Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শহীদ কামারুজ্জামানের জন্মশত বার্ষিকী ও কিছু কথা

আয়শা এরিন
২৬ জুন ২০২৩ ১৬:৫৯

মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের বাস্তবতায় এবং স্বপ্নের কাঠামোগত প্রায়োগিক নির্দেশনা সম্পন্ন করতে তথা জাতিগত চাহিদা পূরণে আদেশক্রমে অনুরোধের রক্ষায় যেয়ে কোন ব্যক্তিসত্তার ধারাবাহিকভাবে টিকে থাকার মধ্য দিয়ে ‘নেতৃত্ব’ প্রতিভাত হয়। এমন মত দার্শনিক ঈশ্বরমিত্রের। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে রাজনীতি অনেকেই করেছেন, করছেন। তবে সকলেই রাজনীতিক হতে পারেন নি। রাজনীতি করলেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়া যায় না। আজ একটি বিশেষ দিন। একজন সফল ও সত্যিকারের রাজনীতিক শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের জন্মশতবার্ষিকী নিয়ে কিছু বলাই যাক।

বিজ্ঞাপন

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার কৃতি কন্যা বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যকার একটি বিশেষ ধরনের ভাগ্য নিয়ে আত্মজিজ্ঞাসায় মন দিয়ে এগোতে থাকি। রাজনীতি করতে যেয়ে তাঁরা উভয়ে কেমন দক্ষ ও বিশ্বস্ত সহকর্মী পেয়েছিলেন—-সেই প্রশ্নে। অতি সত্য বচনে গেলে বঙ্গবন্ধুই ভাগ্যবান ছিলেন।

শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক জীবনে, বিশেষত বর্তমান সময়ে তিনি অতি উচ্চতার রাজনৈতিক বন্ধু পান নি। পেলেও সে সংখ্যা তিন কী চার হতে পারে ! বরং, তাঁকে তাঁর বাবার সাথে রাজনীতি করা প্রয়াত জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আব্দুস সামাদ আজাদ, প্রয়াত আব্দুল জলিল, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদদের কে নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। অতি অবশ্যই প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কিংবা আজকের ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে তাঁর পথচলা মসৃণ ছিল। কিন্তু, মেধাবী রাজনীতিক হিসাবে তাঁর আশপাশে সেই উচ্চতার রাজনীতিকদের সংখ্যা কম। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। দেশে হয়তো আরও দুই একজনকে তিনি পাবেন, চেষ্টা করলে !

এদিকে বঙ্গবন্ধু তার রাজনৈতিক জীবনে বিশ্বস্ততার প্রশ্নে খন্দকার মোশতাক কিংবা কে এম ওবায়দুর রহমানদেরকে বাদ দিলে যাদের পেয়েছিলেন, তারা উঁচু স্তরের পুরোদস্তুর অথবা প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিক ছিলেন, ছিলেন তারা বিশ্বস্তও। তিনি যখন মুক্তি সংগ্রামের জন্য লড়ছিলেন, তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, মুহাম্মদ মনসুর আলীদের মত নেতাদের পেয়েছিলেন। আবার একই সঙ্গে তাঁর সাথে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল হক মণি, কাজী আরেফ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ, কামাল হোসেনরা ছিলেন, ছিলেন সে সময়ের চার বিপ্লবী ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকি, আসম আব্দুর রব, আব্দুল কুদ্দুস মাখন কিংবা শাহজাহান সিরাজেরা। সঙ্গত কারণেই বঙ্গবন্ধু অবশ্যই ভাগ্যবান ছিলেন। কারণ, আন্দোলন করার প্রশ্নে তিনি সেরা পর্যায়ের রাজনীতিক পেয়েছিলেন। আবার মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বৈশ্বিক দূতিয়ালির প্রশ্নে আলোচিত চার জাতীয় নেতার তার প্রতি আসক্তি, অনুগত ও বাধ্যগত কৃষ্টি অনুপস্থিত থাকলে অস্থায়ী সরকার গঠনের পথ পরিক্রমায় একটা সময়ে ‘নেতৃত্ব হাইজ্যাক’ হতে পারত বলেও অনুমিত হয়। কিন্তু, তা হয় নাই। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মুহাম্মদ মনসুর আলী বাংলাদেশকে ভালবেসে গেছেন, বঙ্গবন্ধুকে ধারণ করে গেছেন।

বিজ্ঞাপন

শহিদ কামারুজ্জামান এর জন্মশত বার্ষিকীর দিনে তাকে তাই ইতিহাসের পাতায় সেই শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসাবে দেখতে হবে, যিনি আশপাশের রাজনৈতিক ঘরোয়া পরিবেশের সাথে তাল না মিলিয়ে একদিন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। সূত্র দাবি করে, আওয়ামী লীগ করার মতো প্রেক্ষাপট, সমর্থন ছিল না। কিন্তু, তিনি পাহাড়সম রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধুকে মনে প্রাণে ভালবেসে রাজনৈতিক ছদ্দাবরণে সামাজিক আবেগের সকল নির্যাসটুকু শুধুমাত্র তার জন্যই তুলে রেখেছিলেন। নিজের প্রাণ দিয়েই তিনি বাংলাদেশকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে লালন করে গেছেন। তাকে ধারণ করতেন বলেই রাজনৈতিক অপশক্তিরা বুঝতে পেরেছিল যে, চারজন বিশেষ নেতাকে এই দুনিয়ায় রাখা যাবে না! তাই সারাবিশ্বের মধ্যেই নিকৃষ্ট রাজনীতির উদাহরণে জেলে হত্যা করা হয় মহান নেতা কামারুজ্জামানদের। ফলত, কামারুজ্জামানদের কে নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোও উদাসীন। ওই বছর ঘুরে ৩ নভেম্বর কে বাদ দিলে ইতিহাস জানানোর চেষ্টা কিংবা উদ্যোগ নেই। একজন কামারুজ্জামানের জন্মশত বার্ষিকী নিয়ে গণমাধ্যমে আলাদা কোন উদ্যোগ নেই। যা হতাশ করে।

নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে অনেক কিছুই। কেন তারা রাজনীতি করবে, দেশপ্রেম কি, এর রঙ কেমন ! প্রজন্ম আসলে কি শিখছে, কতটুকু জানতে পারছে, জানার আগ্রহ আছে কিনা- এমন নানা আদ্যপান্ত নিয়ে প্রজন্মকে উৎসুক করাতে পারলেই তো হয়। তখন রাজনীতির অঙ্গনে বিচক্ষণ রাজনীতিক তৈরি হতে পারত। দেশের সকল সমস্যা সমাধানে কেন একজন শেখ হাসিনাকেই দেখতে হয় ! কারণ, সে অর্থে মেধাবী, ত্যাগী, বিশ্বস্ত নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না। সকলেই পদ পদবী ঘিরে ক্ষমতা নিতে ব্যস্ত। শহীদ কামারুজ্জামানদের মতো নেতা এই সমাজে না পাওয়া গেলে মাশুল দিতেই হবে। একজন কামারুজ্জামান হেনা কি মৃত ? অবশ্যই নয়। তাঁর সৎ আত্মা বাংলার মাটিতে রাজনীতি করতে চাওয়া মানুষগুলোকে অনুপ্রেরণা যোগায়। তিনি বেঁচেই আছেন, থাকবেন।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও নির্মাতা

সারাবাংলা/এজেড

আয়শা এরিন মত-দ্বিমত শহীদ কামারুজ্জামানের জন্মশত বার্ষিকী ও কিছু কথা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর