Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংকট-সংগ্রাম-মানবিকতায় এগিয়ে চলা যুবলীগ

সফিউল আযম
১১ নভেম্বর ২০২২ ১৫:০৫

স্বাধীনতা পরবর্তীতে একদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ভাগ্নে শেখ মণিকে বলেন, ছাত্রজীবন পেরিয়েছে, অথচ যৌবন পেরোয়নি— এরকম বহু যুবক এখন আদর্শহীণ, লক্ষ্যহীণভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। এখন অলস ও অকর্মণ্য জীবনে লক্ষ্যহীণ হয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িত হচ্ছে। এদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগাতে পারলে একটি যুবশক্তি তৈরি হবে, যে শক্তির ভেতর থেকে দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বেরিয়ে আসবে। দেশ ও সমাজের ভবিষ্যতের রূপকার হবে এই যুবসমাজ।

বিজ্ঞাপন

দুরদর্শী বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন এই যুব সমাজই একদিন বদলে দিবে বিশ্ব। অপার সম্ভাবনাময় যুবশক্তি যেভাবে মুক্তিযুদ্ধে নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাপিয়ে পদতে পারে, তাঁরা পিছপা হবার নয়। এই উপমহাদেশের তরুণরা প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের সদিচ্ছা ও যোগ্যতার প্রমান রেখেছেন, তারাই হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের কান্ডারি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক যুব কনভেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠন যুবলীগ। এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব অঙ্গসংগঠন। প্রতিষ্ঠার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সংগঠনটি একটি শক্তিশালী যুব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। যার মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ অর্থাৎ সামাজিক ন্যায়বিচার, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, সকল ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালনের অধিকার তথা জাতীয় চার মূল নীতিকে সামনে রেখে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা সম্প্রসারণ, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও আন্তনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমূহ প্রতিষ্ঠা করা। এবছর সংগঠনটির সুবর্নজয়ন্তী।

সংগঠনটির প্রথম চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন বহুমূখী প্রতিভার অধিকারী। চিন্তা ও মননে ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। সমাজ সংস্কার ও সামজিক পরিবর্তনে ছিল অগ্রণী। তাঁর আধুনিক চিন্তাকে প্রগতির মিশেলে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে একটি সুন্দর ও মননশীল সংগঠন করাই ছিল শেখ মনির দর্শন। তিনি সবসময় যুবলীগকে একটি ব্যতিক্রমী ও দৃষ্টান্ত রূপে হাজির করার চেষ্টায় অবিরাম চেষ্টা করে যেতেন। গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে চিন্তা করতেন তিনি। তাইতো তিনিই প্রথম বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংগঠনের বার্ষিক সম্মেলনকে কংগ্রেস বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এবং যুবলীগে সেটার প্রচলনও করেন। একই সঙ্গে দলের সভাপতি পদের পরিবর্তে চেয়ারম্যান এবং সহ-সভাপতির পরিবর্তে প্রেসিডিয়ামের সদস্য পদ প্রবর্তন করেন। যা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞারই বহি:প্রকাশ।

বিজ্ঞাপন

শেখ মনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাগ্নে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন, ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৯-এর গণ-আন্দোলনে ছিল সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছিল অসাধারণ ভূমিকা। মুজিববাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেশের যব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে ছিলেন অবিচল ও অপ্রতিরোদ্ধ । গণমাধ্যমেও রেখেছেন অসীম অবদান। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সাপ্তাহিক সিনেমারও সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ৭ জুন তার সম্পাদনায় দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকাও প্রকাশিত হয়।

একথা ঠিক যে, ইতিবাচক ও সৃজনশীল রাজনীতির বাহক শেখ মনির প্রতিষ্ঠিত সংগঠন যুবলীগ ২০১৯ সালে যুবলীগের কতিপয় অসাধু নেতা-কর্মী দ্বারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। ক্ষমতাসীন সরকারের সহযোগী সংগঠন হিসাবে সংগঠনের অনেকে বিতর্কিত ক্যাসিনোসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইমেজ সংকটে পড়ে সংগঠনটি। এমন অভিযোগে সংগঠনের প্রভাবশালী নেতাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ কেউ টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির অভিযোগে বহিষ্কারও হয়েছেন। বিষয়টি শক্ত হাতে দমনের উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন মিলনায়তনে সপ্তম কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে সংগঠনের চেয়ারম্যান হিসেবে যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির সুযোগ্য উত্তরসূরী শেখ ফজলে শামস পরশকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। যা ছিল যুবলীগকে পরিশুদ্ধ করার প্রয়াস। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল সংগঠনকে একটি আধুনিক ও সময়োপযোগী করার কাজে মনোযোগ দেন। ক্লিন ইমেজের নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে সবাইকে চমকে দেন। যেখানে যুব সমাজের নেতৃত্ব দেয়া প্রতিটি স্তরের প্রতিনিধিদের যুক্ত করে। শিক্ষক, সাংবাদিক, যুবনেতা, আইনজীবি, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা, শ্রমিকসহ প্রতিটি সেক্টরের প্রতিনিধ থাকায় এটি একটি ইতিবাচক সাড়া ফেলে সারাদেশে। এছাড়াও দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই বক্তব্যে সবাইকে আশার বাণী শুনিয়ে দেন চেয়ারম্যান শেখ পরশ। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান হিসেবে নয়, একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে থাকতে চাই— এমন বক্তব্যে যুবসমাজের প্রাণ সঞ্চারিত হয়। জাতীয় রাজনীতি সম্পৃক্ত না থাকলেও রাজনীতি তাঁর রক্তে বহমান। শেখ পরশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত ছিলেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের সেই কলঙ্কিত রাতে হারান প্রিয় মা-বাবাকে। বাবার হাতে গড়া সংগঠন যুবলীগের দায়িত্ব নিয়ে দেশের যুবলীগের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করেন। যে স্বপ্ন নিয়ে বাবা গড়েছিলেন ঐতিয্যবাহী যুব সংগঠন, সেই সংগঠনের ভাবমূর্তি রক্ষার দায়িত্ব এখন যোগ্য সন্তানের কাঁধে। একসময় যারা যুব রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নিতেন বর্তমানে তারা রাজনীতিতে নিজেদের অংশগ্রহণে উদ্যোগী হন।

আমরা যুবলীগকে মানবিক যুব সংগঠনে হিসেবে কাজ করতে দেখেছি বৈশ্বিক করোনা মহামারীকালে। মানুষের জীবন রক্ষার্থে যুবলীগের নেতাকর্মী মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে সারা দেশের অসহায় ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। যুবলীগের অন্যতম মানবিক কাজ আশ্রয়হীনের গৃহের ব্যবস্থা করা। একমাত্র যুব সংগঠন নিজস্ব অর্থায়নে অসহায় ও গৃহহীনদের মাঝে গৃহনির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সারাদেশে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ছিল চোখে পড়ার মতো। কাস্তে হাতে মাঠে নেমেছে,ধানকাটা শেষে মাড়াই করে কৃষকের গোলায় ধান তুলে দিয়ে মানবিকতার উজ্জ্বল নজির স্থাপন করেছে যুবলীগ, যা শেখ মনির উত্তরসূরি শেখ পরশের উৎসাহ উদ্দীপনায়। এখন যুবলীগ উজ্জ্বীবিত। যুবলীগে যে ইতিবাচক ধারা বহমান, তা চলমান থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এমন যুব রাজনীতি চলমান থাকলে দেশের ভবিষ্যত নেতৃত্ব হবে অনেক বেশি গতিশীল ও সমৃদ্ধ।

১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ভাষণে যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “ওয়াদা কর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবি।…আমি যেখানে আছি, সেখানে কেন তোরা উহা বন্ধ করিতে পারবি না।..চোখের আড়াল হলেই তোরা লটর-পটর করিস। কিন্তু তোরা লটর-পটর না করিলে আর কেহ লটর পটর করিতে পারিবে না। তাই আবার বলিতেছি, আমার বাণী যেন নীরবে নীভৃতে না কাঁদে।” অর্থ্যাৎ বঙ্গবন্ধু চেয়েছেন যুব সমাজ হবে নীতি-নৈতিকতা ও দায়িত্ব -কর্তব্যসম্পন্ন। কাজ করবে দেশকে ভালবেসে, এগিয়ে যাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে, মনোযোগ দিবে সামাজিক পরিবর্তনে।

যে যুবসমাজ মহান মুক্তিযুদ্ধে, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে এবং জাতির ক্রান্তিকালে সবসময়ই বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। তারা পিছিয়ে পড়ার নয়। যুবলীগ এগিয়ে যাক, ইতিবাচক রাজনীতির পথ প্রশস্ত হোক। কারণ যুব সমাজের প্রচেষ্টা বদলে দিতে পারে বিশ্ব, বদলে দিতে পারে দেশ, বদলে দিতে পারে সমাজ।

লেখক: এডিটর ইন চিফ, ইয়ুথ জার্নাল

সারাবাংলা/এজেডএস

যুবলীগ সফিউল আযম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর