Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আত্মত্যাগ

ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন
১৯ নভেম্বর ২০২২ ১৪:৩১

বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কমপক্ষে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে ১০ হাজার রোহিঙ্গা ভয়ংকর কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গারা ততই ভয়াবহ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। খুন, অপহরণ, মাদক, ডাকাতি, অস্ত্র পাচার, জাল টাকাসহ ১২ ধরনের অপরাধের অভিযোগে প্রতিদিনই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোনো না কোনো কাম্প থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করছে। ভয়ঙ্কর অপরাধ করার পাশাপাশি ভাড়াটে হিসেবে খুন, গুম, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতিতে ও তারা জড়িয়ে পড়ছে এবং গ্রেপ্তার ও আইনি ব্যবস্থা নিয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইয়াবা, আইস ও নানা মাদক কেনাবেচার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বেশিরভাগই রোহিঙ্গা। তারা নিজেদের মধ্যে অপরাধীদের বিভিন্ন গ্রুপ ও উপ-গ্রুপ তৈরি করছে এবং ক্যাম্পে আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেদের মধ্যের বিভিন্ন গ্রুপের সাথে সংঘর্ষে হচ্ছে। অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরেই ১৫ থেকে ২০টি সক্রিয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে এবং প্রতিটা বাহিনীতে ৩০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত সদস্য রয়েছে। চলমান মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ড এরাই নিয়ন্ত্রন করছে। সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পগুলো অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে এবং তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোলাগুলি ও খুনাখুনির মত ঘটনা ঘটছে।

বিজ্ঞাপন

মিয়ানমার থেকে মাদকের চালান রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আসার কারণে এগুলো এদেশের মাদক পাচারের অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। এসব ক্যাম্প হয়ে প্রতিদিন শত কোটি টাকার ইয়াবা ও নতুন মাদক ক্রিস্টাল মেথ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, ক্যাম্পে প্রতিদিন কয়েকশ কোটি টাকার বেশি ইয়াবার লেনদেন হয়। আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ লাখ ইয়াবা প্রতিদিন হাতবদল হচ্ছে। মূলত ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

১৪ নভেম্বর র‌্যাব ও ডিজিএফআই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তমব্রু এলাকায় মাদকবিরোধী যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে এই অভিযান চালানো হচ্ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে মাদকবিরোধী অভিযানে গিয়েছিল। অভিযান চলাকালে মাদক চোরাচালানিদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় রোহিঙ্গা মাদক চোরাচালানকারীদের গুলিতে দায়িত্বরত অবস্থায় ডিজিএফআইয়ের এক কর্মকর্তা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে শহিদ এবং র‌্যাবের এক সদস্য আহত হয়। কারা এই ঘটনায় জড়িত রয়েছে, সেসব তথ্য উৎঘাটনের জন্য তদন্ত চলছে। মাদকবিরোধী অভিযানের ওই জায়গাটি নোম্যান্সল্যান্ডে অবস্থিত এবং সেখানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনই হচ্ছে এসব সমস্যার একমাত্র সমাধান। রোহিঙ্গারা দিনের পর দিন যে ভাবে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে তার ফলে স্থানীয়দের নিজ এলাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে অনেকে মনে করছে। রোহিঙ্গারা এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। এখন স্থানীয়দের একটিই দাবি রোহিঙ্গাদেরকে দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হোক। প্রত্যাবাসন যত বিলম্বিত হচ্ছে, সমস্যা ততই বাড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। কিন্তু তাদের অবস্থান দীর্ঘয়িত হওয়ার কারনে এবং রোহিঙ্গাদের সহিংস আচরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে সেই সময়ের সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারনে স্থানীয়রা বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে যার মধ্যে পণ্যের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি প্রধান। এরপরে আসে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি কমে যাওয়া। রোহিঙ্গাদের আগমনের কারণে স্থানীয়দের দৈনন্দিন ও সামাজিক জীবনযাত্রার ও ব্যাঘাত ঘটছে। তাদের কারণে স্থানীয়রা ফসলি জমি, শ্রম বাজার সব কিছু হারিয়েছে। দ্রুত প্রত্যাবাসন না হলে বর্তমানে যেভাবে মাদক ও অস্ত্র পাচার বৃদ্ধি পেয়েছে তা যদি আরও বাড়তে থাকে তাহলে স্থানীয়দের জন্য বিশাল হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এই রোহিঙ্গারা। কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে এবং তার অবনতি যাতে না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। এই সমস্যাগুলোর ইতিবাচক দিক হল, এতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মনে সবসময় একটা চিন্তা থাকবে যে তারা এখানে স্থায়ী ভাবে থাকার জন্য আসেননি, তাদের নিজ দেশে ফিরতে হবে।তবে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা না করতে পারলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে।

বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কক্সবাজারে আশ্রিত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজ শুরু করেছে। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ এবং এই অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ, যা স্থানীয় জনসংখ্যার দ্বিগুণ। রোহিঙ্গা শিবির সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতে, যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে তত বেশি অস্থিরতা ও নানা অপরাধ বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়ছে হত্যা, গুম, মাদক চোরাচালান ও অপহরণসহ নানা অপরাধ। প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের হাতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয়রা। কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগণের জন্য ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন(ইইউ)। কক্সবাজার ও ভাসানচরের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের জন্য ইউএনএইচসিআরের কার্যক্রমে ই ইউ’র চলমান মানবিক সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১৯ জুন বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানকারী রোহিঙ্গারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ‘বাড়ি চলো’ কর্মসূচির আয়োজন করে। এর মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের সাত দফা দাবী তুলে ধরে ও মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানায়। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের আট লাখেরও বেশি তালিকা থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে বাছাই করেছে, এতে তাদের প্রকৃত সদিচ্ছার বিষয়ে সন্দেহের উদ্রেক করে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা অংশ দেশে ফিরতে চায় না। অনেকের মতে এই সশস্ত্র দলটির সাথে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ রয়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে সংঘবদ্ধ হয়ে নিজের অধিকারের কথা বলতে না পারে সেজন্য তাদের নেতাদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। অনেকের মতে প্রত্যাবাসন বিরোধীরা মিয়ানমার সরকারের সাথে আঁতাত করে রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ফেরার বদলে বাংলাদেশে রাখতে চাচ্ছে। প্রত্যাবাসন বিরোধী নেতারা বিলাসী জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াতে তারা এখন মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় না। এদের সহায়তা করতে মিয়ানমার ইয়াবা, মাদক, অস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী চোরাচালানের অবারিত সুযোগ করে দিয়েছে। এ থেকে অনেকে ধারণা করে যে মিয়ানমার এই দলকে সহায়তা করছে। তাদের সাথে যোগাযোগ নিশ্চিত করতে মিয়ানমার পোস্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেসন্স বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে টাওয়ার বসিয়েছে ও আকর্ষণীয় অফার সহ কম দামে সিম কার্ড বিক্রি করছে বলে জানা গেছে। ক্যাম্পের অনেক রোহিঙ্গা এই সিম ব্যবহার করছে এবং এদের মাধ্যমে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পের তথ্য পাচ্ছে এবং নানা ভাবে তারা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করছে।

চলমান কার্যক্রম
ক্যাম্পের শান্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে, অভিযানে যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে ও ক্যাম্পের মধ্যে টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত ক্যাম্পসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় চার বছরে প্রায় ১৯০টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ক্যাম্পগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অস্ত্রধারীদের ধরতে অভিযান চলছে।

স্থানীয় প্রশাসন এসব ঘটনায় সমস্যায় পড়ছে তবে তারা নিরলসভাবে ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ড্রোনের সাহায্যে সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে এবং ১৭ ধরনের অপরাধের কারনে ৫ হাজার ২২৯ জন রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে ২ হাজার ৩০৯টি মামলা করা হয়েছে।

ক্যাম্প এলাকায় টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, এপিবিএনের আওতাধীন ক্যাম্পগুলোতে প্রতি রাতে প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। এতে ক্যাম্পের অপরাধীরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এপিবিএনের পাশাপাশি অন্য আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার বিপুলসংখ্যক সদস্য কাজ করছে।

২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে স্বেচ্ছায় পাহারা ব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগ, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো অপরাধ কয়েকগুণ কমে গেছে এবং মাদক ও, অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়েছে।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রন, পরিবেশ বিপর্যয় এবং কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলোর ওপর থেকে চাপ কমাতে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে যা একটি দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ । এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। সবমিলিয়ে এক লাখ রোহিঙ্গাকে সেখানে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আরও আগে এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে ও বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোকে সহায়তা করলে এই সমস্যাগুলো কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকত।

করনীয়
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে দ্রুত প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই সংকটের সমাধান সম্ভব বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে আরও জোরালো ভূমিকা পালনের ওপর জোর দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক দেশগুলোর সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে মিয়ানমারের পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এনে রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য অনুকুল করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় আরাকান আর্মি ও এন ইউ জি মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করে প্রত্যাবাসনের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

ক্যাম্পের জনঘনত্ব কমিয়ে দ্রুত রোহিঙ্গাদেরকে ভাসানচরে পাঠানোর কার্যক্রম নিতে হবে, আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোকে এই উদ্যোগের গুরুত্ব ভালভাবে বুঝাতে হবে এবং তাদেরকে দ্রুত এই কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।

মিয়ানমারের রাখাইনে জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যক্রম জোরালো করতে হবে যাতে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যেতে নিরাপদ বোধ করে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকরী ভুমিকা নিতে হবে।

রোহিঙ্গাদেরকে কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে যাতে তারা স্থানীয়দের জন্য হুমকি কারন না হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো যাতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যহত করতে না পারে সেজন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রনের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে।

মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করতে হবে। ড্রোন ক্যামেরা, গোয়েন্দা তৎপরতা ও ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে নজরদারি আর বাড়াতে হবে। নিরাপত্তা তল্লাসী ও টহলের পাশাপাশি অপরাধী নির্মূলে তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাসীদের আস্তানায় বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।ক্যাম্পের সামগ্রিক অপরাধ দমনে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে।

পাঁচ বছরের বেশী সময় ধরে অবস্থান কারী রোহিঙ্গাদের একাংশ এখন মানবিক আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তাদেরকে হত্যা করছে যা কখনো কাম্য নয়। এ ধরনের পরিস্থিতি আমাদের দেশের নিরাপত্তা ব্যহত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তায় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের পেশাদার, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্রুত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে এটাই প্রত্যাশা।

লেখক: এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, এম ফিল; মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন মত-দ্বিমত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আত্মত্যাগ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর