Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শেখ হাসিনা, বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা

আমির হোসেন আমু
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:৩০

আজ থেকে ৭৪ বছর আগে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহন করেন বঙ্গবন্ধু ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, শোক-দুঃখ, ব্যথা-বেদনার সাথে জীবন-মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে অকুতভয়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তব রূপায়নের সোপানে।

আজীবন সংগ্রামী শেখ হাসিনা ১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলনে আজিমপুর গার্লস স্কুলের মেয়েদের নেতৃত্ব দিয়ে মিটিং, মিছিলে অশংগ্রহন করতেন। ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাশ করে শেখ হাসিনা সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক মহিলা কলেজে (বর্তমানে বদরুন্নেসা কলেজ) ভর্তি হন।

বিজ্ঞাপন

১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে; ৬ দফা নস্যাৎ করার জন্য আওয়ামী লীগ এর উপর যে গ্রেফতার, দমননীতি চলছিল, ঐ সময় ঢাকা উচ্চ মাধ্যমিক মহিলা কলেজের ছাত্রী সংসদের নির্বাচন ঘোষনা হয়। একদিকে আওয়ামী লীগের অবস্থা ও অন্যদিকে কলেজে ছাত্রলীগের অবস্থানও ভালো ছিলো না; তারপরেও শেখ হাসিনার নাম ঘোষনা হওয়ার পর ছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে এবং শেখ হাসিনা বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন।

১৯৬৭ সালের ১৭ই নভেম্বর পরমানু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। কারাগারে গিয়ে তারা সে সময় বঙ্গবন্ধুর দোয়া এনেছিলেন। ১৯৬৮ সালে বাংলাদেশের রাজনীতির এক উত্তাল সময়। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সেনা নিবাসে (ক্যান্টনমেন্ট) নিয়ে যাওয়া হয়। এই মামলাকে (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা) ঘিরে সারাদেশ তখন আন্দোলনের অগ্নিগর্ভে পরিণত হয়েছে। তৎকালীন রোকেয়া হল শাখার ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ হাসিনা ছিলেন এই আন্দোলনের একজন অকুতোভয় নেত্রী। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ১২ই মার্চ শেখ হাসিনা তার স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সাথে তার ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে পশ্চিম জার্মানীতে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট এক ভয়াল দিনে সেদিন স্বাধীনতা বিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে, সেদিন জার্মানীতে থাকার কারনেই দুই বোন প্রাণে বেঁচে যান।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে সামরিকতন্ত্র এই দেশের মানুষের বুকে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিল। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধ হত্যা করে সংবিধানের চার মূলনীতি ফেলে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা পুনঃপ্রবর্তন করেছিল। ওইসময়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারিদের বিচার বর্হিভূত রাখার জন্য কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল পাশ করে সংসদে জিয়াউর রহমান এবং বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরী দিয়ে পুরস্কৃত করে। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে নব্য পকিস্তান সৃষ্টির প্রক্রিয়া করছিল। এ সময় দেশে চলছিল দল ভাঙ্গার রাজনীতি যা থেকে আওয়ামী লীগও রেহাই পায়নি। রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র হনন, জিয়াউর রহমান ঘোষিত ‘I Shall Make Politics difficult for the Politicians’ এর মতো বিরাজনীতিকরণের হুঙ্কার। হুন্ডা-গুন্ডা- ষ্টেনগানের মাধ্যমে ভোট ব্যবস্থা বিধ্বস্ত ও গনতন্ত্র হত্যা, জেল, জুলুম, গুম, হত্যা, নির্যাতন মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছিল অতিষ্ঠ।

দেশের বিরাজমান এই অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে সর্বসম্মতভাবে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ই মে তিনি পিতৃমাতৃহীন স্নেহের ভাই রাসেলসহ ভাইদের হারিয়ে স্বজনহারা বুক ভরা বেদনা নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করেন। সেদিন দিনটাই ছিলো অদ্ভুত। ৬৫-৭০ মাইল বেগের ঝড়-ঝঞ্জা, প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে স্বাগত জানায়। মনে হচ্ছিল মানুষ তাদের হারিয়ে যাওয়া বঙ্গবন্ধুকে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্খায় ছুটে এসেছে। বিমানবন্দর থেকে শেরে বাংলা নগরে ঝড়-ঝঞ্জার মধ্যে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় তার সম্বর্ধনা সভায় উপস্থিত হয়ে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, খুনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকার জনগনের কোন কল্যান করতে পারে না। তিনি জনগনের কাছে বিচার দাবি করেন, যেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হবে, বঙ্গবন্ধুর ২য় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়ন হবে, শোষনমুক্ত সমাজ, শোষনহীন গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা কায়েমের মধ্যেই সংগ্রামের ঘোষনা দিয়ে সকল ভেদাভেদ ভুলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সেদিন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি নেতা নই, সাধারন মেয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য আপনাদের নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাব। এই সংগ্রামে জীবন দিতে আমি প্রস্তুত।

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই বন্ধুকন্যা তৎকালীন শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। তাকে বারবার কারান্তরীণ করা হয়। তাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।

১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার শেখ হাসিনাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৩ সালের পহেলা এপ্রিল দেশে ঘরোয়া রাজনীতি চালু হওয়ার সাথে সাথে ১৫ দলীয় জোট গঠন হয়। ১৯৮৩ সালের ১৪ই নভেম্বর প্রকাশ্য রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সাথে সাথে জোট নেত্রী শেখ হাসিনা সর্বাগ্রে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ২৭শে নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষনা করেন। হাজার হাজার মানুষ আন্দোলনে অংশগ্রহন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘেরাও কর্মসূচী সফল করে। ঐ দিনই এই শান্তিপূর্ন অবরোধ চলা অবস্থায় শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়।

১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে শেখ হাসিনাকে দুবার গৃহবন্দী করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ তাকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি আরো ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেফতার করে একমাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাব জেলে পাঠায়। প্রায় ১ বছর পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাকেসহ তার গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী শহীদ হন। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে দুইবার গুলিবর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়।

১৯৮৯ সালের ১০ই আগষ্ট শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে থাকা অবস্থায় ফ্রিডমপার্টির কিছু সদস্য তাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালায়। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বারবার হামলা করা হয়। ১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তার কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো সনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। বিএনপি সরকারের সময় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। ঐ দিন বঙ্গবন্ধু এভিন্যুয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। লোমহর্ষক সেই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও আইভি রহমানসহ তার দলের ২২ নেতাকর্মী নিহত হন এবং পাঁচশর বেশি মানুষ আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও কানে ভয়াবহ আঘাত পান।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পেয়েছে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে এবং ২৩শে জুন বঙ্গবন্ধুর হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।

শেখ হাসিনার শাসনামলে আর্থ-সামাজিক খাতে দেশ অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো ছিল- ১৯৯৬ সালের ১২ই ডিসেম্বর শেখ হাসিনার একক উদ্যোগে ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমিমাংসিত ফারাক্কা চুক্তি স্বাক্ষর। ১৯৯৭ সালের ২৩শে জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাকে ‘হুপে-বোয়ানি’ (Houphouet-Boigny) শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।

২০০০ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী ইউনোস্কো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে মহান ২১শে ফ্রেব্রুয়ারী স্বীকৃত হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ হিসাবে স্বীকৃত হয়। তিনি কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।

২০০১ সালের ১৩ই জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম একটি সরকার মেয়াদ উত্তীর্ণ করে শান্তিপূর্নভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮ দশমিক ৪ থেকে ২০১৩-১৪ বছরে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে হ্রাস, জাতিসংঘ কর্তৃক শেখ হাসিনার শান্তির মডেল গ্রহণ ইত্যাদি।

২০১৪ সালের পর এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান হয়েছে। এছাড়া গড় মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২১২ মার্কিন ডলারে উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস, ৪৮ বিলিয়ন ডলারের উপর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি।

শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপ্লোমা প্রদান করে। এছাড়া সামাজিক কর্মকান্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে।

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রানডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল মর্যাদাসূচক ‘Pearl S. Buck -৯৯’ পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক ‘সেরেস’ (CERES) মেডেল প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তিসংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ‘মাদার তেরেসা’ পদক প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক রোটারি ফাউন্ডেশন তাকে ‘Paul Haris’ ফেলোশিপ প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সর্বভারতীয় কংগ্রেস ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনাকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পদক প্রদান করে। আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে তিনি ‘Medal of Distinction’ পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ‘Head of State’ পদক লাভ করেন। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ‘ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে’ ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বৃটেনের ‘গ্লোবাল ডাইভারসিটি পুরস্কার’ এবং ২ বার ‘সাউথ সাউথ পুরস্কারে’ ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেসকো তাকে ‘শান্তির বৃক্ষ’ এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাকে ‘রিজিওনাল লিডারশীপ পুরস্কার’ এবং ‘গ্লোবাল সাউথ-সাউথ ডেভলপমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে’ ভূষিত করে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে শেখ হাসিনাকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে।

জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ-২০১৫’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া, টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন শেখ হাসিনাকে সম্মাননা প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ পেয়েছেন। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) পুরস্কারটি দেয়। দারিদ্র্য দূরীকরণ, বিশ্বের সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সার্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশে এসে আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আজকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা, চার মূলনীতি সংবিধানে পুনঃঅর্ন্তভুক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের এবং যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের বিচার অনুষ্ঠিত করে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পাপমুক্ত করেছেন।

শেখ হাসিনার নির্ভীক, তেজস্বী ও দুরদর্শী নেতৃত্বের এবং সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্ত ও পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার বাস্তব প্রতিফলন দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাতা ও উন্নয়নের কাণ্ডারী, উন্নত, সমৃদ্ধ, মর্যাদাশীল বাংলাদেশ নির্মানের রূপকার। শেখ হাসিনার দুরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে এবং দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে।

শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে পদ্মা বহুমুখি সেতু প্রকল্প, কর্নফুলী নদীর তলদেশে বহু লেন সড়ক টানেল নির্মান প্রকল্প, ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প, দোহাজারী-রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্প, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দরসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনার সফল রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে তিনি খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র বিমোচন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, শিক্ষানীতি প্রণয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, গনতন্ত্র, শান্তি, জঙ্গী দমন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে তিনি বহু মর্যাদা সম্পন্ন আর্ন্তজাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা হিসাবে স্বীকৃতির মাধ্যমে বাঙ্গালি জাতিকে গৌরাবান্বিত করেছেন।

বঙ্গবন্ধু -১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার নতুন মাত্রা দিয়েছেন। শেখ হাসিনা আজ বিশ্বে একজন নন্দিত সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি সৎ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিশ্বে তৃতীয় স্থানের অধিকারী হয়েছেন।

বর্তমানে অত্যন্ত সফলতার সাথে করোনা পরিস্থিতি এবং পাশাপাশি একের পর এক বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করে যাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বেশ কয়েকটি গ্রন্থের রচিয়তা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘ওরা টোকাই কেন?’, ‘বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম’, ‘দারিদ্র্য বিমোচন’, ‘কিছু ভাবনা’, ‘আমার স্বপ্ন, আমার সংগ্রাম’, ‘আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি’, ‘সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র’, ‘সাদা কালো’, ‘সবুজ মাঠ পেরিয়ে’, ‘Miles to Go, The Quest for Vision-2021’ দুই খণ্ড ইত্যাদি।

শেখ হাসিনা ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর সভাপতি। তিনি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী এবং দরিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। প্রযুক্তি, রান্না, সঙ্গীত এবং বই পড়ার প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

শেখ হাসিনার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯মে ইন্তেকাল করেন। শেখ হাসিনার জেষ্ঠ্য পুত্র সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদ। একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার নাতি-নাতনীর সংখ্যা ৭ জন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়া যাবে- তার ঘোষিত ১৯৪১ সালের আগেই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা উন্নত দেশে রুপান্তরিত হবে। এই শুভদিনে বঙ্গবন্ধুকন্যা, জননেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করি।

লেখক: আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, সমন্বয়ক ও মুখপাত্র ১৪ দল

সারাবাংলা/এসবিডিই

আমির হোসেন আমু মত-দ্বিমত শেখ হাসিনা- বাঙালির আস্থা ও বিশ্বাসের ঠিকানা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর