রণেশ মৈত্র; এক দৃপ্ত কন্ঠস্বরের প্রস্থান
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:০৮
পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের কিংবদন্তী রণেশ মৈত্র। রণেশ মৈত্র বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক অনুসরণীয় নাম। দেশের পত্রপত্রিকায় তার কলাম পাঠকের মনোযোগের কেন্দ্র ছিল। দেশের সাংবাদিকতা জগতের পথপ্রদর্শক এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিদায়ে অসীম শূণ্যতা তৈরি হয়েছে। পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, একজন ভাষা সংগ্রামী একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশের প্রবীণ এ মানুষটি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে মারা যান। তার চলে যাওয়ায় বাংলাদেশ হারিয়েছে একজন দেশপ্রেমিককে। একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সমস্যায় কলম ধরেছেন, সত্য উচ্চারণ করেছেন। দেশের ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী বিভিন্ন আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রগামী। এসব আন্দোলনে থাকার কারণে তিনি একাধিকবার কারাবরণও করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবেও তিনি ভূমিকা পালন করেন। তার সত্য উচ্চারণের সাহস এবং তার লেখনীতে নানা অসঙ্গতী তুলে ধরা আমাদের এতকাল পথ দেখিয়েছে। রণেশ মৈত্র ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার ন’হাটা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা রমেশ মৈত্র ছিলেন আতাইকুলা থানার ভুলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ১৯৯৫০ সালে জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর স্বনামধন্য এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৫৫ সালে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
এর আগেই তিনি ১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। ভাষা আন্দোলনের বছর অর্থাৎ ১৯৫২ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি সাংবাদিকতা জগতের পথিকৃৎ। তার কর্মজীবন শুরু হয় সাংবাদিকতার মধ্যে দিয়ে। ১৯৫১ সালে সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির একাধিক পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৫৫ সালে দৈনিক সংবাদ, ১৯৬১ সালে দ্য ডেইলি মনির্ং নিউজ এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্বপাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্বপাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সেই বছরই তিনি পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন। দীর্ঘদিন তিনি সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি দ্য ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর পত্রিকায় ছেড়ে তিনি নিয়মিত দেশের পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে গেছেন। একজন কলামিষ্ট হিসেবে তিনি সুপরিচিত।
রাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যাবার সাথে সাথে দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকেও এগিয়ে নিতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি এবং আরও প্রগতিশীল ব্যক্তি মিলে ‘শিখা সংঘ’ নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। সেখানে প্রচুর বই সমৃদ্ধ একটি পাঠাগার ছিল। দেশের সাংবাদিকতা জগতের প্রতিথযশা একটি নাম হলো রণেশ মৈত্র। তিনি ছিলেন সাংবাদিকতা জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
অলোক আচার্য মত-দ্বিমত রণেশ মৈত্র; এক দৃপ্ত কন্ঠস্বরের প্রস্থান