শান্তিতে সংগ্রামে অকুতোভয় যুবলীগ; প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর
১০ নভেম্বর ২০২২ ১৮:১০
পূর্তির মাইলফলক স্পর্শ করলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। ১৯৭২ সালের এই দিনে দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করা। গত পাঁচ দশক ধরে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম এবং হাজারও নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে যুবলীগ দেশের বৃহত্তম যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
সুদীর্ঘ ৫০ বছরের পথচলায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ রচনা করেছে ইতিহাসের অনন্য অধ্যায়। স্বাধীনতার পরপরই দেশগড়ার ক্ষেত্রে তরুণ সমাজকে কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সে চিন্তা থেকেই আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুবকদের সংগঠিত করে এই সংগঠন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। সেই থেকেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ রচনার রাজনীতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের আত্মপ্রকাশ। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী শেখ ফজলুল হক মণির দক্ষ নেতৃত্ব ও দুরদর্শী পরিকল্পনায় যুবলীগ অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়। যুবলীগ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সদ্যস্বাধীন বাংলার যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয় শেখ মণির নেতৃত্বে। কালের পরিক্রমায় যুবলীগ আজ যখন সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করছে তখন তার নেতৃত্বে রয়েছেন শেখ মণিরই জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ।
৫০ বছর পূর্তির এই সুবর্ণদিনে যুবলীগ অবস্থান করছে অগণিত যুবকের প্রাণের স্পন্দনে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যুবলীগ আজ এক অনন্য মাইলফলক অতিক্রম করছে। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন শেখ ফজলে শামস পরশ। এরপর শুরু হয় যুবলীগের নবযাত্রা। পিতার যোগ্য উত্তরসুরী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেন তিনি। শুদ্ধ, পরিচ্ছন্ন, আদর্শিক রাজনীতির ধারায় যুবলীগকে পরিচালিত করতে কাজ শুরু করেন দৃঢ় প্রত্যয়ে। তার হাত ধরে নতুন যুগে প্রবেশ করে যুবলীগ। অনাকাঙ্খিত ভাবমূর্তি সংকট কাটিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন তিনি। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় সকলের মন জয় করে নেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থেকে কাজ করব। আপনারা আমার শক্তি হবেন। আমার বাবা শেখ ফজলুল হক মণি বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য এই সংগঠন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ ও তার কন্যার দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকে আমি সাহস পাই। তাই আজ আমি আপনাদের সামনে বলতে চাই, আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হচ্ছে আমি সম্পূর্ণ সততার সঙ্গে পালন করব।’ তিনি আরও বলেছিলেন, “আগামীর যুবলীগ হবে একটি মেধাসম্পন্ন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ক্ষমতা সম্পন্ন সংগঠন। এখানে থাকবেন শিক্ষিত ও সাধারণ মানুষ। এখানে কোনো অনুপ্রবেশকারী কিংবা কোনো দুস্কৃতিকারীকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।” যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে এ বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সর্বমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং প্রশংসিত হয়। সুযোগ্য সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সঙ্গে নিয়ে ‘মানবিক যুবলীগ’ গড়ার লক্ষ্যে নতুন এক যাত্রা শুরু করেন। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দুরদর্শিতা, একাগ্রতা, শ্রম ও নিষ্ঠায় এ যাত্রায় দারুণভাবে সফল হন তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নতুন এ নেতৃত্ব যুবলীগকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে যুবলীগ কর্মীদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর চেতনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে নানামুখি কার্যক্রম শুরু করে। ফলশ্রুতিতে অল্প সময়েই নতুন নেতৃত্ব জনগণের মাঝে আস্থা খুঁজে পেতে শুরু করে। এসময়ে দলের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে সংগঠনের নীতি বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার এবং সত্যতার ভিত্তিতে অভিযুক্তকে সাংগঠনিক ব্যবস্থার মুখোমুখি করা হয়েছে। অল্পদিনের ব্যবধানে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের এ চিত্র, সাধারণ মানুষের মাঝে আস্থা অর্জন করে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে যখন জনজীবন বিপর্যস্ত তখন মানুষের পাশে দাঁড়ায় যুবলীগ। করোনা সংকটে মানবিকতার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে যুবলীগ। সারা দেশে করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে যুবলীগ। কেন্দ্রীয়, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ মহানগরসহ সব মহানগর, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট অসহায় মানুষকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে। যুবলীগের মাধ্যমে সরাসরি সাড়ে ৪৩ লাখ মানুষ খাদ্যসহায়তা পেয়েছে। দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আসার পরপরই সারা দেশে যুবলীগকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মাঠে নামার আহ্বান জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান। করোনা সংকটের মধ্যেই বন্যা বাংলাদেশের জন্য নতুন দুর্যোগ হয়ে দাঁড়ায়। কেন্দ্রের নির্দেশনার পর সারা দেশে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ান যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নৌকা, ট্রলারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বন্যার্তদের সহায়তা পৌঁছে দেন যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। করোনাভাইরাসের শুরুতেই সারা দেশে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায় যুবলীগ। প্রতিটি ইউনিটে মাইকিং এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল ও সাবান বিতরণ শুরু হয়। করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে সারা দেশে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। শ্রমজীবী, গার্মেন্টস শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালক, প্রতিবন্ধী, মুচি, হিজড়া, বেদে স¤প্রদায়সহ অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ মানবিক সহায়তা দেওয়া হয়। ট্রাক, রিকশা ও ভ্যানে করে বস্তিবাসীদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা। সারা দেশে কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি তুলে দিয়ে মানবিকতার আরেক নিদর্শন দেখিয়েছে যুবলীগ। করোনাক্রান্ত রোগীদের যাতায়াত সংকট বিবেচনা করে যুবলীগ ২৪ ঘণ্টা ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করে। ঢাকার পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই সেবা দেয়া হয়। একই সঙ্গে করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের জরুরি চিকিৎসাসেবা পেতে সাধারণ মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সেবাও চালু করে যুবলীগ। চিকিৎসা-সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রাজধানীর হাসপাতাল, জেলা উপজেলা হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছে যুবলীগ। শুধু তাই নয়, করোনায় আক্রান্তের ভয়ে যখন পরিবারের আত্মীয়স্বজন করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে এগিয়ে আসেনি তখন যুবলীগ করোনায় মৃত ব্যক্তির জানাজা থেকে শুরু করে দাফন কাজ সম্পন্ন করেছে। রমজান মাসজুড়ে ইফতার ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
মুজিববর্ষের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘গাছ লাগাই, জীবন বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে যুবলীগ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্দেশ্য নিয়ে শেখ ফজলে শামস পরশের হাতে যুবলীগের নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছেন তার মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্খার নতুন ঠিকানায় পরিণত হয়েছে যুবলীগ। কোটি যুবকের প্রাণের সংগঠন হিসেবে যুবলীগের এই অগ্রযাত্রা দেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যুবলীগ জেগে উঠেছে নবউদ্যমে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বত্র নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আহ্বান করা হয়েছে যুব মহাসমাবেশ। যেখানে সারাদেশের ১০ লাখের বেশি যুবলীগ নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করবেন। সুবর্ণজয়ন্তীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে যুবলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের যে মহাসড়কে উত্তরণ করেছেন যুবলীগ তার এই অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করবে বলে আমার বিশ্বাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আমরা দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। ঐতিহ্য আর সংগ্রামে যুবলীগ এগিয়ে যাক শত বছরের পথে। যুব মহাসমাবেশ সফল হোক। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক: শিক্ষক ও চিকিৎসক; কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, কেন্দ্রীয় কমিটি
সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি
ডা. আওরঙ্গজেব আরু মত-দ্বিমত শান্তিতে সংগ্রামে অকুতোভয় যুবলীগ; প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর