ড. ইউনূসের মামলার রায়: বিস্ময়কর কর ফাঁকির কাহিনী
২৫ জুলাই ২০২৩ ১৪:২৫
আদালতের রায়ে বেরিয়ে এলো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর ফাঁকি মামলার বিস্ময়কর কাহিনী যা বাংলার প্রবাদ বাক্য শুভঙ্করের ফাঁকি নামে আখ্যায়িত করাটাই সঙ্গত! ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ কথাটি তো আমরা হরহামেশাই শুনে থাকি৷ হিসেব নিকেশের মারপ্যাঁচে আসল বিষয় রেখে কর্তৃপক্ষ কিংবা সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ফায়দা হাসিল করার কৌশলকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ বলা হয়ে থাকে ৷ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ধার্যকৃত দানকর মওকুফের দাবি ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের করা তিনটি রেফারেন্স মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক খারিজ করে দেয়ার ফলে পর্দার অšতরাল থেকে বেরিয়ে এসেছে শুভঙ্করের ফাঁকি। ফলে দৃশ্যত: একবিংশ শতাব্দীতে এসে ড.মুহাম্মদ ইউনূস কী অষ্টাদশ শতাব্দীর ড.শুভঙ্করে রূপান্তরিত হয়ে গেলেন? পাঠক ও বোদ্ধা সমাজের কাছে এই প্রশ্নটি রেখে ড. ইউনুসের কর ফাঁকি মামলার রায়ের সাথে এসম্পর্কে আমার নিজস্ব ব্যাখ্যা তুলে ধরছি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক ধার্যকৃত দানকর মওকুফের দাবি ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসের করা তিনটি রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত। ফলে ডঃইউনূসকে আয়কর দফতর কর্তৃক ধার্য্যকৃত প্রায় ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। খবরটি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে জাতীয় ও আšতর্জাতিক গণমাধ্যমসমূহ। ডঃ ইউনূস নিয়ে যেকোন খবর প্রকাশের পর গণমানুষের দুই ধরনের অভিব্যক্তি পাওয়া যায়। একদিকে কিছু লোক মনে করেন ডঃ ইউনূসকে হয়রাণী করার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করছে, অন্যদিকে বেশীরভাগ মানুষ মনে করেন, আর দশজন নাগরিকের মত ডঃ ইউনূসের বিরুদ্ধেও প্রচলিত আইনীবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যৌক্তিক ও ন্যায্য। এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি থেকে মুক্ত নয় গণমাধ্যমগুলোও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জার্মানভিত্তিক আšতর্জাতিক ডয়েচে ভেলি বাংলা প্রতিবেদনে লিখেছে, “ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি প্রতিষ্ঠানে দান করা টাকার উপর ১২ কেটি টাকা কর দেয়ার আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।” এটা পড়ে যে কারও মনে হতে পারে যে, একজন ব্যক্তি দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার জন্য কেন কর দিবে ? এর পিছনে কি অন্য কোন উদ্দেশ্য রয়েছে? না কি ডঃ ইউনূসকে হয়রানী করার জন্যই এই রায়! সবকিছু মিলিয়ে এটা কি শুভঙ্করের ফাঁকি না অন্য কোন কিছু সেসম্পর্কে অনুসন্ধান করা হচ্ছে বর্তমান লেখাতে।
আয়কর দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১০-১১ করবর্ষে ডঃ ইউনূসের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি টাকা এবং সে বছর তিনি কর প্রদান করেন প্রায় ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১১-১২ করবর্ষে তার মোট আয় ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা এবং তিনি কর প্রদান করেন প্রায় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে এই করবর্ষে তিনি তার ব্যক্তিগত সম্পদ হতে নিজ নামে গঠিত প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্টকে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টকে ৫ কোটি ২ লাখ টাকা এবং ইউনূস সেন্টারকে ৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা প্রদান করেন। ফলে তার ব্যক্তিগত সম্পদ তমে দাঁড়ায় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ করবর্ষে ডঃ ইউনূসের মোট আয় প্রায় ৭ কোটি টাকা হলেও তিনি কর প্রদান করেন মাত্র সাড়ে ৮ লাখ টাকা। এই করবর্ষে তিনি প্রফেসর মুহাম্ম্দ ইউনূস ট্রাস্টকে ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টকে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। ২০১৩-১৪ করবর্ষ শেষে তার সম্পদের পরিমাণ হয় ৭৬ লাখ টাকা।
মোট সম্পদ এবং প্রদত্ত আয়করের পরিমাণ কমে যাওয়ায় আয়কর অধিদফতর ডঃ ইউনূসের ২০১১-১২, ২০১২-১৩, এবং ২০১৩-১৪ করবর্ষের ফাইর পুন:যাচাইপূর্বক দেখতে পায় যে এই তিন করবর্ষে তিনি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্টকে ৭২ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং ইউনূস সেন্টারকে ৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। এরফলেই ডঃ ইউনূসের ব্যক্তিগত পরিসম্পদ ও প্রদত্ত করের পরিমাণ উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। আয়কর আইন ১৯৯০ এর ৪ নং ধারা অনুযায়ী উক্ত দান আয়কর অব্যাহতিযোগ্য নয় বিধায় আয়কর অধিদফতর ডঃ ইউনূসকে ২৬/০১/২০১৪ তারিখে তিন করবর্ষেও জন্য জরিমানাসহ সর্বমোট প্রায় ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কর ধার্য্য করে। ডঃ ইউনূস উক্ত করদাবির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রথমে আপীলাত রেঞ্জ-৩এর যুগ্ম কর কমিশনার বরাবর এবং পরবর্তীতে আপীলাত ট্রাইব্যুনালে আপিল করেন। উভয় ক্ষেত্রেই ডঃ ইউনূসের আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ডঃ ইউনূস প্রায় ৩ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা কর পরিশোধপূর্বক অবশিষ্ট কর মওকুফের দাবিতে ০৫/০৩/২০১৫ তারিখে উচ্চ আদালতে তিনটি রেফারেন্স মামলা দায়ের করেন। উচ্চ আদালত উক্ত রেফারেন্স মামলার প্রেক্ষিতে ১৪/০৯/২০১৫ তারিখে মামলা নিষ্পত্তির পূর্ব পর্যন্ত কর আদায়ের উপর স্থগিতাদেশ প্রদান করেন।
রেফারেন্স মামলা দায়েরের প্রায় সাড়ে সাত বছর পর ২৫/০৪/২০২৩ সালে উচ্চ আদালতে উক্ত মামলাসমূহের শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়। আদালতে ডঃ ইউনূসের আইজীবীরা দাবি করেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস মৃত্যুচিন্তায় উক্ত দান করেছিলেন বিধায় তা আয়কর অব্যাহতি যোগ্য। অপরপক্ষে আয়কর দফতরের আইনজীবীরা বলেন যে, উক্ত দান এক কর বর্ষে না হয়ে ধারাবাহিকভাবে তিনটি আলাদা করবর্ষে হয়েছে। উপরন্তু এই সময়ে ডঃ ইউনূস আলাদা দুটি ট্রাস্ট গঠণপূর্বক সেখানে উক্ত অর্থ প্রদান করেছেন যা কোনভাবেই মৃত্যুচিন্তায় করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়না। একাধিক শুনানী শেষে উচ্চ আদালত ২১/০৫/২০২৩ সালে ডঃ ইউনূসের দায়েরকৃত রেফারেন্স মামলা তিনটি খারিজ করেন অর্থাৎ আয়কর দফতরের দাবিকৃত কর ডঃ ইউনূসকে পরিশোধের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস লিভ টু আপিল দায়ের করেন । ২৩/০৭/২০২৩ ইং তারিখে প্রধান বিচারপতিসহ ০৪ (চার) বিচরপতির সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে ০১ নং বেঞ্চে তার ব্যক্তিগত আয়কর ফাঁকির মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের উপর শুনানি করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আপিল খারিজ করে দেন। ফলে তাকে ১২ কোটি টাকা আয়কর রাজস্ব বিভাগকে পরিশোধ করতেই হবে।
এখানে কয়েকটি ব্যাপার লক্ষনীয়। প্রথমত, আদালত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে এবং সরকারের কোনধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই উক্ত রায় প্রদান করা হয়েছে। সরকারের হ¯তক্ষেপ থাকলে ২০১৫ সালে দায়েকৃত মামলার শুনানী সম্পন্ন হতে প্রায় আট বছর লাগার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, উচ্চ আদালতের মামলা দায়েরের পূর্বে ড. ইউনূস যুগ্ম কর কমিশনার এবং আপীলাত ট্রাইবুন্যালেও আপিল করে হেরেছেন। ফলে এটি প্রতীয়মান যে আয়কর দফতরের ধার্য্যকৃত দানকর ন্যায্য এবং যৌক্তিক। তৃতীয়ত, কর প্রদানের প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার জন্যই ড. ইউনূস উচ্চ আদালতে রেফারেন্স মামলা দায়ের করেছেন। তিনি নিজেও জানতেন তাকে উক্ত কর পরিশোধ করতে হবে, অন্যথায় তিনি ৩ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা পরিশোধপূর্বক রেফারেন্স মামলা দায়ের না করে সরাসরি রীট মামলা দায়ের করতে পারতেন।
এবার আসা যাক প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট এবং ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাষ্টের বিষয়ে। প্রথমটি ২০০৯ সালে এবং পরেরটি ২০১১ সালে গঠণ করা হয়। ট্রাষ্ট দলিলের মাধ্যমে গঠিত উক্ত ট্রাষ্ট দুটির চেয়ারম্যানও স্বয়ং ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দলিলে চেয়ারম্যানকেই ট্রাষ্টের অর্থ খরচের সর্বময় ক্ষমতা দেয় হয়েছে এবং এটাও উল্লেখ রয়েছে যে উভয় ট্রাষ্টই ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস ও তার পরিবারের সদস্যদের ভরনপোষণের যাবতীয় খরচ বহন করবে। অর্থাৎ ড. ইউনূস ট্রাষ্টকে অর্থ প্রদানের নামে মূলত নিজেকেই দান করেছেন। তহালে স্বভাবতই প্রশ্ন এসে যায়, ডঃ ইউনূস কেন নিজে নামে ট্রাষ্ট গঠণ করে নিজের অর্থই দান করলেন? এর উত্তর খুবই সহজ। মূলত কর ফাঁকি দেয়ার জন্যই ডঃ ইউনূস উক্ত দুটি ট্রাষ্ট গঠন করে তাতে নিজের ব্যক্তিগত অর্থ স্থানান্তর করেছিলেন যার প্রমাণ পাওয়া যায় ট্রাষ্ট গঠনের পর প্রদত্ত ট্রাক্সের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণ হারে কমে যাওয়া। উপরন্তু নামে দাতার ট্রাষ্ট হলেও গঠনের প্রায় এক যুগ পরেও এই দুটি ট্রাষ্টের দাতব্য কাজের একটি উদাহরণও নেই!!
এবার একটু নির্মোহ অ্যানালাইসিস করা যাক। অর্থনীতির অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আয়কর সংক্রান্ত বিষয়াদি বুঝেন না এমনটি মনে করার কোন কারণ নেই। দেশের অর্থনীতিতে আয়করের গুরুত্ব সম্পর্কেও উনার সম্যক ধারণা রয়েছে। দারিদ্র বিমোচন নিয়ে তিনি সারাবিশ্বে জ্ঞানবিতরণ করে বেরান। অথচ যে আয়করের মাধ্যমে সরকার বিভিন্ন কল্যাণমুখী কাজ বাস্তবায়ন করে সেটি দেয়ার ব্যাপারেই যেন তার রাজ্যের অনীহা। দুঃখজনক ব্যাপার হলো উনার মতো ব্যক্তি আদালতে আয়কর ফাঁকি দায়ের জন্য ‘মৃত্যু চিন্তায় দান’ এর মতো খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। একজন নোবেলবিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক পরিসরের সুপরিচিত একজন ব্যক্তি হয়েও এমন শঠতার আশ্রয় নেয়া হতাশাজনক। আদালতে সুনিশ্চিত পরাজয় জেনেও তিনি সুদীর্ঘ প্রায় আট বছর ন্যায্য আয়কর প্রদানে বিলম্ব করেছেন। হয়তো সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে আপীল করার মাধ্যমে তিনি আরো কিছু কাল অযথা ব্যয় করবেন। তারপরও উচ্চ আদালতের এই রায় আমাদের আশার আলো দেখায়। আইনের চোখে সকলে সমান এই বিশ্বাস দৃঢ় করে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রায় সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই এমন কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। উনার প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রায় হাজারো কোটি টাকা কর ফাঁকির মামলা আদালতে চলমান। আমরা আশা করব দ্রুত এসব মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত হবে, আয়কর অথরিটি তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে পাবে। একইসাথে আশা থাকবে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ এসকল বিষয়ে নির্মোহভাবে প্রকৃত সত্য তুলে ধরবেন। সরকারবিরোধীতার নামে আমরা যেন কেউ সত্যের অপলাপ না করি, মিথ্যাকে যেন প্রশ্রয় না দেই। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে প্রকৃত সত্য খুঁজে পাওনা মোটেই কঠিন কিছু নয়। অতএব সত্যের জয় হোক, তা অনাকাঙ্খিত কিংবা অপছন্দের হলেও! উপসংহারে বলা যায় যে ড.ইউনূসের কর ফাঁকি সংক্রান্ত মামলার রায়ে যে সত্য বেরিয়ে এলো তা আমাদের অবাক করেছে! সাথে সাথে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সত্যকে পাশ কাটিয়ে যদি কেউ অসত্যকে আঁকড়ে ধরতে চায় তার কারসাজিকে শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবে আখ্যায়িত করাটাই সঙ্গত নয় কি? এসম্পর্কে সম্মানীত পাঠকদের মতামত কাম্য!
লেখক: পরিচালক, সেন্টার ফর সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ; সাবেক ডিন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, সাবেক চেয়ারম্যান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ
সারাবাংলা/এসবিডিই
অরুণ কুমার গোস্বামী ড. ইউনূস ড. ইউনূসের মামলার রায়: বিস্ময়কর কর ফাঁকির কাহিনী ড. মুহাম্মদ ইউনূস মত-দ্বিমত