প্রথম সামরিক শাসক ও তার রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী খতিয়ান
২৫ আগস্ট ২০২২ ১৩:৫১
গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য দু’টি বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বলেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের বিশেষ করে প্রধানতম রাজনেতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তরিকভাবে প্রত্যাশিত এবং আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলকে অংশগ্রহণ করার জন্য তাদের আন্তরিক আহ্বান শেষ পর্যন্ত বহাল থাকবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর, তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন তাদের মতামতে একথা জানিয়েছে। গত সোমবার ২২ আগস্ট ২০২২ তারিখে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত লিখিত মতামতে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশন কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করতে পারে না এবং সে ধরনের কোনো প্রয়াস নির্বাচন কমিশন গ্রহণ করবে না। কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ৯টি দল নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেয়নি। দুটি দলকে আবেদনের ভিত্তিতে আগামী সেপ্টেম্বরে সংলাপে অংশগ্রহণের জন্য সময় দিয়ে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। এখন বিএনপি যেভাবে চায় সেইভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দৃশ্যত: অনড় অবস্থানে আছে। কিন্তু অতীতে দলটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তথা নির্বাচনের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি কীভাবে ধ্বংস করেছে সেই সব কর্মকান্ডের সাথে তাদের বর্তমান বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অসামঞ্জস্য। বর্তমান লেখায় বিশেষত সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপি’র ক্রিয়া-প্রতিক্রয়ার পাশাপাশি, প্রহসন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে দেশের প্রথম সামরিক প্রশাসক এবং বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং পারবর্তীতে তার বিধবা স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের নির্বাচনী খতিয়ান অতি-সংক্ষেপে অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
‘আমি কোনমতে সাইন করে জীবন বাঁচালাম’—
১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বন্দুকের মুখে বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন! যদিও পদত্যাগপত্রে শারীরিক অসুস্থতার কথা লেখা ছিল। ‘অ্যাট বঙ্গভবন : লাস্ট ফেইজ’ শীর্ষক গ্রন্থে বিচারপতি সায়েম তার পদত্যাগ সম্পর্কিত কাহিনী বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। এই বই থেকে অনেক অজানা ইতিহাস জানা যায় যা দীর্ঘদিন ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল বিএনপি। বইটি থেকে আরও জানা যায়, রাষ্ট্রপতি সায়েমের একটাই দুঃখ ছিল যে, তিনি বাংলাদেশের নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে যেতে পারেননি। বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, ‘জিয়া বঙ্গভবনে আসতেন মধ্যরাতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে। তার সাঙ্গপাঙ্গরা অস্ত্র উঁচিয়ে রাখতো।. . .আমি প্রায়ই মনে করতাম এটাই বোধ হয় আমার শেষ রাত।’
একদিন ‘রাত ১১টায় বুটের শব্দে আমার ঘুম ভাঙে। সেনাপ্রধান জিয়া অস্ত্রশস্ত্রসহ বঙ্গভবনে আমার শয়নকক্ষে প্রবেশ করেন। জিয়াউর রহমান আমার বিছানায় তার বুটসহ পা তুলে দিয়ে বলেন, সাইন ইট। তার একহাতে ছিল স্টিক, অন্য হাতে রিভলবার। আমি কাগজটা পড়লাম। আমার পদত্যাগপত্র। যাতে লেখা- ‘অসুস্থতার কারণে আমি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।’ আমি জিয়াউর রহমানের দিকে তাকালাম। ততক্ষণে আট দশজন অস্ত্রধারী আমার বিছানার চারপাশে অস্ত্র উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জিয়া আবার আমার বিছানায় পা তুলে আমার বুকের সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে বললেন, ‘সাইন ইট’। আমি কোনমতে সই করে বাঁচলাম।
অভূতপূর্ব মহাকারচুপির ‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট—
১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জেনারেল জিয়া তার শাসনকে বেসামরিক করতে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দক্ষিণপন্থীদের সাথে নিয়ে একদিকে রাজনৈতিক বিরোধিতাকে দুর্বল করা এবং অন্যদিকে তার ক্ষমতার বৈধতা আদায়ের জন্য জিয়া ১৯৭৭ সালের মে মাসে ‘হ্যা’ ‘না’ ভোট বা রেফারেন্ডাম/গণভোটের আয়োজন করে।
রেফারেন্ডামে ভোটার উপস্থিতি ছিল ২ শতাংশের নীচে, কিন্তু ভোটার উপস্থিতি দেখানো হয় শতকরা ৮৮ শতাংশ। ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি না থাকার কারণে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং এবং পোলিং অফিসারেরা জিয়ার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেয়ার দায়িত্ব পালন করেন। দেখানো এই প্রদত্ত ভোটের মধ্যে জিয়ার পক্ষে দেখানো হয় ৯৯.৮ শতাংশ ‘হ্যাঁ’- যা ছিল সম্পূর্ণরূপে অসম্ভব ও অবাস্তব।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং আর্মি অ্যাক্ট ভঙ্গ—
বাংলাদেশ আর্মি অ্যাক্টের ২৯২ এবং ২৯৩ বিধিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, সামরিক বাহিনীর কোনো সদস্য তার নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। কিন্তু চাকরিরত অবস্থায় ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট থেকে জেনারেল জিয়া প্রার্থী হয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অধ্যাদেশ ১৯৭৮ অনুযায়ী, কোনো সরকারি চাকরিজীবী ও সরকারি বেতন গ্রহীতার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হবার সুযোগ ছিল না। কিন্তু জিয়া আইন ভঙ্গ করে জোরপূর্বক রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হলে আর্মি, পুলিশ ও সরকারি চাকরিজীবীরা ন্যক্কারজনকভাবে জিয়ার পক্ষ অবলম্বন করে। প্রকাশ্য ও গোপন কারচুপির মাধ্যমে তিনি বিজয়ী হন।
দালাল আইন বাতিল—
জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বাহাত্তর সালে প্রবর্তিত দালাল আইন বাতিল করে ১১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ত্যাগ করে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব গ্রহণকারীদেরও ১৯৭৬ সালের ১৮ জানুয়ারি দেশের প্রথম সামরিক শাসক বাংলাদেশী নাগরিকত্ব ফেরত পাবার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলেন। অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী দেশের প্রথম সামরিক শাসক তার সেকেন্ড প্রক্লামেশন জারির মাধ্যমে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত করে দালালদের ভোটার হবার সুযোগ দেন। এসময়েই সামরিক আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি দমনের কাজ পুরোমাত্রায় চলমান ছিল।
সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী জেনারেল জিয়া—
১৯৭৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়া এক ফরমান জারির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে সব ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির নামে নিজের হাতে কুক্ষিগত করেন। জিয়া একাধারে রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং সেনাবাহিনীর ষ্টাফ প্রদানের পদে থেকে ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ঘোষণা দেন।
কারচুপির দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন—
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণে এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও দুর্নীতি হয়। বিএনপির গুন্ডাবাহিনী ঢালাও হুমকি ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে। ব্যবহার করা হয় সেনাবাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের। ক্ষমতার অপব্যবহার করে মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলাম, পিডিবি এবং নেজামে ইসলামের যুদ্ধাপরাধীদের সমন্বয়ে গড়া সম্পূর্ণ নতুন জোট ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক লীগকে দেয়া হয় ২০টি আসন। ভোট ডাকাতি ও মিডিয়া ক্যু’র মাধ্যমে জিয়া নিজের দল বিএনপি-কে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে ২০৭টি আসনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিএনপির মনোনয়নে বিপুল সংখ্যক দালাল ও স্বাধীনতা বিরোধীকে বিজয়ী করে জাতীয় সংসদে আনা হয়।
কলঙ্কিত মাগুরা-২ উপনির্বাচন—
এরশাদের নেতৃত্বাধীন স্বৈরাচারী শাসনের পতনের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠানিকীকরণের যুগে ১৯৯৪ সালের ২০ মার্চ মাগুরা-২ উপনির্বাচন কারচুপির নির্বাচনের প্রতীক হয়ে ওঠে। সেখানে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ব্যালট বাক্স ভর্তি ও ছিনতাই এবং ভোটারদের ভয় দেখানোর মতো ঘটনা ঘটেছিল, যারা বিজয় নিশ্চিত করার জন্য তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি নেতারা ছিল। আওয়ামী লীগের সদস্যের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। বিরোধী দল আওয়ামী লীগ কারচুপির নির্বাচনী ফলাফল সাথে সাথে প্রত্যাখ্যান করে এবং নতুন নির্বাচনের দাবী জানায়। ২৩ মার্চ সারাদেশে আওয়ামী লীগের ডাকে হরতাল পালিত হয়। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন, ‘বিএনপির ভোট ডাকাতদের নিয়ে সংসদে বসব কিনা তা আমাদের ভাবতে হবে।’ বিরোধী দলের অভিযোগ যথারীতি বিএনপি অস্বীকার করে। জনরোষের তোয়াক্কা না করে ২৮ মার্চ, ১৯৯৪ নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মাগুরা-২ উপনির্ভাচনকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর উপনির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে মাগুরায় যাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ নির্বাচনের আগের দিন হঠাৎ করেই নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেন। ঢাকায় ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এবিষয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করে পরে বিবৃতি দেবেন। তবে, কেন তিনি মাগুরা ছেড়েছিলেন তা কখনো প্রকাশ করেননি।
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন সহিংস একদলীয় ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন—
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে নির্বাচন কলুষিত করার অন্যতম কলঙ্কজনক উদাহরণ হচ্ছে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন। নব্বই-য়ের এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ক্রান্তিকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেশে যখন গণতন্ত্র সংহতকরণ বা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ প্রক্রিয়া চলমান ছিল সেই অবস্থায় বিএনপি সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করে গণতন্ত্র সংহতকরণ প্রক্রিয়াকে বিপজ্জনকভাবে বাঁধাগ্রস্ত করে। নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলেছেন প্রায় ৫০টি অস্পষ্ট রাজনৈতিক দল, যাদের মধ্যে অনেকগুলো ছোট এবং স্বল্প পরিচিত সমর্থনসহ, ক্ষমতাসীন বিএনপি’র সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করবে। এসব প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীরা, একটি বেকার রাজনৈতিক দলের নেতা, এবং আরও একটি রাজনৈতিক দল যারা নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বিরোধীতা করে তারা। সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করেছিল। হিংসাশ্রয়ী সন্ত্রাস, অবৈধভাবে ব্যালট ছিনতাই করে ভোট বাক্স ভরিয়ে দিয়েছিল। এই নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল খুবই কম। সহিংসতা, ব্যালট স্টাফিং, জালিয়াতির অভিযোগ এবং দুর্বল অংশগ্রহণে পরিপূর্ন ছিল। আন্দোলনের মুখে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে গঠিত সরকার ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়।
২০০১-এর তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে কারচুপি এবং সহিংসতা—
বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসাবে গণ্য করা হয়। নির্বাচনের সময় এবং পরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হয়। এসময় জঙ্গি সংগঠনের ব্যাপক উত্থান এবং তাদের তৎপরতা বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সময়ে, তারেক রহমানের হাওয়া ভবন জেএমবি এবং হুজি-বিকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছিল। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মতে, যারা তারেকের সহযোগী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সাথে ২০০৫ সালে কথা বলেছিল। ২১ আগস্টের নৃশংসতার ধারাবাহিকতায়, পাঁচ মাস পর ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি আবারও দৃস্কুতীরা হামলা চালায়, হবিগঞ্জের বৈদ্যের বাজারে এক সমাবেশে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াসহ আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা-কর্মীকে হত্যা এবং ৭০ জনেরও বেশি আহত হয়। পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, হত্যার রাজনীতির মাধ্যমে জন্ম নেয়া বিএনপির হত্যা ও প্রতিহিংসার রাজনীতির ভয়াল নজির হচ্ছে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা। বিএনপি ও তাদের দোসরেরা, জামায়াত, জঙ্গিগোষ্ঠী যদি রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়ায়, তাহলে এই অপরাজনীতি বন্ধ হবে না।
উপসংহার—
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র এবং নির্বাচন বলে আন্দোলনের নিস্ফল হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। নির্বাচনী লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ক্ষমতার স্বাদ ভক্ষণ করতে পারছে না। যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবেন না বলে পণ করে বসে আছেন। এমনকি তাদের পক্ষের কিছু বর্ণচোরা নি¤œমানের সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী আওয়ামী রাজনীতির সুবিধা নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গুনগাণ করে এর অধীনে নির্বাচনের জন্য হা-পিত্যেস করছেন তাদের সেই বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা দেশের যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল ২১ আগস্ট তার মাত্র একটি জঘন্যতম উদাহরণ। এমতাবস্থায় আইন অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া অব্যাহত এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই সামরিক একনায়ক কর্তৃক সূচিত অপকীর্তির নির্বাচনের কারচুপির ধারা থামিয়ে দেয়া সম্ভব।
লেখক: সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অরুণ কুমার গোস্বামী প্রথম সামরিক শাসক ও তার রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী খতিয়ান মত-দ্বিমত