বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণযোগ্য
১৩ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৩০
স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছরের মধ্যেই দুর্বার গতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত দুই দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক উন্নয়ন- যে কোনো সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্যতা হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি সব ক্ষেত্রই বিশ্বে বাংলাদেশ এক বিস্ময়ের নাম। গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পরমেশ্বরন আইয়ার বলেন,“উন্নয়নশীল দেশগুলো বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করতে পারে”। তার মতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নে অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোও বাংলাদেশের এই উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের এই কর্মকর্তা বাংলাদেশের উন্নয়নের উদাহরণ দেখাতে গিয়ে এ দেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থারও প্রশংসা করে বলেন,’ বাংলাদেশের স্যানিটেশন ব্যবস্থা অসাধারণ’। পাশাপাশি উন্নয়নে বেসরকারী খাতের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং এটিকে সমৃদ্ধশালী বলে বর্ণনা করেন। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন ৭৫-এ পরিবার হারানো শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক সেই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের নরঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করত সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র বিকাশে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার অবদান অপরিসীম ও অতুলনীয়া। তাঁর দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী কার্যক্রমে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কমেছে দারিদ্র্যের হার। তাঁর সাহসিকতা এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে। বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘ভিশন ২০২১’ ও ‘ভিশন ২০৪১’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ ও এর বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার এসব যুগান্তকারী কর্মসূচি বাংলার ইতিহাস হয়ে থাকবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের এমন কোনো দিক নেই যেখানে বাংলাদেশের পদচারণা হয়নি।
বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত আজকের এই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি)-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের উন্নয়নের চেহারা ছিল বর্তমান সময়ের উন্নয়ন অবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো অনেক কম, বেকারত্বের হার ছিলো অনেক বেশি, ছিনতাই, লুটপাট, রাহাজানি, মারামারি, সন্ত্রাসী, দূর্নীতি, ধর্ষণ, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি ছিলো নিত্য নৈমেত্তিক বিষয়। জনজীবনে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা ছিলোনা। বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিলো অনেক কম, বিদ্যুৎ সংকট, গ্যাস সংকট এসব ছিলো প্রতিদিনের সমস্যা।
আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ শাসনামলে দলটি বাংলাদেশকে একটি দূর্বল অর্থনৈতিক দেশ থেকে সব শর্ত পূরণ করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পদার্পন করিয়েছে। আর তা করতে গিয়ে মানুষের জীবনমানকে উন্নত করতে হয়েছে, আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়েছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সাবমেরিন ক্যাবল( যা শেষ হবে ২০২৪) থেকে শুরু করে ফ্লাইওভার, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে শুরু করে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রমাণ করে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের এই দীর্ঘ শাসনামলে উন্নয়নের চিত্র কতটা অর্থপূর্ণ ছিল।
২০০৮ সালে যখন আওয়ামী লীগ দেশের শাসনভার গ্রহণ করে তখন কত দুরাবস্থাই না ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের বলে বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশকে এই দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছরের শাসনামলের মধ্যে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। এই সময়ে বাংলাদেশের অনেক উন্নয়নই হয়েছে। তবে যেসব উন্নয়ন দেশকে বদলে দিয়েছে বা দিচ্ছে সেই মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগের সফলতার স্বাক্ষর বহন করছে যা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছে।
১৯৭১ সালে অর্জিত যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ যা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালেই ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দুটিই উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবিলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারীশিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সহায়তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার।
পাশাপাশি বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। প্রায় সর্বত্রই দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও সরকারকে সবচেয়ে স্বস্তি দিয়েছে কৃষি খাত ও তার ব্যবস্থাপনা। আমাদের মতো জনবহুল দেশে সীমিত কৃষিযোগ্য ভূমির সতর্ক ও যৌক্তিক ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে সেটা হয়েছে। ফলে কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে গেছে। আর এ কৃষি বিপ্লবের কারণেই ১৬ কোটি মানুষের দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা গেছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। আজকের এই কৃষি বিপ্লবের শতভাগই আওয়ামী লীগের উদ্ভাবন।
গত এক দশকে আর্থসামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। শিশুমৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২৩ দশমিক ৬৭-এ কমে এসেছে। প্রতি লাখে মাতৃমৃত্যুর হার ১৭৩-এ হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। নারীর রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৭তম।
গত ৫ জুলাই, ২০২৩-এ জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৩’-এর বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ বেড়েছে ২০ ভাগ। এক বছরের ব্যবধানে এই এফডিআই বেড়েছে। গত বছর বিনিয়োগের পরিমাণ তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ৩৪৮ কোটি ডলার। এর আগের বছর যা ছিল ২৮৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০২০ সালে যার পরিমাণ ছিল ২৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। প্রবাসী আয়ের পর পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে বছর শেষ করেছে। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এক অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সোমবার রপ্তানি আয়ের এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শুধু গত জুনে ৫০৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের জুনের তুলনায় এই রপ্তানি ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি।
জনগণের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন এবং তাঁর সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্বে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত ও স্মার্ট দেশ হবে। এদেশের ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা আছে। কারণ তিনি দেশের মানুষকে যে প্রতিশ্রুতি দেন তা তিনি রক্ষা করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকে অল্প সময়ে মধ্যে আওয়ামীলীগের তথা শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে পৃথিবীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে তা নিঃসন্দেহে অন্যন্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনুকরণীয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূনরায় নির্বাচিত হয়ে আজকের উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০৪১ সালে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হয়ে আবারও বিশ্ব মানচিত্রে অন্যান্য দেশের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে প্রত্যাশা করছি।
লেখক: ট্রেজারার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক চেয়ারম্যান, ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/এসবিডিই
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণযোগ্য মত-দ্বিমত