প্রকৃতপক্ষেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের কারামুক্তি
১০ জুন ২০২৩ ১৮:৩৬
১১জুন, ২০০৮। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন। এই দিনে বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১০ মাস ২৫ দিন পর কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর আগে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। সেদিন শেখ হাসিনার কারামুক্তি ছিলো,বাংলাদেশের গণতন্ত্রেরই কারামুক্তি।
সেসময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে। তারা মনে করে শেখ হাসিনাই তাদের দীর্ঘস্থায়ী ভাবে ক্ষমতায় থাকার ক্ষেত্রে একমাত্র পথের কাঁটা। দেশকে বিরাজনৈতিকরণের করতে হলে শেখ হাসিনাকে মুক্ত রেখে কোনো ভাবেই সম্ভব নয়। তখন মিথ্যা ভূয়া চাঁদাবাজি মামলা দিয়ে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা গ্রেফতারের পূর্বে অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক নেতার পরিচয় দিয়েছেন। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপে হোক কিংবা লোভের বশিভূত হয়ে হোক দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে দু’টি গ্রুপ তৈরি হয়। একটি গ্রুপ মূলপন্থী, যারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি শতভাগ আস্থাশীল ছিলেন। আরেকটি গ্রুপ সংস্কারপন্থী,যারা সংস্কারের আড়ালে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার পক্ষে ছিলেন। এমন একটি কঠিন সময়ে কাউকে বিশ্বাস করে দলের দায়িত্ব দেয়াটা অত্যন্ত দূরহ ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেত্রী সঠিক কাজটিই করেছিলেন। আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সৈনিক এমনকি বঙ্গবন্ধুও যাকে বিশ্বাস করতেন, সেই অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ জিল্লুর রহমানের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা গ্রেফতারের পূর্বে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। তিনি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করতেন,কেন্দ্রীয় নেতারা বিভ্রান্ত হলেও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সহ দেশবাসী তাঁর প্রতি আস্থাশীল আছে। এজন্যই তিনি জাতির উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন।
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হওয়ার সময় দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠিতে বলেন,
প্রিয় দেশবাসী! আমার সালাম নিবেন। আমাকে সরকার গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। কোথায় জানি না। আমি আপনাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেই সারাজীবন সংগ্রাম করেছি। জীবনে কোন অন্যায় করিনি। তারপরও মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও আপনারা দেশবাসী আপনাদের ওপর আমার ভরসা। আমার প্রিয় দেশবাসী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে আবেদন কখনও মনোবল হারাবেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যাহাই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়বই। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবোই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চিঠিটি লক্ষ,কোটি নেতাকর্মীসহ দেশবাসীদের মনে অফুরন্ত সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতারের পূর্বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন বলেছিলেন, ‘এটাই আমার শেষ বার্তা,আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। তোমাদের যার যা কিছু আছে,তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কর। ঠিক ৩৬ বছর পর বঙ্গবন্ধু কন্যাও পিতার মতই জনগনকে দিকনির্দেশশনা দিয়ে বলেছিলেন,অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। জয় জনগণের হবেই। ৭১ সালে যেমন বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার জনগন বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগও জনগনকে সাথে নিয়ে ১/১১সরকারকে পরাজিত করে শেখ হাসিনাকে মুক্ত ও গনতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছিল।
শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। বিচারের নামে চলে প্রহসন। সংসদ ভবনে বসানো হয়েছিল স্পেশাল ক্যাঙারু কোর্ট। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যেকোনো মূল্যে দুর্নীতিবাজ বানানোর চেষ্টা করলেও তারা সফল হতে পারেনি।
শেখ হাসিনা জানতেন জনগণের ভালোবাসায় অচিরেই তিনি মুক্ত হবেন এবং দেশের নেতৃত্ব দিবেন। এজন্যই তিনি নির্জন কারাবাস কালেও অলস সময় কাটান নি। কারাগারের নির্জনতাকে তিনি তার রাজনৈতিক গবেষণায় পার করেছেন। ভবিষ্যতে দেশ ও জনগনের কল্যানে আরো কিভাবে উন্নতি করা যায় সেসব পরিকল্পনা করেছেন। কারাগারের স্মৃতিচারণে দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন,বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা, তা সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলোতেই তৈরি করেছি।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা ১১ জুন মুক্তি পেয়েই চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যান। চিকিৎসা শেষে ৬ নভেম্বর দেশে ফিরে আসেন। ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারী সরকার গঠন করে টানা তিন মেয়াদ সহ চতুর্থ বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মুক্তি পেয়েছিল বলেই,আজ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছেন। তারপর থেকে অনেক চেষ্টা করেও কেউ গণতন্ত্রকে হরণ করতে পারেনি। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই দেশি-বিদেশি চক্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ভূলণ্ঠিত করার চেষ্টা করে এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে গনতন্ত্রের চিহ্নিত শত্রুরা আবার উঠেপড়ে লেগেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বরাবরের মতো গণতন্ত্রের শত্রুরা পরাজিত হবে। গণতন্ত্রের বিজয় হবে।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ
ইমেইল: haldertapas80gmail.com
সারাবাংলা/এজেডএস