বাকশালের শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম
১৪ আগস্ট ২০২২ ২১:৫৮
কোনো পরিবারের একটি শিশু যখন অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত হয়, তখন সেই শিশু বুঝে না কী কারণে সে অসুস্থ হয়েছে, সেই শিশুটি জানে না তার সুস্থতার জন্য কী ঔষধ প্রয়োজন, শিশুটি জানে না তার স্থায়ীভাবে ভালো থাকার জন্য অস্থায়ীভাবে কী করা প্রয়োজন, কতদিনই বা নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। তবে, শিশুটির অভিভাবক ঠিকই বুঝতে পারেন। শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য, সুস্থ সবল করে দাঁড় করানোর জন্য তখন সেই পিতামাতা তাকে জোর করে ঔষধ খাওয়ান। মিষ্টি নয়, তিক্ত ঔষধ। শিশুটিকে জোর করে নিয়ম মানান, স্বাভাবিক চলাফেরা, খেলাধূলা থেকে বিরত রাখান, যা মন চায় তা খেতে না দিয়ে রোগ নিরাময়ে প্রয়োজনীয় ও পরিমিত খাবার খাওয়ান। শিশুটির কষ্ট হয়, কষ্ট হলেও সে কিছু দিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠে। বাকশালকে বোঝার জন্য আমাদের প্রথমেই এরকম একটি অসুস্থ শিশুর কথা কল্পনা করতে হবে। ১৯৭১ সালে জন্ম নেওয়া মাত্র চার কিংবা পাঁচ বছর বয়সী একটি দূরন্ত শিশুরাষ্ট্র যে নানা ষড়যন্ত্র ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। অন্য কোনোভাবে চিন্তা করে সেই সময়ের বাকশালের প্রয়োজনীয়তা সহজে বোঝা সম্ভব নয়। আর তাই, বাকশাল ছিল শিশুরাষ্ট্রটির জন্মদাতা পিতা কর্তৃক তার রোগ নিরাময়ের তিক্ত ঔষধ। যে ঔষধটি সেই সময়ে গিলতে পারেনি বলেই আজও বাংলাদেশকে তার স্বাধীনতার পরিপূর্ণ সুফল পেতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
একজন স্বাধীন মানুষের ইচ্ছেমতো রাজনৈতিক দল করার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, কথা বলার অধিকার ইত্যাদি নানা অধিকার তখনই পূর্ণতা পায় যখন মানুষটির মৌলিক মানবাধিকার তথা খাদ্য, বস্তু, বাসস্থান ইত্যাদি নিশ্চিত হয়। একটি জাতির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মত মৌলিক অধিকারগুলো পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই যখন রং-বেরং এর নানা অধিকারের দাবী ওঠে তখনই আমাদের বোঝা উচিত ছিল এই দাবী গণমানুষের মৌলিক দাবী নয়, এই দাবী স্বাধীনতার মৌলিক উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের দাবী নয়, এই দাবী স্বার্থবাদী ষড়যন্ত্রকারী পরাজিতগোষ্ঠী কর্তৃক কৃত্রিম সৃষ্ট দাবী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্ত বুঝতে পেরেই বাকশাল গঠন করেছিলেন। প্রশ্ন হতে পারে– বাংলাদেশ কি সেই সময়ে আসলেই এরকম অসুস্থ শিশুর মতো ছিলো?
এর উত্তর জানার জন্য প্রথমত আমাদের জানা প্রয়োজন যে, ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তেইশ বছর ধরে হওয়া বহু যড়যন্ত্র প্রতিহত করে, বিশ্ব মোড়লদের রক্তচক্ষু, ভয়ভীতি প্রদর্শন উপেক্ষা করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। সপ্তম নৌবহরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছিল বাংলাদেশ। হেনরি কিসিঞ্জারের তাচ্ছিল্যকে প্রচন্ড ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিল বাংলাদেশ।
সেই বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানোর জন্য বা বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের তেইশ বছরের স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দেশ্যকে অযৌক্তিক, অবাস্তব ও অকার্যকর হিসেবে প্রমাণ করার জন্য পরাজিত শক্তি তখন মরণ কামড় দেয়। স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত শক্তি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একে একে সংকট সৃষ্টি করতে থাকে। তারা একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দেশে একটি দুর্ভিক্ষ ঘটায়, যাতে সরকারের প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ভিতরে থাকা এক শ্রেণীর অতি বিপ্লবীকে ব্যবহার করে দলের মধ্যে একটি ভাঙন সৃষ্টির প্রয়াস চালায়, যাতে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে যায়। তারা দেশের ভিতরে থাকা এক শ্রেণীর মতলববাজ ও স্বার্থান্বেষী জ্ঞানপাপীকে দিয়ে বাকশালের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠায় যে– সরকার ব্যর্থ, রাষ্ট্র ব্যর্থ, ভাত নাই, কাপড় নাই, থাকার ঘর নাই ইত্যাদি। এরকম নানা ছোট বড় ষড়যন্ত্র মিলে পুরো দেশকে তারা অস্থিতিশীল করে ফেলে এবং এই সুযোগে লুটতরাজ চালায়। খাবারের গুদামে আগুন দেয়, পাট গুদামে আগুন দেয়, জনপ্রতিনিধিদেরকে হত্যা করে, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি গঠন করে জনমনে বিভীষিকা সৃষ্টি করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে এই সুযোগ ওরা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। বঙ্গবন্ধু সব বুঝতে পেরে, নানা দেশের ইতিহাস, বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে আপন নেতৃত্বগুণ ও এদেশের মানুষের ভালোবাসাকে ভরসা করে বাকশাল গঠনের উদ্যোগ নেন।
বাকশাল বা বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার। যে সরকারে সব দল থাকবে, সব মত থাকবে, সব পথ থাকবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, কথা বলা বা সমালোচনার স্বাধীনতাও থাকবে, শুধু থাকবে না বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে বাঁধা হতে পারে এমন কোনো কিছু। এটিই ছিল বাকশালের সবচেয়ে বড় সত্য ও মৌলিক উদ্দেশ্য।
এখন প্রশ্ন হতে পারে- ঐ সময়ে বাকশালই কি একমাত্র বিকল্প ছিল? বাকশাল ছাড়া অন্য কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কি বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানো যেতো ঐ সময়ে? এর উত্তর জানার জন্য নিচের দুটি দেশের উন্নয়নের পেছনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আমাদের জানা প্রয়োজন।
একটি দেশ বা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কর্তৃক নির্ধারণ করে দেওয়া শাসনব্যবস্থাই যে একমাত্র পদ্ধতি নয় কিংবা আরো স্পষ্ট করে বললে ভৌগোলিক অবস্থান ও সেই অবস্থান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দেশের মানুষের মন, মেজাজ, চিন্তা, চেতনা, দীর্ঘ চর্চিত অভ্যাস, লালিত সংস্কৃতি বিবেচনায় না নিয়ে শুধুমাত্র পশ্চিমা কাঠামোর বহুদলীয় গনতন্ত্রই যে দেশ পরিচালনার একমাত্র পদ্ধতি হতে পারে না, তার উজ্জ্বল উদাহরণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া। আজকের সিঙ্গাপুর সারা বিশ্বে এশিয়ান টাইগার হিসেবে পরিচিত। তবে সিঙ্গাপুরের আজকের এই অবস্থানে আসার পিছনের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের অনেকেরই অজানা। ১৯৬৩ সালে নির্বাচনী ব্যবস্থা শুরু হওয়ার পর থেকেই সিঙ্গাপুরে একটিমাত্র রাজনৈতিক দলই প্রতিবার নির্বাচিত হয়ে আসছে, তারা হলো পিপলস অ্যাকশন পার্টি। দলটি শুরুতে মধ্য-বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল হিসেবে শুরু করলেও অচিরেই মালয়েশিয়ার সাথে বিযুক্তির জের ধরে দলটি থেকে বামপন্থী অংশ আলাদা হয়ে পরে। পশ্চিমা ধরণে আগে বাকস্বাধীনতাসহ অন্যান্য আদর্শ বাস্তবায়নের চেয়ে সিঙ্গপুর চেষ্টা করে কীভাবে তাদের দেশের ও দেশের মানুষের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র পঞ্চাশ বছর আগে সিঙ্গাপুরের কথা কল্পনা করলে মাথায় আসবে কয়েকটি জেলে বসতি ও মাছ ধরার নৌকা আর এখন এই অল্প সময়েই দেশটির পরিচিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে মেরিনা বে স্যান্ডসসহ আরও কিছু মেগা স্থাপনার জন্য। সিঙ্গাপুর তার উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রথমেই চেষ্টা করে তার বিশেষ ভৌগোলিক অবস্থান কাজে লাগাতে। প্রশান্ত মহাসাগর, ভারত সাগর ও দক্ষিণ চায়না সাগরের মিলনকেন্দ্র হওয়ায় সিঙ্গাপুর গড়ে তোলে এক বিশেষায়িত নৌ-পরিবহন কেন্দ্রিক অর্থনীতি। সিঙ্গাপুর নিজের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজায় উদ্যোক্তা সহযোগী অর্থনীতি হিসেবে। যার ফলে ব্যাংকিং, প্রযুক্তি ও ট্যুরিজম কেন্দ্রিক নতুন-নতুন সব ভেনচার গড়ে উঠে সিঙ্গাপুরে। বর্তমানেও সিঙ্গাপুর সর্বশেষ প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৩৯ নম্বরে আছে। তবে তাতে তার সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন থেমে থাকেনি। একের পর এক চ্যালেঞ্জিং প্রোজেক্ট নেওয়ার মাধ্যমে সফলভাবে মোকাবিলা করেছে অতিরিক্ত ট্রাফিক, সুপেয় পানি স্বল্পতা ও আবাসন সংকটের মতো বড় বড় সব সমস্যা।
প্রায় একই কথা ও উদাহরণ প্রযোজ্য মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন হতে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে মালয়শিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে রাজনৈতিক জোট বারিসান ন্যাশনাল (বিএন)। ৬০ বছরের অধিক সময় ধরে এই জোট মালয়েশিয়াকে শাসন করছে। মাহাথির মোহাম্মদ, যাকে পুরো পৃথিবীর মানুষ জানে আধুনিক ও উন্নত মালয়েশিয়ার জনক হিসেবে, সেই মাহাথির মোহাম্মদও এই জোটেরই অংশ ছিলেন। ক্ষমতায়ও এসেছিলেন, ছিলেন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক মনে করা হয় তাকে। অথচ এই মাহাথির মোহাম্মদের যাত্রাপথটি মোটেও মসৃণ ছিল না। তার সময়ে হওয়া আকাশছোঁয়া উন্নয়ন সমালোচনার বাইরে ছিল না, সমালোচনার বাইরে ছিল না ব্যক্তি মাহাথির মোহাম্মদের শাসননীতিও। মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা নব্বইয়ের দশক সম্পর্কে মনে করেন, সেসময় সরকার যখন কিছু বৈপ্লবিক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে; তখন রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিস্বার্থ বিবেচনায় সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষমতাশীল দল ও ক্ষমতাশীল রাজনৈতিক জোটের সমর্থকসহ সব রাজনৈতিক দলের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়। এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, স্বজনপ্রীতি এবং তহবিল আত্মসাৎ- এসবের সুযোগ সৃষ্টি করে। ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি সৃষ্টি হতে থাকে ব্যাপক অর্থনৈতিক বৈষম্য।
