Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুভ হোক বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন

সুদীপ চন্দ্র হালদার
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৪০

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কণ্যা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র জন্মদিন ২৮শে সেপ্টেম্বর; আনন্দঘন দিনটি আজ! বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা এর কোল আলো করে ১৯৪৭ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা জন্মগ্রহন করেছিলেন বাংলার মানুষের আর্শিবাদ স্বরূপ, বঙ্গবন্ধুর সকল স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য। ব্যক্তিগত সকল চাওয়া-পাওয়া, আশা- আকাঙ্খা, সুখ-শান্তি, স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন আপামর জনগনের কল্যানের স্বার্থে।

বিজ্ঞাপন

বঙ্গকন্যার চরিত্রের দৃঢ়তা ও সততা বঙ্গবন্ধুর চরিত্রেরই অনুরণন। ৬ দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে অগ্রনী ভুমিকা রেখেছে। বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দিয়ে সারা বাংলাদেশে ঘুরেছেন, দেশের মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন, ভিতরে ভিতরে স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছেন।

এমতাবস্থায়, বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালের ৮ ই মে গ্রেফতার হলেন, ৫ মাস কোন খোঁজ পাওয়া গেলনা। সেই মুহুর্তে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা দ্বিধান্বিত হলেন ৬ দফা নিয়ে এগোবেন নাকি ৮ দফা। কিছু আওয়ামীলীগের নেতারা উঠে পড়ে লাগলেন, “৮দফা খুবই ভালো, ৮ দফা মানতে হবে”। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা এর বিরোধিতা করলেন। বড় বড় নেতাদের কেউ কেউ বলেছিলেন, “তুমি মা কিছু বোঝ না”। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ় ভাবেই বলতেন, “কিছু বোঝার দরকার নেই, আব্বা বলেছেন ৬ দফা, ৬ দফাই দরকার। এর বাইরে নয়।”

অত:পর বঙ্গবন্ধুর বাসায় তিন দিনের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং, শেষে রেজুলেশন হল ৬ দফা নিয়েই এগোতে হবে। পাকিস্তানি শোষকেরা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিকামী কন্ঠরোধের অপচেষ্টা করেছিলেন। অনেক বড় বড় নেতারা তাদের দৃঢ়তা হারিয়ে ছিলেন; তারা আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন, না গেলে মারত্মক সর্বনাশ হতে পারে বলে ভয়ও দেখিয়েছিলেন।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনাকে পাঠালেন বঙ্গবন্ধুর কাছে, বঙ্গবন্ধু যেন কখনও প্যারোলে না যান, যদি মুক্তি দেন তবেই শুধুমাত্র যাবেন। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়তা নিয়েই সেই বার্তা বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দিলেন। আর এর ফলশ্রুতিতে নেতারা বাসায় এসে বঙ্গকন্যাকে বকাঝকা, “তুমি কেমন মেয়ে, তুমি চাওনা তোমার বাবা বের হোক জেল থেকে?” ইতিহাসকে একটু বিশ্লেষনধর্মী দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে আমরা অতি সহজে নিশ্চিত হতে পারি যে যদি বঙ্গবন্ধু সেদিন আপোসের পথে হেটে প্যারোলে মুক্তি নিতেন, তাহলে প্রিয় বাংলাদেশ কোন ক্রমেই ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারত না। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা কিশোরী-তরুনী বয়সেও এমনটি দৃঢ়চেতা ছিলেন, তীক্ষ্ণ দূরদর্শী চৌকষ ব্যক্তিত্ব ধারন করতেন।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় প্রতিক্রিয়াশীল দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীরা জাতির পিতাকে সপরিবারে ১৭ জন সদস্য সহ দুনিয়াতে বিরলতম ভাবে অতি নৃশংসভাবে হত্যা করে। এর মাত্র ১৫ দিন আগে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে চলে গিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর প্রধান দুটি লক্ষ্য ছিল- এক: দেশকে স্বাধীন করা, দুই: দেশকে অর্থনৈতিক ভাবে বিকশিত করে শস্য-শ্যামলা, সুজলা-সুফলা সোনার বাংলায় রূপান্তর করা। কিন্তু নরপশুরা বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের সুযোগ দিলেন না। এক্ষেত্রে অনেক নেতিবাচক ব্রান্ডিং করেন বঙ্গবন্ধু স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন, যেটি ডাহা মিথ্যা অপপ্রচার, যেটি নিয়ে আজও আড়ালে- আবডালে নেতিবাচক চর্চা হয়, জলঘোলা করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে; সবচেয়ে দুঃখজনক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কিংবা এর সহযোগী সংগঠনের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিহীন অনেক নেতাকর্মীরা যখন বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশাতে থাকেন।

জাতির পিতা চেয়েছিলেন জাতির পিতৃত্বের অধিকারে কিছুটা অধিক ক্ষমতা নিয়ে তাঁর দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরনের দিকে এগিয়ে যেতে, দ্রুত আর্থ সামাজিক পরিবর্তন ঘটিয়ে দেশকে সোনার বাংলায় পরিনত করতে। যেমনটি করেছিলেন সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান, ফ্রান্সের দ্য গলে। বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেছিলেন, “বাকশাল পদ্ধতি একটি সাময়িক ব্যবস্থা।” বঙ্গবন্ধুর একমাত্র লক্ষ্যই যদি হত ক্ষমতায় যাওয়া তাহলে উনি ১৯৭০ সালেই ছয় দফার প্রশ্নে আপোষ করে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন।

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে সামরিক শাসকদের রক্ত চক্ষুময় হুমকিকে শরৎকালের মেঘের মত উড়িয়ে দিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখেন; দায়িত্বগ্রহন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের, দূরদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরনের দিকে।

১৯৯৬ সালে প্রথম বার গণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়েই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন, স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন, নরপিচাশদের করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচারের পথ সুগম করেন।

আজ বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর অনুসৃত নীতি অনুযায়ী বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে। বিশ্বব্যাংকের মাথাপিছু আয়ের ওপর ভিত্তি করা শ্রেণী বিভাগে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘের কাছ থেকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে; যদিও চূড়ান্ত স্বীকৃতি আমরা ২০২৬ সালের ২৪শে নভেম্বর পাব বলে আশা করছি। দেশে আজ পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এর মত মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হয়েছে, অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট বাস্তবিত হওয়ার পথে। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশব্যাপী একশত বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা’র সরকার। দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ৭০% -এ উন্নীত হবে।বাংলাদেশ আজ স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে, বাংলার মানুষ হয়েছে গর্বিত। আজ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা খাদ্যে উদ্বৃত্ত এবং রফতানিকারক দেশ । বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শুধুমাত্র সকল রেকর্ডকে ভেঙ্গেছে এমনটি নয়, বরং বিস্ময়কর। এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার প্রজ্ঞাময় সৎ, দৃঢ় ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারনে।

নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষায়, “সামাজিক অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে এগিয়ে”। আর তাই পাকিস্থানী জনগন তাদের সরকারের কাছে দাবি করছে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এমনই মোহনীয় আবেশ।

মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, “অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরন করা।” সত্যিই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বঙ্গকন্যার নেতৃত্ব বিশ্বের রোল মডেল।

মানবিক মূল্যেবোধে অনন্য বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা, বাংলার আপামর জনগনের জন্য তার হৃদয়টা কাঁদে। সাধারন মানুষকে পাশে টেনে নেন আন্তরিক স্নেহ- মমতা দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে উপলব্ধি করেন তাদের আবেগ, ভাললাগা-মন্দলাগা, সুখ-দুঃখ; যে কোন কৃত্রিমতা বর্জিত ভাবেই তিনি এটা করেন, কারন তিনি যে বঙ্গবন্ধু কন্যা। বঙ্গবন্ধু বুকে টেনে নিতেন গরীব-দুঃখী, ধনী-দরিদ্র সকলকে, নিজের গোলার ধান বিলিয়ে দিতেন সাধারন মানুষকে, তিনি যে সেই রক্ত এবং আদর্শের উত্তরসূরী।

শোককে শক্তিতে পরিনত করে বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে গেছে, এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে দুর্নিবার গতিতে। সকল বাধা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তিনি এটা করে চলেছেন। বার বার এসেছে তার জীবনের ওপর আঘাত, কিন্তু তিনি বিধাতার অশেষ অনুগ্রহে সুস্থ্য-সবলভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করে যাচ্ছেন।

বঙ্গকন্যার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বে স্বাধীনতার বীরত্বপূর্ন চেতনায় বিশ্বে মর্যাদাপূর্ন উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত হবে বাংলাদেশ, বাংলার আপামর জনগন তেমনটাই প্রত্যাশা করেন।

বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন শুভ হোক, শতায়ু হোন তিনি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক।

লেখক: শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ তাঁতী লীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ; পিএইচডি গবেষক[আইন শাস্ত্র], বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, ভারত

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

মত-দ্বিমত শুভ হোক বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন সুদীপ চন্দ্র হালদার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর