পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলাম!
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:০৬
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় বলেছেন,‘পাকিস্তান সরকার থেকে বর্তমান সরকার আরো নিকৃষ্ট। আমরা পাকিস্তান আমলে আর্থিক ও জীবনযাত্রার দিক থেকে এর চেয়ে ভালো ছিলাম। তার পরও পাকিস্তান সরকার যেহেতু আমার অধিকার ও সম্পদ হরণ করত, সে কারণে আমরা যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এখন তার থেকেও খারাপ অবস্থায় আমরা আছি।’ ১৫ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
ঠিক সেদিনই পত্রপত্রিকায় আরেকটি খবর সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। খবরটি হলো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মুসলিম লীগ নেতা শেহবাজ শরীফের। তিনি বলেছেন, পঁচাত্তর বছর ধরে ভিক্ষার বাটি নিয়ে ঘুরছি। স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। আর বন্যার আগে থেকেই অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অর্থনীতির একটি হতাশাজনক চিত্র উপস্থাপন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, বন্ধুপ্রতীম দেশগুলো পাকিস্তানকে এমন একটি দেশ হিসাবে দেখতে শুরু করেছে যেটি (পাকিস্তান) সর্বদা অর্থ চাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার আইনজীবীদের এক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজ যখন আমরা কোনো বন্ধুত্বপূর্ণ দেশে যাই বা ফোন করি, তখন তারা মনে করে যে আমরা (তাদের কাছে) টাকা ভিক্ষা করতে এসেছি।’
শেহবাজ শরিফ বলেন, এমনকি ছোট অর্থনীতির দেশও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে এবং ‘আমরা গত ৭৫ বছর ধরে ভিক্ষার বাটি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি’। এই অঞ্চলে এমন দেশও রয়েছে যাদের জিডিপি পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম থাকলেও বর্তমানে তারা রপ্তানির দিক থেকে (পাকিস্তানের চেয়ে) অনেক এগিয়ে গেছে বলেও আইনজীবীদের জানান তিনি। শেহবাজ প্রশ্ন করেন, ৭৫ বছর পর পাকিস্তান আজ কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? এটি খুব পীড়াদায়ক প্রশ্ন … আমরা সর্বদা একটি বৃত্তের মধ্যে ঘুরছি।
ফখরুল সাহেবরা যখন পাকিস্তানের সাথে ছিলেন তখন এখনকার বাংলাদেশ থেকে ভালো ছিলেন বলেছেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের খোদ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমরা পঁচাত্তর বছর ধরে ভিক্ষার বাটি নিয়ে ঘুরছি। এই পঁচাত্তর বছরের মধ্যে তো ফখরুল সাহেবদের বেহেস্তী পঁচিশ বছরও ছিলো। যদিও বাংলাদেশের সকল মানুষই জানে পাকিস্তানি ঔপনিবেশ আমলে এই অঞ্চলের মানুষ কেমন ভালো ছিলো? ফখরুল সাহেবরা পাকিস্তান আমলে কেমন ভালো ছিলেন তার জবাব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিজেই দিয়েছেন। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কোন নেতা বা মন্ত্রী একথা বলেননি। তাহলে কার কথা ঠিক? একটি দেশের খোদ প্রধানমন্ত্রীই তার দেশের অর্থনীতির দুর্দশার কথা যখন অকপটে স্বীকার করে নেন তখন ফখরুল সাহেবদের ভালো থাকা নিয়ে আর কিইবা প্রশ্ন করা যায়! কিন্তু ফকরুল সাহেবদের কথাও ঠিক। কারণ ফখরুল সাহেবরা পাকিস্তান আমলে ভালই ছিলেন। ফখরুল সাহেবদের বাপ চাচারা বা তাদের মত আরো কিছু মুসলিম লীগ পরিবার ওই সময়ে ভালোই ছিল। ফখরুল সাহেবদের পরিবার বা কাজী কাদের,গমির উদ্দিন প্রধান,ফকা চৌধুরী,সবুর খান,চোর মতিন,আয়েন উদ্দিন,নুরুল আমিনদের মত এরকম কয়েকটি বা কয়েকশ পরিবার পাকিস্তান আমলে খুব ভালো ছিলো একথা সবাই জানে। যে কারণেই তাদের বাপ চাচার পেয়ারে পাকিস্তানকে লালকার্ড দেখিয়ে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্ন ত্যাগের বিনিময়ে এই স্বাধীন বাংলাদেশ। যা কিনা এখন ফখরুল সাহেবদের গাত্রদাহের কারণ!
যেখানে খোদ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন পঁচাত্তর বছর ধরে পাকিস্তান ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বিভিন্ন দেশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন,সেখানে ফখরুল সাহেব যখন বলেন পাকিস্তান আমলেই ভালো ছিলাম তখন তার কথায় সরাসরি আঘাত করা হয় ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি। দু’লক্ষ মা বোনের চরম আত্নত্যাগের প্রতি আর লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রতি যারা নিজের সবকিছু ত্যাগ করে স্বৈরাচারী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে জেল জুলুম নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করে দেশ স্বাধীন করেছেন। ফখরুলের কথার জবাব যেখানে পাকিস্তানের খোদ প্রধানমন্ত্রীই দিয়েছেন সেখানে এই কথার জবাব দেয়ার আর প্রয়োজন থাকে নাই। কিন্তু ফখরুল সাহেবরা সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশকে যেভাবে ছোট করছেন, হেয় করছেন তাতেই বিএনপি নামক দলটির চরিত্র জনসম্মুখে বেরিয়ে আসে। এটাই বিএনপির আসল চরিত্র আর এটাই ফখরুলদের মনের কথা। কারন ফখরুল সাহেবরা বা তার বাপ চাচারা ছিল তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের পা চাটা গোলাম। তারা ঐ সময় আমাদের সুমহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে। পাকিস্তানী আর্মিকে ও তৎসময়ের স্বৈরশাসককে সহযোগিতা করেছে। দেশ স্বাধীনের পরও তাই ফখরুল সাহেব নিজে এবং তার বাপ চাচারা অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরাচারী জিয়া – এরশাদের গোলামী করেছে। ওই সময়টাই প্রকৃত অর্থে বর্তমানে তাদের পেয়ারে পাকিস্তানের মত অবস্থা ছিল এ দেশের। একই আদর্শের লোকজন তখন দেশ শাসন করছিল এই দেশে। ফকরুল সাহেবরা পাকিস্তান ভাঙায় যে কষ্ট পেয়েছিলেন সেই সময় তার ও তার বাপ চাচার নেতা জিয়া এরশাদরা ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতা নেয়ায় তাদের সেই পাকিস্তানী গোষ্ঠীর মনোবাসনাই পূরণ করেছেন। অতএব এখনতো ফখরুল সাহেবরা পাকিস্তান আমল থেকে তো খারাপ থাকবেনই। এতে অবাক হওয়ার কি আছে!
একাত্তরের আগে পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠী এদেশের মানুষকে শোষণ নির্যাতন করে সব অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছে। তাদের সেই শোষণ বঞ্চনার ফল একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধ,স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই স্বাধীন বাংলাদেশ আজ তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশ থেকে আরো উন্নত দেশের পথে যাত্রা শুরু করেছে। পাকিস্তানিরা এখন বর্তমান বাংলাদেশের মত হতে চায়। পাকিস্তান আজ প্রায় দেউলিয়া হতে যাওয়া একটি দেশের পথে। সেখানে বাংলাদেশ অর্থে বিত্তে অনেক এগিয়ে গেছে,এটাই ফখরুল সাহেব বা বিএনপির গাত্রদাহের মূল কারণ, তাই এটা এ দেশের মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয় না। সেই কথা ফখরুল সাহেবরা না বলে, তাদের পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল এই কথা বলে নিজেদের আসল চেহারাই প্রকাশ করেছেন। আর তার সে কথায় সাথে সাথে পানি ঢেলে দিয়েছেন তাদেরই প্রিয় অগ্রজ খোদ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি ঠিক একথা বলতে চাইছেন, তোমার কথা ঠিক না আমরা (পাকিস্তান) এখন ভিক্ষুক জাতি। বরং তোমরা এখন আমাদের চেয়ে অনেক অনেক ভালো আছো।
এই নিজেদের ছোট করে দেশকে হেয় করে,ছোট করে, বর্তমান সরকারকে ছোট করতে গিয়ে যে অপমানজনক কথা মিডিয়ায় বা বিদেশিদের কাছে প্রতিনিয়ত বলে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ বা ফখরুল সাহেবরা তাতে নিজেদের মুখোশই উম্মোচিত হচ্ছে। নিজেরা দেশ শাসনের সুযোগ পেয়ে লুটপাট করে হওয়া ভবন তৈরি করে দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশকে বার বার শীর্ষ দুর্নীতিবাজ দেশ হিসেবে বিশ্বে উপস্থাপন করেছিল। একুশে আগস্ট বর্বর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে যে অপতৎপরতা বিএনপি চালিয়েছিল তা দেশবাসী ভুলে যায়নি। দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করা,বাংলা ভাইয়ের মত দুর্ধর্ষ জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে দেশকে একটি মৌলবাদী জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করার অপতৎপরতা ফখরুল সাহেবরা সে সময় শুরু করেছিলেন তা তারা ভুলে গেলেও দেশবাসী ভুলে যায়নি। আর তারই খেসারত এখন তাদের দিতে হচ্ছে। কিন্তু তারা তাদের সেই অপকর্ম বেমালুম ভুলে গেলেও দেশবাসী মনে রেখেছে। হয়তো আগামী আরো অনেক নির্বাচনেও মনে রাখবে।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি