Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইডেনে হিডেনে এ কোন খেলা

মোস্তফা কামাল
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:৪৯

সব দোষ ছাত্ররাজনীতির? বা ইডেনের? নারীশিক্ষায় দেশসেরা রাজধানীর নামকরা ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু ছাত্রীর দুস্কর্মের পুরো দায় ছাত্ররাজনীতির ওপর চাপিয়ে দেয়ার ধুম চলছে। সেইসঙ্গে ইডেনকে করে ফেলা হচ্ছে একটি নিকৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্ত। আর ইডেনে পড়াশোনা করা ছাত্রী মানেই দুশ্চরিত্রা! দুর্ভাগ্যজনকভাবে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে এ সরলীকরণ।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলোকে চূড়ান্ত বিবেচনা বা অগ্রাহ্য করা কোনোটাই কি সঠিক হচ্ছে? কলেজটির সব ছাত্রী বা অন্যান্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরাই এমন-এ ধরনের সাব্যস্ত করে ফেলাও সঠিক? সেখানের ছাত্রলীগের বড় নেত্রীদের হোষ্টেলের মেয়েদের দিয়ে অনৈতিক কাজ তথা ব্যবসা করানোর মতো অভিযোগ তো আকস্মিক নয়। এতোদিনেও এগুলোর বিহিত না করার দায় কার? এর নেপথ্যে কারা?

বিজ্ঞাপন

ইডেন মানে বেহেস্তের বাগান। এ বাগানের ঘটনা নিয়ে বিরাজনীতিকরণের প্রবক্তাদের আবার তৎপর হয়ে ওঠায় সামনে আসছে প্রশ্নগুলো। এমন সময়ে কেন দুচারটা উচিৎ কথা বলছেন না রাজনীতিকরা? কেন বলছে না দোষীদেরই রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করা হোক। এর জেরে কেবল সিটবাণিজ্য নয়, কলেজটির ছাত্রীদের নানান জায়গায় সাপ্লাই দিয়ে দেহব্যবসা পর্যন্ত করানোর জঘন্য অভিযোগ বাজার গরম করে দিয়েছে। কলেজটির সব ছাত্রীকে এক কাতারে ফেলা দেয়া হলো। কলেজটিতে পড়াশোনা করা ছাত্রীদের অভিভাবকদের মানসিক ও সামাজিক অবস্থা কেমন যাচ্ছে? –ভাবা যায়? তাদের একজনও কী মেয়েদের এ কাজে ইডেনে পাঠিয়েছেন? অথবা এমন অভিযোগে পড়তে পারেন বলে মানসিক প্রস্তুতি ছিল তাদের? কোনো অভিভাবক কি চেয়েছেন তা বা অন্য কারো মেয়ে মারামারিতেও এগিয়ে যাক? দেহব্যবসা তো আরো পরের ব্যাপার।

বিজ্ঞাপন

অভিভাবকরা যাবে কোথায়? ছাত্রলীগ গেষ্টরুম নির্যাতন করে, সিটবাণিজ্য করে। দেহব্যবসা করায়। মাদ্রাসায় হজুররা বলাৎকার করে। শিবির জঙ্গী বানায়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার ফাঁদে ফেলে সম্ভোগ করে। যে কোনো সমস্যা থেকে উত্তরণ বা সমাধানের প্রথম ধাপ হলো সমস্যাকে স্বীকার করে নেওয়া, তার মাত্রা কম বা বেশি যেটাই হোক। যতক্ষণ না নিজের সন্তান, বোন, বউ ধর্ষিতা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত উপলব্ধি আসতে নেই?

এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতাসীনদের দায় বেশি। অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধেই বেশি। সেদিন শহীদ মিনারে কোটা সংস্কার আন্দোলনে মরিয়মের দিকে ছুটে যাওয়া ছাত্রলীগের এই হাতগুলো মিথ্যা ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নুরের দিকে ছুটে যাওয়া ওই পাগুলো ছাত্রলীগেরই ছিল। বুয়েটে আবরার হত্যার মতো ভয়াবহ ঘটনার পরও ছাত্রলীগকে এ চরিত্র থেকে সরানো হয়নি। যার জেরে ‘বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সেলিব্রেট করার সময়ে এসে জবাব দিতে হয় ছাত্রলীগের নামে নানা অপকর্মের।

কেবল ছাত্ররাজনীতি নয়, গোটা রাজনীতির জন্যই এটি কলঙ্কের। উদ্বেগ-শঙ্কারও। কে জানে এদের মধ্যেই রয়েছেন কিনা আগামীদিনের কোনো মন্ত্রী-এমপি? বা ভবিষ্যৎ পাপিয়া- সাবরিনা? কী দশা হবে তখন?

এ নিয়ে ওপেন সিক্রেট অনেক সমালোচনাও হচ্ছে। প্রাক্তন মন্ত্রী ডা. মুরাদও এক টক শোতে কিন্তু বলেছিলেন। ইডেনের ঘটনার পর এখন ঘাটেমাঠে বহুজনেই বলে। ভাবা যায় মা-বাবাকে ছেড়ে পড়াশোনা করতে আসা মেয়েটিকে দেহব্যবসায় বাধ্য করা? শাস্তি হিসেবে সভাপতি-সেক্রেটারি ঠিক রেখে বাকিগুলোকে অদলবদল করা? এ কর্মটিকে ব্যবসা বা শিল্প হিসেবে দাঁড় করানোতে বাকিগুলোরও কি অবদান কম?

ক্ষমতাধারীদের প্রচ্ছন্ন ছত্রছায়ায় অপকর্মের ধরণ সম্পর্কে মানুষের কমবেশি জানা। অস্ত্র, গুলি, সিটবাণিজ্য মাড়িয়ে তা দেহশিল্প পর্যন্ত নিয়ে ঠেকানো ছিল অজানা। হলের সিট ভাড়া দিয়েই মাসে ৬ লাখ আয়! আয়ের তো আরও কতো খাতের কথা শোনা যাচ্ছে। ইডেনের হিডেন অবস্থা উপলব্ধির পথে নতুন খোরাক জুগিয়েছে আন্দোলনকারীরা। অনশনের ঘোষণা দিয়ে সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলেছে চাপের কথা। ‘আমরা আর অনশন করব না, আমাদের ওপর অনেক চাপ’ এমনটাই বলছিলেন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে আমরণ অনশন করা ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত নেত্রীরা।

ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনায় ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত ১২ নেত্রী সোমবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়েছিলেন আমরণ অনশন করতে। প্রথমে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশের সময় বাধাপ্রাপ্ত হন বহিষ্কৃত এই নেত্রীরা। এরপর প্রতিবাদের মুখে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিয়ে আবার গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে ১ ঘণ্টা অবস্থান করার পর বাইরে বেরিয়ে আসেন তারা। তাদের এ ভূমিকা ও অবস্থানও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আধিপত্য বিস্তার, সিট বাণিজ্য, সাধারণ ছাত্রীদের হেনস্তাসহ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে দুপক্ষেরই।

ব্যবস্থা গ্রহণ হিসেবে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।

সেইসঙ্গে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সহ সভাপতি সোনালি আক্তার, সুস্মিতা বাড়ৈ, জেবুন্নাহার শিলা, কল্পনা বেগম, জান্নাতুল ফেরদৌস, আফরোজা রশ্মি, মারজানা উর্মি, সানজিদা পারভীন চৌধুরী, এস এম মিলি, সাদিয়া জাহান সাথী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা খানম বিন্তি ও সাংগঠনিক সম্পাদক সামিয়া আক্তার বৈশাখি এবং কর্মী রাফিয়া নীলা, নোশিন শার্মিলী, জান্নাতুল লিমা, সূচনা আক্তারকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশ্ন এখানেও। হিডেনে কেবল তারাই? বা ইডেন কলেজ? তারাই গোটা বাংলাদেশ? মোটেই না। তা হওয়া কাম্য নয়।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ইডেন: হিডেনে কোন খেলা? মত-দ্বিমত মোস্তফা কামাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর