গ্রামীণফোন-রবি যেখানে লাভবান, রেল কেন পারছে না?
১৩ আগস্ট ২০২২ ১৪:২৭
দিনকয়েক আগে। তূর্ণা এক্সপ্রেসে ঢাকায় ফিরব এই উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশনে ঢুকতেই এক নাম্বার প্লাটফরমে ৭-৮টি এ্যাম্বুল্যান্স দেখে চোখ আটকে গেল। শতাধিক মানুষের জটলা। একটু এগিয়ে সামনে যেতেই দেখলাম সাদা প্লাস্টিক ব্যাগে মোড়ানো ১১টি মরদেহ। আর বোঝার বাকি রইল না, সীতাকুণ্ডে রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের হতভাগ্য যাত্রীদের মৃতদেহ। এদের মতোই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে ৫ নির্মাণশ্রমিক, গাজীপুরের সাতখামাইর এলাকায় ৩ পোশাক শ্রমিকসহ ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সবগুলো ঘটনাই মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ঘটেছে। এরা সবাই রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন।
এ ধরনের ঘটনার পর গেটম্যান ছিল কি না, ব্যারিয়ার ফেলা হয়েছিল কি না, চালকের অসতর্কতা নানান কারন খুঁজি আমরা। রেলের সাথে এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়হীনতাকেও সামনে টেনে আনা হয়। মিডিয়াগুলো সরাসরি সম্প্রচার, গুরুত্ব দিয়ে সাইড স্টোরিসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রচার করে, কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করে। দু’একজন সাময়িক বহিষ্কার হন। দুর্ঘটনার পর আমরা অনেকেই সেই গাড়ির চালক কিংবা যাত্রীদেরকেই দোষারোপ করার চেষ্টা করি কেন তারা ধৈর্য্য ধরে রেলক্রসিং পার হননি!
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা দু-এক ধাপ এগিয়ে রেলপথ সুরক্ষিত রাখা, ওভারপাস কিংবা আন্ডারপাস নির্মাণ করা, ফ্ল্যাশ লাইট ও ঘন্টা বসানোর ব্যবস্থা করা এরকম নানান পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু আদতে কোনো পরামর্শ কাজে আসে না কিংবা সেটির বাস্তবিক প্রয়োগ দেখা যায় না। যার কারণে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে।
একটা বিষয় বলে রাখি, রেলক্রসিংগুলো রেলওয়ের দুটি বিভাগের অন্তর্গত। একটি হচ্ছে ট্রাফিক বা পরিবহন বিভাগ, অপরটি ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিভাগ। জাতীয় মহাসড়ক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার রেলক্রসিংগুলো স্পেশাল শ্রেণীর। এছাড়া এ, বি, সি, ডি এবং অন্যান্য এই ৫ ক্যাটাগরীর রেলক্রসিং রয়েছে। সাধারণত রেল স্টেশনের দু’ পাশে যে রেলক্রসিংগুলো থাকে এগুলো প্রকৌশল বিভাগের আর বাদবাকি সব পরিবহন বিভাগের আওতাধীন। গেটম্যান নিয়োগ তাদের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। তারাই সতর্কতা অবলম্বন করে হাতে পতাকা নেড়ে ও মুখে বাঁশি ফুঁকে সবাইকে নিরাপদে চলতে সহায়তা করেন।
আবার বিপরীত ঘটনাও আছে। ট্রেন আসার সময় ব্যারিয়ার ফেলা সত্ত্বেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে ক্রসিং পার হতে গিয়ে মোটরসাইকেল অথবা অন্যান্য যানবাহনে থাকা যাত্রীরা জোরপূর্বক শর্টকাটে চিপাচাপা কিংবা ব্যারিয়ারের নিচ দিয়েই পার হতে চায়। এ সময় তাদেরকে বাধা দিলে গেটম্যানদের গালমন্দ, ধমকাধমকি এমনকি হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনাও ঘটার নজির রয়েছে বিস্তর।
রেলের পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে ৩ হাজার ৪৫ কি.মি রেলপথে প্রতিদিন যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী মিলিয়ে প্রায় ২৯৪টি ট্রেন চলাচল করে। এই রেলপথে ২ হাজার ৫৬১টি রেলক্রসিং রয়েছে যার মধ্যে ১ হাজার ৩২১টিরই অনুমোদন নেই। আর অনুমোদনকৃত যেগুলো আছে সেগুলোর কোনটার ব্যারিয়ার নষ্ট, টেলিফোন অকেজো, কিংবা সিগন্যাল ত্রুটিপূর্ণ অথবা দু’পাশে অবৈধ দোকান গড়ে ওঠেছে।
প্রতিবছর সারাদেশে ট্রেন দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা যায় তার প্রায় ৮৫ শতাংশই মারা যায় শুধুমাত্র রেলক্রসিং এলাকায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের হিসেব মতে, গত সাত বছরে রেল দূর্ঘটনায় ২২১ জনের প্রাণহানী ঘটেছে যাদের ১৮৭ জনই রেলক্রসিংয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এসব ঘটনায় মামলা, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, তদন্ত সবই দায়সারাভাবে চলেছে।
তবে রেল কর্তপক্ষের হিসাবের সাথে হতাহতের সংখ্যায় ফারাক রয়েছে ‘রোড সেফটি’ নামে একটি বেসরকারী সংস্থার। তাদের দাবী, গত আড়াই বছরেই রেলক্রসিংগুলোতে প্রাণহানী হয়েছে ২১৯ জনের। এরমধ্যে ২০২০ সালে ৬৯, ২০২১ সালে ৭৬ এবং চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অথচ এই সময়ের মধ্যে রেলক্রসিং উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ১৯৬ কোটি টাকা ব্যায়ে ৭০২টি রেলক্রসিং উন্নত করা হয়েছে বলে দাবী রেল কর্তৃপক্ষের। এই প্রকল্পের আওতায় স্বল্প বেতনে দেড় সহস্রাধিক গেটম্যান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তবে এদের অনেকেই নিয়মিত বেতন না পেয়ে চাকরি ছেড়ে চলে যান।
গেটম্যান পদে যাদেরকে চাকরি দেওয়া হয়েছে তাদের প্রশিক্ষণ ছিলো নামে মাত্র। দুইপাতার একটি নির্দেশিকা হাতে ধরিয়ে তাদের মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে ট্রেন আসার খবর জানানোর জন্য যে টেলিকম ব্যবস্থা সেটি প্রায়ই বিকল থাকে। সে প্রেক্ষিতে তাদেরকে নিজস্ব মুঠোফোনে খোঁজ নিয়ে নয়তো ট্রেনের শব্দ কিংবা উপস্থিতি দেখে গতানুগতিক পদ্ধতিতে তাৎক্ষণিক গেট বন্ধ কওে ট্রেন পার করতে হয়।
যদিও রেলক্রসিং সুরক্ষিত রাখতে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার সবচে নিরাপদ এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেমন সহজ তেমনই সবার জন্য নিরাপদ। এখন কথা হচ্ছে এজন্য আবার কোটি কোটি টাকা ব্যায় বেড়ে যায় কিনা সেটা নিয়ে অনেকেই আপত্তি তুলতে পারেন। খোদ বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার মন্তব্য করেছেন, এটা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাবে বলে। তার দাবী ডিজিটাল লেভেল ক্রসিং রক্ষণাবেক্ষণে প্রচুর অর্থ খরচ হবে।
তাই যদি হয় তবে গ্রামীণফোনের মত কোম্পানী রেলওয়ের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কিভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করছে। আরেক মুঠোফোন কোম্পানী রবি, যে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পর থেকে অব্যাহত লোকসান দিয়ে আসছিল তারাও কিনা রেলের ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের পর থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। রেল সেই নেটওয়ার্ক এর মালিক হওয়া সত্ত্বেও এই ফাইবার অপটিকের যথাযথ ব্যবহার করতে পারছে না। বলতে গেলে সক্ষমতার প্রায় ৮০ ভাগই অব্যবহৃত থাকছে।
অথচ এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে দূর্ঘটনা হ্রাস করা অনেকাংশেই সম্ভব। আইটি বিশেষজ্ঞদের মতে ফাইবার অপটিক ব্যবহার করে প্রতিটি রেলক্রসিং সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখা যায়। গেটম্যানের পাশাপাশি অটোমেটেড গেট ব্যারিয়ার চালু, ফ্ল্যাশ লাইট চালু, ই-বেল বাজানো, আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি সবই করা সম্ভব। এমনকি ট্রেনে চলাচলরত অবস্থায় ট্রেন চালক-পরিচালক এবং প্রতিটি স্টেশন মাস্টার-গেটম্যানদের সাথে তাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগও সম্ভব। এর সার্বিক পর্যবেক্ষণ মুল কেন্দ্র থেকে দেখা ও নির্দেশনা দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
মূলত ট্রেন দূর্ঘটনা কমানোর উদ্দেশ্যেই একসময়ে এই ফাইবার অপটিক স্থাপন করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতিহাস পর্যালোচলায় দেখা যায়, ৮০’র দশকে দুটি বড় বড় ট্রেন দূর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দুর্বল-ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যালিং ব্যবস্থাকে দায়ী করা হয়। সেই আমলে জিআই তার দিয়ে টেনে টেনে সিগন্যালিং এর ত্রুটি এবং টরে-টক্কা ফোনে লাইন না পাবার কারণেই দূর্ঘটনা ঘটেছিল। তখন মন্ত্রনালয় থেকে বিভিন্ন দপ্তরে সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়।
সেই সময় নরওয়ের রাষ্ট্রীয় দাতা সংস্থা NORAD ফাইবার অপটিক বসায়, যেটিকে বলা হয়েছিল, আল্টিমেট টেকনোলজি। অথচ তখন দেশের রাষ্ট্রীয় মূল টেলিকমিউনিকেশন অপারেটর (তৎকালীন BTTB) চলতো কপার কেবলে। ১৯৮৬ সালে জেনারেল ইলেক্ট্রিক কোম্পানীর মাধ্যমে রেলওয়ের অপটিক্যাল ফাইবার বসানোর কাজ শুরু হয় এবং তা শেষ হয় ১৯৯২ সালে। মোট খরচ হয়েছিল ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার সবটাই দান হিসেবে সহায়তা করেছিল নরওয়ে সরকার।
এর ফলে রেলওয়ের একটা নিজস্ব টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো তৈরী হয় এবং এর ব্যবহার ছিল খুবই সীমিত। মাত্র ৩শ স্টেশনে টেলিফোন ব্যাবস্থাপনার কাজ চলতো। অন্যদিকে এই ফাইবারের চারপাশে কপারের লেয়ার থাকায় বিভিন্ন স্থানে ফাইবার চুরির হিড়িক পড়ে। এভাবে কিছুদিন চলার পর মাটির নিচে থাকা ফাইবার অনেকটা অবহেলাতেই পরে ছিল। এই কাটা ফাইবার জোড়া লাগানোর জন্য রেলওয়ের Fiber Splicing ও OTDR মেশিন ছিল একটি, অপারেটরও ছিল মাত্র একজন।
দেখা গেছে যে ফাইবার কাটে তিন জায়গায়, মেশিন মাত্র একটা। আবার কখনও অপারেটর অসুস্থ। তার মধ্যে ছিলো না বাজেট। আর রেলওয়ের মূল অপারেশন ট্রেন চালানো। দু’দিন পরপর যেখানে সেখানে ফাইবার চুরি ও জনসাধারণের মাটি কাটার ফলে ফাইবার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তারা টেলিফোন ঠিক রাখবে নাকি ট্রেন চালাবে? এভাবে চলতে চলতে অবস্থা বেগতিক দেখে একসময় এই ফাইবার পরিণত হল Dead Mud এ। তখন এই সুযোগটি লুফে নেন প্রকৌশলী ইকবাল কাদির। যাকে সবাই গ্রামীণফোনের স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবেই জানে। সে সময়ে আমেরিকায় তার গনফোন নামক একটি ফোন কোম্পানি ছিল। ১৯৯২ সালে তিনি জানতে পারেন, বাংলাদেশে রেলওয়ের ১৮শ কিলোমিটার ফাইবার মাটির নীচে অকেজো হয়ে পরে আছে। এরপর তিনি নরওয়ের টেলিনর, জাপানের মারুবিনি কর্পোরেশন এবং গ্রামীণ ব্যাঙ্ক এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে রাজি করিয়ে তাদের নিয়ে গ্রামীণ কনসোর্টিয়াম গড়ে তোলেন।
রেল কর্তৃপক্ষকে নানাভাবে প্রভাবিত করে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হলে রেলওয়ে ফাইবারের উন্নয়ন, সব ধরনের অপারেশন, টেলিকম ইউনিটের বেতন এবং তার বাইরে কিছু টাকা দেবার বিনিময়ে সেটিকে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হবে এসব শর্তে টেন্ডারে বিড করে নামমাত্র মূল্যে গ্রামীণ টেলিকম ও টেলিনর জয়লাভ করে। এরপর ১৯৯৭ সালের ২৬ মার্চ গ্রামীণফোন যাত্রা শুরু করে। গ্রামীনফোন এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে দ্রুত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করে। রেলওয়ের কক্ষে স্বল্প ভাড়ায় তাদের বেইস ট্রান্সরিসিভার ষ্টেশন (বিটিএস) স্থাপন করে। এভাবে গ্রামীনফোন দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক অর্জনে সক্ষম হয়। তবে ২০১৭ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্বেও এখনও গ্রামীণফোন কিভাবে সেই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে সেটি নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে।
বিভিন্ন স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের বর্তমানে মোট ২ হাজার ১০৫ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে। এর মধ্যে ১৬শ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক এককভাবে রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ব্যবহার করে আসছে গ্রামীণফোন। এটি নিয়ে আইনী জটিলতা রয়েছে বিধায় গ্রামীণফোন এটার কর্তৃত্ব ছাড়তে চাইছে না। এ জন্য রেলওয়ে ও গ্রামীণফোনকে ক্যাবল ব্যবহার-সংক্রান্ত চুক্তি সংশোধন করতে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এরপর ২০ বছরেরও বেশি সময় পরে আরও ৪০০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ইজারা দিতে পৃথক আরেকটি দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ে। সেই দরপত্র অনুযায়ী দেশের আরেক মোবাইল অপারেটর রবি বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪১২ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করার সুযোগ পায় এবং এর মাধ্যমে গ্রামীণফোনের একক আধিপত্বের অবসান ঘটে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, গ্রামীণফোন এবং রবি তারা যদি রেলওয়ের মালিকানাধীন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ফোর জি, ফাইভ জি চালু করে গ্রাহকদের দোরগোড়ায় যেতে পারে তবে কেন একই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে রেলওয়ে তার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারছেনা? কেন দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না কিংবা কেনই বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? রেল ক্রসিংগুলোকে কেনই বা সুরক্ষিত করা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না? আর কত দূর্ঘটনা কিংবা প্রাণহানী ঘটলে রেল কর্তাদের বোধোদয় হবে?
তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি এধরনের দূর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে রেলের বিন্দুমাত্র মাথাব্যাথা নেই। তাদের চিন্তা একটাই ট্রেনের বা রেলের ক্ষতি হয়েছে কিনা। রেল কর্তৃপক্ষের দাবী, ট্রেন চলাচলের সময় রেল লাইনের দুপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। এই সময়ে ট্রেনের সাথে যদি করো ধাক্কা লাগে, সে দায় তাকেই নিতে হবে। এ ঘটনার জন্য সান্ত্বনা কিংবা ক্ষতিপূরণের বদলে উল্টো ক্ষতিগ্রস্থদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও বলা আছে আইনে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ১৪৪ ধারার বিষয়টি তুলে ধরে জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোড়ন তোলে।
রেলমন্ত্রী যেভাবেই বলেন, দূর্ঘটনা ঘটলে তিনি কিছুতেই সেটির দায় এড়াতে পারেন না। শুধুমাত্র সাবধান সম্বলিত অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখে পার পাওয়া যাবে না। খোঁড়া যুক্তি দিয়ে পার পাওয়া গেলেও স্থায়ী কোন সমাধান আসছে না। পক্ষান্তরে এ ধরনের দূর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলছে। না জানি এভাবে আরও কতজন প্রাণ হারাবে, কতজনের বুক খালি হবে স্বজনহারা আর্তনাদে। দুর্ঘটনা পরবর্তী ট্রেনের ক্ষতিগ্রস্থ ইঞ্জিন-কোচ এবং শিডিউল বিপর্যয় এসব বিষয় নিয়েও ভাবতে হবে।
যেখানে রেল ব্যবস্থাপনা ও এই প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানীরা কামিয়ে নিচ্ছে হাজার-হাজার কোটি টাকা, আর রেল এই ফাইবার অপটিকের ব্যবহার ও এই সুবিধা নেয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। ভাবতে অবাক লাগে, মাঝে মাঝে রহস্যও মনে হয়। এর পিছনে অন্য কিছু নেই তো! যাতে এই প্রতিষ্ঠানকে পিছিয়ে রাখলে ব্যক্তিস্বার্থে অন্যভাবে লাভবান হওয়া যায়।
অন্য রকম ভাবার সুযোগ নেই। নিজের সক্ষমতা তুলে ধরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে ভালোবাসতে হবে, ভালোবাসতে হবে দেশের মানুষকে। বাংলাদেশের অনিঃশেষ সাহসী প্রধানমন্ত্রী গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেখিয়েছেন নিজেদের সক্ষমতায় কি করে স্বপ্ন পূরণ করতে হয়। আমরা পেরেছি, আমার বীরের জাতি-আমরা পারবো।
ডিজিটালের এই যুগে সরকারকে এখনই গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। ফাইবার অপটিক এর মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে কিভাবে জীবনকে আরও নিরাপদ ও সুরক্ষিত করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়। নিরাপদ রেল যোগাযোগ, জান মালের নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ফাইবার অপটিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে যদি এটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। মুল ভিত্তি তো রয়েছেই, দরকার শুধুই সদিচ্ছার।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
গ্রামীণফোন-রবি যেখানে লাভবান- রেল কেন পারছে না? জগলুল পাশা রুশো মত-দ্বিমত