Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরিসংখ্যানে গরিবের পেট ভরে না

হাবীব ইমন
৮ আগস্ট ২০২২ ১৯:২৭

এক.
মো. বাবুল হোসেন। লক্ষ্মীপুরের একজন বাসচালক। তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘মালিক বলছে, দরকার অইলে গাড়ি বন্ধ করি দাও। গাড়ি বন্ধ করি কি চুরি করুম?’

শেষের কথাটা পাঠকের কতটুকু ছুঁয়ে গেছে জানি না। আমাকে ছুঁয়ে গেছে। কথাগুলো মর্মন্তুদ। গূঢ়ার্থ ব্যাপক। তার এ কথার সঙ্গে সমসাময়িকের একটা যাতনার চিত্র ফুটে উঠেছে। সমস্ত চিন্তা-ভাবনাকে এলোমেলো করে দেওয়ার মতো। মনে হচ্ছে আমি বুঝি আকণ্ঠ ক্লেদে নিমজ্জিত হচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

দুই.
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তা বড়লোকের জন্য শুধু বিরক্তির ব্যাপার। কিন্তু গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষের কাছে তা জীবিকার সংকট তৈরি করে। এবারের জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের বেশি কষ্ট হবে। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য —সব খাতেই ব্যয় বেড়ে যাবে।’

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, মূল্যস্ফীতির তথ্যে এর প্রভাব আসবে কিনা, জানি না। তবে মানুষ বাজারে গিয়ে ঠিকই টের পাবে। কারণ, বাজারের জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য লুকিয়ে রাখা যাবে না। স্বভাবত নিত্যপণ্যের দামও আরও বাড়বে। শিল্প খাতের কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একই সঙ্গে বেড়ে যাবে সেচ খরচও। এতে কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এখন চলছে আমন মৌসুম। ফলে আমন উৎপাদনেও বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা আছে। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেলের প্রভাব হবে বহুমুখী।

এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহনভাড়া, পণ্য পরিবহনের খরচ, সর্বোপরি মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। তবে মূল ধাক্কা পড়বে কৃষি উৎপাদনে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে সারের দামও বেড়ে গেছে। কৃষি খরচও বেড়ে গেছে। ফসল উৎপাদনের আগে ও পরে ডিজেলের ব্যাপক ব্যবহার হয়। এখন এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষিতে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা আমাদের জন্য আতঙ্ক।

বিজ্ঞাপন

কৃষি উৎপাদনের মধ্য দিয়ে যে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি সরকারের জন্য অহংকার ছিল, সেটি এখন বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলো। সেসব এখন সাধারণ বিচার-বিশ্লেষণের বাইরে চলে গেছে। পাশাপাশি শিল্পোৎপাদনও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে। জীবনযাপনে আরও বেশি বিপর্যয় নেমে আসবে। যখন বিপর্যয় নেমে আসবে, তখন সমাজে অস্থিরতা তৈরি হবে, একইসঙ্গে নানা অবক্ষয় তৈরি হবে, এর মাত্রাও বেড়ে যাবে। বাজারে মূল্যস্ফীতি তৈরি হবে। এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে, সেটি আদৌ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে কিনা, সেই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

মধ্যবিত্তের নতুন লড়াই শুরু হলো। অকটেন, পেট্রল, ডিজেল, কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষেরা। মধ্যবিত্তের কপালেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এ যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’।

জ্বালানি তেলে ইতিহাসের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় অনেকটা হতভম্ব সবাই। আরেক দফা মূল্যস্ফীতি বাড়ছে—এটা প্রায় অবধারিত। চাল, ডাল, তেল, লবণের পাশাপাশি যাতায়াত, পোশাক, খাতা-কলমসহ নানা ধরনের খাদ্যবহির্ভূত পণ্য ও সেবার দাম বাড়বে। আয় না বাড়লে খাবারদাবারসহ ভোগ কমিয়ে সংসারের বাজেট মেলাতে হবে। সেটিও কিভাবে? কোনো পথ কি খোলা আছে? জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাত্রার পদে পদে খরচ বাড়াবে। আয়ের সঙ্গে সংগতিহীন, লাগামহীন খরচে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা লাখ লাখ পরিবারকে আবারও গরিব হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

তিন.
খোলা চোখে জনগণ বুঝতে চায়, সরকারের সব কর্মকাণ্ড জনগণের মঙ্গল নিশ্চিত করবে এবং তাদের স্বার্থের অনুকূলে থাকবে বা সাংঘর্ষিক হবে না। এই মানদণ্ডে হিসাব করলে এভাবে জ্বালানির বেপরোয়া মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণ হতবাক। উত্তরোত্তর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি —এর আগে জ্বালানি তেলের প্রতি লিটারে ১৫ টাকা মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিও অপেক্ষাধীন —এর মধ্যে জ্বালানি তেলের প্রায় ৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণ ভাবছে, সরকারের ভেতরে অসাধু একটি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করছে।

চার.
আমরা বাংলাদেশকে এই অবস্থায় নিয়ে এলাম কীভাবে? মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশের প্রথম সরকার রাষ্ট্রকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ ঘোষণা করেছিল। এর মানে জন্মলগ্ন থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূলনীতি হলো শ্রমজীবী আর সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পাহারাদার। সেজন্যই রাষ্ট্রের চারটি মূলনীতির দ্বিতীয়টিই ছিল ‘সমাজতন্ত্র’। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’-এর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল, পাঁচ বছরে অতিধনীর সংখ্যাবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেছে। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক অতিধনীর সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। দ্রুত অতিধনী হওয়া তালিকার শীর্ষে থাকা বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমছে খুবই মন্থরগতিতে। অন্যদিকে ধনী ও গরিবের বৈষম্য বাড়ছেই। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বড় মন্ত্র ছিল, বড় আকাঙ্খাা ছিল, একটা বৈষম্যমুক্ত সমাজ তৈরি করা। সেটি আজ কতদূর?

গত ১৫ বছরে ধনিক শ্রেণির আয় যে পরিমাণ বেড়েছে, তা দিয়েই দেশের চরম দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। কিন্তু তাদের আয় কি দেশে আছে?

পাঁচ.
কয়েক মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে গত জুন মাসে তা ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ হয়েছে, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অবশ্য জুলাই মাসে তা কমে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিই ছিল এর অন্যতম কারণ।

দুই-তিন মাস ধরেই অর্থনীতিতে একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তৈরি হয়েছে লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ঘাটতি। এই ঘাটতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণসহায়তা চেয়েছে সরকার। ৪৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ পাওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হতে যাচ্ছে। তবে আইএমএফ সব সময় জ্বালানি খাতে ভর্তুকি না দিয়ে দাম সমন্বয় করার তাগিদ দিয়ে আসছে।

এর আগে এক দশক আগে বর্ধিত ঋণ সহায়তার (ইসিএফ) আওতায় ১০০ কোটি ডলার নিয়েছিল বাংলাদেশ। আইএমএফের শর্ত হিসেবে একাধিকবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখন মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছায়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি ৮-৯ শতাংশে পৌঁছালেই ঝুঁকিতে থাকা মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নামতে শুরু করে। করোনার কারণে এমনিতেই মানুষের আয় তেমন বাড়েনি, বরং কারও আয় কমেছে। এমন অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির বড় উল্লম্ফন হবে। বিশেষজ্ঞ হিসাবে, শুধু কেরোসিনের দাম বাড়ার ফলে গ্রামের মূল্যস্ফীতি দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে।

ছয়.
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে বৈরিতা সৃষ্টি করেছে। তৈরি হয়েছে জ্বালানি অনিশ্চয়তা। এ প্রেক্ষাপটে অনেকেই জ্বালানির ব্যবহার সীমিত করেছে। অনেকে আবার খাতওয়ারি জ্বালানি বণ্টন যৌক্তিকীকরণের চেষ্টা করছে। কেউ কেউ কৌশলগত মজুদ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নিয়েছে। যেমন চীন ও ভারত রাশিয়ার সস্তা জ্বালানি তেল কিনে বিপুল মজুদ গড়ে তুলছে। বলা চলে, জ্বালানি সংকট মোকাবেলা এবং দামজনিত অভিঘাত থেকে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে দেশগুলো। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য শিক্ষণীয়।

জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এ পদক্ষেপ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। বিধি অনুসারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির এখতিয়ার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি)। নিয়ম হলো জ্বালানি বিভাগ প্রথমে প্রস্তাব পাঠাবে। কমিশন সেটি বিবেচনায় নিয়ে গণশুনানির ব্যবস্থা করবে। গণশুনানিতে সব পক্ষের অংশীজনদের মতামত শোনা হবে। সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন হলে জ্বালানির দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু এবার কমিশনকে পাশ কাটিয়ে আকস্মিকভাবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে যে বড় ধরনের নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে, তা বলা বাহুল্য।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, অন্যান্য দেশেও জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। তবে সেখানে ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অভিঘাতের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মতো কেউ এক ধাপে এতটা মূল্যবৃদ্ধি করেনি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে সরকারকে অবশ্যই দাম বাড়াতে হতো। কিন্তু এক লাফে এতটা বাড়ানো যৌক্তিক হয়নি।

এক পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, প্রতি লিটার জ্বালানি তেলে ৩০-৩২ শতাংশ ভ্যাট-ট্যাক্স নেয় সরকার। তা কমালে দাম বৃদ্ধির তেমন প্রয়োজন হয় না। এছাড়া বাজারে দাম কম থাকায় তেল বিক্রি করে আগের ৮ বছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে সরকারি সংস্থা বিপিসি। যার বেশির ভাগই সরকার নিয়ে গেছে। এ অর্থ দিয়ে একটা তহবিল গঠন করা হলে সংকটকালে কাজে লাগানো যেত। অথচ সেটা করা হয়নি, এখন যার দায় চাপানো হচ্ছে ভোক্তাদের ওপর।

দেশের জ্বালানি খাতে ব্যাপক অদূরদর্শিতা দৃশ্যমান। দীর্ঘমেয়াদি সুচিন্তিত পরিকল্পনার পরিবর্তে অনেকটা নেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী কৌশল। আশু সংকট মোকাবেলায় নেওয়া হচ্ছে সাময়িক ব্যবস্থা। কিছুদিন আগে সংকটের অজুহাতে গৃহস্থালি ও শিল্প উভয় পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় ও শিল্পোৎপাদন ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এবার আকস্মিকভাবে বাড়ানো হয়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেল। এর অভিঘাত হবে আরও বিপুল। বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে বিশ্ববাজারে কমলে দাম সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সাধারণত দেখা যায়, বিশ্ববাজারে এ পণ্যের দাম বাড়লে বাড়ানো হয়। কমলে আর কমানো হয় না। এর আগে কম দামে আমদানি করে বেশি দামে বিক্রি করে বিপুল মুনাফা করেছে বিপিসি। তখন দাম কমানো হয়নি। কাজেই সামনে কমানোর যে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে, তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যায়।

আন্তর্জাতিক বাজারে এক সপ্তাহ ধরে জ্বালানি তেলের দাম কমতির দিকে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে ১০০ ডলারের মধ্যে নেমে এসেছে। এ দর চলতি বছর ৭০-৮০ ডলারে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। এ সময়ে বরং বাংলাদেশ বিপরীত পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন নানামুখী চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশের মানুষ। এ কঠিন সময়ে জ্বালানির অতি মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলবে।

সাত.
আবার কি ক্ষুধার অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে? প্রশ্নটি এখন অনেকের ভেতরে নিরবে তোলপাড় করছে। অনেক জায়গায় খবর পাওয়া যাচ্ছে, কেউ কেউ পুরো দিন না হলেও এক বেলা অভুক্ত আছেন। সেইসবের সরকারি-বেসরকারি সঠিক কোনো পাওয়া যায় না। খাদ্যসঙ্কটের এই ছবি আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। এতো উন্নয়নের ঝিলিক চারিদিক, তবুও কেন ক্ষুধা? এর উত্তর অনুসন্ধানসাপেক্ষ, কিন্তু অতীত সাক্ষ্য দেয় যে, শস্যের ফলন যথেষ্ট হলেও, মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অভাবে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। আশি বছর আগে ভয়ানক মন্বন্তর শস্যের অভাবে হয়নি, হয়েছিল চালের দাম মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার জন্য।

কোনো সম্ভাবনাই তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। অতিমারিতে কর্মহীনতা বেড়েছে। বেকারত্বের সুযোগে মজুরি কমেছে বহু ধরনের কাজে। তার উপর দ্রুত বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। বিশেষত জ্বালানি, ভোজ্য তেল ও ওষুধের দামে বৃদ্ধি মানুষের বিপন্নতা বাড়িয়েছে। দারিদ্র যে অত্যাবশ্যক পণ্যগুলিতেও ব্যয় কমাচ্ছে, তার ইঙ্গিত অতিমারির আগেই মিলেছিল। এখন খাবার কিনতেও টাকায় টান পড়ছে। একই সঙ্গে, জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলো নিয়ে রাজনীতির বাগাড়ম্বর বাড়ছে, অথচ সেগুলো মূল্যায়নের উদ্যোগ কমছে। আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়েই চলছে।

ক্ষুধার অন্ধকার, বাজারের বিবিধ অন্যায্যতা ও প্রশাসনিক নীতির ব্যর্থতা নিয়ে অনুসন্ধানের অনুরোধ করলেও সরকার ক্ষুব্ধ হয়। আশি বছর আগে ব্রিটিশ সরকার মন্বন্তর গোপন করতে সংবাদমাধ্যমে ‘দুর্ভিক্ষ’ কথাটির উল্লেখ নিষিদ্ধ করেছিল। আজও অনাহার, অর্ধাহার, অপুষ্টি, খাদ্য মূল্যবৃদ্ধির উল্লেখ অসহনীয় স্পর্ধা বলে দেখা হয়। কঠোর বাস্তবকে মুখের কথায় বাতিল করতে বড় কিংবা মাঝারি নেতাদের জুড়ি নেই। তাদের দেওয়া পরিসংখ্যানে গরিবের পেট ভরে না।

লেখক: রাজনীতিবিদ ও লেখক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

পরিসংখ্যানে গরিবের পেট ভরে না মত-দ্বিমত হাবীব ইমন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর