Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপির ভারত জুজু

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৫৩

মুখে ভারত বিরোধী অন্তরে ভারত প্রীতি এই হল বিএনপির মূল নীতি। ক্ষমতায় থাকতে ভারতের সাথে এক আচরণ আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে ভারতের সাথে আরেক আচরণ। ভারত নিয়ে বিএনপি’র এই দ্বিমুখী নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষের কাছেও তারা হাসির পাত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। উপরে উপরে ভারত বিরোধী কিন্তু বিএনপি’র কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা ক্ষমতার জন্য ভারতের সাথে যেকোনো ধরনের ন্যায্য অন্যায্য বা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্টতার জন্য গোপনে গোপনে ভারতের কাছে দ্বারস্ত হয়। শোনা যায় দলে তাদের ভারত লবি নেতা আছে যারা ভারতের সাথে বিএনপির ব্যাপারে সবসময় যোগাযোগ রাখে বা ভারতের সাথে বিএনপি’র সখ্যতা রাখতে সব সময় কাজ করে। কিন্তু কথাবার্তায় তারা এমন ভাব দেখায় যে তারা খুবই ভারত বিরোধী একটি দল। এটা বাংলাদেশের এক ধরনের মানুষের ধর্মীয় সম্প্রদায়িক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ যার নেতৃত্ব দেয় বিএনপি। ক্ষমতায় থাকতে বা ক্ষমতায় যেতে বিএনপি তলে তলে ভারতের সাথে এমন কোন দেন দরবার নাই যা করে না। কিন্তু প্রকাশ্য জনসভায় তারা বাংলাদেশের মানুষের সেন্টিমেন্টকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ভারত বিরোধী কথাবার্তা বলে থাকে। যা বিএনপি’র নেতিবাচক রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।

অন্যদিকে বিএনপি ও তার সহযোগী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আওয়ামীলীগকে ভারতের খুবই কাছের বন্ধু বা ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে সব সময় চিত্রিত করার চেষ্টা করে। তারা সব সময় বোঝাতে চায় আওয়ামী লীগের ভারত প্রীতি বেশি বিএনপির ভারত প্রীতি কম। আওয়ামী লীগ ভারতের উপর অনেকটা নির্ভর করে বা ভারত আওয়ামী লীগের উপর অনেকটা নির্ভর করে এটাই বিএনপির মনোভাব। অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বা ক্ষমতার বাইরে থাকলেও ভারতের সাথে গোপনে গোপনে গভীর সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব প্রত্যাশা করে। কিন্তু প্রকাশ্যে চলনে বলনে কথাবার্তায় বোঝাতে চায় যে তারা খুবই ভারত বিরোধী। আওয়ামী লীগকে যদি ভারতবর্ষের সরকার বা কোন দল সহযোগিতার মনোভাব দেখায় সে ক্ষেত্রে বিএনপি তখন ভারতের দালাল বা ভারতের দাস এরকম নানান বাক্যে তাদের বিদ্ধ করে। আবার ভারতের কাছ থেকে যদি কোন ধরনের বৈরী আচরণ দেখতে পায় তাহলেও উল্লসিত হয়। যে কারণে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসলে খুশিতে গদ গদ হয়। অন্যদিকে আচরণে বিএনপি ভারত বিরোধী ভাব দেখালেও ভারতের কৃপা পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকে। আর সব সময় ব্যস্ত থাকে কিভাবে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নষ্ট করা যায় বা ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক নষ্ট করা যায়।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সাথে ভারত- বাংলাদেশের বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার পরে যে সব সময় ভারত খুব প্রত্যাশিত বন্ধুত্বপূর্ণ অচরণ করেছে তা কিন্তু নয়। ভারতে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন সরকারের আমলে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলদেশের সাথে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য দাবি তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত বাংলাদেশের সাথে খুব বেশি ভালো আচরণ করছে তা কেউই বলবে না। এ ছাড়াও ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৃহৎ এই প্রতিবেশীর সাথে বাংলাদেশের মানুষের কিছু মন কষাকষি আছে। যা দুই দেশের সরকারের যৌথ ও কার্যকর প্রয়াসে সমাধান হওয়া উচিত। দুইটি ভিন্ন স্বাধীন প্রতিবেশি দেশ হিসেবে পারস্পরিক মর্যাদা ও সৌহার্দ্য নিয়ে চলবে এটাই সবার প্রত্যাশা । কেউ কারো উপর কোন খবরদারি বা কর্তৃত্ব দেখাবে না। উভয়ই উভয়ের বন্ধু হিসেবে কাজ করবে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক সফরের সময় বিএনপি যেন নতুন করে জেগে উঠে। এই সময় তারা আওয়ামী লীগকে বা সরকারকে নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকে, অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। তারা তখন এমন নীচে নেমে যায় যে বিমান বন্দরে কোন দেশ কাকে কিভাবে প্রোটোকল দিবে তা নিয়েও নিম্নমানের অপপ্রচার করে। এমন না যে তারা এসব জানে না। বার বার ক্ষমতায় থাকায় তারাও জানে এসব প্রটোকল বিষয়ে। রীতিনীতি ভেঙে যদি ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানায় সেখানেও বিএনপি ভারতের বন্ধুত্ব বা ভারত প্রীতি দেখে জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়। আবার তাদের সব সময়ের প্রোটোকল অনুযায়ী অভ্যর্থনা জানালেও তা নিয়ে নিম্নমানের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়। একটি দেশে থেকে আরেকটি দেশে উচ্চ পর্যায়ের সফরে সব সময় চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলানো যায় না। তাছাড়া বাংলাদেশ তো স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ। পারষ্পরিক সম্পর্কে নিজ নিজ দেশ তার মর্যাদা নিয়েই চলবে। এখানে কাউকে কেউ কোন করুনা দেখাতে পারে না। কোন অমীমাংসিত বা ন্যায্য কোন বিষয় থাকলে সেটাও দুই দেশের উচ্চ পর্যায় থেকে সম্মানজনক পন্থায় মীমাংসা করতে হবে। কাউকে ছোট বা বড় করে নয়। আত্নমর্যাদশালী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তো কারো মুখাপেক্ষী না। এখানে তো চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলালে চলবে না। যে বিষয়ে বিএনপি সব সময় নিন্মমানের পচার প্রচারণা চালায়। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ভারতের কাছে বাংলাদেশের ন্যায্য পাওনা চাইতে ভুলে যায়!

আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের বা বর্তমান সরকারের ভালো সম্পর্ক দেখলে বিএনপি বেজার। চীনের সাথে ভালো সম্পর্ক দেখলে এই দলটির খুব মন খারাপ। সৌদি আরব বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে শেখ হাসিনার সরকারের ভালো সম্পর্ক থাকলে বিএনপি যারপর নাই অখুশি। আর এসব দেশের সাথে কোন কারণে যদি দেখে সম্পর্কের একটু অবনতি তাহলে তাদের খুশি দেখে কে? আর ভারতের সাথে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক ভালো হলে দালাল আর খারাপ হলে ধরে ন্যায় এই বুঝি সরকার পরে গেল, আর বিএনপি ক্ষমতায় এলো। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ বা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বর্তমান সরকারের সম্পর্ক পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ এখন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় ও বিগত প্রায় দেড় দশকের অর্থনৈতিক উন্নতিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অনেক দেশের কাছেই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। আর শেখ হাসিনা জাতির পিতার কন্যা হিসেবে এবং দীর্ঘ সময়ের একজন অভিজ্ঞ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে এবং প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশের কাছেই পূজনীয়, বরণীয়। এটা তাঁর নিজের অর্জন। এটা তার দীর্ঘদিনের সংগ্রাম, ত্যাগ, দেশপ্রেম,সততা,নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা ও অভিজ্ঞতার ফসল। শেখ হাসিনা আজ বিশ্বের কর্মক্ষম অভিজ্ঞ নেতাদের মধ্যে উচ্চতম স্থানে। টানা চার দশকের বেশি সময় ধরে যিনি বিরাট একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এর প্রায় অর্ধেক সময় ধরে সেই দলের হয়ে সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই চার দশকের বেশি সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতি তিনি নিবিড়ভাবে দেখেছেন। তার চেয়ে অভিজ্ঞ ক্ষমতাসীন নেতা হয়তো বিশ্বে একাধিক নেই। তাই সব গুরুত্বপূর্ণ দেশের কাছে শেখ হাসিনার আলাদা মর্যাদা ও সম্মান। যা বাংলাদেশকেই সম্মানিত করে। ক্ষমতার ঘোরটপে হয়তো তা অনেকেরই সহ্য হয় না।

তাই নির্বাচনের আগে বিএনপির চিরাচরিত অভ্যাস সেই জুজুর ভয় ভারতকে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে বা চালাবে। এরা মুখে ভারতের বিরোধিতা করবে আবার ক্ষমতায় যেতে ভারতের কৃপা লাভে অস্থির হয়ে উঠবে। এরা নির্বাচনের আগে উপরে উপরে ভারতবিরোধী ট্রাম্প খেলবে ও তলে তলে ভারতের সাথে মহব্বত মহব্বত সম্পর্ক গড়ে তুলবে। তারা এখন দিনরাত বিদেশি দূতাবাসের বারান্দায় ঘোরাফেরা করবে। এদের এই ডাবল স্ট্যান্ড অবস্থা বাংলাদেশের জনগণ ইতিমধ্যেই বুঝে ফেলেছে। দেশের মানুষ এও বুঝেছে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে আমেরিকার মোসাহেবি করবে,ভারতের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে নির্লজ্জ আচরণ করবে। তখন আর এরা দেশের কথা ভাবে না, এরা তখন ক্ষমতায় যেতে উতলা হয়ে উঠে, পাগল হয়ে যায়। তখন ক্ষমতাই হয়ে উঠে আসল কাজ, দেশের মান মর্যাদার কথা বেমালুম ভুলে যায়। আর এজন্য বিএনপির প্রায় ডজনখানেক টাকাওয়ালা নেতা আছে যারা দেশের মানুষের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে না পেরে নিজেরা আন্দোলনের মাঠে না থেকে বড় বড় দামি হোটেলে স্যুট টাই, শাড়ি শুড়ি পরে বিদেশি দূতাবাসের হর্তাকর্তাদের সাথে নির্লজ্জ লবিংয়ে ব্যস্ত থাকে আর সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। আবার এদেরই টাকায় দেশ থেকে বিতাড়িত আরেক গ্রুপ ধারাবাহিক ভাবে বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে অনবরত মিথ্যাচার করে। অতএব শেখ হাসিনা ভারত গেলেও অপপ্রচার করবে, না গেলেও করবে। আমেরিকা গেলেও করবে না গেলেও করবে। চীন, যুক্তরাজ্য বা রাশিয়া গেলেও তারা এখন অপপ্রচার করবে। তারা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে করতে কখন যে দেশের বিরুদ্ধেও অপপ্রচার করে সেই হুশও তাদের থাকে না। এটা হয়তো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত জোরেশোরেই চলবে।

লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

বিএনপির ভারত জুজু মত-দ্বিমত মো. আসাদ উল্লাহ তুষার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর