অস্থিতিশীল দেশই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার লক্ষ্য
২৩ অক্টোবর ২০২১ ১৭:২৬
বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আবহমানকাল ধরে এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করছে। হাজার বছর ধরে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, চাকমা, মারমা, সাঁওতালসহ সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এই ভূখন্ডে একসঙ্গে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে। আর এ সম্প্রীতির জন্যই বলা হয়ে থাকে ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির ২৪ বছর পর দ্বিজাতিতত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম হয় অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মহান বিজয় অর্জনে একক ও সক্রিয়ভাবে যে উপাদানটি কাজ করেছে সেটি হলো আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার শক্তি। স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক, প্রগতিশীল, সাম্য, সমতা, সবার জন্য ন্যায়বিচার ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাষ্ট্রদর্শন নিয়ে যাত্রা শুরু করে দেশটি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছিল স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সে রাষ্ট্রটি সাম্প্রদায়িক দর্শন ও চিন্তা-চেতনা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কেবল ধর্মের দোহাই দিয়ে, ধর্মকে পুঁজি করে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে একটি অশুভ শক্তির দ্বারা বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিত নিপীড়িত হয়ে আসছে এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।
সম্প্রতি কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবে পূজামণ্ডপে প্রতিমার কাছে দুর্বৃত্তের রাখা কোরআন শরীফ অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুন জ্বলে উঠে। পাঁচদিনের আনন্দঘন উৎসবের তৃতীয় দিন থেকে জ্বলতে শুরু হয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে উস্কানিমূলক ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিতে তৎপর হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী গোষ্ঠী। ফলে দ্রুতই দেশের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দেয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সহিংসতা। এর ফলে কুমিল্লা ছাড়াও চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ রোববার রাতের অন্ধকারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুন দিয়ে পুড়ে ছাই করে দেয়া হয় রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, বটতলা ও হাতীবান্ধা গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী এক অশুভ শক্তির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের হাজার বছরের সম্প্রীতির ঐতিহ্য এক নিমিষে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপপ্রচারকে সম্বল করে বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে ‘ইস্যু’ বানিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এসব কাজে ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং কোনো রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন নিহিত থাকে।
আজ দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে বাঙালির আবহমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, ধর্মীয় সহাবস্থানকে নষ্ট করছে তাদের সমূলে উৎপাটন জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ ২০১৯ সালে ভোলা জেলায় ঘটে যাওয়া বিভৎস ঘটনা নিশ্চয় সকলের মনে থাকার কথা। সে সময় সেখানে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যে আইডি থেকে ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করা হয়েছিল, সেটি ‘হ্যাকড’ হয় বলে পুলিশ পরবর্তীতে নিশ্চিত করে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, মেসেঞ্জারে ওই বক্তব্যের ‘স্ক্রিনশট’ ব্যবহার করেই বোরহানউদ্দিনে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। ২০ অক্টোবর(২০১৯) বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ ময়দানে ‘মুসলিম তাওহিদী জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয় এবং এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায় শত শত মানুষ। বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উপজেলা সদরে দফায় দফায় ওই সংঘর্ষে এক মাদ্রাসাছাত্রসহ চারজন নিহত ও আহত হয় ১০ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক। ১৮ অক্টোবর রাতে বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য নামের ২৫ বছর বয়সী এক যুবক বোরহানউদ্দিন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। সে জানায় তার ফেসবুক আইডি ‘বিপ্লব চন্দ্র শুভ’ হ্যাক করা হয়েছে। এজন্য ভোলার পুলিশ সুপার ধর্ম অবমাননার গুজবের বিষয়টি নিয়ে ১৯ অক্টোবর স্থানীয় আলেমদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তারপরও পরেরদিন ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজনে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোক জড়ো করা হয়। অর্থাৎ, স্থানীয় জনগণকে কেউ বা কারা উসকানি দিয়েছে, সহিংসতা সৃষ্টির জন্য ডাক দেয়া দিয়েছে। বোরহানউদ্দিনের ওই হিন্দু যুবকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার অভিযোগে দুই মুসলমান যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত দুই মুসলিম তরুণ মুসলমান হয়েও নবীজী (সা.) সম্পর্কে বাজে কথা লিখে আরেকজনকে জড়াবার চেষ্টা করেছে- যা সাম্প্রদায়িক উস্কানির নির্মম দৃষ্টান্ত। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কক্সবাজারের রামু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার মতো অন্যের ক্ষতি করার জন্য, অন্যকে ফাঁসানোর জন্য এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে কিছু দুষ্কৃতকারী। ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামু উপজেলায় হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে রসরাজ নামে এক হিন্দু মৎস্যজীবীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এনে লোকজনকে খেপিয়ে তুলে ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। অর্থাৎ, ২০২১ সালের শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার ঘটনা নতুন কিছু নয়। কুমিল্লার ঘটনায় হয়তো পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর কোনো না কোনো প্রভাব থাকতে পারে। এ নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে, থলের বিড়াল বের করে নিয়ে আসতে হবে। অপরাধীর, দাঙ্গা সৃষ্টিকারীর, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীর কোনো ধর্ম নেই।
শারদীয় দুর্গোৎসবের পাঁচ দিনে নানান আয়োজন থাকে। এর মধ্যে বিসর্জনের সকালে থাকে সিঁদুর খেলা। এবার অধিকাংশ মণ্ডপেই সিঁদুর খেলা হয়নি। কারণ অষ্টমীর দিন থেকে জ্বলছে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার আগুন। সবার মনেই ভয়, আতঙ্ক। সিঁদুর খেলায় অংশ নিতে না পারায় এক হিন্দু নারী কান্না ভেজা কণ্ঠে তার ক্ষোভের কথা বলছিলেন, ‘আমার প্রথম পরিচয় হিন্দু না, বাংলাদেশের নাগরিক। এই দেশে শুধুমাত্র ধর্ম পরিচয়ের জন্য বছরের একটা উৎসবে আমরা একটু সিঁদুর খেলি, সেটা হলো না। এটা এই রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, এটা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অবমাননা। আমার প্রথম পরিচয় আমি হিন্দু না, আমি নাগরিক। আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব এই রাষ্ট্রের। সারা বছরের একটা পূজা বলে শুধু নয়, এই যে সারা বছর সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ঘুরে বেরায়, কোনো প্রতিবাদ হয় না। শুধুমাত্র আমরা দায়সারা কথা বলি, এটা আমার ধর্মে বলে না। প্রতিবাদ কে করে বলেন তো? কে বলে যে, না আমার এই প্রতিবেশীরও এটা অধিকার। আমাকে যখন মালাউন গালি দেওয়া হয়, তখন কে প্রতিবাদ করে? কে বলে যে, না ওকে এই গালিটা দিও না। আমাকে ইন্ডিয়ার দালাল বলা হয়, আমার দেশপ্রেমকে প্রশ্ন করা হয়, শুধুমাত্র আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের জন্য। এই দেশ আমার, আমার চৌদ্দপুরুষ এই দেশে রয়েছে। ৪৭-এ যাইনি, ৬৬-তে যাইনি, ৭১-এ যাইনি, ২০০১-এ যাইনি। এই দিন দেখার জন্য!’
এ রকম আরো বহু মানুষের চাপা ক্ষোভ ও অভিমানের গল্প রয়েছে, যা বলে শেষ করা যাবে না। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র সব ছাপিয়ে আমাদের ‘মানুষ’ হতে হবে। যার মধ্যে মানবিকতা আছে, মূল্যবোধ আছে, যার মননে মানবধর্মের প্রতিপালন হয়, যার কাছে মানুষ পরিচয়ই মুখ্য- সে কখনো অন্যকে বা অন্যের ধর্মকে অবমাননা করতে পারে না, অন্যের ধর্মের মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাতে পারে না, অন্যের প্রতি সে সহিংস হতে পারে না।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশে দুই হাজার মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৩৫০ জন হত্যা এবং ৪০০ জন ধর্ষণের শিকার হন। দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর জঘন্যতম হামলা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারির ৯ ও ১০ তারিখে চট্টগ্রামের হাটহাজারির হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা এবং অগ্নিসংযোগ আর সাতক্ষীরার মতো ঘটনা যেন ধর্মকে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ব্যবহারের একটা হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অতীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় মানুষ হত্যা ও নারী ধর্ষণ মুখ্য ঘটনা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় এবং কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাতের পরিস্থিতি ও হামলার ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা, একটা জাতির আবহমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটেছে; সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বৃদ্ধি পেয়েছে- এসবকেই ধ্বংস করতে চায় মৌলবাদী গোষ্ঠী, এক অশুভ শক্তি।
এ দেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মের প্রতি দুর্বল। কিন্তু ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান ও ধর্ম নিয়ে গবেষণা খুব কম মানুষই করে। ধর্ম এখানে একটি স্পর্শকাতর বিষয়। আর মানুষের এ দুর্বলতার সুযোগ নেয় একটি চিহ্নিত মহল। এই চিহ্নিত মহল এই স্পর্শকাতর বিষয়কে সব সময় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্ম দিয়ে ব্যবসা করেছে, ধর্ম দিয়ে রাজনীতি করেছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোই আমাদের কাছে দৃষ্টান্ত।
ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের সব ভেদাভেদ ভুলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই মিলে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করলাম, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলাম সবাই মিলে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করবো বলে। কিন্তু পরম পরিতাপের বিষয় হলো, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা সেই কাঙ্ক্ষিত অসাম্প্রদায়িক চেতনার রাষ্ট্রের দেখা পেলাম না। এখানে এখনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলে। শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস, অবিশ্বাস বা ধর্মের পার্থক্যের জন্য চলে খুন, সন্ত্রাস, হামলা, ভাঙচুর, অরাজকতা। পাশের প্রতিবেশীটি শুধু ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে শিকার হন সহিংসতার। কিন্তু কেন? আমরা কী এমন দেশ চেয়েছিলাম? এখানে এখনো কেন মানুষকে ‘সংখ্যালঘু’ পরিচয়ে বাঁচতে হয়? সংখ্যাগরিষ্ঠরা ‘মানুষ’ পরিচয়ে বাঁচতে পারলে সংখ্যালঘুরা কেন ‘মানুষ’ পরিচয়ে বাঁচতে পারবে না?
ধর্ম পালন বা অপালন প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কাউকে জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার অধিকার ধর্মীয় বিধানেও নেই। সব ধর্মই তো শান্তির কথা বলে। তবুও কেন ধর্মকে ঘিরে এতো অপরাজনীতি, অশান্তি, অরাজকতা, সহিংসতা, মারামারি, হানাহানি? আর এর নেপথ্যে কারিগর এক প্রকার অধার্মিক, স্বার্থান্বেষী ভন্ড ধর্মব্যবসী মহল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো রাজনীতি করার মোক্ষম অস্ত্র বানানো হয়েছে।
বিভিন্ন সময় থেকে শুরু করে সাম্প্রতিককালে যারা সুপরিকল্পিতভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে, দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে, ধর্মকে ব্যবহার করে অপরাজনীতি করেছে তারা দেশ, জাতি ও সকল ধর্মের শত্রু। তাদের অপচেষ্টা রুখে দিতে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। কারণ, যার ধর্ম যাই হোক না কেন, দেশটা আমাদের সবার। ১৯৭১ সালে যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সে দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করতে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তবায়ন করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
লেখক: গবেষক
সারাবাংলা/এসবিডিই
অস্থিতিশীল দেশই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার লক্ষ্য ইমরান ইমন মত-দ্বিমত