মাহাথিরের সময়ের উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি যুক্ত ছিল, কথাটি সত্য। মাহাথির সর্বদাই চেয়েছেন মালয়েশিয়াকে রাষ্ট্র হিসেবে দ্রুত একটি সম্মানজনক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে যেতে। তিনি সে জন্য সবসময় যোগ্য লোকদের খুঁজে নিয়েছেন। তিনি ১৯৮৪ সালে দাইম জয়নুদ্দিনকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। তিনি দাইমের কর্মদক্ষতা সম্পর্কে জানতেন। দাইম মাহাথিরের ভগ্নিপতির বন্ধু ছিলেন। ফলে মাহাথির দাইমকে অর্থমন্ত্রী করে স্বজনপ্রীতি করেছেন, এ রকম অভিযোগও ছিল এবং মাহাথির মোহাম্মদ কখনোই এগুলোকে অস্বীকার করবেন না, কারণ এসব কিছুর একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল মালয়েশিয়ার উন্নয়ন।
উপরে দুটি দেশ বৈশ্বিক মানচিত্রে আমাদের কাছাকাছি হওয়ায় এবং বাংলাদেশের মানুষ এই দুটি দেশ সম্পর্কে বললে অপেক্ষাকৃত সহজে বুঝবে বলেই এদের উদাহরণ দেওয়া। কিন্তু পৃথিবীর প্রায় সব দেশই তাদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য নিজেদের মত করে, নিজেদের মন-মেজাজ, চিন্তা-চেতনা, দীর্ঘচর্চিত অভ্যাস ও ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে একটি শাসনব্যস্থার মধ্য দিয়ে গিয়ে উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারেনি? উত্তর একটাই- আমরাই হতে দেইনি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এবং বাকশালকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে না দেওয়ার মাধ্যমে আমরা বহু আগেই আমাদের দ্রুত ও টেকসই উন্নয়নের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিলাম। এই ভূখন্ডের অনেকের একজন প্রেমিক বা প্রেমিকাকে বেশিদিন ভালো না লাগার মতোই, উল্লেখ করার মতো কারণ ছাড়াই এক সরকারকেও বেশি দিন ভালো না লাগার অভ্যাস আছে।
আমার এই লেখাটি মূলত সবার জন্য নয়। লেখাটি যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের তাদের জন্য। বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক তাদের জন্য। কেন তাদের জন্য? কেন সবার জন্য নয়? কারণ, যারা স্বাধীনতা বিরোধী, স্বাধীন বাংলাদেশের ধারণা বিরোধী তারা জেগে থেকেও ঘুমানোর অভিনয় করা ব্যক্তির মতো কোনোদিনই এটা বুঝবে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মী, সমর্থক এমনকি বড় বড় নেতাদেরকেও দেখি বাকশাল নিয়ে কথা বলতে একটু ইতস্তত বোধ করেন। তাদের ভাব দেখে মনে হবে হয় তারা মুর্খ, না হয় তারাও মনে করেন বাকশাল একটি অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল। এটি দুঃখজনক। আওয়ামী লীগ তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষের সবার উচিত বাকশাল সম্পর্কে জানা, সুস্পষ্ট ধারণা রাখা। আজ ১৫ই আগষ্ট। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের মিছিলে স্লোগান হবে, ‘জাতির পিতা শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’, ‘জুলিও কুরির শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’, ‘৬ দফার শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম’ ইত্যাদি। অর্থাৎ, আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন সময়ের সাহসী পদক্ষেপ ও অর্জনগুলোকে গ্লোরিফাই করে এসব স্লোগান দিই। কিন্তু যে সাহসী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতো, যে সাহসী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার সময়কে সুযোগ হিসেবে নিয়ে পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলো, সেই অসীম সাহসী পদক্ষেপ ‘বাকশাল’ এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সবাই জানলে হয়তো আমরা এই স্লোগানও দিতাম যে- ‘বাকশালের শেখ মুজিব, লও লও লও সালাম।’
লেখক: সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ; সাবেক সভাপতি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
এস. এম রাকিব সিরাজী বাকশালের শেখ মুজিব- লও লও লও সালাম মত-দ্বিমত