Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইসলাম ও আওয়ামী লীগ সরকার

মাহমুদুল হাসান শামীম
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৫২

বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন– “আমরা লেবাস সর্বস্ব ইসলামে বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম (স.)-এর ইসলাম, যে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র।” স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে গণপরিষদে এক ভাষণে জাতির জনক বলেছিলেন, “ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।”

বিজ্ঞাপন

সোনার বাংলা গড়ার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের এ দেশে ইসলামের সঠিক মূল্যবোধ কায়েম করতে চেয়েছেন। মানুষকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষায় আলোকিত করতে চেয়েছেন, যাতে শান্তিপূর্ণ ও মানবিক সমাজ গড়ে ওঠে। বাংলাদেশকে সব ধর্মের সব মানুষের জন্য শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি ছিলেন সদাসচেষ্ট। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালীন ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিনের শাসনামলে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণার্থে গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ভৌত অবকাঠামোগত পদক্ষেপ যেমন ছিল, তেমনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে তিনি ইসলামের প্রচার-প্রসারে গ্রহণ করেছিলেন বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকরী বিভিন্ন ব্যবস্থা। তিনি যেমন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, তেমনি বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি।

বিজ্ঞাপন

পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সদ্যস্বাধীন স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক বিশাল সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, “বাংলাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। ইসলামের অবমাননা আমি চাই না… এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান সবাই সুখে থাকবে, শান্তিতে থাকবে।”

ইসলামে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামের নামে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও, পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে অবাধে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ চলতো। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুই প্রথম আইন করে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান জারি করেন।

পাকিস্তানি আমলে ঢাকার বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। সেখানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হতো এবং একে কেন্দ্র করে চলত জুয়া, হাউজি ও বাজি ধরা। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বাজিতে হেরে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হতেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে রেসকোর্স ময়দানে ঘোড়দৌড় বন্ধ করেন। মহানবী (স.) বৃক্ষরোপণের নির্দেশনায় অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সেখানে বৃক্ষরোপণ করেন এবং রেসকোর্স ময়দানের নাম বদলে রাখেন ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’।

বঙ্গবন্ধু তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থায়ী বন্দোবস্ত হিসেবে তুরাগ নদীর তীরে ১৬০ একরের বিশাল জায়গা প্রদান করেন। সেখানেই আজ পর্যন্ত তাবলিগ জামাত প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন করে আসছেন। তাবলিগ জামাতের মারকাজ বা কেন্দ্র নামে পরিচিত কাকরাইল মসজিদের সম্প্রসারণ করতে রমনা পার্কের অনেকখানি জায়গার প্রয়োজন যখন দেখা দেয়, তখন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নির্দ্বিধায় কাকরাইল মসজিদকে জমি দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে করে দেন। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে ধর্মীয় প্রচারণার সুযোগ ছিল না। কিন্তু সোভিয়েত সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুযোগে বঙ্গবন্ধু তাবলিগ জামাতের একটি দলকে সে দেশে পাঠিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে হজযাত্রীদের জন্য সরকারি তহবিল থেকে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো অনুদানের ব্যবস্থা এবং হজযাত্রীদের ভ্রমণ কর রহিত করেন। এসব সুবিধা ভারতবর্ষ কিংবা পাকিস্তান আমলেও ছিল না। এ দিকে ইসলামি আকিদাভিত্তিক জীবন গঠন ও ইসলামি শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড পুনর্গঠন করেন। জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার আধুনিকরণের পাশাপাশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন উচ্চ শিক্ষার দরজা উন্মুক্ত করা এবং মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরির নিশ্চয়তা ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করেছিলেন। আগে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড স্বায়ত্তশাসিত ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে এর নাম রাখেন ‘বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড’।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টিভিতে কুরআন তিলওয়াত ও তাফসির শুরু হয়।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুই সর্বপ্রথম আলেম-ওলামাদের সংগঠিত করে পবিত্র ইসলামের সঠিক রূপ জনগণের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নেন। তার দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় “সিরাত মজলিশ” নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। সিরাত মজলিশ ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে রবিউল আউয়াল মাসে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করে। সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে মাহফিলের উদ্বোধন করেন। একজন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিলের উদ্বোধন উপমাহাদেশের ইতিহাসে প্রথম দৃষ্টান্ত। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনে প্রতিবছর জাতীয়ভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা) মাহফিল উদযাপন হয়ে আসছে।

এমনকি ইসলামের ধর্মীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে ঈদে-মিলাদুন্নবী (স), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। এই দিনগুলোর পবিত্রতা রক্ষার জন্য সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশের ইসলামিক ভুমিকা তুলে ধরতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন করেন এবং যুদ্ধে বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থনে এক লাখ পাউন্ড চা, ২৮ সদস্যের মেডিকেল টিমসহ একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী পাঠানো হয়।

মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগ দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে ইসলাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মুসলিম নেতাদের সামনে যে বক্তব্য তুলে ধরেন, এতে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে।

শান্তি, কল্যাণ ও মানবতার ধর্ম ইসলামের অপব্যাখ্যা করে ধর্মান্ধ সুবিধাবাদীগোষ্ঠী বার বার এ দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে, মানুষের সঙ্গে অন্যায় অবিচার করেছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের এই দেশে, প্রতিটি সাধারণ মানুষের কাছে ইসলাম ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ এক অধ্যাদেশ বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বায়তুল মোকাররম সোসাইটি’ এবং ‘ইসলামিক একাডেমি’ নামক তৎকালীন দুটি সংস্থার বিলোপ করে এ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক এই ফাউন্ডেশনই এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত মুসলিম বিশ্বের অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্থা হিসেবে পরিচিত।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঢাকার প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশের ৬৪টি জেলা কার্যালয় রয়েছে, আর্ত-মানবতার সেবায় রয়েছে ২৮টি ইসলামিক মিশন। সাতটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ২৮ খণ্ডে ইসলামি বিশ্বকোষ, ১২ খণ্ডে সিরাত বিশ্বকোষ প্রকাশ করে ধর্মীয় জ্ঞানের বিস্তারে অসামান্য অবদান রেখেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

এই প্রতিষ্ঠান থেকে এখন পর্যন্ত পবিত্র কুরআনের বাংলা তরজমা, তাফসির, হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসূল (স.)-এর জীবন ও কর্মের ওপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামি আইন ও দর্শন, ইসলামি অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবি ও মনীষীদের জীবনী ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। এসব বই শুধু বাংলাদেশের পাঠকদের কাছেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও বিপুলভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু অসামান্য অবদান রেখেছেন, তা পুরো মুসলিম বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত।

আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার অনুসৃত নীতি বাস্তবায়নে আরো যুগোপোযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন বাংলাদেশে ইসলামের বিকাশ, প্রসার ও চর্চার জন্য। দেশের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিটি জেলা উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ তারই একটি দুরদর্শী ও সাহসী উদ্যোগ। এছাড়া অন্যান্য উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে- আল-কোরআনের ডিজিটালাইজেশন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। দেশের ৩১টি কামিল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও সম্প্র্রসারণ, ১৭০ মিটারের সুউচ্চ মিনার নির্মাণ, দক্ষিণ সাহান সম্প্রসারণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও পূর্ব সাহানের ছাদ নির্মাণ, মহিলাদের নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ, সাহানের স্থান সম্প্রসারণ ও কমপ্লেক্স নির্মাণ এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ ইত্যাদি।

বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও রাজকীয় সৌদি আরব সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর; হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার; জেদ্দা হজ টার্মিনালে ‘বাংলাদেশ প্লাজা’ স্থাপন; আশকোনা হজক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি; রেকর্ড সংখ্যক হজযাত্রী প্রেরণ; হজ ব্যবস্থাপনায় সৌদি সরকারের স্বীকৃতি; মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমে আলেম-ওলামাদের কর্মসংস্থান ও বেতন-ভাতা বৃদ্ধি; শিশু ও গণশিক্ষা এবং কোরআন শিক্ষা কার্যক্রমে মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি।

এছাড়া আরও রয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতিতে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ; আলাদা কমিশন গঠন করে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদান; ১০০০টি বেসরকারি মাদ্রাসার একাডেমিক ভবন নির্মাণ; প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নাধীন; ইমাম প্রশিক্ষণ কার্যক্রম; ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন; ইসলামী প্রকাশনা প্রকল্প বাস্তবায়ন; ইসলামিক মিশন কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা; মসজিদ পাঠাগার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন; ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম ডিজিটালে রূপান্তর, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ইসলাম শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন, মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান; চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের উন্নয়নে বিশাল অঙ্কের বাজেট অনুমোদন; চট্টগ্রাম জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেক্স ফাউন্ডেশনের অনুকূলে ন্যস্তকরণ, পবিত্র রমজানে মসজিদে মসজিদে ব্যাপক কোরআন শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অনুমোদিত প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন মডেলে ইসলামী মূল্যবোধের প্রতিফলন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণের ঘোষণা ও বাস্তবায়ন, উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মসজিদ সরকারিকরণ এবং একটি গ্রাম একটি মক্তব চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি।

এবার এই উদ্যোগগুলোর কয়েকটির সাফল্য উল্লেখ করা যাক। বায়তুল মোকাররম মসজিদে মহিলাদের নামাজের স্থান সম্প্রারণ করায় এখন একসঙ্গে ৫ হাজার ৬০০ মহিলা নামজ পড়তে পারেন। মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পে সরকার ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সুবাদে ৮০ হাজার আলেম ও ওলামার কর্মসংস্থান হয়েছে। সাড়ে ১০ হাজার শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও ২৫০টি বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্রে এ পর্যন্ত ৯৬ লক্ষ ৬০ হাজার শিশু ও বয়স্ক মানুষ প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা, স্বাক্ষরতা ও ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেছে। সাড়ে ৪ লক্ষ কোরআন শরীফ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে দুঃস্থ ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়। দেওয়া হয় বিনা সুদে ঋণ। ইমাম-আলেম-ওলামাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অর্থনৈতিক জোন করারও পরিকল্পনা নিচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার। এছাড়া প্রতি অর্থবছরে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারের জন্য প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে আড়াই লাখ এবং প্রত্যেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্যকে দেড় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর বাইরে প্রধামন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকেও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।

আর যে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে তা থেকে পাওয়া যাবে বহুবিধ সুবিধা কারণ মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কার্যক্রমগুলো হচ্ছে-

১. মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরি হবে।
২. ইসলামি নানা বিষয়সহ প্রতিবছর এক লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ পাবে।
৩. এসব মসজিদে সারাদেশে প্রতিদিন একসঙ্গে চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী নামাজ আদায় করতে পারবেন।
৪. লাইব্রেরিতে প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক এক সঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন।
৫. ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ পাবেন ৬ হাজার ৮০০ জন।
৬. ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।
৭. দুই হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থা থাকবে।
৮. পবিত্র হজ পালনের জন্য কেন্দ্রগুলোতে ডিজিটাল নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।
৯. উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
১০. মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়া কার্যক্রম ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সেই পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ইসলাম বিরোধী হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চারনীতির একটি ধর্ম নিরপেক্ষতা- যার মানে স্ব স্ব ধর্ম পালনে সবার স্বাধীনতা। সেটিরও অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মহীনতার অভিযোগ তোলা হয়েছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। ধর্ম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হয়। অথচ বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার, প্রসার, বিকাশ, চর্চা, ধর্মীয় শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষক, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, আলেম, ওলামা, ইমাম, মুয়াজ্জ্বিন ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে যা কিছু করা হয়েছে তার সবই করেছেন বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামীলীগ সরকার।

তথ্যসূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ধর্মমন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা, আওয়ামীলীগের নির্বাচনী জেড কার্ড

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, সংবাদ বিশ্লেষক

সারাবাংলা/এসবিডিই

ইসলাম ও আওয়ামী লীগ সরকার মত-দ্বিমত মাহমুদুল হাসান শামীম

বিজ্ঞাপন

বরিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৩১

বাঘায় কৃষককে গলা কেটে হত্যা
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৪৩

আরো

সম্পর্কিত খবর