আবারো বাংলাদেশকে ঘিরে ছয় কংগ্রেস সদস্যের চিঠি ষড়যন্ত্র
১৮ জুন ২০২৩ ১৫:৫৬
পৃথিবীর মানচিত্রে বছরের পর বছর মাথা উঁচু করে সফলতার সাথে আছে দাঁড়িয়ে আছে মাতৃভূমি তুল্য আমাদের বাংলাদেশ। শিক্ষা, সাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং সম্পর্ক সকল ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সফল পদচারণা বর্তমান সময়ে জোরালোভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যসব উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্জন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনেক বেশী গর্বেও কিন্তু আমাদের জন্য দূর্ভাগ্য হলেও নিরেট সত্য এই যে, বাংলাদেশবিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র, যারা বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিব্রত করতে চায়, পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত করতে চায়- তারাই আন্তর্জাতিক লবিস্টদের সহায়তায় ভুল, মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থাকে গোপন করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাবিত করছে প্রতিনিয়ত। এটা অনেক বেশি দুঃখজনক যে, বাংলাদেশকে কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ না দিয়েই এমন সব অভিযোগ যেমন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে মার্কিন ভিসা নীতি, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত বলে তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহবান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে রিপাবলিকান মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি এবং এখন ঐ একই অভিযোগে মার্কিন ৬ জন ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যানের চিঠি দেওয়া মূলত স্বাধীন, সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার কংগ্রেস সদস্যদের দিয়ে বিএনপি-জামায়াত চক্রের ষড়যন্ত্রকেই নির্দেশ করছে। দেশকে নিয়ে ঐ একই ধরনের ষড়যন্ত্র বিএনপি করেছে ইউরোপীয় ইউনিউনের ৬ জন এমপিকে দিয়ে লবিং করে।তারাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো একই ধরনের মিথ্যা এবং বানোয়াট অভিযোগ করে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞার আহবান জানিয়েছেন।
পূর্বের ৬ জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানের ন্যায় আবারও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি লিখেছেন দেশটির ছয়জন ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক দলের কংগ্রেস সদস্য। তাঁরা হলেন উইলিয়াম আর কিটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, বারবারা লি, জিম কস্টা, ডিনা টাইটাস ও জেমি রাসকিন। কংগ্রেস সদস্য উইলিয়াম আর কিটিং গত মঙ্গলবার এক টুইটে বিষয়টি জানিয়েছেন। ৮ জুন দেওয়া ওই চিঠিতে কংগ্রেস সদস্যরা মিথ্যে অভিযোগ করে বলেছেন যে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আসায় মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। এটি নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি নিশ্চিতে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ও অন্যান্য সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন, সার্বভৌম, গণতান্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে প্রশংসনীয় দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যে এবং বানোয়াট অভিযোগ নিঃসন্দেহে বিশ্ব রাজনীতির আদর্শের পরিপন্থী। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা এক কথায় প্রশংসনীয়। প্রতিনিয়ত আমাদের গর্বের এই বাহিনী নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার কংগ্রেস সদস্যদের এবং ইউরোপীয় ইউনিউনের এমপিদের করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো এমন সব অভিযোগ একেবারেই অবান্তর এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বারবার গলা ফাটিয়ে এমন সব অভিযোগ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকারের হালচাল দেখতে আমরা যদি একটু চোখ রাখি ২০২১ সালের করা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করা এসব অভিযোগের আসল উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে ভেসে আসে আমাদের চোখে। যেমন ২০২১ সালের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অধিকারের ক্ষেত্রে পিছিয়ে যেতে থাকে। অমানবিক অভিবাসন নীতি এবং প্রচারিত মিথ্যা আখ্যান যা বর্ণবাদ এবং বৈষম্যকে স্থায়ী করছে; গণবন্দিত্ব মোকাবিলা করার জন্য প্রায় যথেষ্ট কাজ করেনি; নারীর অধিকার খর্ব করেছে। পুলিশি সহিংসতার সরকারি ট্র্যাকিং অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এছাড়াও ওয়াশিংটন পোস্টের মতে, পুলিশ ২০১৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৮৩ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে ২০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ছিল যদিও কৃষ্ণাঙ্গরা জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেন এবং সোমালিয়াসহ এই সমস্ত দেশগুলোয় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা হত্যা অব্যাহত রেখেছে, এর মধ্যে অনেকগুলো হয়েছে সশস্ত্র ড্রোন দিয়ে। অন্যদিকে ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রাক্তন সিনেটর রবার্ট রেইচ তার এক টুইটে বলেছিলেন যে, ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৮৪টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা কমপক্ষে ৬ হাজার ৭০০ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এর মানে গড়ে এক হাজার বিনাবিচারে মৃত্যুবরণ করেছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩০৩ জন পুরুষ এবং ২৯৪ জন মহিলা। আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৩ হাজার ৬০৭ জন ছিল। ছুরিসহ ১ হাজার ১১৯ জন। গাড়িসহ ২১৬ জন। খেলনা পিস্তলসহ ২৪৪ জন। আর ৪২১ জন নিরস্ত্র।
পক্ষান্তরে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের করা ২০২১ সালের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে র্যাবের ভূমিকাকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল যে, র্যাবের ভূমিকায় বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমেছে। তা সত্বেও তারা র্যাব ৭ শীর্ষ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে অহেতুক। ঐ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়েছিল, ‘২০২০ সালে বাংলাদেশে সন্ত্রাস-সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্ত ও গ্রেপ্তার বেড়েছে, কমেছে সন্ত্রাসী কর্মকা-।’ প্রতিবেদনের আরেকটি অংশে বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালজুড়ে র্যাব এবং ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসিইউ)’ কমিউনিটি পুলিশি কার্যক্রম ও সন্দেহভাজন বিদেশি সন্ত্রাসী যোদ্ধাদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি উগ্রবাদ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিলক্ষিত এসব কর্মকা- কী মানবাধিকারের লঙ্ঘনের সাথে সম্পর্কিত নয়? নিজ দেশের মানবাধিকারের এমন বেহাল অবস্থা থাকা সত্বেও বাংলাদেশের মতো এটা শান্তিপূর্ণ এবং উন্নয়নশীল দেশের বিরদ্ধে অভিযোগ করা কী প্রমাণ করেনা যে মানবাধিকারের নামে বিএনপি-জামাতের লবিস্ট হিসেবে তারা করে যাচ্ছে বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র? নিশ্চয় এগুলো মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট রাজনীতির অপতৎপরতা।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে নিজেদের মতো পথ চলতে চায়। আত্মমর্যাদায় বলীয়ান হয়ে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চায়। নিজেদের সুবিধার্থে সকালে একনীতি এবং বিকেলে আরেক নীতি অবলম্বনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো নীতি। আর এরই সুবাধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থের কারণে বাংলাদেশকে নিয়ে করে যাচ্ছে নতুন নতুন যড়যন্ত্র। আন্তর্জাতিক এসব ষড়যন্ত্রের পিছনে সরাসরি কলকাঠি নাড়ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামায়াত চক্র। তারা দূর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত দেশের মানুষের সম্পদ ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এসব লবিস্ট নিয়োগ করে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে করে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র। জনসমর্থনহীন বিএনপি-জামায়াত চক্র আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রের মাধ্যমে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে সব ধরনের অপপ্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে প্রশংসনীয় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের নামে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বাংলাদেশের উপর নিজেদের কর্তৃত্ববাদী প্রভাব সৃষ্টির করার জন্য। মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র কেবলমাত্র একটা মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে মূলত। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিএনপি-জামায়াত চক্রকে বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়ার দরকার।তাহলে তারা পরিস্কারভাবে বুঝতে পারবে যে, বাঙালিরা এসব মিথ্যে অভিযোগে ও ষড়যন্ত্রে ভয় করেনা। স্বাধীনতাযুদ্ধে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের দোসর বিএনপি-জামাত বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করেছিল কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক নেতৃত্বের ফলে সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে বাঙালি অর্জন করেছে নিজেদের স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উজ্জীবীত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার আদর্শিক নেতৃত্বে স্বাধীন, সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে নিয়ে করা সব ধরনের অবান্তর এবং অযুক্তিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ সফলতার সাথে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে থাকবে বলে প্রত্যাশা রাখি। বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশ এবং দেশের মানুষকে নিয়ে করা সব ধরনের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত নস্যাৎ করে দিয়ে এদেশের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সদা আপোষহীন।
লেখক: ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া আবারো বাংলাদেশকে ঘিরে ছয় কংগ্রেস সদস্যের চিঠি ষড়যন্ত্র মত-দ্বিমত