Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বৈশ্বিক রাজনীতির গরম হাওয়া বাংলাদেশেও

রনি অধিকারী
৮ আগস্ট ২০২২ ১৭:৫৮

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জ্বালানি নিরাপত্তাকে টার্গেট করে নানা মিথ্যা অজুহাতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একের পর এক যুদ্ধ ও সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে মূলত পুরো বিশ্বকেই অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববাজারে হঠাৎ ডলারের দাম বেড়ে গেছে একং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে নিত্যপণ্যসহ সব জিনিসপত্রের বাজার যেমন গরম, তেমনি বৈশ্বিক রাজনীতিতেও যেন একটি গরম ভাব বিরাজ করছে।

পৃথিবী একটি নতুন বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি কি-না এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়াব্যাপী যুদ্ধ ছড়িয়ে না পড়লেও স্থানীয় ও আঞ্চলিক যুদ্ধ পৃথিবী থেকে একেবারে বিদায় নেয়নি। যুদ্ধ মানে জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি। যুদ্ধ মানে সভ্যতার সংকট। যুদ্ধ মানে ধ্বংস-সংহার। তাই একসময় বিশ্বজুড়েই আওয়াজ উঠেছিল ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’। শান্তি আন্দোলন এখন মিইয়ে পড়লেও বিশ্বজুড়ে উত্তেজনার তেজিভাব ঠিকই আছে। পৃথিবীব্যাপী এখন আবার একটি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে। উন্নত, সমৃদ্ধ বা সম্পদশালী দেশগুলো নিজেদের আধিপত্য বা দাপট বিস্তারের জন্য একধরনের যুদ্ধোন্মাদনা তৈরি করে রাখে। বিশেষত যেসব দেশ অস্ত্র বিক্রি করে, তাদের জন্য যুদ্ধ-পরিস্থিতি থাকলেই ব্যবসা ভালো হয়।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মনে হয়েছিল, সম্পদ ও অস্ত্রশক্তিতে দুর্বল ইউক্রেন বেশি দিন টিকতে পারবে না রাশিয়ার মতো বড় শক্তির কাছে। কিন্তু বাস্তবে যুদ্ধ চলছে এবং কবে শেষ হবে, বলা কঠিন। কারণ, ইউক্রেন নিজে ছোট হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা পেয়ে ইউক্রেন সমানে সমান লড়ে যাচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে। এই যুদ্ধ কোন পরিণতির দিকে যাবে, কোন পক্ষ আগে নতি স্বীকার করবে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। ইউক্রেনে নতুন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। অন্যদিকে, ইউক্রেনকে আবারও ১০০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে পৃথিবীর দেশে দেশে জ্বালানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে তৈরি হওয়া সংকট কোনো কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই তাইওয়ান নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন উত্তেজনা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে কেন্দ্র করে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র মুখোমুখি অবস্থানে গিয়েছে। চীন এই সফরকে ‘চরম বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। ২৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম শীর্ষস্থানীয় একজন আমেরিকান রাজনীতিক তাইওয়ানে গেলেন। তাইওয়ান নিজেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র মনে করলেও চীন তাকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একটি প্রদেশ মনে করে এবং দ্বীপটি আবার বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, তাইওয়ানের সঙ্গে পুনরেকত্রিকরণ অর্জন অবশ্যই হবে এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি। প্রশ্ন হলো, চীন কি বর্তমান সময়টিকেই সেই শক্তি প্রয়োগের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করছে কি না? চীন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তার আশপাশের দেশগুলোর ভূমিকা কী হবে? তারা কি দর্শক হবে, না পক্ষভুক্ত হবে? পরিস্থিতি তাতিয়ে না তুলে সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বিশ্বনেতাদের বিবেচনায় আসা দরকার।

বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্য যখন অস্থিরতায়, তখন দেশীয় বাজারেও এর প্রভাব পড়া স্বাভাবিক। দেশীয় বিশেষজ্ঞ কেউ কেউ পরিস্থিতি সামাল দিতে জ্বালানির দাম ‘সামান্য’ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কিছুটা কমানোর সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু সেটি যে গড়ে ৪২ থেকে ৫২ শতাংশে উঠবে, তা কেউ ভাবেননি। আর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়ে গেল গণপরিবহনের ভাড়াও। সরকারের নতুন হার অনুযায়ী নগর পরিবহনের ভাড়া কিলোমিটারে ৩৫ পয়সা বেড়েছে। অর্থাৎ ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে আড়াই টাকা করা হয়েছে। দূরপাল্লার ৫২ আসনের বাসে প্রতিকিলোমিটারে ভাড়া বেড়েছে ৪০ পয়সা। ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে কিলোমিটারে ২ টাকা ২০ পয়সা। তবে দূরপাল্লায় ৫২ আসনের বাস বাস্তবে না থাকায় ৪০ আসনের বাসে প্রকৃত ভাড়া হবে কিলোমিটারে ২ টাকা ৮৬ পয়সা। এর বিরূপ প্রভাব পড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। সেচ ও কৃষি উপকরণের খরচ বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং পরিণতিতে ভোক্তা পর্যায়ে বাড়তি ব্যয় করতে হবে। এই সময়ে এসে জ্বালানির মূল্য এতটা বৃদ্ধি সুবিবেচনার পরিচায়ক হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন সরকার ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি অর্থ নিয়েছে এবং মুনাফা করেছে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে একবারে এত বেশি দাম বৃদ্ধি করা অনুচিত। আট মাস আগে ২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করার চাপ সামলে ওঠার মধ্যেই আবারও গণপরিবহনে একটা বাড়তি ভাড়ার ধাক্কার মুখে পড়তে হচ্ছে সবাইকে। উচ্চমূল্যস্ফীতি নিয়ে আগে থেকেই সংসার সামলাতে হিমশিম খাওয়া মানুষ এবারের নজিরবিহীন দাম বৃদ্ধির চাপে পড়ল। এ অবস্থায় জ্বালানির দাম যৌক্তিক ও সহনীয় রাখতে সরকার সুবিবেচনার পরিচয় দিতেই পারতো।

লেখক : কবি, সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বৈশ্বিক রাজনীতির গরম হাওয়া বাংলাদেশেও মত-দ্বিমত রনি অধিকারী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বাংলাদেশ-ভারত টেস্টে হামলার হুমকি!
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:৩৫

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর