বর্জনে-বর্জনে অর্জনহারা বিএনপি
১৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১২:৩০
বর্জনে-বর্জনে এখন আর কোনো অর্জনই দেখে না বিএনপি। আন্দোলনের ব্যাপারে মাঝে মাঝে তর্জন-গর্জন দেওয়া দলটি বর্ষণ ঘটাতে পারছে না রাজনীতির মাঠে। দলগতভাবে অর্জন না দেখতে দেখতে স্বাধীনতার এই সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে দেশের কোনো অর্জনও দেখছে না। অপরিনামদর্শীভাবে তা আবার বলেও ফেলছেন বিএনপি নেতারা। মহান বিজয় দিবসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে ‘আমরা’ কিছুই পাইনি, বরঞ্চ হারিয়েছি।
এই ‘আমরা’টা কে –কারা? বিএনপি? না-কি দেশ বা দেশের মানুষ? স্পষ্ট করেননি বিএনপি মহাসচিব। আমরা বলতে নিজেদেরকে তথা বিএনপিকে বুঝিয়ে থাকলে তা একান্তই তাদের স্বীয় বেদনা। এ নিয়ে অন্যদের না ভাবলেও চলে। কিন্তু, কথার পিঠে কথা এসে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশকে কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম দেয়ার কথা স্মরণ করতে হয় নতুন করে। একাত্তরে বিশ্বমানচিত্রে জায়গা পাওয়া যে দেশটির প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ ছিল দারিদ্র্যপীড়িত, স্বাধীনতার ৫০ বছরে সেটি উন্নয়নের মহাসড়কে। বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ। এগুচ্ছে ২০৩২ সালে বিশ্বের বড় অর্থনীতির ২৫টি দেশের একটি হওয়ার টার্গেটে। স্বল্পোন্নত দেশ-এলডিসির তালিকা থেকে উতরে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে জায়গা করেছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কথা আছে। নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া নিয়ে সমালোচনা আছে। তাই বলে অর্থনৈতিক সূচক অস্বীকার করতে হবে? বলতে হবে, আমাদের কোনো অর্জন নেই?
বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, দুর্নীতি, সুশাসন, মানবাধিকার পরিস্থিতি ইত্যাদি নিয়ে সমালোচনাকারী আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে সমান্তরালে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসাও হচ্ছে। বলা হচ্ছে- অনিয়ম, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে বাংলাদেশ আরো এগুতো। গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সূচকগুলো দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। কোনো দল বা সরকারকে অপছন্দ হলে দেশের অর্জনও অস্বীকার করার বাতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।
গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজনৈতিকভাবে নাস্তানাবুদ দশা যাচ্ছে বিএনপির। সরকারকে মোকাবেলা করতে না পারার কারণে কোনো অর্জনেরই মুখ দেখছে না। তবে, বর্জনের এক সিরিয়ালে ভুগছে। সব কিছুতে ‘মানি না’ ব্যারামে আক্রান্ত। দল গুছাতে পারেনি। সংগঠিত করতে পারেনি কর্মীদের। জনগণকেও সরকারের বিরুদ্ধে একাত্ম করতে পারেনি। ওয়ান ইলেভেনে নাজেহাল হওয়ার পর থেকে আশাবাদী হওয়ার মতো নূন্যতম অর্জনের আলামতও পায়নি দলটি। মাঝে মাঝেই আন্দোলন, তীব্র আন্দোলন, তীব্র থেকে তীব্রতর আন্দোলন ইত্যাদি কাব্যিক গর্জন দিয়ে বর্ষণের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে প্রতি বছর ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে কিছুটা উত্তাপ, কিছুটা চাঞ্চল্য, কিছুটা কৌতুহল তৈরি হয়। এবারো অর্থাৎ আর কয়েকদিনও হবে।
সরকার ভুল করতেই থাকবে, মানুষ ক্ষেপে গিয়ে সরকারকে ফেলে দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে-এমন একটি আয়েশি অপেক্ষা বিএনপির একাংশের। যা দলের পোড় খাওয়া কর্মীদের কাছেও হাস্যকর। দল যে আন্দোলন বা ক্ষমতার অবশিষ্ট উপযুক্ততাও হারিয়ে ফেলছে, তা উপলব্ধি করছে বিএনপির হিতাকাঙ্খীরাও। বিএনপির যাবতীয় অসামর্থের আপডেট তথ্য সরকার হাড়ে-হাড়ে জানা। তাই বিএনপিকে কেয়ার করার কোনো গরজও নেই সরকারের। বলার অপেক্ষা রাখে না নীতিহীনতার রাজনৈতিক ধারা দেশে বেগবান। তা আরো ডালপালা ছড়াচ্ছে। সুশাসনের সঙ্গে সুনীতিও ফেরারি। বিএনপি নামক দলটি দেশকে এ থেকে বের করে আনবে বা তাদের সেই ইচ্ছা আছে মানুষ সেই আলামত দেখছে না। অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন গতিময় করার সামর্থও দেখাতে পারছে না বিএনপি। এই না পারার দায়ও তারা সরকারকে দিচ্ছে। বলছে, সরকার তাদের আন্দোলন করতে দেয় না। রাস্তায়ই নামতে দেয় না। কখনো কোনো সরকার কোনো বিরোধীদলকে সেই সুযোগ উপহার দেয়? সেই রেকর্ড আছে?
মোস্তফা কামাল; সাংবাদিক–কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন
সারাবাংলা/এসবিডিই