Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাতির নিভৃত এক পথপ্রদর্শক

রাশেক রহমান
৯ মে ২০২৩ ১৪:৩০

নিজের পরিবারকে দায়িত্ববোধের সঙ্গে সামলানোর কাজ করে যাওয়া প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। একইসঙ্গে আদর্শে অনড় থেকে লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও জাতির সেবা করে যাওয়া যে কোনও মানুষের আরাধ্য বিষয় হয়ে থাকে। আবার ক্ষমতার চূড়ান্তে থেকেও একান্তে নিভৃতে মানুষের জন্য, দেশের জন্য কাজ করে যাওয়াটাও সবাই করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে সবাই এই তিনের সমন্বয় করে উঠতে ব্যর্থ হোন। এই কাজ যারা পারেন বা পেরেছেন তাদের একজন হলেন বাংলাদেশের কৃতি সন্তান, বাঙালি জাতির এক গর্বিত ও আলোকিত মানুষ ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় জামাতা ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বামী তিনি। তার দুই সন্তান। বড় জন সজীব ওয়াজেদ জয় যিনি একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। ছোট মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল, একজন মনোবিজ্ঞানী যিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গঠিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য।

ড. ওয়াজেদ মিয়া শুধু বঙ্গবন্ধুর জামাতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী বা সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলের পিতাই নন, তিনি নিজ গুণেই ছিলেন গুণান্বিত ও নিজ পরিচয়ে বৈশিষ্টমন্ডিত একজন গুণী মানুষ। তিনি ছিলেন দেশের একজন বড়মাপের তাত্ত্বিক নিউক্লীয় পদার্থবিদ যার প্রশংসা ছিল বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের একজন পরমাণু বিজ্ঞানী হিসেবেই একসময় আন্তর্জাতিক মণ্ডলে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন নীরবে দেশের সেবা করে যাওয়া ওয়াজেদ মিয়া। তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যা দেওয়া বাংলাদেশের একজন কৃতি সন্তান যাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। যিনি বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন কর্মগুনেই মানুষের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী।

একটা সময়ে রাজনৈতিকভাবে ড. ওয়াজেদ মিয়াকে তত বেশি সক্রিয় দেখা না গেলেও উনি কিন্তু ছাত্রাবস্থায় ছিলেন একজন তুখোড় ছাত্রনেতা এবং ভালো একজন সংগঠক। ছাত্রলীগের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে ওই সময় থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার সময় সংশ্লিষ্ট হন ছাত্র রাজনীতিতে। তিনি ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৯৬১- ৬২ শিক্ষা বছরের জন্য হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ করেন। ১৯৬৩ সালের ১ এপ্রিল তিনি তৎকালীন পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনের চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৬৩- ৬৪ শিক্ষা বছরে তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের ‘ডিপ্লোমা অব ইম্পেরিয়াল কলেজ কোর্স’ কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করেন। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলে তাকে ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকার আণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পদস্থ করা হয়। সেই বছরেই তিনি বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৬৯ সালে ইতালির ট্রিয়েস্টের আন্তর্জাতিক তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র তাকে এসোসিয়েটশিপ প্রদান করে। এই সুবাদে তিনি ১৯৬৯-৭৩ ও ১৯৮৩ সালে ওই গবেষণা কেন্দ্রে প্রতিবার ৬ মাস ধরে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের নভেম্বর থেকে ১৯৭০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের ড্যারেসবেরি নিউক্লিয়ার ল্যাবরেটরিতে পোস্ট ডক্টোরাল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন।১৯৭৫ সালের ১ অক্টোবর থেকে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের দিল্লির ল্যাবরেটরিতে গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বহু জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান বিষয়ক সম্মেলনে যোগদান করেন। তার অনেক গবেষণামূলক ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় এবং সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

আজকাল অনেককেই দেখা যায় আত্মীয়তার আড়ালে নিজেদের সুবিধা খুঁজে নেয়। কিন্তু যখন আমি ভাবি ড. ওয়াজেদ মিয়ার কথা, তখন শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। তিনি নিজেই ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ কিন্তু কখনও বঙ্গবন্ধুর জামাতা হিসেবে রাজনৈতিক কোনও সুবিধা নেননি। যিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্য তিনি চাইলেই পারতেন অনেক সুবিধা ভোগ করতে। কিন্তু তাও তিনি করেননি। একজন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী হিসেবে চাইলেই তিনি পারতেন সুবিধা নিতে। সেটাও তিনি করেননি। একজন বিরোধী দলীয় প্রধানের স্বামী হিসেবেও তিনি নেননি কোনও সুবিধা। তিনি সারাজীবন নিজের কাজটাই করে গেছেন দায়িত্ব নিয়ে।

আমৃত্যু বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে বিপদে আগলে রেখেছিলেন সকলকে। শুধু পরিবারই নয়, এ সময়ে তার দেশের প্রতি দায়িত্বও তিনি পালন করে গেছেন। সবসময়েই চেষ্টা করে গেছেন দেশের জন্য ভালো কিছু করে যেতে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের সময় ওয়াজেদ মিয়া গবেষণা ফেলোশিপের জন্য জার্মানিতে ছিলেন। ১৫ আগস্ট রাতে তারা ছিলেন বেলজিয়ামে। সেখান থেকে সেই দুঃসহ মুহূর্তগুলোতে একবারের জন্যেও তিনি স্ত্রী, সন্তান ও বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা শেখ রেহানাকে ছেড়ে যাননি। বরং আগলে রেখেছেন সকলকে। চাইলেই তিনি পারতেন নিজের সুখের জীবনের কথা ভাবতে। কিন্তু তিনি সেটাও করেননি। নানা প্রতিকূলতায় সেই সংকট মোকাবিলা করতে হয়েছে তাকে। বেলজিয়াম থেকে জার্মানি যাওয়া। সেখানে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যাদের ভারতে নিয়ে আসা ও সেখানের কষ্টকর জীবনেও আগলে রাখা। একটা মানুষ কতটা দায়িত্বশীল হলে এমন মহান হতে পারেন তা বলার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু কী তাই? ভারতের তৎকালীন ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরে যখন মোরারজী দেশাই ক্ষমতায় আসেন তখন ড. ওয়াজেদ মিয়ার ফেলোশিপ আবেদনের কাগজও ফেলে রাখা হয় তিন মাস। সেই তিনটা বছর আরও নানা কষ্টের মধ্যেও তিনি আগলে রাখেন পরিবারকে বটবৃক্ষের মতো ছায়া দিয়ে।

আজ ৯ মে। জাতির কৃতি সন্তান ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যু দিবস। ২০১৯ সালের আজকের এই দিনে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাসভূমি রংপুরের পীরগঞ্জে তার সঙ্গে দেখা করার। সেখানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সজীব ওয়াজেদ জয়ের নামে নামকরণ করা ‘জয় সদনে’ গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের (বিএনসিসি) প্রায় আড়াই হাজার সৈনিক। সেখানে তাদের উদ্দেশ্যে ড. ওয়াজেদ মিয়া কে, উনি কেমন মানুষ ও উনার জীবন সম্পর্কে কিছু কথা বলেছিলাম।

তাদের বলেছিলাম, আগামী দিনের সমৃদ্ধ, উন্নত বাংলাদেশের সত্যিকার অংশীদার তরুণরা। সেই উন্নত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সঙ্গে পরিচিত হতে হলে আজকে এই পবিত্র ভূমি যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি সেটা অতি প্রাসঙ্গিক। বাঙালি জাতির জনক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় জামাতার বাড়ি হলো এই পীরগঞ্জে। শুধু তাই নয় বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাড়ি এটা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন যিনি হাজার বছর ধরে নির্যাতিত বাঙালির স্বাধীনতার জন্য করা ক্রন্দন উপলব্ধি করেছিলেন। সেই মুক্তির ক্রন্দন উপলব্ধিতে নিয়ে তিনি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি এর মধ্য দিয়ে সবাইকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে আমরা শুধু রাখাল, কৃষক, শ্রমিকের জাতি নই। আমরাও যুদ্ধ করতে পারি।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ দেওয়া এক অমর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সমগ্র বাঙালি জাতিকে যোদ্ধা জাতিতে রূপান্তরিত করেন। এর ফলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছিল এই বীর বাঙালি। সেদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল বাংলার সকল স্তরের মানুষ।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পরেও নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে তিনি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের দিল্লিতে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। মহাখালীতে একটি বাসা নিয়ে কষ্ট করেই তিনি আবার শুরু করেন পরিবারের জন্য পথচলা।

শুধু তো পরিবারের জন্যে নয় বরং দেশের জন্যেও তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ একজন দেশপ্রেমিক। নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে দেশ-বিদেশে তার যথেষ্ট পরিচিতি ছিল। নিউক্লিয়াসের গড়ন ও নিউক্লীয় বর্ণালি বিষয় ছিল তার গবেষণার বিষয়। তিনি এই গবেষণাভিত্তিক কাজই পছন্দ করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েই পাল্টাবে বাংলাদেশ। কর্মজীবনে গবেষণার পাশাপাশি তিনি প্রথমে ঢাকা আণবিক শক্তি কেন্দ্রের পরিচালক এবং পরে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। সফল গবেষকের পাশাপাশি ড. ওয়াজেদ ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠকও। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ পদার্থবিদ্যা সমিতি ও পেশাজীবী বিজ্ঞানীদের সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিল। এছাড়া অনেক জনকল্যাণমূলক সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত থেকে সমাজের ও দেশের সেবা করে গেছেন কিন্তু কোনও রাষ্ট্রীয় সাহায্যের আশা করেননি।

বাঙালি জাতির এক গর্বিত ও আলোকিত মানুষের নাম ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী এই পরমাণু বিজ্ঞানী। ক্ষমতার শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও তার নির্মোহ জীবনযাপন তাকে জাতির কাছে করেছে চির অমর। আমি আজকে দায়িত্ব নিয়ে দাবী করতে পারি বাংলাদেশের কোনও মানুষ ব্যবসা, বাণিজ্য বা তদবির করার জন্য ড.ওয়াজেদ মিয়ার কাছে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি।

ড. ওয়াজেদ মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পদার্থ বিজ্ঞান, ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ছাত্রদের জন্য দুটি বই রচনা করেছেন। বই দুইটির নাম ‘ফান্ডামেন্টালস অফ থার্মোডায়নামিক্স’ (প্রকাশক ইউনিভার্সিটি প্রেস,১৯৮৮) ও ‘ফান্ডামেন্টালস অফ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিকস’ (প্রকাশক টাটা-ম্যাকগ্র হিল, ১৯৮২)। এই দুইটি বই এখনো তার গবেষণার স্ফুরণ ঘটায়। উনার লেখা ৪৬৪ পৃষ্ঠার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৩ সালের জানুয়ারিতে এবং ৩২০ পৃষ্ঠার ‘বাংলাদেশের রাজনীতি ও সরকারের চালচিত্র’ শিরোনামের গ্রন্থটি ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড কর্তৃক প্রকাশিত হয়।

পরিশেষে একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শেষ করি। একবার আমার বাবা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাসায়। যদি স্মৃতি আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে তবে আমার এখনো মনে আছে উনার হাতে ছিল একটি ৫৫৫ ব্রান্ডের সিগারেট। বাবা উনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি এতো নিষ্ঠা, সততার সঙ্গে নির্মোহভাবে জীবন কাটান কিভাবে? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, আমি চাই এই বাংলাদেশ পরিবর্তন হোক বিজ্ঞানের হাত ধরে। আমাদের তরুণরা নিজেদের শিক্ষিত করে তুলুক বিজ্ঞানের আলোকে।

আমি যদি বলি উনার এই চিন্তাভাবনার ছোঁয়া পড়েছে তার সন্তানদের মাঝেও তবে সেটা অবশ্যই ভুল হবে না। ড. ওয়াজেদ মিয়া শুধুমাত্রই একজন বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী ছিলেন না, ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টাও। তার মেধা তার শক্তি, তার দৃঢ়তা, তার সততা এবং আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সততা, দৃঢ়তা ও প্রজ্ঞা আজ সজীব ওয়াজেদ জয়ের ধমনীতে প্রবাহিত। একই রক্ত প্রবাহিত আমাদের দেশের গর্ব সায়েমা ওয়াজেদ পুতুলের মাঝেও। দুইজনেই বিজ্ঞানের সাহায্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছায়াতলে থেকে। রূপপুর নিউক্লিয়ার প্লান্ট এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। মহাকাশে পৌঁছে গেছে আমাদের স্যাটেলাইট। মানুষের জীবনে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আর এসবই সম্ভব হচ্ছে স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়ন করার জন্য।

আমি আজকের এই দিনে বিএনসিসির সেই তরুণ সৈনিকদের বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতেন, তুমি যা স্বপ্ন দেখবে তা বাস্তবায়ন করতে পারবে। ড. ওয়াজেদ মিয়া একজন অনন্য বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি একজন বিশ্বনন্দিত পরমানুবিদ ছিলেন। তিনিও বিশ্বাস করতেন যারা স্বপ্ন দেখেন তারা তা বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারবেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বাস করেন, স্বপ্ন দেখার থেকে বড় কোনও শক্তি নাই।

আমাদের সৌভাগ্য যে আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন যিনি তিনি শুধু স্বপ্নই দেখেন না। সেটা বাস্তবায়ন করেন। আমরা বিশ্বাস করি তার হাত ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে উন্নত বাংলাদেশ সৃজনের চেষ্টা করছেন সেই চেষ্টা অন্তিম সফলতার দিকে এগিয়ে যাবে। তার জন্য আমরা তাকে অভিনন্দন জানাতে পারি।

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ এখন তারুণ্যের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কিশোর, তরুণ, যুবকদের সবচাইতে বড় হাতিয়ার হচ্ছে স্বপ্ন দেখা। সেই স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়ন করার জন্য এগিয়ে যাওয়া। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের প্রতিটি সদস্য এখন পর্যন্ত সেটি দেখিয়ে গেছেন। উনারা স্বপ্ন দেখাননি শুধু। বরং উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য ভূমিকা রেখে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন এখনও।

আজকের এই দিনে তা ড. ওয়াজেদ প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে একটি কথাই বিশ্বের সঙ্গে বলতে চাই। তিনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশে বিজ্ঞান চর্চা ও ব্যবহার বাড়বে। উনারই দুই সন্তান আজ উনার মতো করে স্বপ্ন দেখে কাজ করে যাচ্ছেন। যদি সবাই মিলে এভাবেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাজ করে যাই তবে বাংলাদেশে আরও এগিয়ে যাবে বহুদূর সমৃদ্ধির পথে।

আর এই স্বপ্ন দেখানো নিভৃতচারী একজন দেশপ্রেমিক ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখক: রাজনীতিবিদ

সারাবাংলা/এসবিডিই

জাতির নিভৃত এক পথপ্রদর্শক মত-দ্বিমত রাশেক রহমান


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর