সাংসদ হবার যোগ্যতা অযোগ্যতা
১৬ জুলাই ২০২৩ ১৫:৫১
আগামীকাল ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচন। দেশে আরও কয়েকটি উপ-নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ কৌতুহল দেখা যাচ্ছে। এই কৌতুহলের কারণ কি?
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রাণ হলো রাজনৈতিক দল। যারা একই আদর্শে বিশ্বাসী, সুসংগঠিত এবং নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের সমর্থন আদায় করে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে স্বতন্ত্রভাবেও কেউ কেউ এই চেষ্টা করতে পারেন। এবং জনপ্রতিনিধিও হতে পারেন।
জনগণের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করাই জনপ্রতিনিধির কাজ। তার মাধ্যমে জনগণের দাবি দাওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়। কর্তৃপক্ষ জন প্রতিনিধিদের দাবী দাওয়া গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে, সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। এতে জনগণের কল্যান নিশ্চিত হয়।
আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ জনপ্রতিনিধিরাই সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
বাংলাদেশে বিদ্যমান সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদের প্রতিটি সদস্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সংসদ সদস্যরাই আইন প্রণেতা হিসেবে পরিচিত। জাতীয় সংসদে যে আইন পাস হয় তা তারাই পাস করেন। আবার প্রয়োজনানুযায়ী সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও সংসদ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
সংসদ সদস্যদের মূলত আইন প্রণেতাই বলা যায়, তাই এই বিষয়ে কিছুটা পড়াশোনা থাকার অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কারণ জাতীয় সংসদে যে আইন পাস হয় সেখানে সঠিক, বিধিসম্মত ও জনকল্যাণমূলক আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও তাদের শিক্ষা ও মেধার ভূমিকা রয়েছে।
একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় অবস্থিত শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারী চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভরনিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এখন তার যদি নিজেরই শিক্ষা না থাকে তাহলে তিনি কিভাবে এই দায়িত্ব পালন করবেন?
স্বশিক্ষা বলেও একটি ব্যপার আছে। সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ হলো পারিবারিক শিক্ষা। এক্ষেত্রে আমরা এ পি জে আবদুল কালামের পরিবারের কিছু ঘটনা মনে করতে পারি। তার পিতা একজন মাঝি ছিলেন। কিন্তু তিনি একজন স্বশিক্ষিত মানুষ ছিলেন। তাই তিনি তার সন্তানকে উন্নত নৈতিক শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন।
ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হিসেবে যে দুজন আলোচনায় রয়েছেন তারা সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্টের। মোহাম্মদ আলী আরাফাত যিনি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। আগে আইইউবিতে পড়াতেন। রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, আইন কানুন সবই তার জানা রয়েছে। গুছিয়ে নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে পারেন। বোঝাতে পারেন অন্যকেও।
আরেকজন হিরো আলম যার বলতে গেলে কোন সাধারণ শিক্ষাই নেই। পারিবারিক শিক্ষার কথাও শোনা যায় না। তিনি ঠিকমতো গুছিয়ে কথাও বলতে পারেন না। ইউটিউবে জোকার টাইপের পরিবেশনাই নাকি তার পেশা। সেখান থেকে তিনি ভালো টাকা উপার্জনও করেন। দুঃখিত, আমি নিজে এগুলো দেখিনা, অন্যের কাছে শুনে লিখলাম। কেননা শুনেছি এগুলো এতই মানহীন এবং অরুচিকর যা দেখে সময় নষ্ট করা ভিন্ন আর কিছু নয়।
আরে ভাই সংসদ তো নাচ, গান আর ভাঁড়ামির জায়গা নয়। এখানে তামাশার সুযোগ নেই। অনেক তো হলো এবার ক্ষান্ত দেন। মহান জাতীয় সংসদকে সত্যিকার অর্থে সংসদ হতে সহযোগিতা করুন, কার্যকর, জনমূখী সংসদ তবেই কল্যান দেশের এবং মানুষের। সবশেষে দার্শনিক প্লেটোর একটি কথা দিয়ে শেষ করছি-
‘রাজনীতিতে অংশগ্রহনের অনীহার অন্যতম শাস্তি হলো নিজের চেয়ে নিকৃষ্টদের দ্বারা শাসিত হওয়া’
লেখক: শিক্ষক এবং কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই