব সময়ই নজরে রাখা। সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া।
রোজিনা আপার ঘটনার পরে, বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক আমাকে টেলিফোন করেছেন। উনারা কী কথা আমার সঙ্গে বলতে পারেন আপনারা সকলেই হয়তো তা বুঝতে পারছেন। আর, আমি সাংবাদিকতার ছাত্র হিসেবে, আপার সঙ্গে এমন আচরণে খুবই মর্মাহত। তাই আজকের এই লেখা…
বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত দূরদর্শী নেতা ছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক জীবনের পুরোটা সময় জুড়ে পাকিস্তানি আমলাতান্ত্রিক কূটকৌশল ও এর অভিজাত এলিট শ্রেণির বিরোধিতা করেছেন। হোক সেটা সামরিক কিংবা বেসামরিক আমলাতন্ত্র।
মূলত, অতীত থেকেই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এবং সাধারণ মানুষের কাছে ‘প্রশাসক’ ও ‘আমলা’ শব্দগুলো ক্রোধ ও ঘৃণার সঙ্গেই উচ্চারিত হত। ব্রিটিশ আমলে যেমন, পাকিস্তান আমলেও তেমন। এখনো তাই হয়। আমলাব্যবস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু অনেক সময়ই ক্রুদ্ধ হয়ে উঠতেন। কারণ, তিনি জানতেন ব্রিটিশ আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার উত্তরাধিকার পাকিস্তান আমলাতন্ত্র। আর সেই ব্যবস্থার শিকার হয়েছিল, এদেশের জনগন। সে সময় মূলত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের কাছে কুক্ষিগত ছিল। বলা হয়ে থাকে- পাকিস্তান অভিজাত ২২ পরিবারের কাছে জিম্মি ছিল। কিন্তু, আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছিল- পূর্ব পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধু ভালো করেই জানতেন সেই আমলাতন্ত্র থেকে বাংলার জনগণকে মুক্ত করতে না পারলে, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি সেই আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভাঙতে চেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের আরেক প্রবীণ নেতা মওলানা ভাসানী। তিনিও আমলাব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রায়ই তীব্র সমালোচনা করতেন। আমলাদেরকে নিন্দাসূচক বিশেষণ ব্যবহার না করে তিনি বক্তব্য সমাপ্ত করতে পারতেন না। এখন দেখা দরকার- আমাদের বড় বড় নেতারা কেনো আমলাতন্ত্রের ওপর এত বীতশ্রদ্ধ ছিলেন। কারণটা সবারই জানা। সেই একই কথা আবার বলতে চাই না। আজকে একটু ভিন্নভাবে বলি।
ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে আমলাতন্ত্রের জন্ম দিয়েছিলেন- কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। ব্রিটিশ চেয়েছিল উপমহাদেশে এমন এক শ্রেণি তৈরি করতে যারা দেখতে ভারতীয় কিন্তু মগজে ব্রিটিশ। তাদেরকে সেভাবেই ট্রেনিং দেওয়া হতো, গড়ে তোলার চেষ্টা করা হতো। দুইশ বছরের ব্রিটিশ শাসনের শেষ একশ বছরে ইংরেজদেরকে মানুষ প্রচণ্ড ঘৃণা করতে শুরু করে। কিন্তু ভারতীয়রা তো নিজের দেশেরই মানুষ। তাদের আর ঘৃণা করবে কিভাবে? তাই, তাদের দিয়েই ট্যাক্স তোলা সহজ হতো। ফলে প্রশাসনের বড় পদগুলো যেমন সচিব-অতিরিক্ত সচিব-যুগ্ম সচিব লেভেলের পদগুলোতে ইংরেজরা নিজেরাই কাজ করতো আর ছোট পদগুলোতে ছিল ভারতীয় চেহারার ব্রিটিশ মগজের অফিসারগুলো। এইসব ভারতীয় আমলারাই মাঠ প্রশাসনে কাজ করত, যাদেরকে লোকে বলতো ‘মেজিস্টার’।
স্বভাবতই, ব্রিটিশ আমলাতন্ত্র যত আইন-কানুন নিয়ম-নীতি তৈরি করেছে, তার প্রায় সবই সাধারণ জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে কিন্তু ব্রিটিশ বা ভারতীয় এলিট শ্রেণি মানে আমলাদের স্বার্থে অনুকূলে। আজকের এই দিনে, রোজিনা ইসলাম যে আইনে মামলা খেলেন- এই অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনও কিন্তু ব্রিটিশদেরই করা। ১৮৯৯ সালে প্রথম এই আইন করা হয়- তারপর ব্যাপক সমালোচনা চলতে থাকে- শেষে ১৯২৩ সালে তা চূড়ান্ত করা হয়। এই আইনের উদ্দেশ্যই ছিল, ভারতীয় সাংবাদিক-স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং ব্রিটিশ শাসন বিরোধী… যেকোনো কণ্ঠ রোধ করা। স্তব্ধ করে দেওয়া।
এরপরে আসল পাকিস্তান, পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান তৈরি করতে সময় লেগেছে নয় বছর। কিন্তু শিক্ষিত ও সচেতন মানুষ অবাক হয়ে দেখলো, সদ্য ব্রিটিশ শাসন মুক্ত হওয়া পাকিস্তানও, ব্রিটিশ আমলাদের তৈরি আইন-কানুন নিয়ম-নীতির তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেনি। একই অবস্থায় রয়ে গেছে। ফলে আমলাতন্ত্রের মূল স্পিরিট একই রয়ে গেছে। অর্থাৎ দমনমূলক আইনগুলোর তেমন পরিবর্তন হয়নি। মানুষ তাই দিনে দিনে, বহু বছরে এই আমলাতন্ত্রের ওপর আস্থা হারিয়েছে। আজকে যে আমলাতন্ত্র রোজিনার গলা চিপে ধরে এই সাহস কোথা থেকে পায়? সেই আইনগুলোর বলেই পায়।
সুতরাং, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশিক দমনমুলক আইন-কানুন পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক রাষ্ট্রের রূপ দিতে। আমলাতন্ত্রের মূল দর্শন পরিবর্তন করে, স্বাধীন বাংলাদেশে একটি জনমুখী আমলাতন্ত্র তৈরি করতে, যার মূল চেতনাই হবে জনগণের সেবা করা। দমন বা শাসন করা নয়।
সেই লক্ষ্যে, বঙ্গবন্ধু জনসম্পৃক্ত মানুষদেরকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছিলেন, যাতে সাধারণ মানুষ সরকারের সেবা পায়। বঙ্গবন্ধু তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য- তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ Planning Commission গঠন করেছিলেন, যারা বাংলাদেশের প্রথম পাঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সেই কমিটিতে আমলাদের কোন আধিক্য ছিলো না। ছিলেন চার বা তারও অধিক অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক। বঙ্গবন্ধু অনেক রাজনৈতিক নেতা ও শিক্ষককে সে সময় গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যেমন অধ্যাপক কবির চৌধুরীকে শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয় সেগুলো পরিচালনা করার জন্যে অনেক ব্যবসায়ী ও দলীয় কর্মীকে নিয়োজিত করেছিলেন – যারা ইতোপূর্বে কখনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন না। কিন্তু, জনগণের কাছের মানুষ ছিলেন।
সে সময় থেকেই, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্যে দেখা দেয় তীব্র অসন্তোষ। মানে এডমিন ক্যাডার বনাম শিক্ষক-গবেষক-ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার ও অন্যান্য ক্যাডার। সেটি নিরসনে গঠন করা হয়েছিলো Administrative and Service Re-organization committee. যদিও সেই কমিটির সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি। কারণ ততদিনে, রাষ্ট্র আস্তে আস্তে আমলাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলো। আর, আমলারা তাদের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু প্রকাশ করবে না- সেটা স্বাভাবিক। সেই কমিটিই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে এলিট ক্যাডার তিরোধান (abolition of the elite cadre)- এর সুপারিশ করেছিলো। কমিটির মতে, বাংলাদেশ উত্তরাধিকার সূত্রে যে আমলাতন্ত্র বা কর্মব্যবস্থার কাঠামো লাভ করেছে, সেটি রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই তারা সুপারিশ করেছিলো, বাংলাদেশের কর্মব্যবস্থায় এমন একটি শ্রেণীহীন কাঠামো গঠিত হওয়া উচিত- যে ব্যবস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ে কৌশল ও দায়িত্ব সংগতিপূর্ণ রেখে- আন্তঃ ক্যাডার বৈষম্য দূর করার যায়। মানে প্রশাসন ক্যাডারের অফিসাররাই সব কাজ করবেন, সব দায়িত্ব পালন করবেন- তা নয় বরং নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের অফিসারদের সাথে যুগপৎভাবে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-শিক্ষক-গবেষক কাজ করবেন। যিনি যেই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ, তিনি সেই কমিটির সভাপতি/চেয়ারম্যান হবেন অথবা কমিটিতে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর সময়কালে বিভিন্ন সরকারি কমিটিতে তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই।
বঙ্গবন্ধু চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তাঁর বিভিন্ন ভাষণে সরকারি কর্মকর্তাদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিত্যাগ করে জনগণকে তাদের প্রভু বলে স্বীকার করে নিতে অনুরোধ করেছিলেন। সে সময় টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চাই বাংলার মাটি থেকে সব রকম দৌরাত্ম্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অবসান হোক। চট্টগ্রামে এক বুদ্ধিজীবী সমাবেশে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত সুধী সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আমলা নয় মানুষ তৈরি করুন‘।
এ সবই ছিলো, দেশপ্রেমিক মানুষদেরকে নিয়ে প্রশাসনকে গণমুখী করার প্রয়াস। কিন্তু, সেটি আর বেশি দূর আগায়নি। বাংলার কিছু কুলাঙ্গার তাকে সময় দেননি- হত্যা করেছেন। ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে- এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সামরিক-বেসামরিক এলিট শ্রেণীর মদদ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী সামরিক শাসনের সময় আমলাতন্ত্র বাংলাদেশে পুরোপুরি জেঁকে বসেছিলো। প্রশাসন জনমুখী না হয়ে- হয়েছে আমলামুখী, অভিজাতমুখী। সেই পুরনো এলিট, সেই অভিজাত শ্রেণী। আর, সামরিক শাসনের সাথে আমলাতন্ত্রের স্বার্থগত- সুবিধাগত- শ্রেণীগত মিল রয়েছে। ইতিহাস বলে, সামরিক শাসন বা স্বৈরশাসনের সময় আমলাতন্ত্র আস্তে আস্তে ডালপালা বিস্তার করতে থাকে। সামরিক শাসন লম্বা হলে, একসময় তা বিশাল মহীরুহ হয়ে যায়।
স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে সেই মহীরুহ, এখন, বড় হতে হতে দৈত্যাকৃতি দানবে পরিণত হয়েছে। এ জন্যেই আজকে আমরা দেখছি, রাস্তায় আমলাদের হাতে চিকিৎসক বেইজ্জতি হচ্ছে, পরীক্ষার হলে শিক্ষককে পায়ে ধরে মাফ চাইতে হচ্ছে, সচিবালয়ে রোজিনা ইসলাম নির্যাতিত হচ্ছেন, কিছু কিছু ক্যাডারের কর্মকর্তারা যোগ্যতা থাকার পরেও পদোন্নতির এক পর্যায়ে গিয়ে আটকা পড়ছেন, সরকারী অনেক বরাদ্দ লুট হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারী সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ জনগণকে ঘুষসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাগজে-কলমে দেশের মালিক জনগণ। তাহলে, মালিক তার দেশের চাকরদেরকে ‘স্যার’ বলতে হবে কেনো?? উন্নত বিশ্বের কোন দেশে, এটা কল্পনাও করা যায় না। বরং সরকারি সেবা নিতে গেলে তারাই জনগণকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন।
বাংলাদেশের আজকের প্রেক্ষাপটে, প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি বন্ধ হওয়া দরকার। দরকার মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা। কারণ, প্রশাসনিক ক্ষমতার ছত্রছায়ায় এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দুর্নীতিবাজরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার প্রভাব বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। সময়ের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন দরকার হয়। কিন্তু সেই উদ্যোগ কই???? আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে, রোজিনা ইসলাম কেনো ব্রিটিশ আমলের আইনে মামলা খাবেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ কি এখনো ব্রিটিশ উপনিবেশ আছে?? অফিসিয়াল সিক্রেটস আইন- যেই ব্রিটিশদের কাছ থেকে আমরা শিখেছি- তারাই সেই কবে- তা বাতিল করে দিয়েছে। আর, আমাদের আমলারা সেটি ধরে রেখেছেন। রোজিনা ইসলামকে প্রায় ছয় ঘণ্টা সচিবালয়ে কেনো হয়রানি করা হয়েছে- তা কি আমরা বুঝতে পারি না?? কোন আইনে এই সাংবাদিককে আটকানো যায়, তাই খোঁজে বের করা হয়েছে ততোক্ষণে। সেটা লম্বা আলোচনা। পারলে আরেকদিন করবো। দুঃখজনক হলেও বলতে হয়, বঙ্গবন্ধুর সরকার ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের আর কোন সরকারই আমলাতন্ত্রের আমূল সংস্কারের বিষয়টি সামনে আনেনি। নির্বাচনী ইশতেহারেও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। কারণ, সরকার বদলে যায় কিন্তু আমলা রয়েই যায়।
আর, দুর্নীতি একেবারে বন্ধ করা সম্ভব নয়। নিয়ন্ত্রণ করা হয়তো সম্ভব। কারণ বর্তমান বিশ্বে একদেশের টাকা আরেক দেশে চলে যাচ্ছে। ঠেকানোর উপায় এখনো বের হয়নি। এটা নিয়ে খাবি খাচ্ছে উন্নত বিশ্বসহ অনেক গরিব দেশ। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে টাকা সুইস ব্যাংকে চলে যাচ্ছে এবং সুইস ব্যাংকের উপর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেই। তাই, বিষয়টি ব্যাপক- বলতেই হবে।
আমি মনে করি, রাঘববোয়ালদের ঠেকাতে জঙ্গি দমনের মতোই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা দরকার। দরকার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। ইতিমধ্যে, জাতিসংঘের সর্বশেষ সাধারণ অধিবেশনে অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা দুর্নীতির বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন। মুদ্রা পাচার বন্ধের চেষ্টা করছেন। সময় লাগবে। তারপরও, দেখা যাক কিছু হয় কিনা? কিন্তু, আমাদের দেশে কোন দুর্নীতিবাজ যেনো রক্ষা না পায়!! ক্ষমতার অপব্যবহার না করতে পারে। এটাই একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার চাওয়া। এটাও সহজ কাজ নয়। কিন্তু উপায় আছে… কি উপায়?
উপায় তাদের চিহ্নিত করা। চিহ্নিত করবে কারা?? করবে সাংবাদিকেরা। কিন্তু সাংবাদিকেরা এই কাজ কিভাবে করবে?? তাদের পেছনে লেগে আছে প্রভাবশালী ক্ষমতাবান সম্পদশালী দুর্নীতিবাজরা। আর এখানেই সরকারের দায়িত্ব। আমি মনে করি সরকারের কাজ সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিধান করা।
সাংবাদিক স্বাধীন না হলে রাষ্ট্রের ভিতরে দুর্নীতি বন্ধ করা অসম্ভব। তাই, সাংবাদিকতাকে মুক্তি পেতে হবে মালিক ও আমলাতন্ত্রের বজ্রমুঠি থেকে। রাষ্ট্রের প্রভাবশালীদের রোষানল থেকে। আর, এইকাজে সরকারের সহায়তা একান্ত কাম্য।
আর তাই, লুটপাট ও পুকুর চুরি বন্ধ করতে হলে সাংবাদিক যে ‘তথ্য চুরি’ করেন, সেটাই রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এছাড়া, রাঘববোয়ালদের ঠেকানোর আর কোন রাস্তা নেই। সারাবিশ্বের সাংবাদিকেরা তথ্য চুরি করেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করেন। কেউ জামাই আদর করে তাদের তথ্য দেয় না। রাষ্ট্র উন্নত হতে চাইলে স্বাধীন সাংবাদিকতার কোন বিকল্প নেই।
রাষ্ট্রের সংবিধানে সুনীতি থাকলে কি হবে?? আমলাতন্ত্রের দাপট কমছে না। আর, এই ক্ষমতার অপব্যবহার কেউ কেউ করছেন। মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্রের সুনীতি ও আমলাতন্ত্রের দুর্নীতি – এই ফারাকের কারণে মহাপরাক্রমশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছিলো। যারা একসময় পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক অংশজুড়ে প্রভাবশালী ছিলো। সেই সরকার আমলাদের দুর্নীতি ঠেকাতে না পেরে- অনেক মহৎ প্রচেষ্টা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। উল্টো বদনাম হয়েছে। বিদায় নিয়েছে।
আমলাতন্ত্র গিলে খেয়েছে দুনিয়ার অনেক দেশকে -রাষ্ট্রকে; এই উদাহরণ অহরহ আছে।
লেখক: রিসার্চ ফেলো, সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (কারাস),ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/আরএফ