প্রসঙ্গ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা
২৪ অক্টোবর ২০২২ ১৬:১০
শতবর্ষের আলোয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্ভাসিত, সে বিষয়টি প্রচার করতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম শতবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খেলার মাঠে ‘গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা ২০২২’ আয়োজন করেছে। এই আয়োজনের মাধ্যমে জানান দেওয়া হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও প্রকাশনায় গতি রয়েছে। সেজন্য ফরমায়েসি কিছু গবেষণার ফলাফলকে শতবার্ষিকী গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে প্রকাশের মাধ্যমে জনসমক্ষে উন্মুক্ত করা হল। এই গবেষণা-প্রকাশনাগুলোর মান সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
গবেষণা ও প্রকাশনা মেলার অন্যতম লক্ষ্যণীয় দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্ন্তজাতিকীকরণের দোহাই দিয়ে সমস্ত প্রকাশনাকেই ইংরেজিতে মুদ্রণ করা হয়েছে। এমনকি মূলমঞ্চ ব্যতীত অন্যান্য সকল পোস্টারে ইংরেজি ভাষার প্রয়োগ বিশেষভাবে লক্ষণীয় হয়েছে। অবশ্য গত দুই দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির বহুল প্রয়োগ স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইংরেজির বহুল প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি যে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক বাংলা ভাষার মর্যাদার বিষয়টিকে এড়িয়ে, ইংরেজি ভাষার প্রতি ঝুঁকে পড়েছে সেই বিষয়টিই যেন জাতি ও বিশ্ববাসীকে জানান দিচ্ছে।
এ মেলার মাধ্যমে জনসমক্ষে উপস্থাপিত প্রকাশনাগুলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান (মর্যাদা) ও মানাঙ্ক (র্যাংকিং) বাড়বে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে। কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবতা নির্ভর গবেষণার আবহ সৃষ্টি না করা হলে, তা দিয়ে লোক দেখানো গবেষণা হয় বটে, তা দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে গবেষণা ও প্রকাশনায় গতি আসে না। দেশে একটি কথা প্রচলিত আছে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের অনেকেই প্রায়শই কথাটি বলে থাকেন, প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে গবেষণা পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এই কথা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, অর্থের অভাবে গবেষণা হয় না তাই প্রকাশনাও হয় না। কিন্তু অর্থ দিয়ে গবেষনার প্রণোদনা দেওয়া যায় বটে, কিন্তু গবেষণা ও প্রকাশনা হয় গবেষকের মেধা, অধ্যাবসায় ও শ্রমের সমন্বিত প্রয়াসে। অথচ গবেষকের গবেষণা করতে যে প্রয়াস, সেটির মূল্যায়ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রশাসনের আওতাভুক্ত নয়। কাজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান (মর্যাদা) ও মানাঙ্কই (র্যাংকিং) যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হয় তাহলে ফরমায়েসি গবেষণার পথকে পরিহার করে, গবেষণা কর্মযজ্ঞকে প্রণোদনা দিতে নীচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া প্রয়োজন—
গবেষকদের সম্মান ও সম্মাননার মাধ্যমে পুরষ্কৃতকরণে—
১) বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেষ্ঠ গবেষক পুরষ্কার প্রবর্তন করা।
২) শ্রেষ্ঠ গবেষকদেরকে উপযুক্ত মূল্যায়ন করতে বিশেষ অধ্যাপক ও সম্মানসূচক অধ্যাপক ইত্যাদি বিশেষ সম্মানসূচক পদ (অতিরিক্ত বেতন ও ভাতাসহ) সৃষ্টি করে তাদেরকে সে সব পদে পদায়নের রেওয়াজ চালু করা।
৩) শ্রেষ্ঠ গবেষকদের একটি পুল তৈরি করে সেই পুল থেকে ডীন মনোনয়নের ব্যবস্থা করা।
৪) শ্রেষ্ঠ অধ্যাপকদের জাতীয়ভাবে মর্যাদাদানের জন্য জ্ঞানের প্রতিটি শাখার শ্রেষ্ঠ অধ্যাপক পুল থেকে শ্রেষ্ঠতমকে জাতীয় অধ্যাপক সম্মানে ভূষিতকরণে রেওয়াজ চালু করা প্রয়োজন।
গবেষণা ও প্রকাশনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে—
১) গবেষণা পত্রিকাগুলোকে প্রথমত বিমক (UGC) কর্তৃক জার্নাল সূচীপত্র তৈরির রেওয়াজ চালু করে তাতে অন্তর্ভুক্ত করার রেওয়াজ চালু।
২) জার্নালগুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ইনডেক্স, যেমন- ‘scopus’, ‘corss-reference’ এ অন্তর্ভুক্ত করা।
৩) জার্নালগুলোকে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সূচীতে অন্তর্ভুক্ত করে জার্নালগুলো উন্মুক্তভাবে উপলদ্ধ (Open Access) করার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রশাসন যদি এই দুই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে আশা করা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যেমন তাদের উপযুক্ত মর্যাদা পাবেন, তেমনি গবেষণাকর্মগুলোর ফলাফল যথাযথভাবে ও পরিমিতভাবে জনসম্মুখে উন্মুক্ত হবে। এগুলো জনসম্মুখে উন্মুক্ত করার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুখ্যাতি ছড়াবে। আর সে পথেই বাড়বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান (মর্যাদা) ও মানাঙ্ক (র্যাংকিং)।
লেখক: অধ্যাপক, জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতিবিভাগ, পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভূতপূর্ব গবেষণা ফেলো, জাপান রাষ্ট্রভাষা ইনস্টিটিউট; ভূতপূর্ব অভ্যাগত অধ্যাপক, কোবে গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়; ভূতপূর্ব অভ্যাগত শিক্ষক, টোকিও বিদেশবিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
ডক্টর এ.বি.এম. রেজাউল করিম ফকির প্রসঙ্গ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা মত-দ্বিমত